দেখা
পিয়ালী সেনগুপ্ত
বইমেলার স্টলে দাঁড়িয়ে একটা কবিতার বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছিল অরূপ। হঠাৎ একটা চেনা মুখ দেখে চমকে উঠলো ও।
--" উল্টো দিকের স্টলে দাঁড়িয়ে ওটা রিমা না? হ্যাঁ, রিমাই তো।"
যার সাথে এতগুলো বছর বইপাড়া থেকে বইমেলা আর কফি হাউজ থেকে সাউথ সিটি ঘুরে বেড়ালো তাকে চিনতে পারবে না ও! কত কথা ছিলো তখন ওদের মধ্যে। একসাথে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো, একসাথে সারা জীবন কাটানো-- এমন কত পরিকল্পনা করতো যে ওরা দিন-রাত, তার ঠিক নেই। কিন্তু সে ই সব কিছুই কেমন ঠুনকো লাগে আজকাল। সামান্য একটা কথা কাটাকাটি থেকে আজ ওরা আলাদা। তারও প্রায় ৬-৭ বছর হয়ে গেল। একবার কি এগিয়ে গিয়ে কথা বলবে ও রিমার সাথে? ভাবনাটা অরূপের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। আবার এটাও ভাবলো যে যদি এতে কোনো অসুবিধা হয় রিমার। এতদিনে ওর বিয়ে হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। আশেপাশেই যদি ওর বর থাকে তখন আবার অরূপ অপ্রস্তুতে পরবে। একেই কলেজের প্রাক্তন প্রেমিক তার ওপর আবার অকৃতদার। রিমার বর যদি ওদের কথা বলাটা ভালো চোখে না দেখে? এর চেয়ে থাক। ও ওর সংসারে ভালো থাকুক।
রিমা অনেকক্ষণ ধরে আড়চোখে অরূপকে লক্ষ্য করছে বই দেখার বাহানায়। বুঝতে পারছে অরূপ ওকেই দেখছে কিন্তু সামনে আসতে পারছে না। হয়তো সাথে বউ বা বান্ধবী আছে। তাই প্রাক্তন প্রেমিকার মুখোমুখি হতে চাইছে না। রিমাও তাই আর এগিয়ে গিয়ে কথা বললো না। ভাবলো, কি দরকার! ও নিজে নাহয় ব্রেক আপের পরে আর নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি। কিন্তু সবাই কি আর ওর মতো সারাজীবন একা কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি? ওর জন্য আবার অরূপের নতুন জীবনসঙ্গী ওকে ভুল বুঝুক সেটা ও চায়না। তাই রিমা অরূপকে দেখেও না দেখার ভান করে স্টল থেকে বেড়িয়ে বইমেলার ভীড়ে মিশে গেল।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment