1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

চেনা অচেনার খেলা

ছবি : ইন্টারনেট

চেনা অচেনার খেলা 

দেবানন্দ মুখোপাধ্যায় 

এ এক অদ্ভুত সমস্যা হয়েছে জীবক সেনের জীবনে ।অচেনা কোনো মানুষ দেখলেই তার মধ্যে চেনা মানুষের আদল দেখতে পাওয়া ,বলা ভালো চেনা মানুষকে খুঁজে বেড়ানো ।ধরুন বাসে , ট্রেনে ,এমনকি কর্মসূত্রে মাঝে মাঝে বিমান সফরেও আশেপাশে কোনো পুরুষ বা মহিলা সহযাত্রী পেয়ে যান যাকে জীবকের খুব পরিচিত বলে মনে হয় । 

এই তো সেদিন বাসে করে যাচ্ছিলেন রাজারহাট । তা ভালোই যাচ্ছিলেন ,গোল বাঁধলো আড়াই নম্বর গেটে এসে ।না ,না ,কোনো অঘটন ঘটেনি ;গাড়িও ঠিকঠাক চলছিল ,কিন্তু তারপর থেকে জীবকের মনের গাড়ি এমন দৌড়াতে শুরু করলো তা কহতব্য নয় ।ব্যাপারটা আর কিছুই নয় আড়াই নম্বরে একজন তার বয়সীই হবে (নিজের বয়সও তো কম হোলোনা ,সরকারি চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন দু’মাস হোলো ,মানে এখন তিনি বরিষ্ঠ নাগরিক)লোক উঠলো ,উঠে সামনের একটা ফাঁকা হওয়া সীটে বসলেন ।পিছন থেকে জীবক তাকে দেখলেন এক ঝলক ।তার গাল দুটো একটু তোবড়ানো ,চোখ দুটো কটা ।ব্যাস অমনি জীবকের বুক ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে গেলো ।এ কি সেই তার সাথে স্কুলে পড়া স্বপন রায় নাকি ?কপালে একটা কাটা দাগ অবশ্য আছে ,তা স্বপন স্কুলে যা দুরন্ত ছিলো পরে কপাল কাটা যেতেই পারে ।কত বছরের কথা ,মনে মনে উত্তেজনা বেড়েই চলে ।এক এক বার মনে হচ্ছে উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করে “মশাই আপনি কি ১৯৭৬ এর বাঁকুড়া জেলা স্কুলের লাস্ট হায়ার সেকেন্ডারি ব্যাচ ?আপনার নাম কি স্বপন রায় ?”পরমুহূর্তে ভাবেন যদি না হয় ?ব্যাপারটা লোকহাসি হয়ে যাবে ।যদিও এর স্বপন রায় না হওয়ারই কথা ,আগেও অনেকবার জীবক ভুল প্রমানিত হয়েছে ,তবু স্বভাব যায়না ম’লে ।মধ্যে চুয়াল্লিশটা বছর কেটে গেছে ,তবু জীবক নিজেকে থামাতে পারে না ।মনের সাথে অনেক লড়াই করে ও যখন স্থির সিদ্ধান্তে এলো ঐ লোকটা স্বপন ছাড়া কেউ হতে পারে না ,কথা বলার জন্য উঠতে যাবে  ঠিক তখনই স্টপেজে বাস দাঁড়াতেই লোকটা নেমে গেলো ।সঙ্গে সঙ্গে জীবকের শরীরের সব এ্যড্রেনালিন নিমেষে কোথায় চলে গেলো কে জানে !শ্বাসপ্রশ্বাস ,হৃদস্পন্দন সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো ,হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো জীবক ।

আবার বেশ কিছুদিন আগে অণ্ডালের নজরুল এয়ারপোর্টে গেছিলো দিল্লীর ফ্লাইট ধরবে বলে ।তা সেও নেমেছে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো ।গাড়ি থেকে এক স্যুটেড বুটেড ভদ্রলোক নামলো ,এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো ,সমস্যা শুরু হোলো যখন তাঁর সঙ্গিনী (সম্ভবত তাঁর স্ত্রীই )গাড়ি থেকে নামলো ।অমনি জীবকের মাথার পোকাটা আবার নড়ে ওঠে ।খালি মনে হতে লাগলো ঐ মহিলা তার সাথে কলেজে পড়া অনিন্দিতা ,অনিন্দিতা চৌধুরি ।যতদূর মনে পড়ছে একই হাইট ,একই রকম কোঁকড়ানো চুল ,মাথাটা একটু ডানদিকে হেলিয়ে হাঁটা ,নাঃ এ অনিন্দিতা না হয়ে যায়না ।আবার সেই বুক ধড়ফড়ানি ,হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ,আবার এ্যডরেনালিন ক্ষরণ শুরু ।কিন্তু ছেলেদের বেলাতে যত সহজে জিজ্ঞেস করা যায় ,মেয়েদের বেলায় কি অত সহজ ?কাজেই দোনামোনা করতে করতে দিল্লী পর্যন্ত একসাথে গেলেও আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেলোনা জীবক ।দিল্লী যখন নামলো ঐ শীতেও ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে গেলো ।

এ এক অদ্ভুত রোগ তার ,অচেনার মধ্যে চেনা খুঁজে বেড়ানো।শুরুটা যে কবে শুরু হয়েছিলো তা মনে নেই ,তবে বছর পাঁচেক তো হবেই ।এই রকমভাবে পথে ঘাটে কতজনকে তার ছেলের বন্ধু ,বৌমার বান্ধবী ,স্কুলে বা কলেজে একসাথে পড়া বন্ধু বা বান্ধবী মনে হয় তার ইয়ত্তা নেই ।শুধু মনে হওয়া হলে তাও কথা ছিলো ,কথা বলে কৌতুহল নিরসনের এক অদম্য ছটফটানি মনের মধ্যে শুরু হয় ,ফলস্বরূপ হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় ,ঘামতে শুরু করা , অসুস্থ বোধ করা ।জীবক নিজেও বুঝতে পারে এটা তার এক রকম অসুখই ,তবুও হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে কিছুতেই বশে আনতে পারেনা ।এই সব স্মৃতি বা পুরোনো লোকজনকে মনে পড়া সাধারনতঃ বয়েস হলেই শুরু হয় ।প্রথম প্রথম জীবক ভাবতো তার এই ব্যাপারটাও সে রকম ।কাল কি করেছে মনে করতে পারছে না ,কিন্তু ছোটোবেলায় ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষার সময় অঙ্ক পরীক্ষার দিন স্রেফ ভালো লাগছেনা বলে জ্যামিতির পঁচিশ নম্বর না করে খাতা জমা দিয়েছিলো ফার্স্ট বয় জীবক সেন ,সে বছর আর ফার্স্ট হওয়া হয়নি তার ,সে কথা এমনভাবে মনে পড়ে যেনো গত মাসেই ঘটেছে সেটা ।কেন যে এমন হয় কে জানে !মধ্যে একবার ভেবেছিলো কোনো সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাবে কিন্তু যা হয় ,গড়পরতা দশজনের মতো ‘পাছে জানাজানি হয়ে গেলে লোকে পাগল ভাবে’ এই ভাবনায় আর দেখানো হয়ে ওঠেনি ।ব্যাপারটা হয়তো এ রকম মহামারীর আকার ধারণ করতো না যদি না মাস কয়েক আগে তার ছেলে বাবাকে স্মার্ট করবে বলে একটা স্মার্টফোন কিনে একটা ফেসবুক এ্যকাউন্ট খুলে দিয়েছিলো ।ব্যাস্ আগুনে যেনো ঘি পড়লো ---তারপর থেকে চেনা অচেনার খেলা আরও জমে উঠলো ।মনের অতল তল থেকে স্কুল কলেজের বন্ধুদের নাম তুলে এনে খোঁজার খেলা শুরু ।একই নামের লোকদের প্রোফাইল পিকচার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতেই পুরো দিন কাবার হয়ে যেতো ।সে কি উত্তেজনা মনের মধ্যে তখন যেন ফুটবল বা ক্রিকেটলীগের ফাইনাল খেলা চলতো ।সব মেলেনি ,তাও যে ক’জন মিলেছিলো ,দিন নেই রাত নেই খালি কথা আর কথা তাদের সাথে ।দু’জন তো বিরক্ত হয়ে তাকে আনফ্রেন্ডই করে দিলো ।রিটায়ার করার পর যে কনসালটেন্সি ফার্মে জয়েন করেছিলো সেখানেও মাঝে মাঝে ডুব দিতে লাগলো ।অবশেষে এইসব চিন্তা ভাবনায় একদিন মানসিক দিক দিয়ে একদম বিধ্বস্ত হয়ে পড়লো ।

ঠিক এই রকম এক বিষন্ন বেলায় হঠাৎ করে এক ভ্রমনের কথা ,কারন সেই মুহূর্তে তার আগে এ টি এম থেকে যে টাকা তুলে নিয়ে গেলো জীবকের মনে হোলো তিন বছর আগে  সুন্দরবনে অফিসের একটা কাজে যে লন্চে গেছিলো সেই লন্চে ঐ লোকটাও ছিলো এবং তারপরেই অবধারিত ভাবে মনে পড়ে গেলো ডাঃ পৃথ্বীশ ভৌমিকের কথা ।সুন্দরবনে মাঝে মাঝে মেডিকেল  ক্যাম্প হয় ,নামকরা নিউরোসাইক্রিয়াটিস্ট ডাঃ ভৌমিক ওখানে যান ।বেশ ভালো মানুষ ,অনেক কথা হয়েছিলো ঐটুকু আলাপে ।তখন তো রোগটা অতটা মাথা চাড়া দেয়নি ,সত্যি বলতে ওটা আলোচনা করার মতো ব্যাপার তাও মনে হয়নি ।তবে ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে একটা কার্ড নিয়ে রেখেছিলো ,পরে এমনি যোগাযোগ রাখার জন্য ,বা যদি কারোর দরকার হয় ।সেটা যে নিজেরই হবে তখন কি আর ভেবেছিলো?

তা একদিন কার্ডটা খুঁজে ঠিকানা দেখে চলেই গেলো জীবক ।ডাঃ ভৌমিকের স্মৃতিশক্তি অসাধারণ ,ঢুকতেই বললেন “ আসুন ,আসুন ।আপনি ,মানে আপনার সাথে তো সেই লন্চে আলাপ ?নামটা অবশ্য ভুলে গেছি ।“

“আমার নাম জীবক ,জীবক সেন ।আমি একটা সমস্যা নিয়েই এসেছি ।“

“জীবক ,তিনি তো নিজেই বুদ্ধদেব ,বিম্বিসারের চিকিৎসক ছিলেন ।তা আপনার আবার কি সমস্যা ?”

কিছু কিছু ডাক্তার আছে যাদের ব্যাবহারেই অর্দ্ধেক রোগ সেরে যায় ,যাকে বিশ্বাস করে সব কিছু খুলে বলা যায় ,ডাঃ ভৌমিক সেই গোত্রের লোক ।

জীবক বলে “জানি না এটা রোগ কি না ,তবে ব্যাপারটা নিয়ে বড়ই মানসিক কষ্টে আছি ।“বলে জীবক সব কথা বললো ।“বলুন এর থেকে মুক্তির উপায় কি ?”

“দেখুন জীবকবাবু প্রথমেই বলি এটা সেরকম কোনো রোগই নয় ।বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরোনো কথা মনে পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা ,আর কাউকে কাউকে দেখে চেনা চেনা লাগাটাও তাই ।তবে আপনার ক্ষেত্রে সেটা অবসেশনের পর্যায়ে চলে গেছে ।আসলে কি জানেন ছোটোবেলায় অতিরিক্ত সাবধানতা ,বাড়ির লোকের সব সময় আগলে আগলে রাখার পর্বনতা পরবর্তী জীবনে সেই ছেল বা মেয়ের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি করে দেয় ।বড় হয়েও মনে মনে চায় কেউ তাকে সাহায্য করুক ,কেউ সব কাজে পশে থাকুক ।যখন পায়না তখন সে অচেনার মধ্যে চেনা কাউকে খুঁজে বেড়ায় ,তাকে আঁকড়ে ধরতে চায় ।আমার মনে হয় আপনার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে ।“একটানা কথাগুলো বলে থামেন ডাঃ ভৌমিক ।

“যা যা বললেন ,আমার ছোটোবেলাটা সেইভাবেই কেটেছে স্যার ।আমি বাবা মা’র অনেক দেরিতে হওয়া একমাত্র সন্তান ।বেশ কড়া নজরের মধ্যেই আমি মানুষ হয়েছিলাম ।কিন্তু এর থেকে বের হওয়ার উপায় কি ?”

“দেখুন জীবকবাবু ,আগেই বললাম এটা কোনো রোগ নয় ,এর সরাসরি কোনো ওষুধও নেই ।আপনাকে নিজেকেই নিজেকে এর থেকে মুক্ত করতে হবে ।আমরা আপনাকে কিছু ওষুধ দিয়ে সাহায্য করতে পারি মাত্র ।মনটাকে অন্যদিকে ঘোরাবার চেষ্টা করুন ।বাইরে ক’দিনের জন্য ঘুরে আসুন ।পথে যেতে যেতে বাইরের প্রকৃতির দিকে নজর দিন ,সম্ভব হলে গাছের পাতার রং দেখুন ,ফুলের রং দেখুন ,নীল আকাশ দেখুন ,আকাশের মেঘ দেখুন –প্রকৃতির থেকে জানবেন বড় ওষুধ আর নেই ।না থাকলে একটা হেডফোন কিনে নিন ,যেখানেই যাবেন পছন্দমতো গান শুনতে শুনতে যান  চোখ বন্ধ করে ।বাড়িতে ভালো ভালো সিনেমাও দেখতে পারেন ,অন্য কারোর দিকে নজর দেবার ফুরসতই পাবেন না ।মোটকথা নিজেকে নিয়ে থাকুন ,নিজের মধ্যে থাকুন ।চেষ্টা করুন, আত্মবিশ্বাস বাড়বে ,চেনা অচেনার খেলাটাও বন্ধ হবে ।আর হ্যাঁ ,ফেসবুকটা আপাততঃ ক’দিন বন্ধ রাখুন ।তবে বুক ধড়ফড়ানি ,ঘুমের ব্যাঘাত যাতে না হয় তার জন্য কয়েকটা ওষুধ লিখে দিচ্ছি ।দরকার মতো খাবেন ।“খস্ খস্ করে কয়েকটা ওষুধ লিখে কাগজটা জীবকের দিকে এগিয়ে দেন ডাঃভৌমিক । 

ডাঃভৌমিকের কাছে যাবার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে ।ওনার কথামতো চলতে চলতে আর নিজের সাথে লড়াই করতে করতে বদ অভ্যাসটা অনেকটাই কেটে গেছে ।এখন জীবক যেখানেই যায় কোনোদিকে তাকায়না ,কখনও বই পড়ে ,কখনও চোখ বন্ধ করে গান শোনে ।কাজেই চেনা অচেনার দ্বন্দ্বটা আর থাকলো না ।মনে মনে ডাঃ ভৌমিককে ধন্যবাদ দেয় জীবক ।নাঃ ,ফোনে নয় একদিন সশরীরে গিয়ে ধন্যবাদটা জানিয়ে দিয়ে আসতেই  হবে ,মনে মনে ভাবে জীবক ।

আরও বেশ কিছুদিন কেটে গেলো ।এখন জীবক সম্পূর্ণ নতুন মানুষ ,চেনা মুখ খুঁজে বেড়ায় না।,অচেনা লোক নিয়ে গবেষনার কথা ভাবনাতেই আসেনা ।তা কিছুদিন হোলো ছেলের রাজারহাটের ফ্ল্যাটে এসেছে ,ঘরে বসে বসে বিরক্তি চলে এসেছিলো ।ভাবলো কাছেই তো বইমেলা শুরু হয়েছে ,অনেক বছর যাওয়াও হয়নি এবার ঘুরে আসা যাক ।যেমন ভাবা তেমন কাজ ,দুপুরের খাওয়ার পাট আগেই চুকে গেছিলো ,তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে বইমেলাগামী বাস ধরলো ।বাসে উঠেই সৌভাগ্যবশতঃ বসার সীটও পেয়ে গেলো ।আর পায় কে !যথারীতি কানে হেডফোন লাগিয়ে (এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে)প্রিয় শিল্পী সন্ধ্যা মুখার্জির গান চালিয়ে দিলো ।চোখ দু’টো বন্ধ করাই ছিলো ,একটু ঘুম ঘুম ভাবও এসে গলো ।কিছুটা সময় পরে হঠাৎ পিঠে দু’টো টোকা পড়লো আর কানে ঢুকলো দু’টি শব্দ –“দাদা শুনছেন ?” 

কান থেকে হেডফোন খুলে তাকায় জীবক ।একজন নিখুঁত ফ্রেন্চকাট দাড়িওয়ালা ,মাঝারি উচ্চতার ,গৌরবর্ণ লোক ,মনে হয় জীবকের বয়েসীই,তারপাশে দাঁড়িয়ে আছে ।“কিছু বলছেন আমাকে ?”জীবক জিজ্ঞেস করে ।

“আরে ,আপনি ,মানে তুমি বাসে উঠতেই আমার সন্দেহ হচ্ছিল ,তারপর যখন দেখলাম তুমি সম্ভবত গান শুনতে শুনতে মাথা নাড়ছো তখন আর সন্দেহ রইলোনা যে তুমি তমোঘ্ন ,তমোঘ্ন দত্ত ,খুব ভালো গাইতে কলেজে ।চিনতে পেরেই তো পিছনের সীট ছেড়ে উঠে এলাম ।আমাকে চিনতে পারছিস না ?আমি রবি রবিশঙ্কর মিত্র তোর সাথে ঊনআশির আশুতোষ কলেজের ইংলিশ অনার্স ব্যাচ ।“

যাঃ শালা এ তো আচ্ছা ফ্যাকড়া ,একে তো সাতজন্মে একে কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছেনা ,তার ওপর লোকটা এতো দ্রুত কথাগুলো বললো ,আর এতো দ্রুত আপনি থেকে তুইতে ভায়া তুমি নেমে এলো যে জীবক ঘাবড়ে গেলো ।একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বলে “আপনি বোধহয় ভুল করছেন রবিবাবু ,আমার নাম জীবক সেন ,কখনও আশুতোষ কলেজের চৌহদ্দিতে পা দেবার সৌভাগ্য হয়নি ,আর ইংরাজি অনার্স তো দুরের কথা আমার যা ইংরাজির জ্ঞান শুনলে যে কোনো লোক ভিরমি খেয়ে যাবে ।সরি রবি বাবু  আমি আপনার তমোঘ্ন হতে পারলাম না ।“

“সরি ,কিছু মনে করবেননা ,আমার এই এক দোষ ---“নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে পরের স্টপেজে নেমে যায় সে ।

মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে জীবক ,হুঁ হুঁ বাবা আমি একা নই ,চেনা অচেনার খেলা অনেকের মধ্যেই চলে তাহলে !

বইমেলার কাছাকাছি বাস থেকে নেমেই কাউকে তোয়াক্কা না করে চিৎকার করে গয়ে ওঠে ---বাঁধ ভেঙ্গে দাও ,বাঁধ ভেঙে দাও ,ভাআআআঙ্গোওওওও --------।

...(সমাপ্ত)...



No comments:

Post a Comment