1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

বাঙালীর দুর্গোৎসব

ছবি : ইন্টারনেট

বাঙালীর দুর্গোৎসব 

কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় 

     দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই আমরা দুর্গোৎসব বলি। বাঙালী সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। মূলত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হলেও তন্ত্রশাস্ত্র মতে যেহেতু সকল স্থানই দুর্গার স্থান তাই সকল সময়েই দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে। বছরের চারটি নবরাত্রিতেই মহাসমারোহে দুর্গা পূজা হয়ে থাকে। তবে আশ্বিন মাসের ও বসন্ত ঋতুর নবরাত্রিতে যে দুর্গা পূজা হয়ে থাকে তা যথাক্রমে শারদীয় এবং বাসন্তী দুর্গা পূজা নামে পরিচিত।  

     ঋগ্বেদের রুদ্র ও রুদ্রাণী পৌরাণিক যুগে এসে হয়েছেন শিব এবং শিবানী। এই শিব-শিবানীর সূত্র ধরেই এসেছেন পার্বতী, হৈমবতী ও উমা। পরবর্তীকালে এরাই ‘দুর্গা’ নামে সুপ্রসিদ্ধা। দেবী দুর্গা সর্বভারতীয় হলেও উমা বাঙালীর একান্ত আপনার হয়ে গেছেন। আশ্বিন মাসের শুক্লাপক্ষে উমার তিন দিনের জন্য পিতৃগৃহে আগমন এবং দশমীর প্রভাতে পতিগৃহে প্রত্যাবর্তন – এই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয় বাঙালীর দুর্গোৎসব। শরৎকালের শুক্লা তিথির প্রতিপদ থেকে শুরু হয় দেবীপক্ষ। আর তখন থেকেই মাতৃপূজার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে বাঙালী সমাজ।

     শরৎকালের দুর্গোৎসব কবে শুরু হয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে কৃত্তিবাসী রামায়ন অনুসারে এই পূজার প্রবর্তক শ্রী শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালের এই দুর্গা পূজাকে বলা হয় ‘অকাল বোধন’। রাবন বধের উদ্দেশ্যে রামচন্দ্র এই অকালবোধনের আয়োজন করেছিলেন। তবে বাংলাদেশে এই পূজার প্রচলন নিয়ে যে জনশ্রুতি আছে তা হল অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত রাজসাহী জেলার তাহেরপুরের বারেন্দ্র-ব্রাহ্মণ বংশীয় জমিদার রাজা কংসনারায়ন আট লক্ষ টাকা ব্যয় করে প্রথম এই পূজা করেছিলেন। এটি আজ থেকে প্রায় সারে চারশ বছর আগের ঘটনা। শরৎকালের আগে এই পূজা অনুষ্ঠিত হত বসন্তকালে— যা বর্তমানে ‘বাসন্তী পূজা’ নামে পরিচিত।

     পুরাণগুলিতে অবশ্য দুর্গা পূজার শুরু নিয়ে নানা মত আছে। যেমন, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে কৃষ্ণকে দুর্গা পূজার প্রবর্তক বলা হয়েছে। তবে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত কোনো বর্ণনা এই পুরাণে পাওয়া যায় না। শুধু বলা আছে বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে কৃষ্ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন। শাক্তধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ মতে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু প্রথম দুর্গার মাটির মূর্তি তৈরি করে পূজা করেন। দুর্গা ও দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে যতগুলি পৌরাণিক গল্প পাওয়া যায় তার মধ্যে শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্‌-এ উল্লিক্ষিত মহিষাসুর বধের কাহিনীটি হিন্দুদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়। এই গল্পটি হিন্দুরা এতটাই মান্য করে যে শ্রীশ্রীচণ্ডীর পাঠ দুর্গা পূজার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। দেবীমাহাত্ম্যম্‌ মার্কণ্ডেয় পুরাণের একটি নির্বাচিত অংশ।         

     ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিজাত ফসল ঘিরে নানা উৎসবের প্রচলন আছে এদেশে। শরৎকালে কৃষিজাত পুরুষ্টু ফসলে মাঠ ভরে ওঠে। তাই অনেকের মতে শরতের দুর্গোৎসব হল ফসল ঘরে তোলার প্রাক-মুহূর্ত অনুষ্ঠান। 

     তৈত্তিরিয় আরণ্যকের অন্তর্গত বিভিন্ন উপনিষদে দেবী দুর্গার যে বর্ণনা আছে তা থেকে বলা যায় যে দুর্গার আবির্ভাব পৌরাণিক যুগেরও আগে। বৈদিক যুগে সাহিত্যে যেমন দুর্গার কথা আছে তেমন প্রাক্‌ বৈদিক যুগে অর্থাৎ, অনার্য যুগেও তাঁর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বৈদিক-উত্তর পৌরাণিক যুগে দুর্গার সঙ্গে চণ্ডী মিলেমিশে এক হয়ে যান। অস্ট্রিক শব্দ ‘চাণ্ডী’ থেকে ‘চণ্ডী’ শব্দের উৎপত্তি। চাণ্ডী ছিলেন অস্ট্রিক মানুষদের প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করা দেবী। তাই ধরে নেওয়া যায় চাণ্ডী ছিলেন অনার্য দেবী। দ্বাদশ শতকে লেখা ‘কালবিবেক’ গ্রন্থে দুর্গা পূজাকে শবরদের পূজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদিতে মানুষের জীবনযাত্রা ছিল আরণ্যক অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। দলবদ্ধভাবে শিকার করা সে যুগে জীবন ধারণের অঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হত। দুর্গার মূর্তি কল্পনাতেও আমরা এর ইঙ্গিত পাই। মূর্তির বাহনগুলি সে যুগের মানুষের শিকারী জীবনের স্মারক। বসন্তকাল শিকারের উপযুক্ত সময়। তাই কারও কারও মতে বসন্তকালে অনুষ্ঠিত দুর্গোৎসব ছিল শিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উৎসব। পরবর্তীকালে মানুষ যখন শিকারের পথ থেকে সরে এসে কৃষিকেন্দ্রিক জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন আরণ্যক অর্থনীতির গুরুত্ব তাদের জীবনে ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। ফলে শিকারকেন্দ্রিক উৎসবগুলি কৃষিভিত্তিক উৎসবে পরিণত হয়। বসন্তকালের দুর্গোৎসবের কাল-পরিবর্তনের কারণও সম্ভবত এটাই। 

     বসন্তকালের দুর্গাপূজার আর শরৎকালের দুর্গাপূজার মন্ত্র এবং উপাচারে কোনো তফাৎ নেই। তবে বসন্তকালের পূজায় কোনো বোধনের বিধান না থাকলেও শরৎকালের দুর্গাপূজায় বোধনের প্রয়োজন হয়। তবে দুর্গোৎসবের সাজ সাজ রব শুরু হয়ে যায় মহালয়া থেকেই। 

মহালয়াঃ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। অর্থাৎ মহা আলয় বা শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। এই দিনটি হল পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এর পরেই শুরু হয় দেবীপক্ষ। অর্থাৎ মায়ের আগমনের সন্ধিক্ষণ। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই ছত্রতলে এনে এবং খুশি ও তৃপ্ত করে শুরু হয় মাতৃবোধনের আয়োজন। মানুষে মানুষে সকল দ্বন্দ্বের অবসান কামনার সঙ্গে প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদজগতের খুশিও প্রার্থনা করা হয় এই দিনে। অর্থাৎ, বলা যেতে পারে পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতি ও  জীবজগতের প্রতি সুগভীর মমতা, সহানুভূতি, প্রেম ও ভালোবাসার এক অপূর্ব ভারতীয় ঐতিহ্য নিহিত আছে মহালয়ার ক্ষণের মধ্যে।

বোধনঃ  ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যাবেলা বেলগাছের তলায় হয় দেবীর অকাল বোধন। কেন এই বোধন? এর উত্তর পাওয়া যাবে দেবতাদের দিন রাতের হিসেব থেকে। মানুষের মতো দেবতারাও দিনে জেগে থাকেন আর রাতে ঘুমোন। তবে দেবতাদের ক্ষেত্রে দিন ও রাতের হিসেবটা একটু অন্যরকম। সূর্য যখন উত্তরায়নে তখন দেবতাদের দিন অর্থাৎ, দেবতারা তখন জেগে আছেন। এই সময়ে তাঁদের পূজা করার জন্য বোধনের প্রয়োজন হয় না। আর সূর্য যখন দক্ষিণায়নে তখন দেবতাদের রাত অর্থাৎ, দেবতাদের তখন ঘুমোনোর সময়। এই সময় কোনো দেব-দেবীর পূজা করতে হলে বোধনের মাধ্যমে তাঁকে জাগ্রত করে নিতে হয়— এটাই শাস্ত্রের বিধান। শরৎকালে সূর্য দক্ষিণায়নের পথে থাকে, তাই দেবতারা তখন নিদ্রা যান। কথিত আছে জগতপিতা ব্রহ্মা বেলগাছে দেবী দুর্গাকে নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে পান। মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে দেবীকে জাগ্রত করার জন্য এই গাছের নীচেই তখন তিনি স্বয়ং বোধন পূজা করেন। এই কারণেই শারদীয় দুর্গা পূজায় বেলগাছের তলায় বোধনের আয়োজন করতে হয়। এই গাছ শিবের খুব প্রিয়। তাই আমরা এই গাছকে শিব রূপেও পূজা করে থাকি। দুর্গা ও লক্ষ্মীরও এই গাছ অতি প্রিয়। তাই এই গাছের ফলকে অর্থাৎ, ‘বেলফলকে’ বলা হয় শ্রীফল। বোধন দিয়েই শুরু হয় সর্বশক্তির প্রতীক দেবী দুর্গার প্রথম পূজা। ষষ্ঠীর সন্ধ্যাকালে উচ্চারিত হয় বোধনের মন্ত্র ।      

কলা বৌ স্নানঃ  “সপ্তম্যাং পত্রিকা পূজা রম্ভাদিনব পত্রিকা”। বিভিন্ন পুরাণে সপ্তমী তিথিতে দুর্গা পূজার সাথে কলা বৌ বা নবপত্রিকা পূজার বিধান দেওয়া আছে। তাই সপ্তমীর সকালে কলা বৌ স্নান দুর্গা পূজার এক বিশেষ অঙ্গ। পূজার ক’দিন এই কলা বৌ গণেশের ডান পাশে অধিষ্ঠান করে বলে অনেকেরই ধারণা কলা বৌ গণেশের বৌ। যদিও এই ধারণা ঠিক নয়। ঘোমটার আড়ালে কলা বৌ প্রকৃতপক্ষে গণেশ-জননী  দুর্গারই আরেক রূপ। কারও কারও মতে পৃথিবী-মাতাই হলেন এই নবপত্রিকা বা কলা বৌ। আরও একটি মত হল, কলা বৌ আসলে শস্য-বধূ। ভারত কৃষিনির্ভর দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে ধর্মের সঙ্গে কৃষির একটা ঘনিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে। নবপত্রিকা তারই প্রতীক। প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্র ছিল ভেষজ নির্ভর। নবপত্রিকায় যে ন’টি গাছ-গাছড়া থাকে তার প্রতিটিই ভেষজগুণ সম্পন্ন। এই ন’টি গাছ-গাছড়া হল— হলুদ, জয়ন্তী, কচু, কলা, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান। সারা বছর অসুখ-বিসুখের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভেষজ ওসুধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় নবপত্রিকা। ধানকে আবার ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবেও ধরা হয়। গুরুজনেরা কনিষ্ঠদের আশীর্বাদ করার সময় ধান-দূর্বা ব্যবহার করে থাকেন। কারণ হিন্দুদের কাছে ধান-দূর্বা হল ঐশ্বর্য ও নম্রতার প্রতীক। 

     নবপত্রিকার ন’টি গাছকে আবার দেবী রূপেও কল্পনা করা হয়। রূপগুলি হল, উমা (হলুদ গাছ— উমারূপে সর্ব বিঘ্ন নাশের জন্য পূজা করা হয়। দেবী হরিদ্রাবর্ণ বলে হলুদ গাছে তাঁর অধিষ্ঠান), কার্ত্তিকী (জয়ন্তী গাছ— সর্বজয়ের অধিষ্ঠাত্রী কার্ত্তিকীরূপে পূজা করা হয়। দেবী জয়রূপিনী), চামুণ্ডা (মানকচু গাছ— চামুণ্ডারূপে পূজা করা হয়। দেবী মানদায়িনী), শিবা (বেল গাছ— সর্বপ্রকার কল্যাণের জন্য পূজা করা হয়। শিব ও শিবানীর প্রিয় অধিষ্ঠান ক্ষেত্র), শোকরহিতা (অশোক গাছ— সর্বশোক নাশের জন্য দুর্গারূপে পূজা করা হয়), রক্তদন্তিকা (ডালিম গাছ— ডালিমের বীজ যেমন রক্তবর্ণ অসুর বিনাশকালে দেবী সেরূপ রক্তদন্তবিশিষ্টা হন), কালিকা (কালকচু গাছ— সর্বসিদ্ধির জন্য এইরূপে পূজা করা হয়), ব্রহ্মাণী (কলা গাছ— সর্বশান্তি বিধানের জন্য ব্রহ্মাণী দুর্গারূপে পূজা করা হয়), লক্ষ্মী (ধান গাছ— ঐশ্বর্যের প্রতীক। জীবের প্রাণরক্ষাকারিণী লক্ষ্মীরূপে পূজা করা হয়)।

সন্ধিপূজাঃ  সন্ধিপূজা দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গ। এই পূজার আয়োজন করা হয় অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে। অষ্টমী তিথির শেষ এক দণ্ড এবং নবমী তিথির প্রথম এক দণ্ড অর্থাৎ, মোট দু’দণ্ডের মধ্যে সন্ধিপূজা সমাপন করতে হয়। বর্তমান হিসেব মতো এক দণ্ড = ২৪ মিনিট। রাম-রাবণের যুদ্ধ চলাকালীন রাবণ বধের উদ্দেশ্যে দেবীর কৃপা লাভের জন্য দশরথ পুত্র রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন। প্রচলিত উপাখ্যান অনুসারে এই অকালবোধনের পর রামচন্দ্র দেবীর কৃপা লাভ করেছিলেন এবং সপ্তমী তিথিতে দেবীশক্তির প্রভাবে তাঁর অস্ত্রসম্ভার হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কর। সপ্তমী-অষ্টমী দু’দিন প্রচণ্ড যুদ্ধের পর অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে রামচন্দ্রের অস্ত্রে রাবণের দশটি মাথাই খণ্ডিত হয়। কিন্তু কোনো এক অলৌকিক শক্তিবলে সেই মাথা পরক্ষণেই রাবণের দেহে পুণরায় সংযোজিত হয়। তাই যুদ্ধ গড়ায় নবমী তিথি পর্যন্ত। ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর এই দিন রাবণের পতন হয়।

     সন্ধিপূজাতে দেবী প্রতিমাতে আবির্ভূতা হন— এরকম লৌকিক বিশ্বাস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এই সময় দেবী দুর্গাকে চামণ্ডা বা কালী রূপে কল্পনা করা হয়। তাই পূজার আয়োজনও করা হয় সেইমত। দেবীর চামণ্ডারূপ ধারণ নিয়ে শ্রী শ্রী চণ্ডীতে কথিত আছে দৈত্য শুম্ভ-নিশুম্ভের সেনাপতি চণ্ড ও মুণ্ডকে বিনাশ করার জন্যই দেবী দুর্গার এই নামকরণ।  

বিজয়া দশমীঃ  নবমী পূজার শেষে বাঙালীর হৃদয়ে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। উমা আজ চলে যাবে পতিগৃহে উমা এখন আর শুধু মেনকা-কন্যা নন, সমস্ত বাঙালী পরিবারের কন্যা। তাই তাঁর চলে যাবার মুহূর্তে সবারই মন ভারাক্রান্ত। মেয়ের সঙ্গে দেখা হবে সেই এক বছর পরে। এয়োস্ত্রীরা অশ্রুসজল নয়নে দেবী বরণের সাথে সাথে মাকে বিদায় জানায়। তাদের আকুল মিনতি – মা আবার আগামী বছর এসো। পাশাপাশি দেখা যায় দশমী তিথিতে ‘বিজয়া সশমী’ পালিত হতে। এদিন থাকে না জাত-পাতের বাছবিছার, থাকে না কোনো শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ। পরস্পর পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাই। একে অপরকে করাই মিষ্টিমুখ। 

     রামায়নে বর্ণিত রাম-রাবণের যুদ্ধের শেষদিন ছিল শরৎকালের শুক্লপক্ষের নবমী তিথি। এই দিন রাবণ রাম কর্তৃক নিহত হন। রাবণের পতনের পর স্বাভাবিক কারণেই রামবাহিনী বিজয় উৎসবে মেতে ওঠে। দশমী তিথির ‘বিজয়া’ উৎসব এই রাবণ-বিজয় উৎসবেরই অঙ্গ। অবশ্য এর ভিন্নতর ব্যাখ্যাও আছে।

দেবী বরণঃ  দশমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় স্ত্রী লোকাচার ‘দেবী বরণ’। মা-দুর্গা চলে যাচ্ছেন। মেয়ে উমা চলে যাচ্ছেন পতিগৃহে। চির আয়ুষ্মতী উমাকে বিদায় জানাতে পাড়ার সধবা রমণীরা আসেন পূজা-প্রাঙ্গনে। একে একে তাঁরা উমাজ্ঞানে মা-দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন এবং সেই অক্ষয় সিঁদুর নিজেদের সিঁথিতে ধারণ করেন। মা-দুর্গার মুখে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টি আর পান। এরপর এয়ো-স্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন। এই সিঁদুর পরিয়ে দেওয়াকে বলা হয় ‘সিঁদুর খেলা’। দেবী বরণের সঙ্গে শেষ হয় বাঙালীর দুর্গোৎসব।

     দেবী দুর্গা আদ্যাশক্তিরই এক রূপ। প্রাক বৈদিকযুগ থেকে দেবী পূজিতা হয়ে আসছেন। দেশমাত্রিকা বা পৃথিবী-মাতারূপেও তিনি অধিষ্ঠিতা এবং পূজিতা। পূজার একটি মন্ত্রে দেবীকে প্রণাম জানাতে গিয়ে বলা হয়েছে— ‘দেশবাসিনীভ্যঃ নমঃ’ বা ‘দেশবাসিন্যৈঃ নমঃ’।

তথ্য সূত্রঃ

Wikipedia:

https://en.wikipedia.org › wiki › Durga_puja_of_West_Bengal

https://www.indianholiday.com › best-of-india › festivals › durga-puja

https://www.britannica.com › topic › Durga-Puja

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment