1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Friday, January 13, 2023

স্কিম


ছবি : ইন্টারনেট

স্কিম

রাজর্ষি বর্ধন


[১]

-আপনি শিওর?

-একশ শতাংশ!

-পরে আপসোস করবেন না তো?

-কোন প্রশ্নই ওঠে না!

- বেশ, তবে একটা ছোট প্রশ্ন ছিল ।

- নির্দ্বিধায় করতে পারেন।  

-আপনি নিজের বোনকে মারতে চান কেন?

-আগে যদিও একবার বলেছি কারণটা, আবারও বলছি,  শুনুন তবে। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, সারাজীবন প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। ওনার সম্পত্তি কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাবা  কয়েকদিন আগেই মারা গেছেন। মারা যাবার আগে উনি সব সম্পত্তি আমাদের দুই ভাই-বোনের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু বাবার এই সিদ্ধান্তটা আমার পছন্দ হয়নি!

-কারন জানতে পারি কি?

-কারন একটাই, আমি বাবার অপদার্থ ছেলে। পড়াশোনাতেও ভালো ছিলাম না, ব্যবসাতেও মন দিতে পারিনি! মানে জীবনে আমি ঠিকমত দাঁড়াতেই পারিনি। আমার নামে বাবা যা রেখে গেছেন, সেটুকুতে আমার চলবে না। কেন জানেন? আমি  যেরকম উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতে অভ্যস্থ, তাতে বছরখানেকের মধ্যে সব  জমানো টাকা শেষ হয়ে যাবে, আর  তাতে তো আমি পথে বসে যাবো! কারণ উপার্জন করবার ক্ষমতা আমার মধ্যে নেই।  উলটোদিকে আমার বোন পড়াশোনাতে বেশ চৌখশ, বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে, ভবিষ্যতেও সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সুতরাং সে নিজের  অন্নসংস্থান নিজেই করে নিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস, বাবার পয়সার প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু সে তো আর নিজের দাবী থেকে সরে আসবে না! বাবার অর্ধেক সম্পত্তির ওপর নিজের একার দাবী আছে, আইনতভাবে। কিন্তু  বাবার সম্পত্তির গোটাটাই আমি  আমার দখলে চাই। সেটা একমাত্র সম্ভব হবে যদি আমার বোন মারা যায়। এবার নিশ্চয়ই ব্যপারটা পরিষ্কার হয়েছে?

-ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদের মনের অন্ধকার দূর করে দেবার জন্য। কিন্তু আপনি আপনার বোনকে অতীতে গিয়ে মারতে চান কেন?

-দেখুন, চাইলে তো   আমার বোনকে আমি অনেকভাবেই মেরে ফেলতে পারি, সেরকম সুযোগ আমার  আছে, কিন্তু তাতে আমি সন্দেহের তালিকায় থেকে যাবো! সমাজ আমায় সন্দেহের চোখে দেখবে সারাজীবন। তাই  এই টাইম ট্র্যাভেলের স্কিমের ব্যপারে যখন জানতে পারলাম, তখন আমার মনে হল, এখানে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স প্রয়োগ করলে কেমন হয়?  মানে আমার বোনকে যদি গোড়াতেই মেরে দিতে পারি, মানে তার জন্মের সময়ে গিয়ে,  তাহলে বর্তমান সময়ে  তো তার কোন অস্তিত্বই থাকবেনা! আর আমিও  তাহলে একমাত্র সন্তান হিসেবে বাবার সম্পূর্ণ সম্পত্তির অধিকার নিতে পারব!

-দুর্দান্ত আপনার পরিকল্পনা, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আপনি একই সঙ্গে নিষ্কণ্টক ও সন্দেহের বাইরে থাকবেন! সমস্যা নেই, আমরা যথাসর্বস্ব আপনাকে সাহায্য করব, যাতে আপনার কার্যসিদ্ধি হয়! তবে জানিয়ে রাখি, এই স্কিম কিন্তু একবারই ব্যবহার করা যাবে! কেবলমাত্র একবার।

-সে ব্যপারে আমার খেয়াল আছে।  আমি প্রথমবারেই কার্যসিদ্ধি করতে চাই! সেরকম ব্যবস্থাপনাও নেওয়া আছে!


[২]

-আমরা কিন্তু পচিঁশ বছর পেছনে চলে এসছি! আমরা এখন আছি হাসপাতালের সামনে। খানিকক্ষণ আগে আপনার বোনের জন্ম হয়েছে। আপনার বাবা আনন্দে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন! পাঁচ বছর বয়সী আপনাকেও দেখা যাচ্ছে। সবার মধ্যেই খুশি-খুশি ভাব। কি, আপনি প্রস্তুত তো?

-একদম। আমার হাতে কি দেখছেন?

-একটা ছোট্ট শিশি। কিন্তু এতে কি আছে?

-সাপের বিষ! সুযোগ পেলেই এটা আমি আমার সদ্যজাত বোনের শরীরে প্রবেশ করে দেবো!  


[৩]


-কি দেখছেন?

-দেখছি একজন মানুষ একই সঙ্গে  কতটা  লোভী, স্বার্থপর ও হৃদয়হীন হতে পারে! নিজের সদ্যজাত বোনকে মেরে ফেলতেও যার হাত কাঁপেনা! খবর এসছে,  একটু আগেই আপনার বোন বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। আপনার মাকে সামলানো যাচ্ছে না ! মেয়ে হারানোর শোকে কাঁদছেন। তিনি তো আর জানেন না, এর আগে নিজে কত বড় বিষ পেটে ধরেছিলেন!

-বাজে কথা বলা বন্ধ ক্রুন,নিজেদের গণ্ডির মধ্যে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন! ভুলে যাবেন না, আপনারা প্রফেশনাল!

-আমরা ক্ষমা চাইছি। আসলে প্রফেশনাল হলেও মাঝেমাঝে আমাদের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা মানুষটা জেগে ওঠে! আশা করি ভবিষ্যতে আমরা আরো সংযত করব নিজেদেরকে।

-তাহলে কি ধরে নেবো, বর্তমান সময়ে, মানে যে সময় থেকে আমি এসছি, সেখানে আমার বোনের কোন অস্তিত্ব নেই?

-এ ব্যপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স কাজ করে গেছে !

-তবে আর কি, ফেরা যাক!

-তার আগে আমরা চাইব, আপনি ভবিষ্যতটাও ঘুরে আসুন। আমাদের প্যাকেজের মতো দুটোই থাকে। যেহেতু স্কিমটা আপনি একবারই ব্যবহার করতে পারবেন, তাই আমরা চাই আপনি ভবিষ্যতটাও ঘুরে আসুন! তবে আপনার আপত্তি থাকলে-

-না না, আপত্তি কেন থাকবে! নিজের ভবিষ্যৎ দেখার সুযোগ ছাড়তে রাজি নই!


[৪]

-এসব কি দেখছি?

-যা দেখছেন ঠিকই দেখছেন! আপনার বোন দেশের সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কৃত হচ্ছেন। খোদ রাষ্ট্রপতি তাকে পুরস্কৃত করছেন!

-কি সাংঘাতিক! আমার বোন পড়াশুনোতে ভালো ছিল, কিন্তু ও এতদূর পৌঁছে যাবে ভাবতে পারিনি!

-ভবিষ্যৎ আগে থেকে কেউই ভাবতে পারে না, কেবল মাত্র অনুমান করতে পারে। উনি এখন পৃথিবীর নামকরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন।  ওনার আবিস্কৃত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র  মানুষের দৈনন্দিন কাজে লাগে। প্রায় পনেরোটা যন্ত্রের পেটেন্ট আছে ওনার নামে। এখানেই শেষ নয়,   সেইসব যন্ত্র প্রস্তুতকারক কারখানার মালিকও আপনার বোন, যার পঞ্চাশ শতাংশের অংশীদার আপনি! 

-মানে আমার বোনের হাতে এখন অনেক টাকা?

-বছরে কয়েকশ কোটি টাকার টার্ন ওভার হয় আপনার বোনের কোম্পানিতে, সেই অর্ধেক টাকার মালিক আপনি। তাই শুধু আপনার বোনই নন, আপনিও কোটি টাকার মালিক। উত্তরাধিকার সূত্রে আপনি বাবার কাছ থেকে যা পেয়েছেন, তার চেয়ে দশগুন বেশি সম্পত্তির মালিক আপনি!

-কিন্তু আমার বোনকে তো আমি মেরে ফেলেছি, সে এতো কিছু করল কি করে?

-আপনি ভুলে যাবেন না, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থাৎ যেই সময় থেকে আপনি এসেছেন, এবং সময়-যানে চেপে অতীত-ভবিষ্যৎ দুইয়েই ভ্রমণ করেছেন, সেই সময়ের  ভবিষ্যতের ছবি দেখান হচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে এসেও আপনি  বোনকে জীবিত দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু বর্তমান সময়ে ফিরে গেলে তার আরকোন অস্তিত্ব থাকবে না,কারন অতীতে গিয়ে তাকে আপনি মেরে এসছেন!

-সর্বনাশ! আচ্ছা আমি কি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারি? মানে আমার বোনকে আবার কি বাঁচিয়ে তুলতে পারি?

-হ্যাঁ তা পারেন, যদি ফের অতীতে গিয়ে আপনার বোনকে বিষ দিয়ে মারার সময় আপনাকে আটকানো যায়, তাহলে আপনার বোন বেঁচে যেতে পারে, এবং বর্তমান সময়ে গিয়েও আপনি আপনার বোনকে জীবিত দেখতে পারবেন!

-সেটাই করুন দয়া করে! আমার বোনকে বাঁচানোটা খুবই জরুরী!

-দুঃখিত, আপনি আর অতীতে ফেরত  যেতে পারবেন না, কারণ  এই স্কিম আপনি একবারই ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনি অনেকক্ষণ আগেই করে ফেলেছেন!

                                                                ...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment