1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Tuesday, January 26, 2021

মণি থেকে পরীর পরী হয়ে ওঠা

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

মণি থেকে পরীর পরী হয়ে ওঠা
কবিতা সামন্ত
সাত রাজার ধন মানিক নয় মণি,মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।
মণিকে জন্ম দিতে গিয়ে মণির মায়ের মৃত্যু হয়।তারপর মণির বাবা আবার বিয়ে করে মণির জন্য ঘরে নতুন মা নিয়ে আসে।
প্রথম প্রথম দুই এক মাস ভালো ভাবে মণির দেখা শোনা করলেও পরে মণিকে অনাথের মতোই মানুষ হতে হচ্ছে।
মণি এখন সাত বৎসরে পা দিয়েছে।
নতুন মায়েরও কোল খালি তবুও মণির মতো ছোট ফুটফুটে মেয়েকে সে নিজের সন্তানের মতো কাছে টেনে নিতে পারেনি।
যখন তখনই মণিকে বলে ওর জন্যই নাকি নতুন মা;মা হতে পারেনি।
ছোট্ট মণি অতো শতো বোঝেনা,বোঝে একটু ভালোবাসা।
এতো অবহেলা ছোট্ট মণি কি আর সইতে পারে,
মণি বাচ্চাদের দেখে আর মনে মনে ভাবে;সবার মা কত্তো ভালোবাসে তাদের সন্তানদেরকে,তবে আমার মা কেন আমায় ভালোবাসে না!
ঠিক করে খেতেও দেয়না।এমনকি বাবার কাছে যেতে চাইলেও শাষিয়ে রাখে।
বাবা মণিকে ভীষণ ভালোবাসে;কিন্তু নতুন মা আসার পর বাবাকে সংসারের খরচের জন্য কাজের তাগিদে বাড়ি থেকে অনেক দূরেই কাজে যেতে হয়।
মাসে এক বার আসে বাড়িতে দু-তিন দিনের জন্য।
মণির জন্মের পর কোনো এক সাধুবাবা বলেছিলেন মণির কপালে রাজটিকা আছে,মণি নাকি খুব ভাগ্য শালী।
আর খুব উদার মনের মানুষ হবে মণি।একদিন এমন কিছু করবে যা তাক লাগিয়ে দেবে।
একদিন মণি রাতে কাঁদছে;এমন সময় আচানক এক পরী এলো তার কাছে,মণিকে সাথে করে নিয়ে  ঝিকিমিকি তারাদের দেশে ভেসে চলে গেলো,কি সুন্দর তারাদে দেশ,কতো সুন্দর সুন্দর পরীদের আনাগোনা,চারিদিকে শুধুই সোনালী ররুপোলী রঙের আলো ঝিলমিল করছে।কতো রঙিন প্রজাপতি উড়ছে।
মণির চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে,ছোট্ট মণি কিছুই বুঝতে পারছেনা।
মণিকে এক অপরূপ সুন্দর পরী মণির কাছে এসে মণিকে আদর করে বলল;তোমার কেমন লাগছে মণি?
মণি বলল;এটা কাদের দেশ?আমি যেখানে থাকি সেখানে তো এমনটা নেই,কতো সুন্দর গো তোমাদের দেশ।
তিনি হেসে বললেন তোমার ভালো লেগেছে এই দেশে?ভয় করেনি তো তোমার?
ছোট্ট মণির মনে অসীম সাহস;বলল না গো না,কেন ভয় করবে?তোমাও তো মানুষ আমার মতো,শুধু তোমরা দেখতে কি সুন্দর।
তোমাদের দেশটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।
 পরী রাণী মণিকে বলল এটা আজ থেকে তোমারও দেশ,তুমি এখানে থাকবে।
ছোট্ট মণির মনে ভালোবাসা পাওয়ার লোভ আছে কিন্তু আর কিছুর প্রতি তার মোহ নেই।
তাই বলল না না আমি এখানে কি করে থাকবো?আমার বাড়িতে মা আছে;বাবা আছে;ওদের ছেড়ে আমি কেমন করে থাকি বলোতো।
যদি আমার বাবা মাকে এখানে নিয়ে আসো তাহলে আমিও এখানে থাকবো।
ছোট্ট মণির নিষ্পাপ মন।এমন কথা শুনে পরী রাণী ভীষণ খুশি।
এতো সুন্দর একটা ছোট্ট শিশুকে কেউ অবহেলা করে কি করে!এই কথাই ভাবছেন পরী রাণী।
তারপর বললেন তোমার মা বাবাকে তো এখানে নিয়ে আসা যাবেনা,তবে তুমি যখনই ইচ্ছে হবে এখানে আসতে পারো।
ছোট্ট মণি বলে উঠলো আমি তো তোমাদের মতো উড়তে পারিনা;তাহলে কেমন করে আসবো?
পরী রাণী বললেন ঠিক আছে;তুমি যখন উড়তে চাইবে,আমার কাছে আসতে চাইবে,আমার কথা মনে কোরো,দেখবে তুমিও উড়তে পারবে।
মণি বলে উঠলো তাই?এমন আবার হয় নাকি?
পরী রাণী বললেন এই দেখো তোমার এই বাম হাতে এই চিহ্ন টা এঁকে দিলাম,তুমি এই চিহ্নটা একবার হাত বুলিয়ে চুমু দিলেই পারবে।
তবে সকলের সামনে যখন তখন কোরো না যেন।
মণি বলে উঠলো কেন?
তাহলে যে তোমার বিপদ হবে।
ও আচ্ছা ঠিক আছে;এই বলার পর মণির মনে পরে গেলো সকালে বাবা বাড়ি ফিরবে,মণি বাবার কাছে যাবে,বাবা অন্ত প্রাণ যে মণি।
মণি বলে উঠলো আমি বাড়ি যাবো;সকালে যে বাবা আসবে।
এদিকে সকাল হয়  হয়,মণির খোঁজ পরে গেছেসারা বাড়ি,মণিকে না দেখতে পেয়ে ওর নতুন মা পাড়া মাথায় করেছে।
এক পরী আবার মণিকে বাড়ি পৌঁছে দিলো।
মণি বাড়ি ফিরতেই মণির নতুন মা মণিকে ভীষণ ধমক দিচ্ছে আর জানতে চাইছে যে মণি কোথায় গিয়েছিল।
পরী রাণী মানা করেছেন তাই কাউকে বলা যাবেনা।
কতো মার খেলো নতুন মার কাছে তবুও বললোনা মণি।
আজ আর মণির খাবার জুটলো না,মণির বাবা আসতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো।
মণির খোঁজ করাতে নতুন মা বলল মণি নাকি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরেছে।
সারাদিনের ধকলে বাবাও আর মণিকে জোর করে ঘুম থেকে তুলতে চাইলেন না।
মেয়েকে সকালেই আদর করবে।
এদিকে খিদের জ্বালায় মণি ছটফট করছে।মনের দুঃখে এক কোণে বসে কাঁদছে এমন সময় মনে পরে গেলো পরীর এঁকে দেওয়া সেই চিহ্নের কথা।
ভাবল একবার এই চিহ্নটায় হাত বুলিয়ে চুমু দিয়ে পরী রাণীর কথা মনে করতেই উড়তে লাগল।
মণি পরীদের মতো হয়ে গেলো।এই রকম দু-তিন বার করতে করতে মণির মা তাকে দেখে নেয়,আশ্চর্য হয়ে খানিক ক্ষণ দেখার পর কাউকে না বলেই মণির কাছে গিয়ে মণিকে জিজ্ঞেস করে এবং মার ধোর করায় ছোট্ট মণি নতুন মাকে ভীষণ ভয় পেয়ে সব বলে দিলো।
রাত্রি কেটে গেলো।
বাবা যখন মণির কাছে গেলো দেখলো মণির গায়ে মারের দাগ।
ছোট্ট টুকটুকে ফর্সা মণির গোটা শরীর জুড়ে মারের কালসিটে দাগ পরেছে।
বাবা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলোনা,সোজা  গিয়ে মণির নতুন মাকে জিজ্ঞেস করলো মণির এই অবস্থার কারণ কি।
মণির মা ছোট্ট সাত বছরের মণির নামে উল্টো উল্টো কথা বলে বলল মেয়েকে যদি আমার কাছে রেখে মানুষ করতে চাও তো আমার মতো করে মানুষ করতে দাও,নইলে আমি চললাম;তোমার মেয়ে তুমিই  দেখো।
মণির বাবা মেয়ের মায়ের কাছে সব শোনার পর বলল না না মণিকে তুমি ভালো মানুষ করার জন্য যেমন শাষনের দরকার তেমনটি কোরো।
কিন্তু ও তো এতো ছোট তাই অতো মার না মেরে ওকে বুঝায়ে সুঝিয়ে মানুষ কোরো ও ঠিক বুঝবে।
মণিকে কাছে ডেকে বলল সোনা মা আমার মায়ের কথা মতো চলতে হয়,অবাধ্যতা করেতে নেই,আমি আসছি, তুমি একদম দুষ্টুমি করবেনা বঝেছো?
মণি ঘার নেড়ে বলল হ্যাঁ।
আমার সোনা মেয়ে বলে কপালে একটা চুমু দিয়ে মণির বাবা কর্ম ক্ষেত্রে চলে যান।
এর পর মণিকে তার নতুন মা বলে এমন আবার হয় নাকি?গল্প বানানোর জায়গা পাওনি তুমি?অনেক মারধোর করে ডাইনি রাক্ষসী এই সব মণিকে বলে বনে ছেড়ে দিয়ে এলো।
মণি অনেক কান্নাকাটি করেও নতুন মায়ের মন পেলোনা।
ছোট্ট মণি গভীর বনের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে ভাগ্যক্রমে সেই সাধুবার কুটিরে গিয়ে পৌঁছালো।
সাধুবাবার মণিকে দেখেই মনে পড়ে যায় ছোট্ট সেই দুধের শিশুটির কথা।
সেই একই রাজ তিলক,সেই একই লক্ষণ।
মণিকে কাছে ডেকে সব জানতে পারে,জানতে পারে ওর পরী হওয়ার ঘটনা,জানতে পারে ওর নতুন মায়ের অত্যাচারের নির্মম ঘটনা।
সাধুর দয়া হোল মণিকে দেখে,তিনি নিজের আশ্রয়ে রেখে দিলেন মণিকে।
এমনি করেই বছর খানেক কেটে গেলো।
এদিকে মণির বাবা মণির খোঁজ করতে করতে প্রায় পাগলের অবস্থা।
নতুন মা বলে মণি নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।
এমন সময় বহু দিন সন্তানের মুখ না দেখতে পাওয়া এক রাজা অনেক বছর ধরে সাধুবাবার কাছে আসতেন।
যদিও সাধুবাবা অনেক আগেই বলেছিলেন যে;উনি কখনোই সন্তানের মুখ দেখতে পাবেননা।ওনার ভাগ্যে  সন্তান নেই।
তিনি সাধুবাবার কাছে মণিকে দেখতে পান।
মণির কথা জানতে পারে সাধুবাবার কাছে। সাধুবাবাকে বলেন যদি সাধুবাবা মণিকে ওনার সন্তান হিসাবে দেন তো ওনার জীবন ধন্য হয়ে যাবে।
সাধুবাবাও এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান,ছোট্ট মণিকে নিয়ে আর কোথায় যাবেন,তাই রাজার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।
রাজা মহাশয়ও অতি সৎ ব্যক্তি।মণিকে নিয়ে গিয়ে রাণীমার কোলে তুলে দেন।
রাণীমা মণির মুখ খানা দেখেই মায়ায় পড়ে যান।
এতো সুন্দর একটা ফুটফুটে মেয়ে যেন স্বর্গ থেকে কোন পরী নেমে এসেছে তেনার রাজপ্রাসাদে।
শুরু হলো মণির নতুন জীবন।
রাজ্য জুড়ে উৎসব পালন হোল।
মণির নতুন নামকরণ হোল।
মণি;মণি থেকে পরীতে পরিনত হোল।
আজ থেকে মণি রাজকুমারী পরী নামে পরিচিত।
এই সবের মধ্যে রাতে যখন মণি ঘুমোতে গেলো তখন  পরী রাণীর কথা আবার মনে পড়লো মণির।
এতোদিন সে ভেবেছিল এই পরী রাণীর জন্যই তার এই দশা।
এবার এখন মণি আবার সেই পরীর এঁকে দেওয়া চিহ্নতে হাত বুলিয়ে চুমু দিয়ে পরী হয়ে পরীদের দেশে গিয়ে পরী রাণীর সাথে দেখা করলো।
পরী রাণী তাকে সব বলল যে;এটাই হবার ছিলো।
তাই তোমার এতো কষ্টে দিন গেছে।
কিছুদিন পর তুমি দশ বৎসরের হয়ে যাবে,তখন তুমি রাতে পরী আর দিনে মানুষ রূপে রূপান্তরিত হতে থাকবে।
তখন তোমার জীবনে আবার নতুন অধ্যয় শুরু হবে।
তোমার যখন পনেরো বৎসর বয়স হবে;তখন তোমার জীবনে আসল পরীক্ষা শুরু হবে।
দেখতে দেখতে দশ বৎসরের হয়ে গেলো মণি।
রাণীমা একদিন গভীর রাতে স্বপ্ন দেখে মণির কাছে যায় মণিকে দেখতে।
তিনি মণিকে দেখে অবাক হয়ে যান,ছুটে গিয়ে রাজা মহাশয়কে ডেকে নিয়ে আসেন,রাজা মহাশয় আর রাণীমা মণিকে ঘুম থেকে তুলে জানতে চান তাদের পরী আসলে কে?
তখনও রাতের আঁধার থাকার জন্য মণি তখনও পরী অবস্থাতেই ছিলো।
প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া তার জীবনের সব ঘটনা বলল রাজা মহাশয় আর রাণী মাকে।
রাজা মহাশয় আর রাণী মা তাদের পরীকে পেয়েছে অনেক ভাগ্য করে।
তাই পরীর সমস্ত ঘটনা শোনার পর যেন সব কিছুই রূপ কথার মতো লাগলো।
এখন থেকে পরীর জন্য আরও সচেতন হয়ে গেলেন রাজা মহাশয় আর রাণীমা।
পরীর যখন চৌদ্দ বৎসর বয়স তখন রাজা মহাশয় শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রায় এক বৎসর হতে চললো রাজা মহাশয়ের শারীরিক উন্নতি ঘটলোনা,বরং আরও অবনতি ঘটলো।
রাজা মহাশয় আর রাণীমা ঠিক করলেন পরীকে রাজ সিংহাসনে বসানোর জন্য।
দিন ঠিক হোলো।
ধুমধাম করে পরীর রাজ্য অভিশেক করা হোলো।
পরদিনই রাজা পরলোক গমন করলেন।
এইবার শুরু হোলো পরীর আসল জীবন।
রাজ্যের পুরো দায়িত্ব এসে পড়লো পনেরো বৎসরের পরীর কাঁধে।
এতো অল্প বয়সের রাজকুমারী নাকি চালাবে রাজ্য! এই ভেবে আশেপাশের অনেক রাজ্য তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে পরীর রাজ্যে আক্রমণ করতে আসে।
যে রাজ্য যেথেই আক্রমন করতে আসে সেই রাজ্যের রাজার সাথে সর্ব প্রথম সাক্ষাৎ করে যুবরাণী পরী।
আর এই যুবরাণীর এমন যাদু যে তাঁকে দেখে তাঁর কথা বার্তা শুনেই যুদ্ধ না করেই সব রাজাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী করে ফিরে যান।
পরীর রাজ্যে কোন প্রজা না খেতে পেয়ে দিন কাটিয়েছে এমন কোন প্রজা নেই।
প্রতিটি প্রজা তাদের যুবরাণীর প্রশংসায় পঞ্চ মুখ।
সারা রাজ্য জুড়ে যুবরাণী পরীর জয় জয় কার শোনা যায় সর্বক্ষণ।
পরীর আঠারো বৎসর পূর্ণ হলেই পরী আর সাধারণ মানুষের জীবন যাপন করতে পারবেনা।
কারণ পরী সম্পূর্ণ রূপে সর্বক্ষণের জন্য রূপকথার পরীদের মতো পরী হয়ে যাবে।
এমন সময় তার আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই 
এক রাজকুমারকে দেখে তার প্রেমে আকৃষ্ট হয়ে পরে।
ঠিক আঠারো বছর পূর্ণ হতেই পরী রাণী নিজে আসেন চিরতরে পরীকে তাঁদের রাজ্যে নিয়ে যাবার জন্য।
কিন্তু যুবরাণীর বিস্তারিত এতো বড়ো রাজ্যভার কার ওপর দেবে?সে যে রাজকুমারকে কথা দিয়েছে সব কিছুকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব জ্ঞান হিনের মতো কাজ যুবরাণীকে শোভা পায়না।
তাই পরী রাণী আর যুবরাণী পরীকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন না।
কিন্তু তার সঙ্গে পরীর সর্বক্ষণের জন্যে হয়ে ওঠা পরী রূপ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়।
একেবারেই তার পরী রূপ ফিরিয়ে নিতে পারেনি।
রাতের বেলা এক প্রহরের জন্য পরীর পরী রূপ থেকেই গেছে।
kabitasamanta699@gmail.com
পূর্ব মেদিনীপুর


No comments:

Post a Comment