![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
তিন ইয়ার ও পরীনীতা মৌসুমী ঘোষ
সদ্য পঞ্চাশ পেরনো অন্তরঙ্গ তিন বন্ধু । তিনজনেই জীবনে সফল । একসময় কলেজে সবাই বলতো থ্রী মাসকেটিয়ার্স সেই কলেজ জীবনের বন্দ্ধুত্ব এখনো একই রকম আছে। ভিন্ন পেশা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি, তিনজনের সম্পর্কে ।
অর্জুন গোয়েঙ্কা একজন নামকরা ব্যবসায়ী।দেবাদিত্য গাঙ্গুলী শহরের বিখ্যাত ডাক্তার আরকর্পোরেট জগতের সফল কর্মী বোধীসত্ত বোস ।অর্জুন এবং দেবাদিত্যর বন্দ্ধুত্ব নার্শারী থেকে আরবোধিসত্তর সাথে পরিচয় কলেজে । তিনজনেরইডিপার্টমেন্ট সায়ন্স ছিল । থার্ড ইয়ারে উঠে দেবাদিত্য ডাক্তারি পড়তে চলে গেলেও যোগাযোগ অটুট ছিলো ।কখোনো সপ্তাহে একদিন কখোনো মাসে একদিন তিনজন একত্রিত হতই । পড়াশুনার সময় টাতেএভাবেই যোগাযোগ রাখত । তারপর কিছুদিন সেই ভাবে নিয়ম করে বসা নাহলেও যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি । তবে সবসময় সবাই উপস্থিত না থাকলেও অন্য দুইজন একত্রিত হয়েছে ।
পড়াশুনা শেষ করে অর্জুন পৈতৃক ব্যবসায়ে ঢুকেছিল। দেবাদিত্য এম ডি করে এখন নার্সিংহোম, চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত । আর বোধিসত্ত কোম্পানীর চাকরি নিয়ে এরাজ্য থেকে আর একরাজ্য কখোনো বা বিদেশ । তবে বিগত পাঁচবছর যাবত ও পুনেতে ছিল। সবে ছয়মাস হলো কলকাতায় ফিরে এসেছে । ফিরেই আবার তিন বন্ধু প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে একত্রিত হয় ।
অর্জুন আর দেবাদিত্য সংসারী, অর্জুনের ছেলেম্যানেজমেন্ট পড়ছে , মেয়ে সবে কলেজ । দেবাদিত্যর একটি ই ছেলে ডাক্তারি পড়ছে দিল্লিতে। আর বোধিসত্ত বিয়েই করেনি। অন্য দুই বন্ধুর অনেক অনুরোধ সত্তেও রাজি হয় নি কিছুতেই । আত্মীয় পরিজন সে ভাবে ওর কেউ নেই । বাবা, মা দুজনেই গত হয়েছে অনেক বছর আগে ।
এবার কোলকাতায় ফেরার পর থেকে দুই বন্ধু আদাজল খেয়ে লেগেছে বোধিসত্তর বিয়ে দেবার জন্য । আজকাল ওরা বোধির নতুন ফ্ল্যাটেই একত্রিত হয় খুব আড্ডা চলে তিনজনের । অনেকদিন আগে এরকম ই এক আড্ডায় বোধি বলেছিলপরী নামের একটা মেয়েকে ও ভালবাসে । ভালো নাম পরীনীতা । সে ওদের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী ছিল । যখন পরী ইলেভেনে পড়ে তখন ওরা বেনারস চলে যায়। কারণ ওর বাবার ট্রান্সফার হয়ে ছিল ।পরী ও বোধী কে ভালবাসত । বছর দুয়েকের ছোট ছিল। ক্লাস আলাদা হলেও স্কুল এক ই ছিল। তাই একসাথে স্কুলে যাওয়া , টিউশনি পড়তে যাওয়া, দুজনে সবসময় খুনসুটি করার মধ্যেই কবে দুজনের মন বিনিময় হয়ে গেছে নিজেরাও বুঝতে পারেনি । পরী চলে যাওয়ার পর বোধী বুঝেছিল অন্য কাউকে ভালবাসা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। পরী ও বেনারস থেকে চিঠিতে জানিয়ে ছিল একই কথা ।
সেই বছর ই বোধীরাও কলকাতায় চলে আসে। তখন এতো ফোনের ও রমরমা ছিল না । তারপর হঠাৎ করেই ওর বাবা মারা যাওয়া, পড়াশুনার চাপ, চাকরির জন্য চেষ্টা , সংসারের নানা টানাপোড়েনে একসময় যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় । এখন, ও যে শহরেই যায় সেখানেই পরী কে খোঁজে ভাবে যদি দেখা হয ! দেখা হলেও কি চিনতে পারবে ? একে অপরকে ? সেইবার সরস্বতী পুজোর সময় পরী প্রথম শাড়ী পড়েছিল । মাথায় একপাশে হলুদ ফুল কাঁধ পর্যন্ত চুল টা ছাড়া, কানে ঝুমকো ,কপালে কারুকাজ করা টিপ, দেখতে দারুন লাগছিল । তখন ও ক্লাস টেন, আমি বারো ক্লাস । সদ্য গোঁফ ওঠা মুখটা ঘসে দিয়েছিলাম ওর মুখে , সেকি লজ্জা মেয়ের ! ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছিল , আমার দিকে আর তাকাতেই পারছিল না । বোধী বলেছিল, পরী খুব ডাকাবুকো আর ডেসপ্যারেট ছিল কারুর কথা সহ্য করতো না । বলতো, আমি জার্নালিজম পড়ব ।
দুই বন্ধু মিলে এবার জোরাজুরি করছে বিয়ে তোকে করতেই হবে । মেয়ে আমরা দেখে দেবো । বোধী বলে এই বয়েসে আর ঝামেলা করিস না তো বেশ আছি । বন্ধুরা বলে , তোর ফ্ল্যাটে চাট ছাড়া মদ খেতে রোজ রোজ ভাল লাগে না । আর তাছাড়া বুড়ো বয়েসে কে দেখবে বলতো তোকে ।এবার বিয়েটা তোকে করতেই হবে বোধী , আমরাকোনো আপিত্তি শুনব না । পুরনো প্রেম অনেক দিন বাঁচিয়েছ আর দরকার নেই ।
সেদিন ও তিনজনে একসঙ্গে বসে আড্ডা চলছিল ।হটাৎ দেবাদিত্যর ফোন বেজে ওঠে । দেবাদিত্য দেখল শ্রীনীতার ফোন । শ্রীনীতা জার্নালিস্ট । বছর পাঁচেক আগে পরিচয় । ওর নার্সিংহোমের জমি নিয়ে প্রমোটারের সাথে গণ্ডগোলের খবরটা শ্রীনীতা প্রকাশ্যে এনেছিল । সেই সময় ওর সাথে পরিচয় । আর সেই পরিচয় এখন বন্দ্ধুত্বে পরিণত।দেবাদিত্য আর অর্জুন মাঝে মাঝে শ্রীনীতার ফ্ল্যাটে যায় , শ্রীনীতাই ডাকে। তাছাড়া ওর সাথে গল্প করতে ওদের ও ভালো লাগে কারণ শ্রীনীতা খুব এনার্জেটিক , পসিটিভ, আর সাহসী একটা মেয়ে , বয়স ! বোঝা যায় না , তবে ওদের থেকে কমই হবে , বিয়ে থা করেনি । বয়স্ক এক কাজের মহিলা কে নিয়ে ফ্ল্যাটে একাই থাকে । দু- একবার ওরা আড্ডার ছলে জিগ্গেস করেছে বিয়ের ব্যাপারে শ্রীনিতা এড়িয়ে গিয়ে বলেছে, সবাই কে জীবনে একি কাজ করতে হবে এমন কোনো মানে নেই ।আর বিশেষ কোনো কথা হয়নি এব্যপারে । একটা সফিস্টিকেট সম্পর্ক একে অপরকে শ্রদ্ধা করে সেখানে বেশী কথা জিজ্ঞাসা সা করাও যায় না ।
শ্রীনিতার সাথে কথাবলা শেষ হলে দেবাদিত্যজানালো আগামী বুধবার আমাদের নিমন্ত্রণ ডিনারে। শ্রীনীতা চার মাস পর দেশে ফিরেছেইউরোপ ট্যুর থেকে ,আর ঐ দিন সরস্বতী পুজোও আছে । আমি ও বলে দিলাম আমরা এবার থ্রীমাসকেটিয়ার্স ই যাব। অর্জুন বলল বোধী ঐ দিন ফাঁকা রাখিস তিনজন একসাথে যাবো । শ্রীনীতা খিচুড়ি টা ব্যাপক রাঁধে । বোধী রাজীহয়ে যায় ।
বুধবার সন্ধেবেলা তিনমূর্তি হাজির শ্রীনীতার ফ্ল্যাটে। কলিং বেল বাজতেই কাজের মাসিএসে দরজা খুলে বসার অনুরোধ করে গেছে ।শ্রীনীতা ও কিচেন থেকে চিৎকার করে বলেছেতোমরা বোসো আমি কফি নিয়ে এক্ষুনি আসছি ।
মাঘ মাসের মার্জিত ঠান্ডা, সবে সন্ধে, হাল্কা বাতাসআঠারো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে গোটা কলকাতা শহরকে মনে হচ্চে লক্ষ লক্ষ জোনাকি দিয়ে সাজানো হয়েছে । দেবাদিত্য, অর্জুন আর বোধী তিনজনেই ব্যালকনির সোফা তে বসে বাইরের দৃশ্যে মশগুল । প্রায় দুহাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট, বসার ঘরটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে , ঠাকুর ঘর থেকে ধূপের গন্ধ ম ম করছে,খুব মধুর সুরে বাজছে রবীন্দ্র সঙ্গীত--একটুকু ছোঁয়া লাগে .... ।
শান্তিময় পরিবেশ , সকলের মেজাজ টাও বেশ ফুরফুরে । অর্জুন বলল, বোধী, শ্রীনীতা খুব রুচিশীল আর সত্যি কথা বলতে পিছপা হয় না। আর ওর মনটা ও খুব ভালো । পরিচয় হলে দেখবি কেমন আন্তরিক মানুষ ও । এমন ভালো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার । বলতে বলতে শ্রীনীতাকে দেখা যাচ্চে কফির ট্রে হাতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে । তিনজনেই তাকিয়ে আছে সেদিকে , বোধী দেখছে অবাক হয়ে , প...রী ! !সেই চেনা ছোট্ট মেয়েটা ! সেই সাজ ! হলুদ শাড়ীখোঁপায় হলুদ ফুল, মুখে মিষ্টি একটা হাসি, প্রাণবন্ত, যৌবনের গোধূলী বেলাতেও এতো লাবণ্য , মাখনের মত ত্বক এখনো পুরুষকুলকেকুপোকাত করতে পারে ।কিন্তূ একটু ও এনার্জি কমেনি । একই এনার্জি নিয়ে কফির ট্রে টা টেবিলে রেখেই বলল, " আমি নিজে হাতে তোমাদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম । কেমন আছো তোমরা বলো। তারপর বোধীর দিকে তাকিয়ে বললো , এই বুঝি আমার নতুন বন্ধু । হাই ! বলে হাত টা বাড়িয়ে দিয়েছে শ্রীনীতা । বোধী ও হাত টা বাড়িয়েছে হ্যান্ড শেক করার জন্যে । হাতে হাত মিলেছে কিন্তু বোধীর মুখের দিকে তাকিয়েই আছে শ্রীনীতা উল্টো দিকে বোধীর ও একি অবস্থা ।
মুখটা ভীষণ চেনা লাগছে, টিকালো নাক ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, মোটা গোঁফ, টান টান নির্মেদ চেহারা , প্রশ্ন খোঁজা দুটো চোখ , রিমলেস চশমা, ঐ চোখ আমার খুব চেনা । স..তু ..দা .!! তুমিসতুদা ? আই মিন তুমি রঘুদেব পুরের বোধীসত্ত বোস ? এতদিন পর ! কোথায় ছিলে ! কত, খুঁজেছি ! তেত্রিশ বছর পর তোমায় দেখছি ।একসময় হন্যে হয়ে তোমার ঠিকানা খুঁজেছি ।এবার বোধী শ্রীনীতা কে থামিয়ে বলল, "আরে দাঁড়া আস্তে , এতো প্রশ্নের উত্তর একসাথে কি করে দেবো । আর সব এই মুহূর্তেই শুনে নেবে" ?
দেবাদিত্য আর অর্জুনের অবস্থা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।একটু পরেই অবশ্য সব পরিস্কার হয়ে গেলো ওদের কাছে । আর এও বুঝতে পারলো যে শ্রীনীতা ই বোধীর সেই পরী ।
বোধী বলল , আমি ও তো তোকে কত খুঁজেছি । তুই বা এতো দিন কোথায় ছিলি ? আর পরীনীতাথেকে কিভাবে শ্রীনীতা হয়ে গেলি সেটাও বুঝতেপারছি না ! হারানো ধন খুঁজে পেয়ে উভয়ের ই চোখের কোনে জোয়ার । শ্রীনীতার ভীষণ ইচ্ছা করছে বোধীকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপর মাথা রাখতে । মনে হচ্চে বুকের ওপর ঘুঁষি মেরে জিজ্ঞেস করে, আমায় ভুলে এতো দিন থাকতে পারলে ? দুই হাত আলগা করে বাড়িয়ে দিয়েছে বোধী, শ্রীনীতাও লজ্জা ভেঙে সঁপে দিয়েছে বোধীরবাহু বন্ধনে । চিবুক বেয়ে জলের ধারা নেমে আসছে দুজনের । সেই চিরন্তন প্রেম , শরীর কেউহ্য রেখে মনের অনুভূতিতে মিশে থাকা দুটি হৃদয়একাকার হয়ে যাচ্চে , ঠিক বংশীধারী আর রাধার প্রেমের মত । পরম সুখের এক মুহূর্ত ।
একটু বাদে দেবাদিত্য আর অর্জুনেরব হাততালি র আওয়াজে দুজনের সম্বিত ফেরে । দেবাদিত্য বলে তোমরা বোসো , আমি কমলা মাসিকে কফি আনতে বলেছি । সবাই কফি খেতে খেতে শুনব তোমাদের ঠিকানা হারানোর গল্প ।
শ্রীনীতা সোফাতে বসেছে, পাশে বোধী , শ্রীনীতারহাতটা বোধীর হাতের মধ্যে । শ্রীনীতা বলতে শুরু করল , " বাবার সাথে বেনারস আসার পরের বছরই স্ট্রোকে মা শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিল।কলেজ পাশ করা মাত্রই বাবা, মা দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পরলো আমার বিয়ে নিয়ে । আমি কিছুতেই রাজীহলাম না ।
আমি মাস্টার্স করবো জার্নালিজম পড়ব , আমার চোখে তখন স্বপ্ন । আর সতু দা ছাড়া আর কাউকে আমি বিয়ে করবো না ।একথাও বলেছিলাম বাবাকে । বাবা বলল , ঠিক আছে তাকে খবর দে আমি তার সাথেই তোর বিয়ে দেবো । পুরো ক্ষেপে উঠলো । আমি ছুটলাম রঘুদেব পুরে , কিন্তূ তোমাদের কোলকাতার ঠিকানা কেউ দিতে পারলো না । হতাশ হয়ে বেনারস ফিরে গেলাম । ওখানে গিয়ে দেখলাম বাবা এফিডেভিট করে আমার নাম শ্রীনীতা করে দিয়েছে । কেনো বাবা এরকম করলো জানতে পারিনি কারণ বেনারস ফেরার পরের দিনই বাবা স্নান করতে গিয়ে গঙ্গার ঘাটে পড়ে মারা যায় । অসুস্থ মা কে নিয়ে শুরু হয় আমার একার পথ চলা । মাস্টার্স কমপ্লিট করেই ওখানে একটা চাকরি করি কয়েক বছর । তারপর মা ও একদিন মারা গেলো । আমি একদম একা হয়ে গেলাম ।ট্রান্সফার নিয়ে ফিরে এলাম কলকাতা শহরে ।
বিগত প্রায় বিশ বছর ধরে তোমাকে খুঁজে চলেছি এই শহরে । অবশেষে আজ সেই মূহুর্ত উপস্থিত ।বোধী বলল, যে বছর তোমরা চলে গেলে সেই বছরই আমরাও কোলকাতায় চলে এলাম বাড়ি ভাড়া নিয়ে । এসে কলেজে ভর্তি হলাম সে খবর তোমায় দিযেছি । আর সেটাই তোমাকে লেখা আমার শেষ চিঠি । তারপর ই আর যোগাযোগ করতে পারিনি ।কারণ , বাবা এখানে যে প্রেসে কাজ করতো সেখানে মিথ্যা চুরির দায়ে বাবাকে জেলে পাঠায় মালিক । তিনদিন জেল থাকার পর বাড়ি ফিরে বাবা আত্মহত্যা করে । অথেই জলে পড়ি আমি আর মা । গ্রামের সম্পত্তি বিক্রি করে আমার পড়াশুনা শেষ করি, কয়েক বার বাড়ি পাল্টাতে হয়েছে নানা কারনে ।
তারপর চাকরি পেলাম , কয়েক বছর ধরে শুধুই ছুটে চললাম, শহর থেকে শহর , দেশ বিদেশ , এর মধ্যে মা ও গত হলো। এই দুই বন্ধু না থাকলে আমি হয়তো পাগল ই হয়ে যেতাম । তারপর যখন থামলাম দেখলাম তেত্রিশ বছর পেরিয়ে এসেছি ।এর মাঝে যেখানে গিয়েছি তোমাকেই খুঁজেছি। নিজের করে পাবো বলে নয় , একবার চোখের দেখা দেখব বলে । কিন্তূ কখোনো ভাবিনি তুমি আমার জন্যে আজও অপেক্ষা করে আছো ।
পাস থেকে অর্জুন বলে ওঠে, পরীনীতাই যে শ্রীনীতা ,আর আমাদের বোধীই যে তোমার সতুদাযদি জানতাম তাহলে আরো পাঁচ বছর আগেই তোমাদের চারহাত এক করতে পারতাম আমরা ।দেবাদিত্য বোধী কে বলল ,আমরা এবার উঠি ,তুই আজ শ্রীনীতার কাছে থেকে যা , যেভাবেহাত ধরেছিস তা তো আর ছাড়বি না, এতো বছর পর আমরা আর কাবাব মে হাড্ডি হবো না ।
সেদিন বসন্ত পঞ্চমী র রাত প্রায় বিগতযৌবণাদুজন নরনারীর পবিত্র ভালবাসার কাছে হার মেনেছিল । ভোরের বাঁকা চাঁদ সাক্ষী হলো একনি:স্বার্থ, স্নিগ্ধ , মধুর মিলনের ।।
সদ্য পঞ্চাশ পেরনো অন্তরঙ্গ তিন বন্ধু । তিনজনেই জীবনে সফল । একসময় কলেজে সবাই বলতো থ্রী মাসকেটিয়ার্স সেই কলেজ জীবনের বন্দ্ধুত্ব এখনো একই রকম আছে। ভিন্ন পেশা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি, তিনজনের সম্পর্কে ।
অর্জুন গোয়েঙ্কা একজন নামকরা ব্যবসায়ী।
দেবাদিত্য গাঙ্গুলী শহরের বিখ্যাত ডাক্তার আর
কর্পোরেট জগতের সফল কর্মী বোধীসত্ত বোস ।
অর্জুন এবং দেবাদিত্যর বন্দ্ধুত্ব নার্শারী থেকে আর
বোধিসত্তর সাথে পরিচয় কলেজে । তিনজনেরই
ডিপার্টমেন্ট সায়ন্স ছিল । থার্ড ইয়ারে উঠে দেবাদিত্য ডাক্তারি পড়তে চলে গেলেও যোগাযোগ অটুট ছিলো ।
কখোনো সপ্তাহে একদিন কখোনো মাসে একদিন তিনজন একত্রিত হতই । পড়াশুনার সময় টাতে
এভাবেই যোগাযোগ রাখত । তারপর কিছুদিন সেই ভাবে নিয়ম করে বসা নাহলেও যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি । তবে সবসময় সবাই উপস্থিত না থাকলেও অন্য দুইজন একত্রিত হয়েছে ।
পড়াশুনা শেষ করে অর্জুন পৈতৃক ব্যবসায়ে ঢুকেছিল। দেবাদিত্য এম ডি করে এখন নার্সিংহোম, চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত । আর বোধিসত্ত কোম্পানীর চাকরি নিয়ে এরাজ্য থেকে আর একরাজ্য কখোনো বা বিদেশ । তবে বিগত পাঁচবছর যাবত ও পুনেতে ছিল। সবে ছয়
মাস হলো কলকাতায় ফিরে এসেছে । ফিরেই আবার তিন বন্ধু প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে একত্রিত হয় ।
অর্জুন আর দেবাদিত্য সংসারী, অর্জুনের ছেলে
ম্যানেজমেন্ট পড়ছে , মেয়ে সবে কলেজ । দেবাদিত্যর একটি ই ছেলে ডাক্তারি পড়ছে দিল্লিতে। আর বোধিসত্ত বিয়েই করেনি। অন্য দুই বন্ধুর অনেক অনুরোধ সত্তেও রাজি হয় নি কিছুতেই । আত্মীয় পরিজন সে ভাবে ওর কেউ নেই । বাবা, মা দুজনেই গত হয়েছে অনেক বছর আগে ।
এবার কোলকাতায় ফেরার পর থেকে দুই বন্ধু আদাজল খেয়ে লেগেছে বোধিসত্তর বিয়ে দেবার জন্য । আজকাল ওরা বোধির নতুন ফ্ল্যাটেই একত্রিত হয় খুব আড্ডা চলে তিনজনের । অনেক
দিন আগে এরকম ই এক আড্ডায় বোধি বলেছিল
পরী নামের একটা মেয়েকে ও ভালবাসে । ভালো নাম পরীনীতা । সে ওদের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী ছিল । যখন পরী ইলেভেনে পড়ে তখন ওরা বেনারস চলে যায়। কারণ ওর বাবার ট্রান্সফার হয়ে ছিল ।পরী ও বোধী কে ভালবাসত । বছর দুয়েকের ছোট ছিল। ক্লাস আলাদা হলেও স্কুল এক ই ছিল। তাই একসাথে স্কুলে যাওয়া , টিউশনি পড়তে যাওয়া, দুজনে সবসময় খুনসুটি করার মধ্যেই কবে দুজনের মন বিনিময় হয়ে গেছে নিজেরাও বুঝতে পারেনি । পরী চলে যাওয়ার পর বোধী বুঝেছিল অন্য কাউকে ভালবাসা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। পরী ও বেনারস থেকে চিঠিতে জানিয়ে ছিল একই কথা ।
সেই বছর ই বোধীরাও কলকাতায় চলে আসে। তখন এতো ফোনের ও রমরমা ছিল না । তারপর হঠাৎ করেই ওর বাবা মারা যাওয়া, পড়াশুনার চাপ, চাকরির জন্য চেষ্টা , সংসারের নানা টানাপোড়েনে একসময় যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় । এখন, ও যে শহরেই যায় সেখানেই পরী কে খোঁজে ভাবে যদি দেখা হয ! দেখা হলেও কি চিনতে পারবে ? একে অপরকে ? সেইবার সরস্বতী পুজোর সময় পরী প্রথম শাড়ী পড়েছিল । মাথায় একপাশে হলুদ ফুল কাঁধ পর্যন্ত চুল টা ছাড়া, কানে ঝুমকো ,কপালে কারুকাজ করা টিপ, দেখতে দারুন লাগছিল । তখন ও ক্লাস টেন, আমি বারো ক্লাস । সদ্য গোঁফ ওঠা মুখটা ঘসে দিয়েছিলাম ওর মুখে , সেকি লজ্জা মেয়ের ! ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছিল , আমার দিকে আর তাকাতেই পারছিল না । বোধী বলেছিল, পরী খুব ডাকাবুকো আর ডেসপ্যারেট ছিল কারুর কথা সহ্য করতো না । বলতো, আমি জার্নালিজম পড়ব ।
দুই বন্ধু মিলে এবার জোরাজুরি করছে বিয়ে তোকে করতেই হবে । মেয়ে আমরা দেখে দেবো । বোধী বলে এই বয়েসে আর ঝামেলা করিস না তো বেশ আছি । বন্ধুরা বলে , তোর ফ্ল্যাটে চাট ছাড়া মদ খেতে রোজ রোজ ভাল লাগে না । আর তাছাড়া বুড়ো বয়েসে কে দেখবে বলতো তোকে ।
এবার বিয়েটা তোকে করতেই হবে বোধী , আমরা
কোনো আপিত্তি শুনব না । পুরনো প্রেম অনেক দিন বাঁচিয়েছ আর দরকার নেই ।
সেদিন ও তিনজনে একসঙ্গে বসে আড্ডা চলছিল ।
হটাৎ দেবাদিত্যর ফোন বেজে ওঠে । দেবাদিত্য দেখল শ্রীনীতার ফোন । শ্রীনীতা জার্নালিস্ট । বছর পাঁচেক আগে পরিচয় । ওর নার্সিংহোমের জমি নিয়ে প্রমোটারের সাথে গণ্ডগোলের খবরটা শ্রীনীতা প্রকাশ্যে এনেছিল । সেই সময় ওর সাথে পরিচয় । আর সেই পরিচয় এখন বন্দ্ধুত্বে পরিণত।
দেবাদিত্য আর অর্জুন মাঝে মাঝে শ্রীনীতার ফ্ল্যাটে যায় , শ্রীনীতাই ডাকে। তাছাড়া ওর সাথে গল্প করতে ওদের ও ভালো লাগে কারণ শ্রীনীতা খুব এনার্জেটিক , পসিটিভ, আর সাহসী একটা মেয়ে , বয়স ! বোঝা যায় না , তবে ওদের থেকে কমই হবে , বিয়ে থা করেনি । বয়স্ক এক কাজের মহিলা কে নিয়ে ফ্ল্যাটে একাই থাকে । দু- একবার ওরা আড্ডার ছলে জিগ্গেস করেছে বিয়ের ব্যাপারে শ্রীনিতা এড়িয়ে গিয়ে বলেছে, সবাই কে জীবনে একি কাজ করতে হবে এমন কোনো মানে নেই ।
আর বিশেষ কোনো কথা হয়নি এব্যপারে । একটা সফিস্টিকেট সম্পর্ক একে অপরকে শ্রদ্ধা করে সেখানে বেশী কথা জিজ্ঞাসা সা করাও যায় না ।
শ্রীনিতার সাথে কথাবলা শেষ হলে দেবাদিত্য
জানালো আগামী বুধবার আমাদের নিমন্ত্রণ ডিনারে। শ্রীনীতা চার মাস পর দেশে ফিরেছে
ইউরোপ ট্যুর থেকে ,আর ঐ দিন সরস্বতী পুজোও আছে । আমি ও বলে দিলাম আমরা এবার থ্রীমাসকেটিয়ার্স ই যাব। অর্জুন বলল বোধী ঐ দিন ফাঁকা রাখিস তিনজন একসাথে যাবো । শ্রীনীতা খিচুড়ি টা ব্যাপক রাঁধে । বোধী রাজী
হয়ে যায় ।
বুধবার সন্ধেবেলা তিনমূর্তি হাজির শ্রীনীতার ফ্ল্যাটে। কলিং বেল বাজতেই কাজের মাসি
এসে দরজা খুলে বসার অনুরোধ করে গেছে ।
শ্রীনীতা ও কিচেন থেকে চিৎকার করে বলেছে
তোমরা বোসো আমি কফি নিয়ে এক্ষুনি আসছি ।
মাঘ মাসের মার্জিত ঠান্ডা, সবে সন্ধে, হাল্কা বাতাস
আঠারো তলার ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে গোটা কলকাতা শহরকে মনে হচ্চে লক্ষ লক্ষ জোনাকি দিয়ে সাজানো হয়েছে । দেবাদিত্য, অর্জুন আর বোধী তিনজনেই ব্যালকনির সোফা তে বসে বাইরের দৃশ্যে মশগুল । প্রায় দুহাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট, বসার ঘরটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে , ঠাকুর ঘর থেকে ধূপের গন্ধ ম ম করছে,
খুব মধুর সুরে বাজছে রবীন্দ্র সঙ্গীত--একটুকু ছোঁয়া লাগে .... ।
শান্তিময় পরিবেশ , সকলের মেজাজ টাও বেশ ফুরফুরে । অর্জুন বলল, বোধী, শ্রীনীতা খুব রুচিশীল আর সত্যি কথা বলতে পিছপা হয় না। আর ওর মনটা ও খুব ভালো । পরিচয় হলে দেখবি কেমন আন্তরিক মানুষ ও । এমন ভালো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার । বলতে বলতে শ্রীনীতা
কে দেখা যাচ্চে কফির ট্রে হাতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে । তিনজনেই তাকিয়ে আছে সেদিকে , বোধী দেখছে অবাক হয়ে , প...রী ! !
সেই চেনা ছোট্ট মেয়েটা ! সেই সাজ ! হলুদ শাড়ী
খোঁপায় হলুদ ফুল, মুখে মিষ্টি একটা হাসি, প্রাণবন্ত, যৌবনের গোধূলী বেলাতেও এতো লাবণ্য , মাখনের মত ত্বক এখনো পুরুষকুলকে
কুপোকাত করতে পারে ।কিন্তূ একটু ও এনার্জি কমেনি । একই এনার্জি নিয়ে কফির ট্রে টা টেবিলে রেখেই বলল, " আমি নিজে হাতে তোমাদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম । কেমন আছো তোমরা বলো। তারপর বোধীর দিকে তাকিয়ে বললো , এই বুঝি আমার নতুন বন্ধু । হাই ! বলে হাত টা বাড়িয়ে দিয়েছে শ্রীনীতা । বোধী ও হাত টা বাড়িয়েছে হ্যান্ড শেক করার জন্যে । হাতে হাত মিলেছে কিন্তু বোধীর মুখের দিকে তাকিয়েই আছে শ্রীনীতা উল্টো দিকে বোধীর ও একি অবস্থা ।
মুখটা ভীষণ চেনা লাগছে, টিকালো নাক ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি, মোটা গোঁফ, টান টান নির্মেদ চেহারা , প্রশ্ন খোঁজা দুটো চোখ , রিমলেস চশমা, ঐ চোখ আমার খুব চেনা । স..তু ..দা .!! তুমি
সতুদা ? আই মিন তুমি রঘুদেব পুরের বোধীসত্ত বোস ? এতদিন পর ! কোথায় ছিলে ! কত, খুঁজেছি ! তেত্রিশ বছর পর তোমায় দেখছি ।
একসময় হন্যে হয়ে তোমার ঠিকানা খুঁজেছি ।
এবার বোধী শ্রীনীতা কে থামিয়ে বলল, "আরে দাঁড়া আস্তে , এতো প্রশ্নের উত্তর একসাথে কি করে দেবো । আর সব এই মুহূর্তেই শুনে নেবে" ?
দেবাদিত্য আর অর্জুনের অবস্থা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
একটু পরেই অবশ্য সব পরিস্কার হয়ে গেলো ওদের কাছে । আর এও বুঝতে পারলো যে শ্রীনীতা ই বোধীর সেই পরী ।
বোধী বলল , আমি ও তো তোকে কত খুঁজেছি । তুই বা এতো দিন কোথায় ছিলি ? আর পরীনীতা
থেকে কিভাবে শ্রীনীতা হয়ে গেলি সেটাও বুঝতে
পারছি না ! হারানো ধন খুঁজে পেয়ে উভয়ের ই চোখের কোনে জোয়ার । শ্রীনীতার ভীষণ ইচ্ছা করছে বোধীকে জড়িয়ে ধরে বুকের ওপর মাথা রাখতে । মনে হচ্চে বুকের ওপর ঘুঁষি মেরে জিজ্ঞেস করে, আমায় ভুলে এতো দিন থাকতে পারলে ? দুই হাত আলগা করে বাড়িয়ে দিয়েছে বোধী, শ্রীনীতাও লজ্জা ভেঙে সঁপে দিয়েছে বোধীর
বাহু বন্ধনে । চিবুক বেয়ে জলের ধারা নেমে আসছে দুজনের । সেই চিরন্তন প্রেম , শরীর কে
উহ্য রেখে মনের অনুভূতিতে মিশে থাকা দুটি হৃদয়
একাকার হয়ে যাচ্চে , ঠিক বংশীধারী আর রাধার প্রেমের মত । পরম সুখের এক মুহূর্ত ।
একটু বাদে দেবাদিত্য আর অর্জুনেরব হাততালি র আওয়াজে দুজনের সম্বিত ফেরে । দেবাদিত্য বলে তোমরা বোসো , আমি কমলা মাসিকে কফি আনতে বলেছি । সবাই কফি খেতে খেতে শুনব তোমাদের ঠিকানা হারানোর গল্প ।
শ্রীনীতা সোফাতে বসেছে, পাশে বোধী , শ্রীনীতার
হাতটা বোধীর হাতের মধ্যে । শ্রীনীতা বলতে শুরু করল , " বাবার সাথে বেনারস আসার পরের বছরই স্ট্রোকে মা শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিল।কলেজ পাশ করা মাত্রই বাবা, মা দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পরলো আমার বিয়ে নিয়ে । আমি কিছুতেই রাজী
হলাম না ।
আমি মাস্টার্স করবো জার্নালিজম পড়ব , আমার চোখে তখন স্বপ্ন । আর সতু দা ছাড়া আর কাউকে আমি বিয়ে করবো না ।একথাও বলেছিলাম বাবাকে । বাবা বলল , ঠিক আছে তাকে খবর দে আমি তার সাথেই তোর বিয়ে দেবো । পুরো ক্ষেপে উঠলো । আমি ছুটলাম রঘুদেব পুরে , কিন্তূ তোমাদের কোলকাতার ঠিকানা কেউ দিতে পারলো না । হতাশ হয়ে বেনারস ফিরে গেলাম । ওখানে গিয়ে দেখলাম বাবা এফিডেভিট করে আমার নাম শ্রীনীতা করে দিয়েছে । কেনো বাবা এরকম করলো জানতে পারিনি কারণ বেনারস ফেরার পরের দিনই বাবা স্নান করতে গিয়ে গঙ্গার ঘাটে পড়ে মারা যায় । অসুস্থ মা কে নিয়ে শুরু হয় আমার একার পথ চলা । মাস্টার্স কমপ্লিট করেই ওখানে একটা চাকরি করি কয়েক বছর । তারপর মা ও একদিন মারা গেলো । আমি একদম একা হয়ে গেলাম ।ট্রান্সফার নিয়ে ফিরে এলাম কলকাতা শহরে ।
বিগত প্রায় বিশ বছর ধরে তোমাকে খুঁজে চলেছি এই শহরে । অবশেষে আজ সেই মূহুর্ত উপস্থিত ।
বোধী বলল, যে বছর তোমরা চলে গেলে সেই বছরই আমরাও কোলকাতায় চলে এলাম বাড়ি ভাড়া নিয়ে । এসে কলেজে ভর্তি হলাম সে খবর তোমায় দিযেছি । আর সেটাই তোমাকে লেখা আমার শেষ চিঠি । তারপর ই আর যোগাযোগ করতে পারিনি ।কারণ , বাবা এখানে যে প্রেসে কাজ করতো সেখানে মিথ্যা চুরির দায়ে বাবাকে জেলে পাঠায় মালিক । তিনদিন জেল থাকার পর বাড়ি ফিরে বাবা আত্মহত্যা করে । অথেই জলে পড়ি আমি আর মা । গ্রামের সম্পত্তি বিক্রি করে আমার পড়াশুনা শেষ করি, কয়েক বার বাড়ি পাল্টাতে হয়েছে নানা কারনে ।
তারপর চাকরি পেলাম , কয়েক বছর ধরে শুধুই ছুটে চললাম, শহর থেকে শহর , দেশ বিদেশ , এর মধ্যে মা ও গত হলো। এই দুই বন্ধু না থাকলে আমি হয়তো পাগল ই হয়ে যেতাম । তারপর যখন থামলাম দেখলাম তেত্রিশ বছর পেরিয়ে এসেছি ।এর মাঝে যেখানে গিয়েছি তোমাকেই খুঁজেছি। নিজের করে পাবো বলে নয় , একবার চোখের দেখা দেখব বলে । কিন্তূ কখোনো ভাবিনি তুমি আমার জন্যে আজও অপেক্ষা করে আছো ।
পাস থেকে অর্জুন বলে ওঠে, পরীনীতাই যে শ্রীনীতা ,আর আমাদের বোধীই যে তোমার সতুদা
যদি জানতাম তাহলে আরো পাঁচ বছর আগেই তোমাদের চারহাত এক করতে পারতাম আমরা ।
দেবাদিত্য বোধী কে বলল ,আমরা এবার উঠি ,
তুই আজ শ্রীনীতার কাছে থেকে যা , যেভাবে
হাত ধরেছিস তা তো আর ছাড়বি না, এতো বছর পর আমরা আর কাবাব মে হাড্ডি হবো না ।
সেদিন বসন্ত পঞ্চমী র রাত প্রায় বিগতযৌবণা
দুজন নরনারীর পবিত্র ভালবাসার কাছে হার মেনেছিল । ভোরের বাঁকা চাঁদ সাক্ষী হলো এক
নি:স্বার্থ, স্নিগ্ধ , মধুর মিলনের ।।
No comments:
Post a Comment