![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
তিন্নির জন্য
তুষার ভট্টাচাৰ্য
আজ সকাল থেকেই মণিময়বাবুর মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে l আর সুধা কেঁদেই চলেছে l খুবই দুঃখজনক ঘটনা l কিন্তু মেনে নিতে হবে l জীবনে সবকিছুই তো মেনে নিতে হয় l মানিয়ে নিতে হয় l এটাই নাকি জীবন l
আজ সকালেই একমাত্র পুত্রবধূ পরমা, নাতনি তিন্নিকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে l
মণিময় বাবুর একমাত্র পুত্র তনুশ্যাম কলেজের অধ্যাপক l পরমারও একই পেশা l ভালবেসে দুজনের বিয়ে l কিন্তু ইদানীং রোজ দুজনের ঝগড়া, খোটা খুটি লেগেই রয়েছে l মাঝে মধ্যেই পরমা রাগ করে তিন্নিকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় l ব্যাপারটা এই পর্যন্ত থেমে ছিল l কিন্তু গতকাল রাত্তিরে পরমা সুধাকে জানিয়ে দিয়েছে -আগামীমাসে ওরা নাকি ডিভোর্স করবে l
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মণিময় বাবু রাত্তিরে সুধার মুখে এই কথা শুনে বেশ আশ্চর্য হন l কী দিনকাল পড়ল l কথায় কথায় ডিভোর্স l ভালবাসার শিকড়ের মায়াটান বলে এখন আর কিছু নেই l
মুশকিলটা হচ্ছে, আদরের নাতনি তিন্নি পর হয়ে যাবে এটা কিছুতে ভাবতেই পারেন না মণিময় বাবু l আদরের নাতনিটা দাদু আর ঠাকুমা বলতে অজ্ঞান l ও চলে যাবে ভাবতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল মণিময়বাবুর l
দু'সপ্তাহ কেটে গেছে l শেষে নিরুপায় হয়েই রোববার সকালে ট্যাক্সিতে চেপে মণিময়বাবু পৌঁছলেন বউমা পরমার বাড়ি l তাকে দেখতে পেয়েই তিন্নি ছুটে এল l
মণিময়বাবু তিন্নিকে আদর করতে করতে বললেন - চল মা তোকেই নিয়ে যাবো আমাদের কাছে l
পরমা এই কথা শুনে বলল - তিন্নি আপনাদের না দেখে সারাদিনরাত শুধু কান্না কাটি করে l
আমিও রাগের মাথায় চলে এসেছিলাম বাবা l আপনি আপনার ছেলেকে একটু বুঝিয়ে বলুন - রাত্রি বেলায় অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করে যেন না ফেরে l আজকাল আমাকেও পেটাতে শুরু করেছে l
তিন্নির জন্যই ফিরছি l নইলে ডিভোর্স করে দেবই ভেবেছিলাম l এই বলে পরমা কেঁদে ওঠে l
মণিময় বাবু পরমার কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হন l এত অধ:পতন হয়েছে তনুশ্যামের ! ড্রিঙ্ক করে বাড়ি ফেরে, পরমাকে মারধোর করে l এব্যাপারে সুধাকে জিজ্ঞেস করতে হবে l ও নিশ্চয়ই জানে l দোতলায় থাকে তনুশ্যাম l আর নীচের তলায় মণিময়বাবুরা l তাই রোববার ও ছুটির দিন ছাড়া তনুশ্যামের সঙ্গে দেখাও হয় না l
তনুশ্যামকে যতটা পারবেন বোঝাবেন তিনি l আগে তো এমন ছিল না l অন্য কোনও মহিলার পাল্লায় পড়ে নি তো? অন্যদিকে বউমা পরমা খুব ভাল মেয়ে l তাছাড়া ওর বাবা মা এখন আর বেঁচে নেই l ও যাবে কোথায় ? এই সব ভাবতে ভাবতে মণিময়বাবুর নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় l
' ও দাদু কখন ঠাম্মির কাছে যাবো '- তিন্নির এই প্রশ্নে মণিময়বাবু সহসা সম্বিৎ ফিরে পান l
ট্যাক্সিতে তিন্নি আর পরমার সাথে ফেরার সময় মণিময় বাবুর মনটা হঠাৎই অনাবিল আনন্দে ভরে গেল l পার্কে অনেকগুলি বাচ্চা ছেলে মেয়ে খেলছে l তার মনে হল ওইখানে তিন্নিকে নিয়ে নেমে শৈশবের গোল্লা ছুট, চোর চোর খেলা খেলতে l
তিন্নিকে আবার পরমা নিয়ে যাবে না তো? এই ভাবতে ভাবতে বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেন মণিময়বাবু l দেখলেন - দরজা খুলে সুধা দাঁড়িয়ে আছে আদরের নাতনি তিন্নির অপেক্ষায় l
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment