1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Friday, January 13, 2023

সত্যজিতের স্বপ্ন

সত্যজিতের স্বপ্ন

মিঠুন মুখার্জী 

সত্যজিৎ বড় হয়ে একজন ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত গাইডেন্স-এর অভাবে তার স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। অনেক কষ্ট করে উচ্চশিক্ষা লাভ করলেও একটা সরকারি চাকরি জোগাড় করতে পারে নি। এমএসসিতে বায়োলজিতে প্রথম শ্রেণী পাওয়া ছেলেটি শেষমেষ শপিংমলের হিসাবরক্ষকের কাজ বেছে নিয়েছিল। ডাক্তার হতে না পারলেও কোন কাজকেই সে ছোট মনে করত না। সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। আমাদের দেশে এমন কত মানুষ আছেন যাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। তার অনেক কারণ। 

          বাবা শশীভূষণ সত্যজিতের প্রতি তেমন নজর দিতেন না। তার জীবনের যেটুকু উত্তরণ ঘটেছে তাতে তার মা রাধা দেবীর অবদান। নিজে অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু সাধারণ কাস্টের ছেলে হওয়ায় সব জায়গায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া অদৃষ্ট তার সঙ্গ দেয়নি। সত্যজিতের সততাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অসৎ ব্যক্তিরা অনেক এগিয়ে গেছে। সে শুধু কষ্ট পেয়েছে। 

         শপিংমলে কাজ করতে করতে সে ভাবতো--- "ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হতে পারিনি। তাই কি হয়েছে। আমার মতো কত মানুষ আছে যাদেরও স্বপ্ন পূরণ হয় নি। তাই বলে হতাশা নিয়ে পিছিয়ে যেতে হবে। মোটেও না। এমন একটা কাজ করতে হবে যার মাধ্যমে সকল মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাওয়া যায়।" এই চিন্তা সত্যজিৎকে ঠিক মতো ঘুমতে দিত না। পাড়ার কিছু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্তে আসে তারা--- 'প্রতি রোববার তারা বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবে। এর ফলে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া সহজ হবে। সারা সপ্তাহ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট চলবে।' এই উদ্যোগকে সকলে স্বাগত জানায়। 

       নিজের পাড়া দিয়েই সত্যজিৎ ও তার বন্ধুরা এই কাজটি শুরু করেছিল। প্রথম রবিবারে একশোজন রক্তদান করেছিলেন। দ্বিতীয় রোববার পাশের গ্রামে একশো দশ জন, তৃতীয় রোববার আরেকটি গ্রামে নব্বই জন। এভাবে এক বছরে চার হাজার প্যাকেট রক্ত তারা ব্লাড ব্যাংকে তুলে দিয়েছিল। তাছাড়া সরাসরি অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার জন্য বহু ডোনারও জোগাড় করে। দেখতে দেখতে সত্যজিৎ ও তার বন্ধুদের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারা একটা ওয়েলফেয়ার তৈরি করে। যার প্রধান দায়িত্বে ছিল সে। তারা ক্যাপশন তৈরি করেছিল--- "রক্ত দিন জীবন নিন"। পাড়ায় পাড়ায় ছুটির দিনগুলিতে সকলে মিলে এক ঘন্টা রক্তদানের সচেতনতামূলক ক্যাম্প শুরু করে। তাতে রক্ত দিলে শরীরে কি উপকার হয় তা মানুষ জেনে খুব উৎসাহী হত। পাঁচ বছরে সারাদেশে দৃষ্টান্ত গড়ে তারা। তাদের এই সমাজ সেবামূলক কাজে অনেক বড় বড় ব্যক্তি, নেতা, প্রশাসনিক কর্তা যোগ দিয়েছিল। সত্যজিতের সত্যের পথে এগিয়ে চলা এভাবেই স্বপ্নকে পূরণ করেছিল।

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment