1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, April 15, 2023

রক্ষা

ছবি : ইন্টারনেট
 

রক্ষা

অর্পিতা ত্রিপাঠী

বাইরে ঝিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বল্টু তার ছিপ চার খলুই এসব নিয়ে ঘোড়াডুবির পুকুরের দিকে এগোল। শ্রাবনের এই ভরা দুপুরে বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছে। এই সুযোগ কেউ সহজে ছাড়ে! কিছুক্ষণ আগেই দেখেছে বল্টু সামনের পুকুর থেকে কানে হেঁটে উপরে উঠে আসতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে কৈমাছগুলো। ছিপ লাগবে না, হাতেই ধরা যাবে! তবে এ পুকুরে মাছ ধরবে না সে। 

সে যাবে চৌধুরীদের ঘোড়াডুবির পুকুরে। মাছ ধরার বরাবর শখ তার। পড়াশোনা ফেলে খেলাধুলো ফেলে মাছ ধরতে দিলে সে আর কিছুই চায় না। তা এসব কি আর বাড়িতে বলে বোঝান যাবে, না কেউ তাকে বুঝবে?

আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে যাচ্ছে সে। সর্বাঙ্গ ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। ঝিমঝিম বৃষ্টি ক্রমে মুষল ধারায় পরিণত হচ্ছে। বাগানে এসে আরাম করে একটা জায়গা দেখে নিয়ে বসল। উঃ এতটা পথ আসতে হাঁপিয়ে গেছে একেবারে। 

এমন সময় একটা খুনখুনে গলা পেছন থেকে বলল, "কিরে মাছ ধরতে এয়েছিস বুঝি? হিহিহি! ওই দেখ, কই মাগুর সিঙ্গী হেঁটে হেঁটে চলেছে , দে না বাপু ধরে একটা করে, আমি খাই ।"

পিছন ফিরতেই বল্টু দেখে ও বাবা! চৌধুরীদের বাড়ির সেই পাগলী পিসী না? 

বাগানের পেছনে গজানন চৌধুরীর প্রকাণ্ড বাড়ি। কিন্তু কেউ সেখানে থাকে না , থাকে কেবল এক তাদের কোন দূ র-সম্পর্কের বুড়ি পিসী। তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে তার।

গাঁয়ের লোক অপেক্ষা করে আছে কবে বুড়ি মরবে আর তার বাড়ি বাগান সব কিছু হাত করে নেবে! কিন্তু বুড়ি আর মরে না ।তার বয়সের হিসাবও কেউ জানে না। বল্টুর দাদু, বল্টুর দাদুর বাবাও নাকি বুড়িকে একই অবস্থাতে দেখেছে।

বল্টু একটু চমকে গিয়ে বলল, "ও পিসি! তুমি মাছ খাও নাকি? বিধবা মানুষ !"

"আজকাল খাব ভাবছি বাপু। তা খাব না কেন র‍্যা? তোরা খাবি, তোর মা বাপেরা খাবে, আর আমি মাছ খেতে পাবো না! দে বলছি বল্টু ! এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগছে না আমার!"

বল্টু বলল, "আচ্ছা, আচ্ছা দিচ্ছি । বলে একখানা কৈ মাছ বহু কষ্ট করে ধরে সে বুড়িকে দিতে যাবে এমন সময় হঠাৎ কাদায় পা পিছলে একেবারে পুকুরের কিনারায় গিয়ে পড়ল। তার হাতে ধরা মাছটা পড়ল পুকুরে, অন্য মাছগুলো মনের আনন্দে নেচে নেচে বল্টুর সামনে দিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করল। কিন্তু বল্টু কাদায় মাখামাখি অবস্থা থেকে কিছুতেই উঠতে পারছে না । কিছুতেই পারছে না! পরপর তলিয়ে যাচ্ছে! সাঁতার জানে না সে! এটা সে শেখেনি, অবশ্য শেখাটা তার উচিত ছিল বলেই এখন খুব মনে হচ্ছে। হঠাৎ কোত্থেকে দুটো সাঁড়াশির মতো হাত তার দুই বাহুতলের নীচে চলে এল আর তখন এই অবস্থাতেও বল্টুর বড্ড কাতুকুতু লাগল।

সে হেসে বলল, "কে কাতুকুতু দিচ্ছে আমায়?" 

"মাঝপুকুরে একটা ঘূর্ণি আছে, পড়লে তো আর রক্ষে নেই রে মুখপোড়া! তোকে বাঁচাতেই তো এলুম!" বলে সেই সাঁড়াশির মতো হাত দুটো বল্টুকে একেবারে টেনে তুলল পুকুরের পাড়ে। বল্টু সামনে ভালকরে দেখতেই দেখল সেই অঝোর বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে সেই পিসী,কিন্তু ওমা ওনার হাতদুটো অমন তাল গাছের মতন লম্বা হল কি করে! হেসে বলল পিসী, "অমন হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে দেখছিস কি এগুলো না থাকলে তোকে বাঁচাতে পারতুম? যাহ, এসব কাউকে বলিসনি। বাড়ি যা। গিয়ে ঘুম দে গে। আর শোন বহুদিন বিধবা হয়ে মাছ খেতে পাইনি তাই এখনও আমার নোলা বড় সরসর করে। আমি পুকুর পাড়ে আসি, মাছ ধরার চেষ্টা করি, কিন্তু বেঁচে থাকতে যা নয় বচ্ছর থেকে অভ্যেস করেছি সে অভ্যাস আর মরণের পরে ছাড়বো কি করে বল? মাছ আর ধরতে পারিনে নিজে থেকে। তাই তোকে বলা... যাকগে।"

বল্টু অবাক হয়ে বলল, "তাহলে তাহলে কি তুমি বেঁচে নেই পিসি?"

" তা বেঁচে তো নেই বহুদিন!"

"তাহলে তোমায় যে প্রায় প্রায়ই দেখা যায় চৌধূরী বাড়ির বাইরে বাগানে ঘুরে বেড়াতে?"

"ওসব না দেখালে চারিদিক থেকে রক্তখেকোর দল যে বাড়ি বাগান পুকুর সব গ্রাস করে নেবে রে!তারপর বড় বড় বিল্ডিং তুলবে পুকুর বুজিয়ে, আমার অমন সাধের আম গাছ গুলো কেটে কেটে পার্ক বানিয়ে ফেলবে আর গুচ্ছের বাজনা বাজিয়ে ফিস্টি করবে! সে ভালোই বুঝে গেছি আমি, তাই দেখা দিই মাঝেমাঝে। তোরা ভাবিস বুঝি আমি বেঁচে আছি, হি হি হি তা একরকম এভাবে বেঁচে আছিই বটে।"

পিসি বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায় স্বাভাবিকভাবে আর বল্টু বাড়ির পথ ধরে। না, কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলবে না সে তবে নিজেই আসবে মাঝে মাঝে বাগানে। চৌধুরীদের বাগানের কাঁচা মিঠেআমগুলোর স্বাদই আলাদা! আম খেতে বারণ করবে না পিসী এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment