1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, April 15, 2023

নিরুদ্দেশ

ছবি  : ইন্টারনেট 

নিরুদ্দেশ

রাজশ্রী দে

বোম্বে মেল ছুটে চলেছে হাওড়ার দিকে। রাতের অন্ধকারে ট্রেনের গমগম আওয়াজ , যাত্রীরা সব শুয়ে পরেছে। কেউ কেউ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, কেউ অবিরাম নাক ডেকে চলেছে।নাক ডাকার আওয়াজে অনেকেই বিরক্ত, ঘুমের ব‍্যাঘাত ঘটছে।

সেন পরিবারের সকলে এই ট্রেনের যাত্রী। মি.সেন,মিসেস সেন., দুই ছেলে ,  দুই বৌমা।সকলে ঘুমিয়ে পরেছেন ট্রেনের দুলুনিতে। একজনের চোখে শুধু ঘুম নেই, তিনি হলেন মিসেস সেন।  তিনি বার বার বাথরুমে যাচ্ছেন, আর সিটে এসে বসছেন, লোয়ার বার্থ ,কষ্ট হচ্ছে বসতে। সামনের লোয়ারে শুয়ে আছেন মি.সেন, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তিনি। ট্রেনের গতি কমে আসছে, ট্রেন একটা স্টেশনে ঢুকলো। মিসেস সেন তাঁর  ভ‍্যানিটি ব‍্যাগটা নিয়ে ধীরে ধীরে কামরার দরজায় এসে দাঁড়ালেন, তারপর  নেমে গেলেন স্টেশনে।

ট্রেন ছেড়ে দিল,  আলো ঝলমলে স্টেশন ছাড়িয়ে  অন্ধকারের মধ্যে ছুটতে লাগল।ভোর হলে ছোট ছেলে ওপরের ব‍্যাঙ্ক থেকে নেমে দেখলো মা সিটে নেই। ভাবলো হয়তো বাথরুমে গেছেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ও মিসেস সেন এলেন না। ছেলে বাথরুমের কাছে গিয়ে দেখলো এখন ও সবাই ঘুমিয়ে আছে। তাই দুটো বাথরুমই  ফাঁকা।  তাহলে মা গেল কোথায়। কোনরকমে বার্থে এসে সবাইকে  জাগালো।মি সেন অবাক  তার সঙ্গে ভীত, মিসেস সেন ওরফে অনুপমা দেবী খুব শান্ত প্রকৃতির ,  কোথায় যাবেন তিনি কেউ বুঝতে পারছে না। ছেলে বৌমারা ট্রেনের মধ্যে  খুঁজতে শুরু করল। এখন সবাই প্রায় ঘুম থেকে উঠে পরেছে, সবাই যে যার মতো পরামর্শ দিচ্ছে। একটা স্টেশনে ট্রেন থামলো, পুলিশ কে জানানো হলো। কয়েক ঘন্টা ট্রেন থামিয়ে তোলপাড় করে খোঁজা হল, কিন্তু কোন হদিশ পাওয়া গেল না।স্টেশন মাস্টার খুব সাহায্য করলেন, রাতে যে সব স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়েছিল সেখানে ও খবর নেওয়া শুরু হল। 

আগের দিন বোম্বে মেলে ওঠার পর গল্প করতে করতে ফিরছিলেন সেন পরিবার। গল্পের বিষয় বস্তু ছিল মিসেস সেনকে নিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে ক‍্যান্সারে ভুগছেন মিসেস সেন। সেজন্য বার বার তারা সপরিবারে আসে মুম্বাইয়ে,  দুজন বয়স্ক মানুষকে একা ছাড়া যায় না। ছেলেরাই আসে প্রতিবার , মাঝে মাঝে বৌমারা ও আসে। এজন্য বিপুল পরিমাণে টাকা খরচ হচ্ছে মি .সেন জানালেন। এক বৌমা বলল প্রচণ্ড ধকল হয় মুম্বাই  আসতে । ছেলেরা জানালো অফিস থেকে ছুটি পেতেও তাদের কতো প্রবলেম হয়। আর ছোট বৌমা বলল মায়ের রাজকীয় অসুখ, কতদিন এরকম করে ভুগবেন তার ঠিক নেই। নীরবে শুনে গেলেন মিসেস সেন, তার তো কিছু বলার নেই। এই কঠিন অসুখ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে এজন্য তো একমাত্র তিনিই দায়ী।পরিবারের সবাই অভিযোগ জানাবে এটাই তো স্বাভাবিক।

ট্রেন অনেক ঘন্টা লেট করে অবশেষে হাওড়ায় পৌঁছলো। দুই বৌমাকে নিয়ে কলকাতা ফিরলেন মি .সেন।ছেলেরা মায়ের সন্ধানে বেড়িয়ে পরেছে , তারা আর হাওড়া অবধি আসে নি।

অনেক বছর কেটে গেছে মিসেস সেনের আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। খবরের  কাগজ , টিভি কোন কিছুই বাদ রাখে নি পরিবার, কিন্তু তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। তিনি হারিয়ে গেছেন। নিজের থেকে হারিয়ে গেলে তাকে আর পাওয়া যায় না। সংসারে যাদের জন্য তিনি বছরের পর বছর নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন আজ সেই সবকিছুর প্রতিদান  পেলেন। মিসেস সেন বুঝে গেলেন এ পৃথিবীতে কেউ কারোর নয়। তাই হারিয়ে গেলেন তিনি............

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment