1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, April 15, 2023

নেতাজির আদর্শ হয়ে উঠুক আগামীর পথ চলা

ছবি : ইন্টারনেট

 

নেতাজির আদর্শ হয়ে উঠুক আগামীর পথ চলা

পাভেল আমান

প্রতিবছর ২৩ শে জানুয়ারি মহাসমারোহে নেতাজির জন্ম দিবস আমরা পালন করি। প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে মঞ্চে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিটিং মিছিলে অনেক গাল ভরা কথা স্লোগান তুলি। কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত জীবনে তার আদর্শ জীবন দর্শন খুব একটা মেনে চলি না। আমাদের আনুষ্ঠানিকতা ও লৌকিকতার মধ্যেই থেকে গিয়েছে নেতাজি স্মরণ। আমরা ওতো পথে ভাবে জীবনের পথ চলাতে তাকে গ্রহণ করতে পারেনি। এজন্যই আমরা বাঙালিরা বিচ্ছিন্ন দিকভ্রষ্ট বিভ্রান্ত পিছিয়ে পড়ছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সুভাষ অদম্য মানসিকতা সংগ্রামী চেতনা আপসহীন মনোভাবের মধ্যে দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন দেশমাতৃকার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ। বাঙালি জাতিকে উদ্বেলিত ও অনুপ্রাণিত করেছিলেন জড়তা সংকীর্ণতা পিছুটান ভেদাভেদ পিছনে ফেলে নীতি আদর্শে মূল্যবোধকে স্থান দিয়ে ব্যক্তি সত্তাকে জাগ্রত করে সম্মুখে এগিয়ে চলা। সেখানেই লুকিয়ে আছে উত্তরণ ও দেশ গঠনের চাবিকাঠি। সারাটা জীবন দেশ সেবার  ঐক্য সম্প্রীতি সৌহার্দ্য ও সর্বোপরি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত বর্ষকে স্বাধীন করার জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। 

সুভাষ বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” কিন্তু সে রক্ত হিন্দু না মুসলিম নাকি শিখের তা তিনি দেখেননি। দেশ নায়কের এমন মনোভাব হওয়াটাই স্বাভাবিক। উপরোক্ত ঘটনা ১৯৪৩ সালের শেষের দিকের। নেতাজী তখন সিঙ্গাপুরে। সেখানে ব্রিজলাল জয়সোয়াল তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। এই ব্রিজলাল ছিলেন সিঙ্গাপুরের অত্যন্ত ধনী এক ব্যবসায়ী। পারিবারিক ব্যবসা সিঙ্গাপুরেই। গুজরাতি ব্যবসায়ীর সিঙ্গাপুরের চেট্টিয়ায় একটি মন্দিরও রয়েছে। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের ফান্ডে অর্থদান করতে চাইলেন। নানা কথোপকথনের পর নেতাজী ব্রিজলালকে বলেন, “আপনি সিঙ্গাপুরের ধনীদের মধ্যে অন্যতম। দেশের মাটির মানুষের সাহায্যে আপনি সাহায্য করবেন। আপনাদের মতো মানুষরাই তো আদর্শ স্হাপন করবেন। তা দানটা কি আপনি করবেন, নাকি চেট্টিয়ার মন্দির কর্তৃপক্ষ করবে?”ব্যবসায়ী বলেছিলেন, দানটা চেট্টিয়ার মন্দির কর্তৃপক্ষ করবে কিন্তু তাঁর একটা আবদার রয়েছে। কি সেই আবদার? নেতাজীকে তিনি বলেন, তিনি যদি অনুগ্রহ করে তাঁদের মন্দিরে পদধূলি দেন তাহলে সেখানেই তাঁরা তাঁদের অনুদান হস্তান্তরিত করবেন। এমন হলে তাঁরা ধন্য হয়ে যাবেন।

এই প্রসঙ্গেই নেতাজীর উত্তর ছিল, “মন্দিরে আমি পদধূলি দেব কেমন করে ? ভক্তদের পদধূলি তো মাথায় তুলে নিতে যাব। আপনি শুনে থাকবেন আমি মাঝেমাঝেই রামকৃষ্ণ মিশনে যাই। কিন্তু সেটা ব্যক্তিগতভাবে, সুভাষ বোস হিসাবে। কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসাবে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মন্দিরে যাওয়া তো সম্ভব নয়।” ব্যবসায়ী জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন নয়, নেতাজি? আপনি তো হিন্দু? নেতাজির সাফ উত্তর  না । সুভাষ বোস হিন্দু। নেতাজি ,শুধুমাত্র ভারতীয়।ইংরেজদের অপচেষ্টাই যে ভারতের হিন্দু-মুসলমানকে পরস্পরের প্রতি বিদ্বিষ্ট করে তুলেছে এই সত্য সুভাষ দেশের বাইরে থেকে বার বার জানাতে পেরেছিলেন। ১৯৪৪ সাল। টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের সামনে বক্তৃতা দিলেন তিনি। সে বক্তৃতায় অতীত ভারতের দুটি গৌরবময় পর্বকে চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, ‘‘ গুপ্ত সম্রাটদের সময়ে ভারত উন্নতির শিখরে পৌঁছে ছিল মুঘল সম্রাটদের শাসনকাল পুনরায় ভারতের এক গৌরবময় যুগ"।হিন্দু-পুনরুত্থানবাদীরা গুপ্ত যুগের কথা বলেন, মুঘল আমল সম্বন্ধে নীরব থাকেন। কথাগুলি আগেও সুভাষ লিখেছিলেন, আবারও বললেন। হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়ের ধারাটির কথা সব সময় মনে রাখেন, সে ভাবেই ভবিষ্যৎ ভারতের পরিকল্পনা করেন তিনি। এই বক্তৃতার দু’বছর আগে ১৯৪২ সালে স্বাধীন ভারত এবং তার সমস্যা নামে যে নিবন্ধ লিখেছিলেন তাতে ধরে ধরে ভবিষ্যৎ ভারতের আদর্শ রূপ কেমন হওয়া উচিত, তা বিশ্লেষণ করেন।

তাঁর মতে ধর্ম নয়, ভারতের ‘‘ সবচেয়ে বড় সামাজিক সমস্যা হল দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব। তা দূর করার জন্য দরকার সরকারি আর্থিক সাহায্য শিল্পায়ন ও বিজ্ঞানসম্মত কৃষিব্যবস্থা"। সুভাষের ভবিষ্যৎ ভারতে ধর্মের ভূমিকা কী হবে? তিনি লিখলেন, "রাষ্ট্রকে প্রত্যেক ব্যক্তির এবং গোষ্ঠীর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আচরণে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে"। এই লেখাটিতেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন তিনি, ভারতের বর্তমান মুসলিম সমস্যা ব্রিটিশরা কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করেছে ....ব্রিটিশ শাসন অপসারিত হলে এই সমস্যা আর থাকবেনা। সুভাষ ঠিক ভেবেছিলেন এবং ভুল ভেবেছিলেন। ঔপনিবেশিক প্রশাসকেরাই যে তাঁদের স্বার্থ পূর্ণ করার জন্য কৃত্রিম ভাবে হিন্দু মুসলমান সমস্যা সৃষ্টি করেছিলেন এ কথা সত্য, কিন্তু সাহেবরা চলে গেলেই হিন্দু মুসলমান সমস্যা চলে যাবে সুভাষের এই ভাবনা সত্য হয়নি। হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিষ প্রয়োজন মতো স্বাধীন ভারতে রাজনৈতিক দলগুলি উস্কে তুলেছে।সুভাষ কেবল ঘোড়ার পিঠে-চড়া সমরনায়ক নন। যুদ্ধ করতে তিনি পিছপা হননি তবে স্বাধীন যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তাই ছিল তাঁর লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা।আজ আমাদের বাঙালী বাঙালী করার দিন,অথচ তুমি একজন আন্তর্জাতিক ভারতীয়! তোমার মত আর কোনো বাঙালী রাজনীতিবিদ্ দুবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন নি! আর কোনো বাঙালী রাজনীতিবিদ্ আফগানিস্তান থেকে মায়ানমার পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান নি! গান্ধীজি কে তুমি ই জাতির পিতা আখ্যা দিয়েছিলে এবং আজাদ হিন্দ্ বাহিনীতে নেহেরু ব্রিগেড তৈরি করেছিলে,অথচ আজ তোমাকে বড় করতে গিয়ে ওনাদের গালাগালি করার দিন! তোমার কাছাকাছি আমরা যেতে পারব না! কিন্তু তোমাকে নিয়ে বাকি ভারতীয়দের সঙ্গে ঝগড়া করতে আমরা ওস্তাদ! প্রার্থনা করি শুধু বাঙালী হয়ে না থেকে তোমার মতো একজন আন্তর্জাতিক দৃষ্টিসম্পন্ন প্রকৃত ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতীয় হয়ে উঠতে পারি ! জয় হিন্দ্ ! পরিশেষে বর্তমান অস্থিরতার মুহূর্তে চারিদিকে যখন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাড়ন্ত সমাজ জুড়ে বিদ্বেষ বিভাজন ঠিক সেই মুহূর্তে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নীতি আদর্শ বাঙালি তথা ভারতীয়দের সম্প্রীতি সৌহার্দ্য সংহতি সাম্যের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ভারতবর্ষকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করবে। ১২৭ তম জন্মদিনে আমরা প্রত্যেকে নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি আবেগ জাগ্রত করে হয়ে উঠি প্রকৃত ভারতীয় । 

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment