1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, July 24, 2023

সূর্পণখা

ছবি : ইন্টারনেট

সূর্পণখা

উত্তম চক্রবর্তী

        অনেকদিন যাবতই জগাই লক্ষ্য করছিল ওর বৌয়ের আচার আচরণ। বাড়িতে শুধু জগাইয়ের এক বছরের মেয়ে আর বৌ গীতা। জগাই কাজ করে  শ্যামনগরের একটা জুটমিলে, থাকে চালতে পাড়ার বস্তিতে একটা ছোট ঘরে। গীতার বয়স মাত্র একুশ, দেখতেও মন্দনা। আর জগাইয়ের বয়স সাতাশ। বনগাঁর এক গ্রাম থেকে এখানে এসেছিল সেই ওর বিয়ের ঠিক আগে, এই জুটমিলে ওর এক বন্ধু কাজটা পাইয়ে দেবার পর। মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা মায়না ও বস্তিতে নিজের একটা পাকা ঘর আছে দেখেই পাশের বস্তির মেদিনিপুরের লোক চন্দন ঘরুই তার স্কুল ফাইনাল ফেল করা যুবতী মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন জগাইয়ের সাথে। শ্বশুর জামাই একই জুট মিলে চাকরী করে এখন।

বিয়ের দু বছর পরে গীতার কোলে আসে বিন্দু, ওদের দুজনের একমাত্র সন্তান। কিন্তু সে একটু বড় হলে  মেয়ের এক বছর বয়স হবার পর থেকেই গীতা জগাইয়ের মিলের এক সহকর্মী বন্ধু দীপেনের সাথে মাখামাখি শুরু করে দেয়। দীপেনের বয়স মাত্র তেইশ, স্কুল ফাইনাল পাশ। আর খুব ভাল দেখতে ও স্বাস্থ্যবান পুরুষ। সেখানে জগাই বেশ রোগা পটকা লোক, তার উপর মাথায় বেশ টাক পড়েছে আজকাল। গীতা আজকালকার মেয়ে, কামনার হাওয়া গায়ে লেগেছে অনেক দিনে আগেই, যখন ওর দেহে ফুল ফুটতে শুরু করেছিল। তার উপর ওর বাবা গীতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একপ্রকার জোর করেই ওকে এই রোগা ছেলেটার সাথে বিয়ে দিয়েছিল। এখানে এসেই কলকাতার হাওয়া লেগে যায়।

জগাই কয়েক দিন যাবতই লক্ষ্য করছিল দীপেন আজকাল একটু বেশিই আসে ওর সাথে আড্ডা মারতে আর গীতার সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলে। আজকাল প্রায়ই ছুটি নিয়ে বলে ওর মার নাকি খুব শরীর খারাপ। এদিকে সেদিন গীতার আচরণ আর ওদিকে দীপেনের ছুটি নেওয়ার মধ্যে একটা যোগসুত্র দেখতে পায় জগাই, যেদিন সন্ধ্যায় ওদের ঘরে চৌকির তলা থেকে একটা বিড়ির খালি প্যাকেট দেখতে পেয়েছিল। জগাই তো মাঝেসাঝে কমদামী সিগারেট খায়, কিন্তু বিড়ি তো ও কোনদিন খায়নি ! সেটা দীপেনের নেশা। ব্যস, জগাইয়ের মাথা গরম হয়ে যেতে সময় লাগে না।

এরপরই একদিন ঘটল ঘটনটা। জগাইয়ের কাছে ওদের ঘরের তালার একটা চাবি আছে কারণ গীতাকে কেরোসিন তেলের লাইনে বা রেশনের লাইনে যেতে ঘরে তালা মেরে বেরোতে হয়। অফিসে সেদিন দীপেন ছুটি নিয়েছে বাড়িতে থেকে ওর মাকে নিয়ে নৈহাটির এক ডাক্তারের কাছে যাবে বলে। জগাইয়ের কী মনে হল ওর ওপরওয়ালার কাছ থেকে আধঘণ্টার অনুমতি নিয়ে হেঁটে কাছেই ওর বাড়িতে চলে এলো। দেখে সামনের দরজায় তালা মারা। জগাই ওর ঘড়িতে দেখল মাত্র এগারোটা বাজে। কেরোসিন তেল তো সাড়ে বারোটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দেয়। এ সপ্তাহের রেশনও তোলা আছে। তবে গীতা গেল কোথায় ? কাণ পেতে ঘরের ভিতর থেকে একটা ফিস ফিস করে কথা বলার শব্দ পেল জগাই।

জগাইয়ের সন্দেহ হয়, পাশের সরু গলি দিয়ে পিছনের টিনের দরজার ফুঁকো দিয়ে ঘরে উঁকি মেরে দেখে ওর মেয়ে খাটে শুয়ে ঘুমচ্ছে আর মেঝেতে একটা মাদুরে গীতা আর দীপক দুজনেই উদোম হয়ে একেবারে গায়ের সাথে লেপটে শুয়ে আছে। জগাই এবার বুঝতে পারে ওকে আর আসে পাশের লোকের চোখে ধুলো দিতেই গীতা আর দীপেন এই পরিকল্পনা করে বদমাইশি করে চলেছে আজ কতদিন যাবত কে জানে। জগাই কিন্তু কোন সাড়া শব্দ না করে চুপচাপ ফিরে গেল ওর ফ্যাক্টরিতে। কিন্তু তখন ওর মাথায় আগুন জ্বলছে। গীতা এই ভাবে বাড়িতে দরজা বন্ধ করে ওকে ঠকিয়ে জগাইয়েরই বন্ধুর সাথে শোবে, জগাই ভাবতেই পারেনি। মনে মনে পরিকল্পনা করে এখন কী করা যায়, গীতাকে একটা চূড়ান্ত শাস্তি দিতেই হবে। আর ও এমন শাস্তি ওকে দবে যে সেটা ও চিরকাল মনে রাখবে।

সন্ধ্যায় নেশা করে বাড়ি ফিরেই গীতার উপর চড়াও হল জগাই। চেঁচিয়ে বলল,’শালী, হারামজাদি মাগী। ঘরে বসে আমার খেয়ে আমার পরে আমাকেই ধোঁকা দিচ্ছিস। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।‘ বলেই ঘরের কোনে রাখা সবজি কাটার বড় ছুরিটা তুলে নিয়ে এগিয়ে যায় গীতাকে মারতে। গীতা ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠে আর বলে,’’আমি কী করেছি যে তুমি এভাবে ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছ ?’ কিন্তু গীতা বুঝতে পেরে যায় যে জগাই বোধহয় সব জেনে গেছে। নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু লাভ হয়না। জগাই এগিয়ে এসে সোজা গীতার নাক অর্ধেকটা কেটে দেয়। রক্তে ভেসে যায় গীতার পরনের শাড়ী আর ঘরের মেঝে। চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায় গীতা। পাশের ঘরের একটা ছেলে ও তার মা ছুটে আসে। দরজা ধাক্কা মারতে থাকে।

পুলিশ এসে জগাইকে গ্রেফতার করে ভ্যানে তুলল আর গীতাকে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলো। ওদের একমাত্র মেয়ে বিন্দুকে ওর দিদিমা এসে নিয়ে যায় মামাবাড়িতে। জগায়ের দুই বছরের জন্য জেল হয়ে যায়, কিন্তু ওদের দুজনের মধ্যে এরপরেই ডিভোর্স হয়ে গেল।

পরকিয়া প্রেমের ফলে নাককাটা গীতাকে এখন সবাই ডাকে “নাককাটা সূর্পণখা”। গীতা ওর বাবার সাহায্যে একটা চাকরী জোগার করে ফেলেছে। ওদের ভাট পাড়া পুরসভাতেই এখন একটা দপ্তরীর কাজ করে মেয়েকে মানুষ করে তুলবার চেষ্টা করছে গীতা। দুই বছর বাদে জেল থাকে ছাড়া পেয়ে জগাইও একটু ধরাধরি করে আবার ওর কাজ ফিরে পায়। এখন জগাই ভাবছে এবার ওর গ্রামের একটা ভালো গরীব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে আনবে। ভাবে উঠতি বয়সে শহরের হাওয়া গায়ে লাগলেই মেয়েগুলি কেমন যেন খারাপ হয়ে যায়। এর চেয়ে আমাদের গ্রামের মেয়েরাই ভালো।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment