1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

দুর্গতিনাশিনী দুর্গা

ছবি : ইন্টারনেট

দুর্গতিনাশিনী দুর্গা

প্রোজ্জ্বল মন্ডল

দেবী দুর্গা শক্তিস্বরূপা।প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক দেবীর নাম -"দুর্গা" নাম হল কেন?এর উল্লেখ আমরা পাই শ্রীশ্রীচণ্ডী থেকে।দেবী স্বয়ং বলেছেন --

তত্রৈব চ বধিষ্যামি দুর্গমাখ্যং মহাসুরম্।

দুর্গাদেবীতি বিখ্যাতং তন্মে নাম ভবিষ্যতি।।

-আর সেই সময় শাকম্ভরী অবতারে দুর্গম নামক মহাসুরকে বধ করিব বলিয়া আমি দুর্গাদেবী নামে প্রসিদ্ধা হইব।

শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণের দেবীমাহাত্ম্যে আদ্যাশক্তি মহামায়ার 'দুর্গা' নাম মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে- 'দুর্গাসি দুর্গভবসাগরনৌরসঙ্গা'-(শ্রী শ্রী চণ্ডী-৪।১১)

-দুর্গ অর্থাৎ দুষ্পার সংসারসাগর-পারের তরণীস্বরূপা সঙ্গরহিতা অদ্বিতীয়া দুর্গা তুমি।

'দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ'-(শ্রী শ্রী চণ্ডী-৪।১৭)

-দুর্গে অর্থাৎ সঙ্কটে স্মরণ করিলে সকল প্রাণীর ভয় হরণ কর তুমি।

দেবী সর্বব্যাপী, পরব্রহ্মস্বরূপিনী। দেবীই সৃষ্টি স্থিতি এবং ধ্বংসের একমাত্র কারণ।দেবী অতিশয় সৌম্যা আবার তিনি অতি ভয়ঙ্কর।তিনি যতটাই সুন্দর ঠিক ততটাই ভয়ঙ্কর।দেবী প্রতিটি জীবের চেতনা রূপে অবস্থান করেন।দেবী সমস্ত সৃষ্টিতে মাতৃরূপে, নিদ্রারূপে, ক্ষুধারূপে,শক্তিরূপে, তৃষ্ণারূপে, শান্তিরূপে,স্মৃতিরূপে,দয়ারূপে, চিন্তারূপে,ভ্রান্তিরূপে আমাদের মধ্যে অবস্থান করেন।অর্থাৎ তিনি সর্বব্যাপী।তিনি ইন্দ্রিয়সমূহের অধিষ্ঠাত্রী রূপে অবস্থান করছেন।তিনি অখিল জগতের ঈশ্বরী।তিনি এই বিশ্বের আধারশক্তি।দেবী স্বয়ং মোক্ষপ্রদায়িনী।তাই মেধা মুনি রাজা সুরথ এবং সমাধি বৈশ্যকে দেবীর স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন --

সা বিদ্যা পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী।

সংসার-বন্ধ-হেতুশ্চ সৈব সর্ব্বেশ্বরেশ্বরী।। —(শ্রীশ্রীচণ্ডী, ১/৫৮)

 ---তাঁরই মায়ায়

অভিভূত হয়ে জীব পরম শান্তি ও আনন্দময় শ্রীভগবানকে ভুলে জগতের এই ক্ষণস্থায়ী বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া দুঃখভোগ করিতেছে। সংসারের এই মায়া-মমতার বন্ধনের কারণ তিনিই (দেবী মহামায়া)। অথচ ভক্তিভরে তাঁর নিকট প্রার্থনা করলে তাঁরই কৃপায়

সংসার-বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করা যায়। তিনি একাধারে সংসার বন্ধনের কারণস্বরূপা অবিদ্যা, পুনরায় তিনিই সংসারমুক্তির হেতুভূতা পরমা ব্রহ্মবিদ্যা-রূপিণী সনাতনী পরমেশ্বরী।।তিনিই জগতে ব্রহ্মারূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপে পালন করেন এবং রুদ্ররূপে সংহার করেন।দেবী স্বয়ং তাই শুম্ভ-কে বলেছেন --  “একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।” — (শ্রীশ্রীচণ্ডী, ১০/৫)

এই জগতে একমাত্র আমিই বিরাজিতা। দেখ, আমি ভিন্ন দ্বিতীয় কেউ নাই।মহাভারতে দেবী দুর্গার পূজার উল্লেখ আছে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে জয়লাভের জন্য শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধারম্ভের পূর্ব্বে জগন্মাতা দুর্গাদেবীর স্তব ও প্রার্থনা করিতে বলেছিলেন।

“পরাজয়ায় শত্রুনাং দুর্গাস্তোত্রমুদীরয়”

 —মহাভারত, ভীষ্মপর্ব্ব, ২৩।২। আর অজ্ঞাতবাসের সাফল্যার্থে বিরাটনগরে গমনের পূর্বে ঋষিগণের পরামর্শে পাণ্ডবগণ

দুর্গামাতার স্তব করেন।প্রচলিত প্রবাদ অনুসারে ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্রই রাবণবধের জন্য প্রথম শরৎকালে দেবীর অকাল বোধন করেন। রাবণও দেবীর ভক্ত ছিলেন। কিন্তু রামচন্দ্রের আরধনায় সন্তুষ্টা হইয়া দেবী রাবণকে পরিত্যাগ করেন। এইমতে বাসন্তীপূজাই প্রকৃত দেবীপূজা।কিন্তু শ্রীশ্রীচণ্ডীতে পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে — শরৎকালেই দুর্গাপূজা হয়—

“শরৎকালে মহাপূজা ক্রিয়তে যা চ বার্ষিকী”

         —শ্রীশ্রীচণ্ডী, ১২।১২

আদি শঙ্করাচার্য মহামায়ার গুণত্রয়াতীত তুরীয় স্বরূপের কথা সৌন্দর্যলহরীতে বর্ণনা করেছেন—

গিরামাহুর্দেবীং দ্রুহিণগৃহিণীমাগমবিদো

হরেঃ পত্নীং পদ্মাং হরসহচরীমদ্রিতনয়াম্ ।

তুরীয়া কাপি ত্বং দুরধিগমনিঃসীমমহিমা

মহামায়া বিশ্বং ভ্রময়সি পরব্রহ্মমহিষি ॥ ৯৭॥

---অচ্যুতানন্দের টীকার মর্মার্থ এই —"হে পরব্রহ্মমহিষি! আগমবিদ্গণ ব্রহ্মার পত্নীকে বাগদেবী; বিষ্ণুর পত্নীকে লক্ষ্মী এবং পর্বত-তনয়া দুর্গাকে মহেশ্বরের সহচরী বলে নির্দেশ করে থাকেন। হে মহামায়া! এই শক্তিত্রয় হতে অতিরিক্তা গুণত্রয়াতীতা চতুর্থা তুমি কে? আমরা তা নিরূপণ করতে সমর্থ নই। তোমার দুরধিগম্য মহিমার সীমা নিরূপিত হয় না। তুমি এই ব্রহ্মান্ডমণ্ডলকে মোহিত করছ।"

দেবীর পূজাকে মহাপুজা বলা হয়ে থাকে।নারীমাত্রেই দেবীর অংশে জন্ম এবং সকল নারীই মাতা জগদম্বার জীবন্ত

প্রতিমূৰ্ত্তি—“স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগৎসু”–চণ্ডী, ১১।৬। সুতরাং প্রত্যেক নারীকে মাতৃবুদ্ধি করা এবং সকল নারীকে দেবীজ্ঞানে শ্রদ্ধাভক্তি করাই মহামায়ার শ্রেষ্ঠ উপাসনা।

...(সমাপ্ত)...



No comments:

Post a Comment