1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, July 24, 2023

ক্ষয়প্রাপ্ত সমাজ ও তার প্রতিকার

 ক্ষয়প্রাপ্ত সমাজ  ও তার প্রতিকার

মৃণাল বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়

আজ থেকে প্রায় ৪৩৫ কোটি বছর আগে যখন আমাদের পৃথিবী সবে সূর্যের শরীর  থেকে বিচ‍্যুত  হয়ে আর বাকিদের মতো পরবর্তী প্রায় ৪০০ কোটি বছর ধরে  ঠান্ডা হয়ে স্বাভাবিক হওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল তখন থেকেই সৌরমন্ডলের মধ‍্যে একটা সমাজ বদ্ধতার পরিবেশ অলিখিত ভাবেই তৈরির সূচনা  হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ একটা অলিখিত নিয়ম বা একাত্মতার শুরু, সেটার পেছনে মাধ‍্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবই থাক বা তার সাথে  অন‍্য কোন অপার্থিব শৃংখলার মিলিত শাষন। এবং এই শাষন বা নিয়মের শৃঙ্খলটুকুর প্রয়োজন ছিল এবং সেটা আজও অক্ষরে অক্ষরে পালিত হচ্ছে বলেই পৃথিবীর বুকে প্রাণীজগতের শুরু এবং ক্রম বিবর্তনের মধ‍্য দিয়ে, যদিও এখনো অবধি সেটা সর্বজন স্বীকৃত নয় কারন বৈজ্ঞানিক ব‍্যাখ‍্যার মধ‍্যে এখনো কিছুটা অসঙ্গতি কিংবা কোথায় যেন একটা বহির্বিশ্বের অবদানের ইঙ্গিত থাকার সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা-এর দরুন, পৃথিবীর প্রাণীকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বা স্বঘোষিত  সর্বগুণ বা সর্ববুদ্ধি সম্পন্ন জীব মানুষের আবির্ভাব। স্বঘোষিত এই কারণেই যে, উদ্ভিদ জগতের সাথে মানুষের তুলনা করলে এটাই একটা জোড়ালো তর্কের বিষয় হতেই পারে যে মানুষ তার বিচার বুদ্ধিকে হয়তো তার সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন‍্যে বহু কাজে লাগিয়েছে বা সভ‍্যতা নামক শব্দটাকে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য করে তোলার আপ‍্রাণ প্রচেষ্টায় শতকরা প্রায় একশত ভাগ সফল, তথাপি এটাও তো ভাববার বিষয় যে এই অত‍্যাধুনিক সভ‍্যতা যে সুখ আমাদের প্রতিনিয়ত দিয়ে চলেছে তার থেকে দুঃখ বা যন্ত্রণা বা অনুশোচনা দিয়েছে বহুগুণ বেশি। এক একটা বিশ্বযুদ্ধই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 1945-এর ছয় এবং নয়ই আগষ্ট জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে আমেরিকা কর্তৃক পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সেই মুহূর্তে এবং পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিক যে বিপুল জীব ও জড় জগতের ক্ষতিসাধন ঘটেছে বা আজও জিনগত বৈশিষ্ট্যের মধ‍্যে ঘটে চলেছে তা কোনভাবেই শুধুমাত্র কাগজে কলমে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। সেই ক্ষতজনিত প্রদাহে কেবল মাত্র আঘাত প্রাপ্ত দেশ জাপানই নয় বরং সমগ্র বিশ্ব আজও সেই পাপের বোঝা শরীরে ও মননে বহন করে নিয়ে চলেছে। সভ‍্যতার ক্রমবর্ধমান বিস্তার বা অগ্রগতির দৌলতে আমরা যত না অগ্রসর হতে পেরেছি তার শতগুন বেশী নিজেদের আগামী ভবিষ‍্যত প্রজন্মকেই পঙ্গুত্বের অভিশাপে অভিশপ্ত করে রেখে যাচ্ছি। পাশাপাশি উদ্ভিদ তার জীবনধারণের জন‍্যে কারোর উপর নির্ভরশীল নয়। হতে পারে তার শরীরে তথাকথিত বস্ত্রের আবরণ নেই কিংবা হতে পারে তাদের বাচ্চারা বিদ‍্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে চির অশিক্ষিত হয়ে রয়েছে। যেখানে মনুষ‍্য সন্তানেরা থাকার জন‍্যে ঘর পাচ্ছে, সুশিক্ষিত হওয়ার জন‍্যে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। দূর দূরান্তকে নতুন প্রযুক্তির দ্বারা হাতের মুঠোর মধ‍্যে পেয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ গ্লোবালাইজেশন বা নয়া বিশ্বায়ন। কিন্তু পাশাপাশি উদ্ভিদ জগত পৃথিবীর যে প্রাকৃতিক সম্পদ তাকেই পাথেয় করে দিব্বি মানুষের থেকেও বহু বহু কোটি বছরেরও বেশি এই পৃথিবীতে অবস্থান করছে এবং সেটা পৃথিবীকে বা তার প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে কোনরকম বিঘ্নিত না করে। একটা জঙ্গলে হাজারো প্রজাতির ছোট, বড়, মেজো উদ্ভিদ দৃষ্টান্ত স্বরূপ একে অপরের সাথে মিলেমিশে যুগের পর যুগ ধরে সহাবস্থান করছে। কোনরকম বিশৃঙ্খলা বা ভাই ভাই ঠাই ঠাই নেই। অথচ সর্বোচ্চ তথাকথিত আধুনিক, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ যার শরীর থেকে জন্মলাভ করেছে বা যাদের ছত্রছায়ায় কিশলয় থেকে মহীরূহ হয়েছে, অর্থাৎ নিজের বাবা,মা; তাদেরকে পর্যন্ত অসন্মান করতে বা বৃদ্ধ বয়সে অসহায়তার সুযোগ নিয়ে পরিত‍্যাগ করতে দ্বিধা করছে না। সংসারের বাকি সদস্যদের সাথে একত্রে থাকা তো দূরের কথা। যে শিক্ষা সহানুভূতি জাগায় না, যে শিক্ষা একে অপরকে ভালোবাসতে শেখায় না বা একে অপরকে তার প্রাপ্ত সন্মানটুকু ফিরিয়ে দিতে জানেনা বা একজনকে অপরের শত্রুতে পরিণত করে সেই শিক্ষার প্রয়োজন কোথায়? শিক্ষায় আনে চেতনা, চেতনায় আনে মুক্তি। তাহলে এর মানে কি দাড়ায় শুধু নিজের ভালো, নিজের সুখ, নিজের সমৃদ্ধি,নিজের প্রগতি কিংবা নিজের পরিতৃপ্তির মুক্তি? আর তার প্রয়োজনে অন‍্যের ক্ষতি, অন‍্যের অসন্মান কিংবা অন‍্যের ধ্বংস? নিজের চাহিদার শেষ নেই আর অন‍্যের সমৃদ্ধি বা উন্নতি দেখলে তাকে হিংসা কিংবা তার চরম ক্ষতি করে নিজেকে সবার উপরে প্রতিষ্ঠা করা? আমিই এই পৃথিবীর একমাত্র সম্রাট, আর তাই আমিই এই পৃথিবীর একমাত্র ভাগ‍্য নিয়ন্ত্রক বা শাসনকর্তা। এটাই আমাদের একমাত্র সুপ্ত ইচ্ছা। আর যত দিন যাচ্ছে, মানুষের শিক্ষার হার যত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে ততই যেন আমরা প্রত‍্যেকেই এক একটা কসাই হয়ে উঠছি। আমাদের ইতিহাস সাক্ষী যে আমরা নিজের পিতাকে, নিজের ভাইকে হত‍্যা করতেও পিছপা হইনি নিজেকে সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে দেখবার ঘৃণ্য বিকৃত মানসিকতাকে প্রাধান্য দেওেয়ার জন‍্যে। এবং যুগ পাল্টালেও আদিম মানসিকতার কিন্তু আজও কোন পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আডলফ হিটলারের সমগ্র বিশ্বকে ইহুদি শূন্য করার পাশবিক প্রবৃত্তি এবং জার্মানের সামরিক বাহিনীকে নতুন অত‍্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে একটা সমগ্রতাবাদী এবং ফ‍্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরোপের সমস্ত জীবন্ত অঞ্চল অধিকারের মধ‍্য দিয়ে সমগ্র বিশ্বে নিজের প্রভুত্ব বা আধিপত্য বিস্তারের যে অতি উচ্চাকাঙ্খী  মনোভাব গ্রহন করেছিলেন তার সেই সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে যদি তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া প্রাচীর স্বরূপ না দাড়াতে সক্ষমহতো তাহলে পৃথিবীর ইতিহাস আজ এই একবিংশ শতাব্দীতে একটা কষাইয়ের কারখানায় পরিনত হতো। সমগ্র বিশ্বের মানুষ জার্মানদের হাতে যুদ্ধবন্দী দাসে পরিণত হতো। এবং তার হিংস্র রূপ ভয়ঙ্কর মাংসাশী প্রাণিকুলকেও চরম লজ্জায় ফেলে দিত।

আমরা প্রতিনিয়ত ভালো হওয়ার নাটক করে চলেছি আর সেই জন‍্যেই সম্পর্কের মধ‍্যে সামান্যতম চিড় ধরলেই সেই ছোট্ট চিড়টাকে বৃহৎ ফাটলে পরিণত করতে সময় নিই না এবং শুধুমাত্র বর্তমানটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভবিষ্যত-টাকেই বিপদসঙ্কুল করে তুলি। এবং ভারী অদ্ভুতভাবে নিজের কৃতকর্মকে দোষ না দিয়ে নিজের অদৃষ্টকে দোষারোপ করি। অর্থাৎ নিজের কৃতকর্মের জন‍্যে কোনরকম অনুশোচনা বা আক্ষেপ অনুভব করিনা। আর তার ফলেই বারংবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাই এবং সমাজের সবাইকে নিয়ে প্রতিমুহূর্তে বিশৃঙ্খলতার সম্মখীন হই।

আর এর সাথে সর্বদাই অনুঘটকের মতো কাজ করে চলেছে আমাদের মধ‍্যেই থাকা লোভ বা লালসার মতো কিছু আসুরিক প্রবৃত্তি। আজকে অতীতের সেই স্বৈরাচারী  রাজতন্ত্র আর নেই। তার জায়গায় এসেছে প্রজাতন্ত্র। তৈরি হয়েছে সংবিধান বা দেশ কিংবা সমাজকে শাসনের নিমিত্ত কিছু তথাকথিত নিয়মকানুনের সরকারি মোহর প্রাপ্ত পুস্তিকা। এবং  প্রতিমুহূর্তেই তার পরিমার্জন ও পরিবর্তনও ঘটে চলেছে কিন্তু আইন সবার জন‍্যে হলেও আইনের ফাঁকের সুযোগ নিয়ে কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরই মধ‍্যকার লালিত স্বার্থপরতা বা চৌর্যবৃত্তি আমাদেরকেই নিজেদেরই শত্রুতে পরিণত করেছে। আমাদের মধ‍্যকার পাশবিক প্রবৃত্তি আমাদের ব‍্যক্তিগত স্বার্থ বা লালসাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাদের বিচার ক্ষমতা বা বোধ বুদ্ধিকে বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে। ক্ষণস্থায়ী লাভ কিংবা আর্থিক সমৃদ্ধিকে জীবনের মূল মন্ত্র ভাবতে গিয়ে আখেরে নিজেদের সাথে সাথে এই সমাজের বা এই পৃথিবীরই ক্ষতি করে চলেছি। 

আমাদের সাম্রাজ্য বৃদ্ধির প্রচ্ছন্ন মানসিকতা বা আমাদের হিংস্র সাম‍্যাজ‍্যবাদ নীতি, প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ‍্যে যুদ্ধ বা সংঘাত বাধিয়েই রেখেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে হাজারো ধরনের সুসম্পর্ক স্থাপনের নিমিত্ত চুক্তির আধিক্য থাকলেও ক্ষমতার লড়াই বা আস্ফালন প্রতিনিয়তই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ বিগ্রহ বা পারস্পরিক বিবাদকে প্রচ্ছন্ন মদত দিয়েই চলেছে। এতে করে মানুষের মধ‍্যে শুধু দূরত্বই তৈরি হচ্ছেনা, পাশাপাশি অত‍্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ আমাদের এই বাসভূমিকেই মনুষ‍্য বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। আর সেইজন‍্যেই প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের ভয়াবহ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে এবং বিশ্বায়নের দৌলতে মনুষ‍্য বাহিত হয়ে সেই রোগের জীবাণু সমগ্র বিশ্ব জুড়ে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং বিনা চিকিৎসায় অসহায় ভাবে আমাদেরই নিকটজনের অকাল মৃত‍্যু ঘটছে। আমরা সাধারণ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা মানুষ হয়তো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হচ্ছি, কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী লোভী মানুষ তাদের অর্থবল কিংবা বাহুবলকে কাজে লাগিয়ে নিকৃষ্ট মানুষ মারার ব‍্যবসা ফেদে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে নিজেদেরকে এই পৃথিবীর শাসনকর্তা কিংবা নিজেদেরকেই আগামী দিনের স্রষ্ঠা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। তাদের শক্তির কাছে আমরা নিরূপায়, অসহায় গিনিপিগের মতো পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ব‍্যবহারকারী জন্তুতে পরিণত হয়েছি। সভ‍্যতার অগ্রগতির ধারাকে আরো দ্রুততর করার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি বা জ্ঞানকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব‍্যবহারের নিমিত্তে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের যে বিপুল ক্ষতিসাধন ঘটে চলেছে নিত‍্য প্রতিদিন এবং যার ফলস্বরূপ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে পৃথিবীর ভারসাম্য প্রতিদিন, প্রতি নিয়ত বিঘ্নিত হচ্ছে এবং আগামী নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবীর বতর্মান স্থলভাগের প্রায় শতকরা সত্তর শতাংশই সমুদের স্ফীত জলরাশির গভীরে চিরকালের জন‍্যে বিলুপ্তির অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।  

কিন্তু আমরা যদি অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী না হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রকৃতির নিয়মে যেরকম ছিলাম, সেইরকম অবস্থাতে থাকাটাকেই প্রাধান্য বা গুরুত্ব দিতাম তাহলে অতি বুদ্ধিমান হতে গিয়ে আদতে  একটা শয়তান বা হিংস্র নিষ্ঠুর পশুতে পরিণত হতাম না বা নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে এইভাবে জলাঞ্জলি দিতাম না। আমরা নিজেদের মাঝখানে বিভেদের প্রাচীর তুলেছি মূলত দুটি জিনিসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে।আর সেই দুটি হচ্ছে ধর্ম এবং রাজনীতি। আমাদের মধ‍্যকার কিছু কুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ধর্মকে নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করতে গিয়ে বা ধর্মের প্রতি আনুগত্য বা বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ‍্যে অযাচিত সংঘাত বা বিভেদকে উস্কানি দিয়ে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধের বাতাবরণকে বিঘ্নিত বা উত্তপ্ত করে পরস্পরের প্রতি দ্বৈরথে লিপ্ত করিয়ে সেই সুযোগে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। কয়েকমুহূর্ত আগেও যে মানুষটি আমার পরম বন্ধু বা আত্মীয়সম ছিল, যে মানুষটি আমার আপদে বিপদে আমার ছায়া সঙ্গী ছিল সেই মানুষটিই আচমকা আমার পরম শত্রুতেই পরিণত হলো শুধু তাই নয় উল্টে আমাকেই মারতে উদ্দত হতেও পিছপা হলোনা। অর্থাৎ তার বোধ বুদ্ধিকে অসার করে দিয়ে তার ভালো মন্দের বিচার ক্ষমতাকেও পঙ্গু করে দেওেয়া হলো। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই অসঙ্গতি বা অসহায়তার যে পরিস্থিতি যার জন‍্যে আমরা প্রত‍্যেকেই কম বেশি দ্বায়ী। এই ক্ষয় সর্বস্ব, বিবেক বুদ্ধিহীন সমাজের উন্নতিকরণের স্বার্থে আমাদেরই মধ‍্যকার হাতে গোনা কিছু ঐশ্বরিক গুণে গুণান্বিত মানুষকে সপ্রতিভ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ব‍্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সমষ্টিগত স্বার্থকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে হবে এবং সেটাও বকলমে আমাদেরই আগামী প্রজন্মকে একটা সুন্দর স্বাস্থকর বসবাস যোগ্য পৃথিবী উপহার দেওেয়ার জন‍্যে। আর এই ব‍্যাপারে সাহিত‍্যিকদের দায়িত্ব সর্বাপেক্ষা বেশী। কারণ একমাত্র তারাই তাদের নিরপেক্ষ লেখনির মাধ‍্যমে মানুষের মনের অন্ধকার জায়গা গুলোকে আলোকিত করে তুলতে সক্ষম। তাহলে চলুন সবাই একত্রে উচ্চকন্ঠে আবৃত্তি করি কবি সুকান্তের “ছাড়পত্র” কবিতার সেই দুটি বিখ‍্যাত লাইন-- “এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ‍্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।“

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment