1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, July 24, 2023

অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি

ছবি : ইন্টারনেট

 অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি 

 রাজশ্রী দে 

পশ্চিমঘাট পর্বত মালায়  সূর্য  সবে উঁকি দিচ্ছে , রু এক কাপ কফি হাতে   টেরাসের   দোলনায়  এসে বসল l  লাল  আবির ছড়ানো  আকাশ , এক ঝাঁক  সবুজ টিয়া উড়ে গেল l  আজ অফ  ডে , হসপিটালে  যেতে হবে না lগরম কফিতে চুমুক দিতে মন চলে যায় অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোতে ! 

  ১৯৮৬ সাল  জয়েন্টে  দুর্দান্ত রেজাল্ট করে রু  পোশাকি নাম  রঞ্জাবতী  চান্স পেল  কলকাতা মেডিকেল কলেজে , ছোট থেকেই ডাক্তারি পড়ার  ইচ্ছে  তার l হবে নাই বা কেন বাবা  সমুদ্র ও  মা  মেঘমালা দুজনেই তো কলকাতার বুকে নামকরা  কার্ডিওলজিস্ট l  কলেজের প্রথমদিন আলাপ হয়েছিল অনেকের সঙ্গে , তবে তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে  আর কথা বলা হয় নি l ওর নাম   অমল কান্তি দাসl গাড়িতে আসতে  আসতে হেসেছিল রু আপন মনে ,  ও নাকি এসেছে মালদা থেকে, তবে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র !   ব্যাপক পড়াশোনায় l

 কলেজে কয়েকদিনের মধ্যেই  তারা একটা গ্রুপ তৈরি  করল, সেখানে অমল কান্তি ও রয়ে  গেল l  আজও মনে আছে  ফ্রেশার ওয়েলকামে সিনিয়ররা ওর নাম শুনে বলেছিল নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর  "অমল কান্তি "  কবিতা  পাঠ করতে l অসাধারণ  আবৃতি করে  সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল অমল lঅসম্ভব পড়ার  প্রেসার  তারমধ্যে প্রাকটিক্যাল , সব মিলিয়ে  ঘেঁটে  ঘ হয়ে গিয়েছিলাম সকলেlবছরের পর বছর কেটেছে , কখন ক্যান্টিনের   আড্ডায় , আবার হসপিটালের করিডোরে দেখা হয়েছে অমল কান্তির সঙ্গে  l ধীরে ধীরে কখন  যে  তাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানি  না l বিশেষত  পূজোর  ছুটির  সময়  ও বাড়ি গেলে  বুঝতাম এক অদ্ভুত কষ্ট , এক বিশাল    শূন্যতা l

তারপর MBBS  পাস করে  হাউস সার্জেন হলাম , আমাদের  ডিউটি আওয়ার্স ছিল অনেকক্ষেত্রে  একই  সময় l ভালোবাসা হয়েছিল  মনে  মনে , অমল যে আমায় ভালোবাসে তার সুবাস পেয়েছিলাম  l ওরা কলকাতায়   ফ্ল্যাট কিনল ,  একসময়  ওর মা বাবার সঙ্গে আলাপও হল  l আমার  ড্যাডি , মামনির  সঙ্গে  অমলের  পরিচয়  অনেকদিনের , কারণ আমাদের বাড়িতেই হত বন্ধুদের আড্ডা !  উত্তর  কলকাতায়  লাল  রঙের ,সবুজ  খড়খড়ি দেওয়া জানলা  ,বিরাট গাড়ি বারান্দাওয়ালা  বাড়ি আমাদের  l অমল ওর বক্স  ক্যামেরায় সুন্দর  ফটো তুলত, ভালো  কবিতা লিখত আর অদ্ভুত সব ছবি আঁকত l  রুকে শিখিয়েছিল বাংলা গল্পের বই পড়তে ,  প্রথম উপহার দিয়েছিল সমরেশ মজুমদারের "উত্তরাধিকার "lচিনিয়ে ছিল  প্রকৃতিকে , সময় পেলেই প্রিন্সেপ ঘাটে  গঙ্গার  ধারে   গিয়ে বসত  দুজনে ,   জলের  ঝলাৎ ঝলাৎ  শব্দ রু ভালোবাসে  l তাছাড়া পড়াশোনায় প্রচুর  সাহায্য করত অমল l  নিজেদের গাড়ি নিয়েও বেরিয়ে পরত কলকাতা  শহর  ছাড়িয়ে কখনও  কোলাঘাট কখনও   ডায়মন্ড হারবারের  দিকে ,  সঙ্গী অবশ্যই মা বাবা বোন lমাকে অসম্ভব ভালোবাসে অমল,  মনে হয়  কখনই  মায়ের কথার অবাধ্য হত না l তবে লুকিয়ে প্যাকেটের পর প্যাকেট  সিগারেটে  খেতে অমল কান্তির জুড়ি মেলা ভার l

  দু বাড়িতে বিয়ের কথা  হয়ে গেল, MD  করার পর  সেটল হলেই বিয়ে , বন্ধুরা খুব আনন্দিত  l আমি পুনেতে চান্স  পেয়ে চলে এলাম ,  আর অমল কলকাতায়  থেকে গেল, ও পেল ওখানকার  এক হসপিটালে l যোগাযোগ রাখার একমাত্র মাধ্যম টেলিফোন ,  অতিরিক্ত  ব্যস্ততার  জন্য সেই সামান্য  কথা  বলার সময়টুকু আর দুজনের  কাছে রইলো না একটা সময় l

 অবশেষে দুজনেই কলকাতায়  সেটল   হলাম ,  সামনের ফাল্গুনেই বিয়ে , রু বিয়ের বাজার করতে ব্যস্ত  মামনির সঙ্গে  lএদিকে অমল  মা , বাবা , বোনের সঙ্গে   হসপিটাল সামলে বেরোচ্ছে, কখনও  নিউ মার্কেট , কখনও   কলেজ  স্ট্রিটের  মোহিনী মোহন কাঞ্জিলালে , কখনও    গড়িয়াহাটে lঅমলের  পছন্দ অনুযায়ী  ময়ূরকন্ঠী রঙের বেনারসি কেনা হল  বৌভাতে রু পরবে  বলে l  নিমন্ত্রিতদের  কার্ড দেওয়া   সমাপ্ত  , বিয়ের বাজার  কমপ্লিট ,  ক্যাটারিংকে আগাম  টাকা  দেওয়া হল l বাড়িতে বিশাল প্যান্ডেল শুরু  হয়েছে  ,বিয়ে  হবে   ছাদে , পাশের লনে  হবে ভোজন পর্ব  l বাড়িতে  আত্মীয়স্বজন  আসা শুরু হয়ে গেছে  যথারীতি  l  বন্ধুরা আসছে দূর দূরান্ত থেকে ,   কত দিনের স্বপ্ন   সার্থক হতে চলেছে l 

 ঠিক বিয়ের দিন  চারেক  আগে  ভোর বেলায় একটা ফোন এল অমলের বাড়ি থেকে , ওর মা  জানালো এখানে বিয়ে দিতে আমরা অপরাগ কারণ রুয়ের সঙ্গে অমলের      কুষ্ঠি মিলছে না ,  কিছুই  করার নেই আমাদের l বিয়ে ভাঙলো আমার , মা ভক্ত  অমল মেরুদন্ড সোজা করে বিয়ে করতে আসতে  পারেনি l  ড্যাডি  শয্যাশায়ী হয়েছিল সারাজীবনের মত  l অ্যাডভোকেট বড়মামা বাতাসে আস্ফালন করছিলেন ওদের নামে কেস করার  জন্য, আর  আমি  লাল   বেনারসীতে কাঁচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম এলোপাথাড়ি l প্যান্ডেলের  রঙিন কাপড়  খোলা শুরু হয়ে গিয়েছিল, প্রেমের বিয়ের   একি  কান্ড বলতে বলতে আত্মীয়রা এক এক করে বিয়ে  বাড়ি থেকে প্রস্থান করেছিল l মামনি আমাকে  বুকের কাছে টেনে নিয়ে হাহাকার করেছিলেন ,  আমি কাঁদি  নি কারণ তখনও  অমলকান্তির  জন্য অপেক্ষা  করেছিলাম l

বিয়েটা  হয় নি  , চলে আসি পুনেতে , আদিত্য বিড়লা হসপিটালে  জয়েন করি l বহু বছর অতিক্রান্ত ,  একটা মেয়েকে   দত্তক নিয়েছি  আমি, নাম রেখেছি  দূর্গা l দূর্গা এখন  কুড়ি বছরের ,  ফ্যাশন নিয়ে   পড়ছে ,   দূর্গা  আমার শক্তি , আমার অবলম্বন l

 শুনেছি  মায়ের পছন্দ মত সুন্দরী , গৃহকর্মে  নিপুনা , লক্ষীমন্ত এক মেয়েকে বিয়ে করতে   বাধ্য হয়েছে অমলকান্তি  lতার আগে নাকি নিজের কষ্ট ভোলার জন্য ড্রাগের নেশাও  করেছে  l কিন্তু এখন সে  জমিয়ে  প্র্যাকটিস ও সংসার করছে l

  মেয়ে দূর্গা এসে দাঁড়িয়েছে মায়ের পাশে , কতক্ষন থেকে তোমাকে ডাকছি মা , কোথায় চলে যাও  মাঝে  মাঝে  l রু বাস্তবের মাটিতে ফিরল, মেয়ের জন্য নিপুণ  হাতে  পোহা  বানালো l  কেন যে  এরকম হয় আজকাল , সময় পেলেই  মন চলে যায় সুদূর  অতীতে l  

  পুনেতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে , গণেশ পূজোর  পরে  হয়তো বন্ধ  হবে lডিনার   সেরে , টিভিতে নিউজ দেখতে বসলো রু  কলকাতার খবর ,  আর কলকাতা টানে না , বাবা মা গত হয়েছেন , বাড়িটা  কেয়ারটেকারের  কাছে পরে আছে lআশ্চর্য দুর্গাও যেতে চায়  না  ,হয়তো মায়ের যন্ত্রনা  কিছুটা  বুঝতে পারে  lবাইরে  ঝম ঝম করে বৃষ্টি পরছে , পাশের ফরেস্ট থেকে যেন ভেসে আসছে গাছেদের কান্না , মাঝে মধ্যে ময়ূরের কর্কশ ডাক l দূর্গা মায়ের হাত আঁকড়ে ধরে আছে , মায়ের গায়ের গন্ধ নিয়ে ঘুমোতে   এক অদ্ভুত ভালো  লাগা মিশে থাকে l

  গভীর রাত , একটানা বৃষ্টির  শব্দ , রু যেন আজও  শুনতে  পায়............দূর থেকে ভেসে আসছে অমলের  কণ্ঠস্বর........

...(সমাপ্ত)...

1 comment:

  1. গল্পটা ভালো। তবে, গল্প বলাই স্টাইলে প্রব্লেম। গল্পের মাঝে এসে কখনো রু কখনো লেখিকা এক হয় গেছেন, আবার পরক্ষনেই বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এতে গল্পের ছন্দপতন ঘটেছে।

    ReplyDelete