1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

রঙীন ঘোরে ঘোতন

ছবি :অর্কজ্যোতি চক্রবর্ত্তী


রঙীন ঘোরে ঘোতন

অর্কজ্যোতি চক্রবর্ত্তী

বেলেঘাটা নিবাসী হৃষিকেশ চ্যাট্টুজ্যে মশায় মধ্যাহ্নভোজনের পর আরামকেদারায় বসে পা দোলাতে দোলাতে ‘টিভি বাংলা’ চ্যানেলে ‘সত্যের এপার-ওপার’ ধারাবাহিকে মগ্ন ছিলেন। ঠিক সেইসময়, তাঁর ঘরে নীরব অনুপ্রবেশ তাঁরই ছেলে প্রবীর ওরফে ঘোতনের, মুখে একগাল হাসি। হৃষিকেশবাবু তার দিকে এমন অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন যেন পৃথিবী থেকে চন্দ্রযানে করে কোনো আকাশচারী এইবুঝি চাঁদের মাটিতে পা রাখল। ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গীতে বলে উঠলেন, “কী রে ঘোত্না, আবার কী কল্লি?”

ঘোতন দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলল, “(ইতিহাসে) অনার্সটা পেয়ে গেলাম! এবার কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাশটা করে ফেলতে হবে।”

হৃষিকেশবাবু এতে সামান্য খুশী হলেও তৎক্ষণাৎ ভ্রুকুটি করে বললেন, “না না! ওসব এম. এ.-টেম. এ. করে কিস্যু হবে না।” কারণ তাঁর একান্ত ইচ্ছে ঘোতন যেন তাঁরই উত্তরসুরী হিসেবে কোলকাতা ইলেক্ট্রিক কর্পরেশনের অফিসের কাজে যোগ দেয়।

যাইহোক ঘোতন যে এতদূর এগিয়ে বি. এ. পর্যন্ত করে ফেলেছে, তাতে শুধু পাড়া-পড়শীরই নয়, তার নিজের কাছেও সে খানিক বিস্ময়ের কারণ। ছোটবেলা থেকে তার কান্ড-কারখানা কারোর অজানা নয়। তাই সেদিন দু’বাড়ীর পরের বাসিন্দা হারাধন মল্লিক যখন হৃষিকেশবাবুকে বললেন, “ঘোত্না যে পড়াশুনায় এতদূর এগিয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। এর জন্য আপনার ও বাড়ীর গিন্নীমার ভূমিকা নিশ্চয়ই আছে।” প্রত্যুত্তরে হৃষিকেশবাবু মৃদু হেসে বললেন, “হ্যাঁ দেখা যাক, এরপর ও কী করে!”

ঘোতনের লেখাপড়ায় পারদর্শিতা নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী তথা স্বয়ং হৃষিকেশবাবুর নীচু মানের ধারণার অবিশ্যি বিস্তর কার্য্য-কারণ রয়েছে। তাই সে ব্যাপারে আলোকপাত না করলে গল্পের রসভান্ডারে টান পড়তে পারে। সুতরাং ঘোতনের কথা দিয়েই শুরু করা যাক।

ঘোতন ইতিহাস নিয়ে স্নাতকে পড়াশুনা করলেও ইস্কুলে যে সে এ-বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী ছিল, তা কিন্তু  একদমই নয়। তার ইস্কুলের ইতিহাসের ক্লাস্-টিচার সমরেন্দু সেন তাকে পড়া না পারার কারণে যাতারকম বকাবকি, এমনকি বেদম মার পর্যন্ত দিতেন। নিয়মিত স্যারের অঙ্গুলি-মর্দন তথা মস্তকে তবলা-বাদনের পরও ঘোতনের নিস্তার ছিল না। তবে মজার ব্যাপারটি হল ইতিহাস তাকে ছেড়ে যায়নি৷ স্কুল–ফাইন্যাল পরীক্ষার আগের দিন, ঘোতন যখন সমরবাবুর দেওয়া ইতিহাসের সাজেশন থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলো মুখস্থ করছে, সেই সময় পার্শ্ববর্তী ঘিঞ্জি বসতির দারোয়ান ছোটেলাল, তার তরুণী ভার্যার সঙ্গে প্রবল দাম্পত্য কলহে লিপ্ত। তাদের চিৎকার ও ছোট্ট শিশুটির ডাক ছাড়া কান্নায় ঘোতনের ইতিহাসের প্রস্তুতি একেবারে মাটি। তাই পরের দিন পরীক্ষায় পাশ করার সব আশা ছেড়ে দিয়েই সে পরীক্ষার হলে পৌঁছয়; -তবুও কিন্তু পুরোপুরি হাল ছাড়েনি। কারণ, তার মনে পড়ে যায় ক্লাসের ফার্স্ট-বয় শুভেন্দুর একটা কথা : “হেঁ! হেঁ! ইতিহাস আবার একটা বিষয় নাকি। স্যারেরা সব চোখ বন্ধ করে পাতা গুনে নম্বর বসায়।”

তখনই তার মাথায় চারশ চল্লিশ ভোল্টের এক আইডিয়া খেলে যায়। অতএব, সেদিন পানিপথের প্রথম যুদ্ধের বিবরণ লিখতে গিয়ে শুরুটা সে ১৫২৬ সালের পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে করলেও, এরপরে সোজা সেই ঝাপ্টা এসে পড়ে তাদের বাড়ীর পাশের মিত্তির-পাড়ার মাঠে। তার কল্পনার বেগ অন্তঃসলিলা ফল্গু নদীর মতো বয়ে গিয়ে উত্তরপত্রের পাতার পর পাতায় প্লাবন এনে দেয়। সে যাইহোক, এর থেকেও পরম আশ্চর্যের বিষয়টি হল ঘোতন এরপর ইতিহাসে সব থেকে বেশী নম্বর পেয়েই স্কুল ফাইন্যালে উত্তীর্ণ হয়।

স্বভাবতঃই, এই অভাবনীয় সাফল্যে ঘোতন খানিকটা বখেও যায়, বা চলতি ভাষায় বলতে গেলে তার ডানা গজায়। তার বন্ধু জোটে গুলাটি নামে আর এক বখাটে ছোঁড়া। দুজন উচ্চ-মাধ্যমিকে একই স্কুলে ও একই ক্লাসে পড়লেও স্কুল-বহির্ভূত কাজকর্মই তাদের বেশী ছিল। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখায় তাদের জুড়ি মেলা ভার। বলিউডের রঙীন পর্দার নায়ক সলমন খানের অনুরাগী হিসাবে পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে তাদের পাত্তা পাওয়ার চেষ্টা ভালরকমই ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে যায় আর এক অঘটন এবং তাদের উড়ে বেড়ানোর কাজে সময় মতো যতি পড়ে। ঘটনাটার একটা ছোট্ট বিবরণ দেওয়া যাক। একদিন ঘোতন ও গুলাটি যখন সল্লু ভাইয়ের সিনেমা দেখতে গিয়ে সামনের সারির আসন থেকে উচ্ছ্বসিত ভাবে সিটি মারছিল ও টি-সার্ট উন্মুক্ত করে নাচছিল, তখন ঘটনাচক্রে পিছনের সিটে বসে ছিল তাদের পাড়ারই বিশুদা। বিশুদা কাল-বিলম্ব না করে সোজা হৃষিকেশবাবুর কানে ব্যাপারটা তুলে দেয়। এরপর যা ঘটে, তা কিছুটা অনুমেয়। ঘোতন বাড়ি ফিরলে তার বরাতে জোটে উত্তম-মধ্যম এবং গুলাটির সঙ্গে তার বন্ধু-বিচ্ছেদ ছিল এরই তাৎক্ষণিক ফলশ্রুতি। 

এরপর ঘোতন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে স্নাতকে ভর্তি হয় রিপন স্ট্রিটের এক কলেজে। হ্যাঁ, ইতিহাসের ছাত্র ঘোতনকে এবার তার বাবা গতায়াতের সুবিধার্থে হোস্টেলে রেখে আসেন। কলেজে ক্লাসের প্রথম দিনই তার সহপাঠীদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়। তার মধ্যে মানিকের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব বেশ জমে ওঠে। মানিক ঘোতনকে তাদেরই এক সহপাঠিনীর দিকে আলগা ঈশারা করে বলে, “ঐ দেখ্। ও হচ্ছে প্রজ্ঞাপারমিতা দত্ত। ও কিন্তু আমাদের সিনিয়র ও ছাত্রনেতা ভবেশদার ‘ইয়ে’।” ঘোতন জিজ্ঞাসা করে, “(ইয়ে) মানে?” মানিক চোখ টিপে বলে, “আরে বুঝলি না। মানে গার্ল ফ্রেন্ড।” ঘোতন শুনে ভাবলে, এ আর এমন কী?


তবে দুদিন পরই ঘোতনের সঙ্গে সেই ছাত্রনেতা ভবেশদার মোলাকাৎ হল। দিলীপবাবুর মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার নোট নেওয়ার পর, যখন ঘোতন ও তার সহপাঠীরা খোশগল্প করছে, তখনই ক্লাসে  ভবেশদার নেতৃত্বে একদল ছেলে-মেয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ে। ভবেশদা পান চিবোতে চিবোতে ক্লাসের জানালা দিয়ে বাইরে পানের পিক্ ফেলে বলে, “এই এবার তোদের ইন্ট্রো হবে।” তারপর হঠাৎ ঘোতনের দিকে তাকিয়ে বলে, “এই তুই উঠে আয়।” ঘোতন কিছুটা নার্ভাস হয়ে উঠে যায়। কিন্তু ফ্যাসাদটি বাঁধে এরপর। যখন ভবেশ ঘোতনের ক্লাস্-মেটদের দিকে দেখিয়ে বলে, “তুই এদের মধ্যে যে মেয়েটাকে পছন্দ, তাকে ডাক।” ঘোতন মানিকের দেওয়া সবরকম আগাম সতর্কতা ভুলে গিয়ে, সেই মিস্ দত্তকেই ডাকল। এতে ভবেশ রীতিমতো ঘাবড়ে গেল। তার ইন্ট্রো নেওয়ার সব পরিকল্পনা চৌপট। সে আর বেশী কিছু জিজ্ঞাসা না করেই ঘোতনকে ছেড়ে দিল। তবে এই ঘটনার পরে মিস্ দত্তকে নিয়ে ভবেশ ও ঘোতনের মধ্যে ঠিক যে কী হয়েছিল, সে ইতিহাস গোপন থাকাই ভালো।

একটা ব্যাপার ঠিক যে তার এই দুঃসাহসিকতার পরিচয় পেয়ে সহপাঠীদের কাছে ঘোতন রীতিমতো ‘হিরো’ হয়ে যায়। তার চুলের স্টাইল ও কথাবার্তার ভঙ্গিমা বদলে যায়। ক্রিকেট, ফুটবল, সিনেমা - যাবতীয় বিষয়ে তার জ্ঞানের ফোয়ারা ছুটতে থাকে। খেলা বা রাজনীতি যেকোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলেও সে তার নিজের মতামত দিতে পেছপা হত না। হোস্টেলের টিভি রুমে তার ছিল অবাধ বিচরণ। তার ‘অফ দ্য এয়ার কমেন্ট্রী’ তার সহপাঠীরা ও হোস্টেলের অন্য সহবাসীরা বেশ উপভোগ করত ও মজা পেত। এর একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। একদিন টিভিতে ফুটবল বিশ্বকাপের খেলা চলছে। জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনা। অন্যান্য সবাইয়ের সাথে ঘোতনও খেলা দেখছে। এর মধ্যে মনোজ ওরফে মনুদা বলে উঠল, “বুঝলি জগা! জার্সিতে সবার নাম ও নম্বর লেখা থাকে। তা থেকেই বুঝে যাবি, খেলোয়াড়টা কে!” মনুদার সহচর জগা খেলাটা অতটা বেশী বুঝতো না যদিও, কিন্তু ঘোতনের কাছে এই ব্যাপারটি মস্করার খোরাক জোগাল। এরপর খেলা চলাকালীন একজন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় আহত হলে, দুজন ক্রীড়া -চিকিৎসক তার শুশ্রূষার জন্য মাঠে ঢুকল। তখন ঘোতন চিৎকার করে বলে উঠল, “ওই দেখ্ জগা। ওই লোকটার জার্সিতে ‘ফিফা’ লেখা আছে। তার মানে ওর নাম ‘ফিফা’।” এটা শুনে টিভি রুমে হাসির রোল উঠল। মনুদা ক্ষেপে লাল হয়ে উঠে বলল, "এই ঘোত্না! জীবনে কোনোদিন ফুটবলে পা দিয়েছিস? এখানে বসে বসে কমেন্ট দিচ্ছিস্ যে বড়।” এটা শোনার পর ঘোতন তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। এতে মনুদা খানিক স্বস্তি পেলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী হল না। কারণ কিছুক্ষণ পর ঘোতন আবার ফিরে এল। এবার হাতে নিয়ে এক জরাজীর্ণ ফুটবল। সে ফুটবলের উপর পা দিয়েই কমেন্টের ফুলঝুরি ছোটাতে লাগল। মনুদা আর কী করবে। সে নিশ্চুপ হয়েই জার্মানদের অতি-বিক্রমী ফুটবল আর আর্জেন্টিনার হেরে যাওয়ার ব্যাপারটা হজম করল।

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও অবিশ্যি ঘোতনের এই ফুটবলপ্রেম কিছুমাত্র কমেনি। তাই একদিন কলেজের স্বঘোষিত নায়ক ঘোতন তার সিনিয়ার শ্যামলকে নিয়ে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ডার্বি ফুটবল ম্যাচ দেখতে গেল। দুজনেই নিজেদের অতি-আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঢুকে পড়ল মোহনবাগানের গ্যালারিতে, যদিও তারা আদতে ইস্টবেঙ্গলেরই সমর্থক। গ্যালারিতে বসার পর ঘোতনের খানিক সন্দেহ হওয়ায় সে শ্যামলকে শুধাল, “আরে শ্যাম্লাদা! আমাদের কাছাকাছিতে এই মোহনবাগানি পতাকাগুলো কেন?” শ্যামল বলল, “ধুর! না না! ওইগুলো ওইদিকে আছে। ওখান থেকে মোহনবাগানের গ্যালারি শুরু।” ঘোতন পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারল না। কিন্তু এরপর ইস্টবেঙ্গল যখন মোহনবাগানের গোলের জালে বল জড়াল, তখন শ্যামল ও ঘোতন দুজনই উল্লসিত হয়ে লাফিয়ে উঠল। পিছন থেকে এসে পড়ল মাথায় ছাতার বাঁট। ঘোতন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাদের দিকে ক্রমাগত দাঁত খিঁচিয়ে যাচ্ছেন, “এই হতভাগা! ইস্টবেঙ্গল গোল দিল তো, তোরা এত লাফাচ্ছিস কেন রে? জানিস না এটা মোহনবাগানের গ্যালারি।” ঘোতন বলল, “সরি! দাদু ভুল হয়ে গেছে।” বৃদ্ধ ভদ্রলোক আবার দাঁত কড়্মড়িয়ে বললেন, “দাদু কাকে বলছিস রে?” এরপর ঘোতন ও শ্যামল খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাকী ম্যাচটা দেখল ও খানিকটা মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মত ভাবসাব নিয়ে হোস্টেলে ফিরে গেল।

সুতরাং এইসব কান্ডকারখানার জন্যে পাড়ার লোকেদের সাথে সাথে পাঠকমনেও হয়ত সন্দেহ জাগতে পারে যে, এহেন ছেলে কিভাবে ইতিহাসে বি.এ পাশ করল? অবশ্য সেটার পিছনেও এক কাহিনী আছে। ঘোতন তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও পাকামির জন্য টেস্টে ফেল করে গেল। পাশমার্ক ছিল ৩০, সে পেল ২৯। কলেজের প্রিন্সিপাল শিবনারায়ণ রায় গণিতের অধ্যাপক। তিনি ঘোতনকে ও তার বাবা হৃষিকেশবাবুকে ডেকে পাঠালেন। হৃষিকেশবাবু যতদূর সম্ভব অনুরোধ-উপরোধ করলে, প্রিন্সিপাল স্যার ইতিহাসের অধ্যাপক গিরীশবাবুকে দিয়ে ঘোতনের ১ নম্বর বাড়িয়ে দেবার অনুরোধ করে, ৩০ নম্বরে পাশ করালেন। কিন্তু এতে প্রিন্সিপাল স্যার নিজেই বেমালুম ফেঁসে গেলেন। কারণ, এরপর ২৮ পাওয়া ছেলেটির বাবা এসে একই রকম অনুরোধ করে কান্নাকটি শুরু করে দিলেন, “স্যার, যে ২৯ পেয়েছে, তাকে আপনি এক নম্বর বাড়িয়ে ত্রিশ পাইয়ে পাশ করিয়েছেন। আর আমার ছেলে তো ২৮ পেয়েছে, তাকেও ১ নম্বর বাড়ালে ২৯ হয়ে যাবে। তাহলে সেও পরে এমনিতেই পাশ করার যোগ্য হবে।” এইভাবে একে একে সবাইকেই একই যুক্তিতে টেস্টে পাশ করাতে হল এবং সর্বনিম্ন পাশমার্ক নেমে ‘শূন্য’তে গিয়ে ঠেকল। এমনকি যে ছাত্র পরীক্ষা দেয় নি, তাকেও পাশ করাতে হল। কারণ, পরীক্ষা দিলে সে অন্তত: শূন্য তো পেত! গণিতজ্ঞ শিবনারায়ণবাবু এবার নিজেই “মেথড অব ইন্ডাকশন্”-এর হাতেনাতে প্রমাণ পেলেন এবং মনে ভাবলেন, “অদৃষ্টের এ কী পরিহাস!”

তবে ফাইন্যাল পরীক্ষায় ঘোতন কিন্তু ‘টুকে’ পাশ করেনি। সে রীতিমতো খেটেখুটে মাসখানেক ধরে বিমল চন্দ্র বা নির্মলা থাপারের বই থেকে নোট তৈরি করে মুখস্থ করেছিল। আকবরের ‘দীন-ই-ইলাহির’ বিবরণ পড়ে পরীক্ষক খুবই খুশি হয়েছিলেন বইকি। তাই ইতিহাস চর্চা চালিয়ে যাওয়ার তার ইচ্ছা নিয়ে কারোর আপত্তি ছিলই না। তবে বাধ সাধলেন সেই হৃষিকেশ বাবুই। এই প্রসঙ্গে ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করা যেতেই পারে, “না বাপ্। তুই রক্ষে কর। আমায় উদ্ধার কর। আমি অম্লানবাবুকে বলে রেখেছি। ইলেক্ট্রিক অফিসেই তোর চাকরির সুপারিশ করতে।”

প্রবীর চ্যাট্টুজ্যে ওরফে ঘোতন তাই ইদানীং তার সাধের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে-বুকিয়ে ইলেক্ট্রিক অফিসের এক বেতনভুক কর্মচারী। যদি কারোর বারংবার কারণে-আকারণে কারেন্ট অফ্ হয়ে যায় বা ফেইস ডাউন হয়, তাহলে বুঝবেন এটা ঘোতনেরই কাজ। অভিযোগ জানাতে কিন্তু ভুলবেন না: তার অফিসের নাম্বারটি হল ২৬৮৮-৭৯২৯।


...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment