গ্যাসের গল্প ১
ডাঃ সৌমেন দাশ
গ্যাস । এই শব্দটার সাথে সব বাঙালিই গভীর ভাবে পরিচিত। গ্যাসের সমস্যাতে ভোগেনি এমন বাঙালি বোধ করি নেই। অসমুদ্র হিমাচল যেখানেই বাঙালি পাবেন - গ্যাস অম্বল অ্যান্টাসিড নিয়ে আলোচনা অবসম্ভাবী। তবে চিকিৎসক কুল ( বিশেষ করে পশ্চিমী ঘরানা - যাকে আমরা মডার্ন মেডিসিন বলে থাকি) গ্যাস কী জিনিস আজও বুঝে উঠতে পারে নি। সমস্ত রোগ বাঙালি গ্যাস দিয়ে এক্সপ্লেইন করতে পারে । গ্যাস পেটে হলে গ্যাস্ট্রাইটিস, মাথায় উঠলে মাইগ্রেন, হাড়- জয়েন্ট এ গেলে আর্থারাইটিস এমন কী হার্ট এ গেলে - হার্ট এটাক পর্যন্ত হতে পারে। আদি ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে অবশ্য গ্যাস অর্থাৎ বায়ুর ( বায়ু- পিত্ত-কফ্) উল্লেখ থাকলেও তার মূল অর্থ বাঙালির গ্যাস এর তত্ত্বের সাথে মিল খায় না।
তবে আমরা সার্জেন রা গ্যাস এর সাথে অন্য ভাবে সম্পর্কিত। আমাদের এই গ্যাস / বায়ু কোলন অর্থাৎ বৃহদ্রান্ত তে তৈরি হয়। আমরা যে খাবার খাই- তা পাকস্থলী - স্মল ইন্টেস্টাইন হয়ে কোলন এ পৌছায়। শক্ত খাবার ধীরে ধীরে তরল রূপ নেয়। কোলন এ থাকা অজস্র ব্যাকটেরিয়া ( আজকাল এদের আবার - মাইক্রোবায়োম বলে - তার গল্প অন্য একদিন করবো) এই আধা তরল খাবার কে মেরে ধরে গ্যাস উৎপাদন করে - এই গ্যাস ই ফ্লেটাস বা বাতকর্ম রূপ এ - শব্দ এবং গন্ধ সহযোগে আমাদের শরীর এর বাইরে বেরিয়ে আসে।
এহেন ফ্লেটাস/ বাতকর্ম আমাদের সার্জন দের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একজন রোগী নিয়মিত ফ্লেটাস পাস করছেন মানে তার হজমতন্ত্র একদম ঠিকঠাক কাজ করছে। বড় বড় পেটের অপারেশন এর পর ( বিশেষত কোলন ক্যান্সার / খাদ্যনালির ক্যান্সার) রাউন্ড এ গিয়ে সব সার্জেন রাই রোগী ফ্লেটাস পাস করেছে কিনা জানতে চান। রোগীর ফ্লেটাস পাস করা যেন অপারেশন সাকসেসফুল হবার সমতুল্য।
রোগীরা বড় কোনো অ্যাবডোমিনাল অপারেশন এর পর ফ্লেটাস পাস করলে তা যে অপারেটিং সার্জেন কে কী অনাবিল আনন্দ এবং প্রশান্তি প্রদান করে তা একজন সার্জেনই জানেন।
পরবর্তী গ্যাসের গল্প পরের সংখ্যায় ।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment