1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

ভোর

ছবি : ইন্টারনেট

ভোর

প্রতীক মিত্র

দিনটা বৃহস্পতিবার ছিল। ভোরে উঠতে হত। ও ওঠেনি। চোখে যেন যে চার দশক ধরে ও এই জীবন যাপন করছে সেই চার দশকেরই ঘুম। অ্যালার্ম বেজেছিল। ও শুনেছিল।উঠে বাথরুম সেরে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। অ্যাদ্দিন একলা থাকার দুঃখে ভেতরটা পুড়ে যেত।সেদিনই সকালে যখন ঘুমটা শেষমেশ ভাঙলো ও বুঝলো একলা থাকার ফায়দা। বউ-বাচ্চা থাকলে ঠিক ক্যাঁইম্যাই করে ডেকে দিতো।ও ঠিকই করেছিল সেদিন ও কিছু করবে না। কথা রেখেছিল। কিছু করেনি। সহকর্মীদের মধ্যে হাতেগোণা কেউ কেউ অবসরে বইটই পড়ে বলে ওর মাঝে মাঝে হিংসে হত। ওদিন ওর সময় থাকলেও বই পড়া হচ্ছিল না বলে আফশোস বিশেষ হয়নি।বই পড়লে বইএর অত ভাবনা-চিন্তা-বিষয় ওর মাথায় চেপে বসতো।আর ভার ভালো লাগে না। ফলে মনটাকে ফুরফুরে রেখে ও মোবাইলে গান চালিয়ে দিয়েছিল। কিশোর-রফি-লতা-মান্নার গান। দু’একটা গান হতে না হতেই ফোন যে সেই বাজলো বাজতেই থাকলো। একের পর এক ফোন। মূলতঃ অফিস থেকেই। কেন যায় নি তার কৈফিয়ৎ দিতে দিতে বেচারা কিছুক্ষণের মধ্যেই এত ক্লান্ত হয়ে গেল যে ফোনটা বন্ধ করতে বাধ্য হল। ঠিক করেছিল কিছু করবে না। করেনি।রান্নাও না। চেনা ফাস্টফুডের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানলো অল্প দামে থালি মিলবে। অর্ডার দিয়ে দিল। খাবার আসা অবধি বিছানায় ল্যাদ খেয়েই পড়ে রইলো। উষ্টুম-ধুষ্টুম স্মৃতি-ভাবনায় সময় কোন ফাঁকে যে গেল উড়ে। ছাদে একবার উঠেছিল যেইখান থেকে জল পড়ে সেই ফাটলটা দেখতে। বর্ষায় খুব ভোগাবে।  ছাদে যেতেই পাশের বস্তিটা টপকে চোখ গেল দুরে ভগ্নপ্রায় বনেদি বাড়িটায়।দোতলার খোলা বারান্দায় গাছে জল দিচ্ছিল বুড়োটা। কোমর নুইয়ে গেলেও বেশ তো আছে। ওকে দেখে ওর কোনো নেতিবাচক ভাবনা এল না। বরং মনে হল বুড়োটার মতন অসামাজিক স্বার্থপর মানুষটা একা একা টিকে গেলে ও তো পারবেই। ওতো রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়মিত দানধ্যান করে। তাছাড়া অবৈতনিক স্কুলটাতেও বছরে একবার বইখাতার জন্য বেশ ভালো টাকা দেয়। ফলে ওর একা একা বার্ধক্যে তেমন কিছু আক্ষেপ থাকবে না। খাবার আসে। ফোন বন্ধ। বেল বাজে। ওর টনক নড়ে। বই না পড়েও সেই দার্শনিকই হয়ে যাচ্ছে যে। শরীরটা বেশ তাজা লাগছিল। খিদেও ছিল প্রচুর। খাবারগুলো বানিয়েও ছিল বেশ। বেশ মনের সুখে খেয়ে নেয়। রাতের জন্য আর কিছু রাখে না। রাতে তো মুড়ি রইলোই। রাত হয়। খিদে একটু যে ছিল না তা নয় ও মুড়ি দিয়ে সামলে নেয়। এমনকি পেটের ভুটভাটও। চাকরির এখনও বছরখানেক। আর যেন ইচ্ছেই করেনা। পরের দিন শুক্রবার। ভোরে উঠতে হত। ও শুক্রবারও ওঠেনি। অ্যালার্মেও না। অসংখ্য ফোনেও না। এমনকি দরজা ধাক্কা দিয়ে শেষমেশ পাড়ার লোকজন সেই দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরও নয়।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment