1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

স্মৃতির সরণি বেয়ে শালডিহা মহাবিদ্যালয়ে

শালডিহা মহাবিদ্যালয়ের

স্মৃতির সরণি বেয়ে শালডিহা মহাবিদ্যালয়ে

সৌরভ পাত্র

সালটা ২০১৫, কি আনন্দ!কি আনন্দ! আনন্দে ভরপুর মনটা সেদিন কলেজ জীবনে পা দিয়েছে। প্রতিটা গাছ, চেনা মুখ,১২নম্বর রুমে অনার্স ক্লাস, পাসের ক্লাস কখনও ৭নম্বর রুম, আবার কখনও ৫ কিংবা ৬। চেনা দেওয়াল সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, কনফারেন্স হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্রতী, মাঠ,কেন্টিন - এই সবকিছুই সোনালী মুহূর্তের সাক্ষী।

প্রায় ৩৫কিলোমিটার দূর থেকে সপ্তাহে ৬দিন বাসে যাতায়াত করে প্রতিটা ক্লাস মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করার যে কি আনন্দ বলে বোঝাতে গেলে একটা সঠীক মুহুর্তের প্রয়োজন। গুনতে থাকে একের পর এক হাতের পাপ, সময় বহমান।

১২নম্বর রুমে বিধান বাবুর ক্লাস মিস করা মানেই 'ভাষাতত্ত্ব' অন্ধকার। ভাষা কি ? ব্যাখ্যাসহ নিখুঁত ভাবে বোঝাতে একজন আদর্শ শিক্ষকের দ্বারাই সম্ভব। আদর্শ শিক্ষক যে বিধানবাবু, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গর্ববোধ করি। তিন তিনটা বছর যে মানুষটির সান্নিধ্যে ছিলাম।শাশ্বতী ম্যাডামের ক্লাসে 'নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ','ব্রাহ্মণ','অমলকান্তি' সহ অনেক কবিতা পাঠ ও তার সারমর্ম আজও মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে। আমার মতে রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে হলে আগে শাশ্বতী ম্যাডামের ক্লাস করতে হবে।জয়ন্ত স্যারের ক্লাসে চর্যাপদ ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ক্লাসটা করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। নিখুঁত ভাবে বিষয়টি সরলীকরণ করাটা একজন আদর্শ শিক্ষকের দ্বারাই সম্ভব। জয়ন্ত স্যার মানেই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, জয়ন্ত স্যার মানেই চর্যাপদের প্রতিটি পদ নখদর্পণ। অনিমেষ স্যারের ক্লাসে অন্নদামঙ্গল বুঝতে পারা যায় যখন সারবস্তু অতি সহজেই অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর মগজে ঢুকে। এককথায় অসাধারণ প্রতিভার পাশাপাশি সুবক্তা শিক্ষক হলেই সবকিছুই সম্ভব। অমলেন্দু স্যারের ক্লাসে মঙ্গলকাব্য অতি সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে রসস্বাধন করতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এককথায় অসাধারণ সবকটা ক্লাস করতে পারাটা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গর্ববোধ করি।

সংস্কৃত ক্লাসে রাজীব বাবু মানেই একটা কালিদাস, বিশাখমিত্র, অশ্বঘোষ, ভাস সহ একাধিক কবির রচনা সম্পর্কে অজানার প্রতি জানার যে কৌতূহল তা অতি অনায়াসে শিক্ষার্থীর মনে প্রেষণার জোগান দেয়। গোরাচাঁদ বাবু, সজল বাবু, মালা ম্যাডাম এর ক্লাস মন ছুঁয়ে যায় অতি সহজেই অল্প সময়ের মধ্যেই।

ইতিহাস ক্লাসে সঞ্জয় বাবুর ক্লাস কার না করতে ইচ্ছে জাগে? যে ছেলেটি প্রায় ৩৫কিমি দূর থেকে এসে ক্লাসটি করে অতি মনোযোগ দিয়ে। এককথায় অনবদ্য পঠনশৈলী শিক্ষার্থীর মন ছুঁয়ে দেখে যে শিক্ষকের জন্য, তিনি আর কেউ না, আমার তোমার সবার প্রিয় সঞ্জয় বাবু। নিতাই বাবু, বিনয় বাবুর ক্লাস করা মানে একটা আলাদা অনুভূতি, যা বলে বোঝাতে গেলে একটা সঠিক মুহুর্তের প্রয়োজন।

সালটা ২০১৮, কলেজ জীবনের গণ্ডি পার হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে সময়ের সঙ্গে তালে তাল দিয়ে। এটাই জাগতিক নিয়ম, এর বাইরে চলা যায় না। প্রায় ৪ বছর পর আবার দেখা সেই চেনা মুখ, সেই চেনা দেওয়াল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে বাংলা ও ইতিহাস বিভাগ। আগে উপরতলায় ছিল পুরনো বিল্ডিং এ, এখন তা নবনির্মিত নতুন বিল্ডিং এ স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হ্যাঁ আরও পরিবর্তন হয়েছে, যে গাছগুলি চার বছর আগে যে রূপে ছিল সে কিন্তু এখন একটু বুড়ো হয়েছে।এটাই স্বাভাবিক, বয়স তো আমার তোমার সবারই বেড়েছে। কিন্তু মনটা ঠিক সেই আগের মতই নরম আছে। অনুভবে স্পর্শ করে দেখলে বোঝা যায়, সেই আগের মতই সবার সঙ্গে মন খুলে কথা বলে মিলন মেলায়।

ফাইনাল সার্টিফিকেট অনেক আগেই এসেছে। কিন্তু নিতে যাওয়া হয়নি একটা কারণেই, এত তাড়াতাড়ি নিতে যাব? পরে নিলে ক্ষতি কি? এ প্রশ্নের বাঁধ ভেঙ্গে আজ নিতে এলাম ফাইনাল সার্টিফিকেট। মনটা খুশিতে ভরে ওঠে, যখন স্যার- ম্যাডামদের সবার চেনা প্রিয় 'সৌরভ' ডাকটি আবারও শুনতে পাই। এটাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি। এ শাশ্বত প্রাপ্তি স্মৃতির মণিকোঠায় স্বযত্নে লালিত হবে যুগ যুগ ধরে।

...(সমাপ্ত)...




No comments:

Post a Comment