1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

চোর

 

ছবি : ইন্টারনেট

চোর

শিবানী কুন্ডু খাঁ

খুব মার খেয়েছিলাম ।হেড স্যারের রুমে ঢোকার আগেই ক্লাস রুমের মধ্যেই দু'চারজন মস্তান ছেলেবন্ধু ঘিরে ধরে গরম গরম ধমক দিল আমায় ।সঙ্গে চমকও ।

"চোর চোর বিশ্বম্ভর পাকা চোর" বলে চুল টেনে পিঠে আর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিল।

চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিলো আমার । মারের ব্যথায় নয় ; লজ্জায় ।এত বড় বদনাম ! এত এত ছেলে মেয়ে আমায় চোর বলে জানলো ! এ মিথ্যা অপবাদ ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল আমায় । পাল্টা মার আমিও মারতে পারতাম। কিন্তু মারি নি । মা'র শিক্ষা । "ধৈর্য  হারাস না কোন অবস্থাতেই  । সত্যকে ত্যাগ করিস না কোন পরিস্থিতিতেই ।"

লজ্জায় হতবাক আমি ।

ততক্ষণে পিয়ন এসে আমায় নিয়ে গেল হেড স্যারের কাছে ।স্যার শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন । তারপর কোনরকম শাস্তি না দিয়েই আমায় বললেন -"এসো ।"

কিন্তু চোখের জল শুকোতে চাইল না আমার । মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ল। এ'ঘর ও'ঘর কাজ করে আমার যাবতীয় সাধ মেটাচ্ছে । চুরি করার  ইচ্ছা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারি না কখনো । লোভটাই নেই একেবারে । মায়ের কাছে গল্প শুনে শুনে আমি কবেই মেরে ফেলেছি লোভ নামের ঐ শত্রুটিকে । অথচ চুরি না করেও এ কলঙ্ক ! মা ভীষণ কষ্ট পাবে ।আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা কে জানে !

কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগলো মনের মধ্যে।

অয়ন হাত নেড়ে নেড়ে বলেছিল - "চুরি করা মহাপাপ রে , বিশ্বম্ভর । কিছু খেতেই যদি ইচ্ছে জেগেছিল বললেই পারতিস ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যেত । "

তখনই বিটুল পেছন দিক থেকে দৌড়ে এসেছিলো দরজার সামনে ।সজল চোখে বলেছিল -"আমারও গেছে রে, পঞ্চাশ টাকা !" সোমেশের কাছে একশো টাকা তেমন কিছু না হলেও বিটুলের কাছে পঞ্চাশ টাকাই অনেক । ওর বাবার অসুখ । মাকেই সংসার সামলাতে হয় ।

বিস্ময়ের সঙ্গে সকলেই বলল - "সত্যি !"

বিটুল কেঁদে ফেলেছিল। ওই টাকা দিয়ে সে তার বাবার  জন্য ওষুধ নিয়ে যাবে । মা খুব মারবে তাকে ।বাড়িতে ঢুকতেই  দেবে না হয়তো ।

অয়ন বিটুলের হাত ধরে বলেছিল - "চল ,এখনই খবরটা দিই অফিসে । আর একবার ধোলাই দিতে হবে বিশ্বম্ভরকে ।"

তারপর হো হো করে হেসে উঠল 

মেয়েরা নাক তুলল অনেকেই । সনকাদি বাদে । আমাদের পাড়াতেই সনকাদির বাড়ি  ।ওই একমাত্র স্যারদের কাছে সাহস করে বলেছিল - " কারো টাকা চুরি গেছে কিনা জানিনা , তবে ও ছেলে যে চোর নয় এ আমি হলপ করে বলতে পারি ।"

হেড স্যার কথা বলেন নি । কেবল শুনেছিলেন । পরদিন টিফিন পিরিয়ডেই অয়নের বাবা হরলাল বাবু অফিসে এসে হেড স্যারের কাছে মাফ চাইলেন ।এবং ফোন  করে ব্যাপারটা জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ।

টাকাগুলো ফেরত দিয়েছিলেন । সোমেশ আর বিটুলের হারিয়ে যাওয়া টাকা দুটোতে সীমা আর বাবুল দুটো নাম লেখা ছিল 

হেড স্যারের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তিই এখানে কাজে লেগেছে । গভীর পরখ শক্তি নিয়ে তিনি বিটুল আর সোমেশের কাছে নোট সম্পর্কে কিছু জানতে চেয়েছিলেন । আর অয়নের ভাবভঙ্গীও নিরীক্ষণ করেছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে । গার্লফ্রেন্ডকে উপহার দেওয়ার জন্যই অয়ন নাকি এ ধরনের কাজ হামেশাই করে বলে তার বাবা হরলালবাবু জানিয়েছেন অকপটে ।মারধর করেও শোধরাতে পারছেন  না । এ ব্যাপারেও হেড স্যারের সহযোগিতা চাইলেন তিনি ।

হেড স্যার হারানো টাকা উদ্ধার  করে সোমেশ বিটুলের  হাতে দিলে তারা প্রণাম করল খুশিমনে 

হেড স্যার গম্ভীর ভাবে বললেন -"না দেখে না জেনে একজন সৎকে কখনো অসৎ ভেবো না । আর নিজের জিনিস রক্ষা করতে শেখো ।"

সোমেশ ও বিটুল ক্লাসের মধ্যেই আমার হাত দু'খানা ধরে তিনবার সরি বলেছিলাম ।

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম বেশ  কিছুক্ষণ 

 ...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment