ছবি : ইন্টারনেট |
চোর
শিবানী কুন্ডু খাঁ
খুব মার খেয়েছিলাম
।হেড স্যারের রুমে ঢোকার আগেই ক্লাস রুমের মধ্যেই দু'চারজন মস্তান ছেলেবন্ধু ঘিরে ধরে গরম গরম ধমক দিল
আমায় ।সঙ্গে চমকও ।
"চোর চোর বিশ্বম্ভর
পাকা চোর" বলে চুল টেনে পিঠে আর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছিল।
চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে
এসেছিলো আমার । মারের ব্যথায় নয় ; লজ্জায় ।এত বড় বদনাম ! এত এত ছেলে মেয়ে আমায় চোর বলে জানলো ! এ মিথ্যা অপবাদ
ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল আমায় । পাল্টা মার আমিও মারতে পারতাম। কিন্তু মারি নি । মা'র শিক্ষা । "ধৈর্য হারাস না কোন অবস্থাতেই । সত্যকে ত্যাগ করিস না কোন পরিস্থিতিতেই ।"
লজ্জায় হতবাক আমি
।
ততক্ষণে পিয়ন এসে
আমায় নিয়ে গেল হেড স্যারের কাছে ।স্যার শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন
। তারপর কোনরকম শাস্তি না দিয়েই আমায় বললেন -"এসো ।"
কিন্তু চোখের জল শুকোতে
চাইল না আমার । মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ল। এ'ঘর ও'ঘর কাজ করে আমার যাবতীয় সাধ মেটাচ্ছে । চুরি করার ইচ্ছা তো স্বপ্নেও ভাবতে পারি না কখনো । লোভটাই
নেই একেবারে । মায়ের কাছে গল্প শুনে শুনে আমি কবেই মেরে ফেলেছি লোভ নামের ঐ শত্রুটিকে
। অথচ চুরি না করেও এ কলঙ্ক ! মা ভীষণ কষ্ট পাবে ।আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা কে জানে
!
কথাগুলো ঘুরপাক খেতে
লাগলো মনের মধ্যে।
অয়ন হাত নেড়ে নেড়ে
বলেছিল - "চুরি করা মহাপাপ রে , বিশ্বম্ভর । কিছু খেতেই যদি ইচ্ছে জেগেছিল বললেই পারতিস ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যেত
। "
তখনই বিটুল পেছন দিক
থেকে দৌড়ে এসেছিলো দরজার সামনে ।সজল চোখে বলেছিল -"আমারও গেছে রে, পঞ্চাশ টাকা !" সোমেশের কাছে একশো টাকা তেমন
কিছু না হলেও বিটুলের কাছে পঞ্চাশ টাকাই অনেক । ওর বাবার অসুখ । মাকেই সংসার সামলাতে
হয় ।
বিস্ময়ের সঙ্গে সকলেই
বলল - "সত্যি !"
বিটুল কেঁদে ফেলেছিল।
ওই টাকা দিয়ে সে তার বাবার জন্য ওষুধ নিয়ে
যাবে । মা খুব মারবে তাকে ।বাড়িতে ঢুকতেই
দেবে না হয়তো ।
অয়ন বিটুলের হাত
ধরে বলেছিল - "চল ,এখনই খবরটা দিই অফিসে
। আর একবার ধোলাই দিতে হবে বিশ্বম্ভরকে ।"
তারপর হো হো করে হেসে
উঠল ।
মেয়েরা নাক তুলল
অনেকেই । সনকাদি বাদে । আমাদের পাড়াতেই সনকাদির বাড়ি ।ওই একমাত্র স্যারদের কাছে সাহস করে বলেছিল -
" কারো টাকা চুরি গেছে কিনা জানিনা , তবে ও ছেলে যে চোর নয় এ আমি হলপ করে বলতে পারি ।"
হেড স্যার কথা বলেন
নি । কেবল শুনেছিলেন । পরদিন টিফিন পিরিয়ডেই অয়নের বাবা হরলাল বাবু অফিসে এসে হেড
স্যারের কাছে মাফ চাইলেন ।এবং ফোন করে ব্যাপারটা
জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ।
টাকাগুলো ফেরত দিয়েছিলেন
। সোমেশ আর বিটুলের হারিয়ে যাওয়া টাকা দুটোতে সীমা আর বাবুল দুটো নাম লেখা ছিল ।
হেড স্যারের তীক্ষ্ণ
পর্যবেক্ষণ শক্তিই এখানে কাজে লেগেছে । গভীর পরখ শক্তি নিয়ে তিনি বিটুল আর সোমেশের
কাছে নোট সম্পর্কে কিছু জানতে চেয়েছিলেন । আর অয়নের ভাবভঙ্গীও নিরীক্ষণ করেছিলেন
অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে । গার্লফ্রেন্ডকে উপহার দেওয়ার জন্যই অয়ন নাকি এ ধরনের
কাজ হামেশাই করে বলে তার বাবা হরলালবাবু জানিয়েছেন অকপটে ।মারধর করেও শোধরাতে পারছেন না । এ ব্যাপারেও হেড স্যারের সহযোগিতা চাইলেন তিনি
।
হেড স্যার হারানো
টাকা উদ্ধার করে সোমেশ বিটুলের হাতে দিলে তারা প্রণাম করল খুশিমনে ।
হেড স্যার গম্ভীর
ভাবে বললেন -"না দেখে না জেনে একজন সৎকে কখনো অসৎ ভেবো না । আর নিজের জিনিস রক্ষা
করতে শেখো ।"
সোমেশ ও বিটুল ক্লাসের
মধ্যেই আমার হাত দু'খানা ধরে তিনবার সরি
বলেছিলাম ।
আমি ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ ।
No comments:
Post a Comment