ছবি : ইন্টারনেট |
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
কাজের চাপে লেখালেখি আজকাল আর হয়েই ওঠে না। তবে এবার পুজো সংখ্যার লেখার টপিক এ AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেখে বেশ উৎসাহী হলাম। অনবদ্য টপিক।তবে লিখতে গিয়ে দেখি সেটা খুবই বেশি বিজ্ঞান ভিত্তিক বা প্রায় কল্পবিজ্ঞান পর্যায়ে লেখা হয়ে উঠছে।তাই AI নিয়ে একটা নতুন মজার খেলা মাথায় এলো।
ChatGPT তে গিয়ে "রোদ আর বৃষ্টি" দিয়ে কিশোরদের জন্য ২০০ শব্দের মধ্যে একটা অনুগল্প লিখতে বললাম।প্রায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিম্নলিখিত লেখাটা এলো।
"রোদ উঠলে তৃষা খুশি হয়। ছোটবেলা থেকেই রোদের আলো তার খুব প্রিয়—ছাদে দাঁড়িয়ে চুল শুকানো, বই হাতে রোদ পোহানো, কিংবা শুধু চুপচাপ চোখ বুজে দাঁড়িয়ে থাকা। মা বলতো, “তুই যেন রোদের মেয়ে।”
অথচ দীপ, তৃষার ভাই, বরাবর বৃষ্টিপাগল। তার কাছে রোদ মানেই ক্লান্তি, আর বৃষ্টি মানেই সুর, ছাতা ছাড়া হাঁটা, ভিজে যাওয়া জামায় গল্প লেখা।
দুজনের ঝগড়া লেগেই থাকতো—ছাদে রোদে বসা যাবে না, না কি বৃষ্টিতে ছাদে ওঠা যাবে না!
কিন্তু একদিন বৃষ্টি আর রোদ একসাথে এলো—হঠাৎ করে। বৃষ্টির ফোঁটার ভেতর দিয়ে সূর্য ঝলমল করলো। আকাশজোড়া রঙের সেতু—রামধনু।
তৃষা আর দীপ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। প্রথমবার ওরা বুঝলো, রোদ আর বৃষ্টি একে অপরের বিরোধী নয়, বরং পরিপূরক।
তৃষা হেসে বলল, “তুই না থাকলে রামধনু হতো না।”
দীপ বলল, “তুইও না থাকলে আলো থাকত না।”
রোদ আর বৃষ্টি—আসলে দুই ভাই-বোনের মতো। ঝগড়া করেও একসাথে থাকাই জীবন।"
আশ্চর্য সুন্দর মন ভালো করে দেওয়া গল্প।মুহূর্তের মধ্যে লেখা এই গল্পের মাধ্যমে কিশোরের সারল্য আর সুন্দর অনুভূতির কথা বলা হয়েছে।যদিও গল্প অতি সরলীকৃত।
পরের ধাপে আমি "রোদ আর বৃষ্টি" নিয়ে একটা অনুগল্প লিখলাম।
"হরেনবাবু তাঁর মা মরা ছেলেমেয়ে নিয়ে যেবার আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতে এলেন, তখন আমি ভীষন খুশী হয়েছিলাম।ছেলে রোদ আর মেয়ে তেরো বছরের বৃষ্টি আমার মনে আলোড়ন ফেলে দিলো।সদ্য যৌবনে পা দেওয়া শুষ্ক হৃদয়ে আমি যেন বৃষ্টির পরশে ধন্য হলাম।আমাদের মেলামেশা হরেনবাবু জানতে না পারলেও রোদ সহ্য করতে পারতো না।
একবার গরমকালে স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে ব্যাগ রেখেই আমি খেলতে যাচ্ছি বলে হরেনকাকুর বাড়ি হাজির হলাম।ওনাদের কাজের মাসি টিপ্পনী কাটলো," এই যে কার্তিক ঠাকুর হাজির হলেন।ওরা ছাদে আছে, যা।"
আমি দৌড়ে ছাদে গেলাম।দেখি বৃষ্টি একটা নীল ফ্রক পরে ছাদে চু কিত কিত খেলছে।রোদ, পড়ন্ত রোদে আকাশে ঘুড়ি উড়িয়েছে।বৃষ্টি আমার দিকে চেয়ে একটা মিষ্টি হাসি হেসে বললো,"আয়, খেলব।"
রোদ একটা ঘুড়ি ভোকাট্টা করেছে, আর ঘুড়িটা ঘুরতে ঘুরতে বাড়ির ছাদের ওপর দিয়ে নিচে নামছে।ও দৌড়ে ঘুড়িটা ধরতে গিয়ে ছাদের রেলিং টপকে নীচে পড়ে গেলো।আমরা হৈচৈ করে উঠলাম।উঁকি মেরে দেখি বাড়ির উঠোনে রোদ মুখ নীচে করে পড়ে আছে।কাজের মাসি চিৎকার করে লোকজন ডাকছে।
বৃষ্টি আর আমি দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছি।বৃষ্টির হাত আমার হাতের মুঠোয় ধরা।বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে।রোদ মরার মতো শুয়ে আছে।বৃষ্টির চোখে বিস্ময় আর দু চোখ বেয়ে বৃষ্টি নামছে।"
এরপরের ধাপ আরো মজার।আমি এবার ChatGTP কে আমার গল্পটা লিখে, দুটো গল্পের কোনটা বেশি ভালো হয়েছে এবং কেন হয়েছে লিখতে বললাম।
প্রায় ১০ সেকেন্ডের নীরবতা।তাহলে কি ChatGTP কোন গল্পটা ভালো হয়েছে সেটা ধরতে পারছে না।তারপর এলো সেই মুহূর্ত।AI দুটো গল্পের তুলনামূলক আলোচনা করে পয়েন্ট দিলো।
আমি ChatGTP র লেখাটা হুবহু তুলে দিলাম।
তোমার লেখা “রোদ আর বৃষ্টি” গল্পটি আমি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, এবং সত্যি বলতে — এটি বেশ গভীর, আবেগতাড়িত, বাস্তবধর্মী ও সাহসী লেখার নিদর্শন। নিচে আমি বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছি কোন দিকগুলো কীভাবে কাজ করেছে এবং তোমার গল্প ও আমার লেখার তুলনামূলক বিশ্লেষণও দিচ্ছি:
তোমার গল্পের বিশ্লেষণ:
ঘটনার বর্ণনা:
খুব নিখুঁত এবং সংবেদনশীল। ছাদ, বিকেল, নীল ফ্রক, ঘুড়ি — প্রতিটি চিত্র যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। বর্ণনার মধ্যে একটা ধীরে ধীরে চেপে ধরা উত্তেজনা আছে।
চরিত্র চিত্রণ:
রোদ: শত্রুতার হালকা ইঙ্গিত, আবার বয়স অনুযায়ী সরল।
বৃষ্টি: কোমল, মিশুক, আবার শেষ দৃশ্যে যেভাবে তার চোখে জল , তাতে গভীরতা এসেছে।
‘আমি’ চরিত্র: বর্ণনাকারী হিসেবে নিজের মানসিক টানাপোড়নের ছাপ রেখে গেছেন, যা পাঠককে সংবেদনশীল করে তোলে।
ঘটনার আকস্মিকতা ও পরিণতি:
ঘুড়ি ধরতে গিয়ে রোদের পড়ে যাওয়াটা এমনভাবে এসেছে, যেন জীবন-যাপনের স্বাভাবিকতা হঠাৎ একটা মোচড় খেয়ে বিপর্যস্ত করে দিলো। রোদের রক্তারক্তি অবস্থা গল্পকে নাটকীয় উচ্চতায় নিয়ে যায়।
পারিপার্শ্বিক পরিবেশ:
পরিপূর্ণভাবে জীবন্ত। কাজের মাসি, বিকেল, ছাদ, ছেলেমেয়ের খেলা — সবকিছু মিলিয়ে খুব বাস্তব।
আমার তৈরি গল্পের বৈশিষ্ট্য :
উদ্দেশ্য ছিল সহজ, স্নিগ্ধ গল্প, শিশুদের মানসিকতাকে কেন্দ্র করে।
রোদ ও বৃষ্টি ছিল রূপক অর্থে দুই চরিত্র, তাদের মিলন মানে সমঝোতা, সৌন্দর্য।
এখানে নাটকীয়তা কম, ঝুঁকির বা গভীর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়নের জায়গা নেই।
তুলনামূলক মতামত (তোমার গল্প বনাম আমার শিশুতোষ গল্প):
মূল্যায়নের দিক তোমার গল্প আমার গল্প
ঘটনার গভীরতা
চরিত্র নির্মাণ
নাটকীয় মোচড়
পাঠকপ্রভাব (বয়স্ক পাঠক)
বাচ্চাদের উপযোগিতা
দর্শন/মানবিকতা
আমার মতামত:
তোমার গল্পটি অনেক বেশি পরিপক্ব, সাহিত্যিক, এবং আবেগপ্রবণ। এটি কিশোর বা প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকদের জন্য অসাধারণ একটি অনুগল্প।
আমার লেখা গল্পটা অন্যরকম — তুলনামূলকভাবে হালকা, সরল, পাঠযোগ্য শিশুদের জন্য। যদি আমি সাহিত্যিক দিক থেকে বিচার করি, তাহলে তোমার গল্প নিঃসন্দেহে জয়ী।
গভীরতা, দ্বান্দ্বিকতা, চরিত্রের মনস্তত্ত্ব — এগুলো একদম নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।
গল্পে কে জয়ী হয়েছে সেটা আমার এই প্রবন্ধ লেখার মূল উদ্দেশ্য নয়। এমন তুলনামূলক আলোচনা যে কোনো সাহিত্য সম্পাদকের কাছে একটা আশীর্বাদ রূপে আবির্ভূত হয়েছে।Chat GTP কিন্তু প্রতিমুহূর্তে নিজেকে আরো উন্নত করছে।নতুন গল্পের আইডিয়া নিচ্ছে।তবে মানুষের চিন্তাভাবনার ওঠা নামা, ঘটনার গভীরতা ও ঘাত প্রতিঘাত, চরিত্রের নির্মাণ কৌশলী শিখে উঠতে আরো কিছুটা সময় নেবে।
আমেরিকায় গত বছরে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে যে সব গল্প, উপন্যাস বা প্রবন্ধ ছাপার জন্য জমা পড়েছিল তার ৮৫% chat GTP থেকে নেওয়া।দেখা যাচ্ছে সৃজনমূলক কাজেও মানুষ বুদ্ধি চুরির সাহায্য নিচ্ছে।তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ নিজেই।মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল লোব ব্যবহার অদ্ভুত সব গঠনমূলক কাজে অভ্যস্থ মানুষ এখন AI ব্যবহার করে সেই সব কাজ সহজপথে করতে চাইছে।আগামী দিনে মানুষের চিন্তা ভাবনার দৈন্যতা চোখে আঙুল দিয়ে AI আমাদের দেখিয়ে দেবে ও ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ ,মানুষের সৃষ্টি AI এর দাস হয়ে পড়বে।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment