1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

আমিন


আমিন

মলয় সরকার 

বিনোদ ঘোষাল এ অঞ্চলের নামী আমিন।সে সরকারী কাজ করে আবার প্রাইভেটে সাধারণ মানুষের মাপজোকের কাজও করে।

এ অঞ্চলের মানুষগুলো শান্ত শিষ্ট।চাষবাসই বেশি করে। শিক্ষার প্রসার এখানে খুব বেশি হয় নি।তাদের মধ্যে বিনোদ ঘোষাল শিক্ষিত আর সরকারের কাজ করে বলে তার খাতির আর সম্মান এ অঞ্চলে একটু বেশি।

বিনোদের কিছু জমিজিরেত আছে বটে।তবে তার থেকে এই আমিনের কাজে তার পয়সা এবং পসার দুইই বেশি। কোথায় দুই ভাইয়ে কিংবা পাশের প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ, কোথায় জমি বিক্রী হবে তার মাপজোক এই সব ব্যাপারে এ অঞ্চলে একটাই নাম, বিনোদ। এ অঞ্চলে সবাই চেনে তাকে।

সেদিন সকাল সকাল দেখা গেল বিনোদ, বাজার যাওয়ার রাস্তার ধারে একটা ম্যাপ, ফিতে, ইত্যাদি নিয়ে থিওডোলাইটে চোখ রাখছে আর একটা নোট বইয়ে কি সব লিখছে। এই দেখে বাজার পথের লোকজন একজন একজন করে তার চারিদিকে ভিড় করতে লাগল।আর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তার কাজ দেখতে লাগল। তাকে বিরক্ত না করেই, এ ওকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, কি ব্যাপার? কেউ সঠিক জানে না।

ঔৎসুক্য যখন চরমে, ভিড়ও ভালই জমেছে, বিনোদ হঠাৎ মুখ তুলে জনতার উদ্দেশ্যে বলে উঠল, নতুন রাস্তা হচ্ছে, এটাও অনেক বড় রাস্তা হবে, তারই মাপজোক চলছে।

এই বলে আবার কাজে ডুবে গেল।একটু পরে সে সব গুটিয়ে হাঁটা দিল। লোকে কিছুটা খুশী হল, কিছুটা বিস্মিত হল।

দু একদিন পরে আবার একদিন দেখা গেল বিনোদ আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা বাড়ির দিকে তার থিওডোলাইট ঘুরিয়ে দেখছে। সে বাড়ির মালিক এসে জিজ্ঞাসা করল, কি ব্যাপার, এদিকে? এবার কিন্তু দু চারজন জমতেই বিনোদ বলল, রাস্তাটা এই দিক দিয়েই যাবে কি না, তাই মাপতে হচ্ছে।

চমকে উঠল মালিক। সে বলল, আমার বাড়ি? বিনোদ নির্বিকার ভাবে বলল, ভাঙা পড়বে।সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, আমার পাশে যাদের বাড়ি রয়েছে।তাদের কি হবে?

বিনোদ এবারেও নির্বিকারভাবে বলল, সবই ভাঙা পড়বে। সরকারী কাজ তো! পাঁচজনের প্রয়োজনে রাস্তা হবে। দু একটা বাড়ি ভাঙা পড়লে কিছু করা যায় না। সে তো তোমরা জানই।আগে দেখেওছো।

ক্রমে খবরটা ছড়াল। সবাই এসে বিনোদকে ধরল, কি করা যায়!

বিনোদ বলল, সরকারী কাজে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা তোমারও নেই, আমারও নেই।কাজেই কান্না কাটি করে খুব লাভ নেই।

যখন সবাই খুব করে ধরাধরি করতে লাগল এবং প্রায় কান্নাকাটি করার মত ব্যাপার, বিনোদ বলল, কাল সকালে সবাই একজন একজন করে আমার বাড়িতে এস, নিজের নিজের দলিল নিয়ে।

পরদিন বেশ ভিড় বাড়িতে। সকলেরই কথা, তার বাড়ির উপর দিয়ে যেন রাস্তা না যায়৷ বাড়ি যেন ভাঙা না পড়ে।

বিনোদ অনেক মাথা চুলকে ভীষণ সমস্যায় গম্ভীর হয়ে গেল। দলিল দেখে কাগজপত্র ঘেঁটে বলল,  সরকারী কাজ তো। জান তো সবাই, হাকিম নড়ে তবু হুকুম নড়ে না। তবে তোমরা যখন সবাই এসেছ, আর আমিও একই গাঁয়ের লোক। দেখি কি করা যায়।

সবাই সমস্বরে আকুতি জানাল, না না করে দিতেই হবে।

সে বলল, আচ্ছা, এক সপ্তাহ পরে এস দেখি।

তার পর আর দেখা গেল না তাকে রাস্তা মাপতে। সে বুঝেছে জাল বিছানো হয়ে গেছে।এবার গুটাতে হবে।

এরপর একে লুকিয়ে ও, ওকে লুকিয়ে চুপিসাড়ে আর একজন। এই ভাবে লোকের গোপন আসা যাওয়া শুরু হল তার বাড়িতে।  সলা পরামর্শ  হয় চুপি চুপি। দেনা পাওনার কথাও হয়।

সরকারি কাজ তো! তাকে ঘোরানো তো সহজ কাজ নয়। নেহাৎ বিনোদ আমিনের ক্ষমতা বলেই তাই।অন্য আমিন হলে ঘোল খেয়ে যেত।বিনোদের সঙ্গে উঁচু মহলের অফিসারদের যোগাযোগ। কিন্তু শুধু কথায় তো চিঁড়ে ভিজবে না। উপযুক্ত দক্ষিণা চাই। তাই জমির পরিমাণ আর অবস্থাপত্র বুঝে দক্ষিণার পরিমাণ গোপনে স্থির হল প্রত্যেকের সঙ্গে।

চুপিচুপি লেনদেনের হাত বদল হল নিঃশব্দে। সবাই স্বস্তি পেল অন্ততঃ তার বাড়ির উপর দিয়ে রাস্তা যাবে না, আর যেখান দিয়েই যাক।

তারপর লোকে যদিও জিজ্ঞাসাবাদ করছিল, রাস্তা কোনদিক দিয়ে গেল, বিনোদ অবশ্য সে চিন্তায় আমল না দিয়ে অন্য আর কোন কোন অঞ্চলে নতুন রাস্তার খবর জানানো যায় তার হিসাব কষছিল।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment