![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
শিখা
প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার
আজ ও চড়া মেকআপ করে
শিখা পোস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ।
জন কল্লোলের এই কল্লোলিনীর
মেলায় প্রায় দু-ঘন্টা ঠায় দাড়ানো , বিস্ফারিত চোখে গিলছে
এই শহরের মেকি ভদ্রতাকে ।
শুট- বুট- টাই পরা
সব ভদ্রদের প্রতিরাতের রঙীন শিখা হয়ে থাকে এই মেয়েটি
কিন্তু , আজ রাজপথ বেশ অন্য আলোয় সেজেছে ।
হ্যাঁ কাল তো মহালয়া
।
পিতৃ পক্ষের অবসানে
মাতৃ পক্ষের সূচনা -- পূজো এসে গেল । ছোট বেলায় পূজো বলতে একটা আলাদাই মজা ছিল । চারিদিকে
কত ঝারবাতি কত শব্দ ।উফ ! সত্যি একটা আলাদাই পুজো ছিল । এসব ভাবতে ভাবতে । হঠাৎ পিছন
থেকে কে যেন বলে উঠলো --
- কি রে কি এত ভাবছিস
, নাঙের কথা নাকি !?
শিখা ঘুরে দেখল চুমকি
।
- নারে দ্যাখ শহর টা
কেমন সেজেছে ।
- ধুর ! তাতে আমার বাপের
কি শালা টানা একসপ্তাহ বাজার মন্দা যাবে । সব ভদ্দর বাবুরা বৌ বাচ্চা নিয়ে ন্যাকামো
করবে ধুস । কাল আবার মহালয়া জীবনেও যে বাপ কে দেখেনি তাদের কে আবার ঘটা করে তর্পণ করবে
শালারা ছাঁচড়া মাল সব ।
- কাল মহালয়া নারে চুমকি
।
- যাব্বা । তাই তো জানি
ভাই কেন ?!
- নাহ এমনি ।
- তোর যে মাঝ মাঝে কি
হয় মাইরি । আমি বলছি কাল ও খদ্দের কম থাকবে দেখিস ।
- ওহ !
- কি ওহ রে । মাসি হেব্বি
দেবে জানিস তো ।এবারে 3 টে খদ্দের দরকারই
বুঝলি নাহলে হামারি মেয়েছেলে টা একদিনের টাকা মেরে করে দেবে ।
- হ্যা । তুই আয় ।
- যাবাব্বা । আচ্ছা , তুই ভাব কেমন ।
এই বলে চুমকি চলে
যায় ।
শিখা ভাবে কাল মহালয়া
, ওর মা বাবা দুজনেই গত হয়েছেন
। কাকার কাছে থাকত সে , আর সেই কাকাই তাকে
শোভাবাজারের এই লালঝারবাতির গলিতে ঠিকানা করে দিয়ে যায় ।
কিন্তু , কাল মহালয়া তার বাবা মায়ের ঐ ছিল একমাত্র চোখের
মণি ।
তাই তর্পণ করার অদম্য
ইচ্ছে জাগল তার রাত ও এখন ভোর হয়ে যায় প্রায় , সামনেই মায়ের ঘাট --
শিখা ঠিক করল ,
আজ আর খদ্দের আসবেনা ,
তো আজ সে তর্পণ করবে ।
মায়ের ঘাটে সে এসে
পৌছল , গঙ্গায় নামবে এমন সময় একটা
মেয়ের চিৎকার শুনল শিখা ।
তড়িঘড়ি গঙ্গা থেকে
উঠে দেখতে গেল - দেখল একজন পুলিশ একটা পাগলীর সাথে জোর করছে , এই দেখে শিখা দুলকি চালে বলে উঠলো --
- ও পুলিশবাবু ,
ওতো পাগলী আইচ্ছে
সব নোঙরা গন্ধ পাবে
, শুধু শুধু বিনিপয়সায় ওকে খেয়ে
কি লাভ বলেন দেখি ।
পুলিশ চোখ লাল করে
বলে উঠলো --
- কি বললি হারামজাদী
, যা ভাগ ।
-না কেন বাবু।ওর
কাছে কিছচ্ছু পাবে না,আমি আছি দেখ (এই বলে
শিখা শাড়ি আচঁল ফেলে দেয় মাটিতে।)
আমাকে দেখ আমি পরিষ্কার আছি । ওকে ছেড়ে দাও না গো আসুন মজা দেব ।
ঠিক ভোর ৪.০০ টা,
তখনি সূর্য উদিত হচ্ছে
,
আর তখনি ভেসে এলো
ঘাটের লাগোয়া চায়ের দোকানে থেকে মহালয়ার সুর -
- "জাগো তুমি জাগো
জাগো দূর্গা জাগো দশপ্রহরধারিণী ।...."
পুলিশ বাবু লজ্জায়
আর রাগে গজ গজ করতে চলে যায় ।
শিখা নিজের আচঁল টা
ছিঁড়ে কিছুটা কাপড় তুলে পাগলী টাকে নিয়ে গঙ্গায় যায়
আর ,নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ তর্পণ সে পিতৃপক্ষের অবসানে মাতৃপক্ষের সূচনায় অর্পণ করে ।
প্রথম প্রভাতী আলোয়
শিখার মুখখানি জ্বলন্ত অগ্নি শিখার মত জ্বল জ্বল করতে থাকে ।
...(সমাপ্ত)...
Thankyou amar lekha prokasher jonno
ReplyDelete