1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

শিখা

ছবি : ইন্টারনেট

শিখা

প্রিয়াঙ্কা পিহু কর্মকার 

আজ ও চড়া মেকআপ করে শিখা পোস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ।

জন কল্লোলের এই কল্লোলিনীর মেলায় প্রায় দু-ঘন্টা ঠায় দাড়ানো , বিস্ফারিত চোখে গিলছে এই শহরের মেকি ভদ্রতাকে ।

শুট- বুট- টাই পরা সব ভদ্রদের প্রতিরাতের রঙীন শিখা হয়ে থাকে এই মেয়েটি

কিন্তু , আজ রাজপথ বেশ অন্য আলোয় সেজেছে ।

হ্যাঁ কাল তো মহালয়া ।

পিতৃ পক্ষের অবসানে মাতৃ পক্ষের সূচনা -- পূজো এসে গেল । ছোট বেলায় পূজো বলতে একটা আলাদাই মজা ছিল । চারিদিকে কত ঝারবাতি কত শব্দ ।উফ ! সত্যি একটা আলাদাই পুজো ছিল । এসব ভাবতে ভাবতে । হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলো --

- কি রে কি এত ভাবছিস , নাঙের কথা নাকি !?

শিখা ঘুরে দেখল চুমকি ।

- নারে দ্যাখ শহর টা কেমন সেজেছে ।

- ধুর ! তাতে আমার বাপের কি শালা টানা একসপ্তাহ বাজার মন্দা যাবে । সব ভদ্দর বাবুরা বৌ বাচ্চা নিয়ে ন্যাকামো করবে ধুস । কাল আবার মহালয়া জীবনেও যে বাপ কে দেখেনি তাদের কে আবার ঘটা করে তর্পণ করবে শালারা ছাঁচড়া মাল সব ।

- কাল মহালয়া নারে চুমকি ।

- যাব্বা । তাই তো জানি ভাই কেন ?!

- নাহ এমনি ।

- তোর যে মাঝ মাঝে কি হয় মাইরি । আমি বলছি কাল ও খদ্দের কম থাকবে দেখিস ।

- ওহ !

- কি ওহ রে । মাসি হেব্বি দেবে জানিস তো ।এবারে 3 টে খদ্দের দরকারই বুঝলি নাহলে হামারি মেয়েছেলে টা একদিনের টাকা মেরে করে দেবে ।

- হ্যা । তুই আয় ।

- যাবাব্বা । আচ্ছা , তুই ভাব কেমন ।

এই বলে চুমকি চলে যায় ।

শিখা ভাবে কাল মহালয়া , ওর মা বাবা দুজনেই গত হয়েছেন । কাকার কাছে থাকত সে , আর সেই কাকাই তাকে শোভাবাজারের এই লালঝারবাতির গলিতে ঠিকানা করে দিয়ে যায় ।

কিন্তু , কাল মহালয়া তার বাবা মায়ের ঐ ছিল একমাত্র চোখের মণি ।

তাই তর্পণ করার অদম্য ইচ্ছে জাগল তার রাত ও এখন ভোর হয়ে যায় প্রায় , সামনেই মায়ের ঘাট --

শিখা ঠিক করল , আজ আর খদ্দের আসবেনা , তো আজ সে তর্পণ করবে ।

মায়ের ঘাটে সে এসে পৌছল , গঙ্গায় নামবে এমন সময় একটা মেয়ের চিৎকার শুনল শিখা ।

তড়িঘড়ি গঙ্গা থেকে উঠে দেখতে গেল - দেখল একজন পুলিশ একটা পাগলীর সাথে জোর করছে , এই দেখে শিখা দুলকি চালে বলে উঠলো --

- ও পুলিশবাবু , ওতো পাগলী আইচ্ছে

সব নোঙরা গন্ধ পাবে , শুধু শুধু বিনিপয়সায় ওকে খেয়ে কি লাভ বলেন দেখি ।

পুলিশ চোখ লাল করে বলে উঠলো --

- কি বললি হারামজাদী , যা ভাগ ।

-না কেন বাবু।ওর কাছে কিছচ্ছু পাবে না,আমি আছি দেখ (এই বলে শিখা শাড়ি আচঁল ফেলে দেয় মাটিতে।)

আমাকে দেখ আমি পরিষ্কার আছি । ওকে ছেড়ে দাও না গো আসুন মজা দেব ।

ঠিক ভোর ৪.০০ টা,

তখনি সূর্য উদিত হচ্ছে ,

আর তখনি ভেসে এলো ঘাটের লাগোয়া চায়ের দোকানে থেকে মহালয়ার সুর -

- "জাগো তুমি জাগো

জাগো দূর্গা জাগো দশপ্রহরধারিণী ।...."

পুলিশ বাবু লজ্জায় আর রাগে গজ গজ করতে চলে যায় ।

শিখা নিজের আচঁল টা ছিঁড়ে কিছুটা কাপড় তুলে পাগলী টাকে নিয়ে গঙ্গায় যায়

আর ,নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ তর্পণ সে পিতৃপক্ষের অবসানে মাতৃপক্ষের সূচনায় অর্পণ করে ।

প্রথম প্রভাতী আলোয় শিখার মুখখানি জ্বলন্ত অগ্নি শিখার মত জ্বল জ্বল করতে থাকে ।

...(সমাপ্ত)...





1 comment: