![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
বিসর্জন
গৌরব রায়
গোধূলি আসলে ম্যাজিক আওয়ার।অল্প সময়ের জন্যে আসে আবার চলে যায়।মুহূর্ত কথার মত।পৃথিবী একবার পায় তাকে পায় নাকো আর।তবে আমাদের গোধূলি গল্পের নায়িকা।প্রেসিডেন্সি তে ইংলিশে মাস্টার্স করে নেট ক্র্যাক করে PhD করতে এসেছে যাদবপুরে।কবিতা ও গানে পারঙ্গমা।ওদের ফেস্টে নীলাঞ্জন এর গান শুনতে শুনতে কম্প্যারেটিভ লিটারেচার এর রিসার্চ স্কলার চিরন্তন কে দেখে সব গুলিয়ে যায় এবং ফেস্টের পর দুজনে গিটার ও গানে শুধু তোমাকেই ভালোবেসে ফেলে জড়িয়ে পড়ে।
এক বছর পরে গোধূলির শরীরটা খারাপ হয়।ওর বাড়ি বালিগঞ্জে। আর চিরন্তন
থাকে খড়দহ। অনেক পরীক্ষার পর bone marrow টেস্টের পর জানা
যায় লিম্ফোমা।মাঝে মধ্যে অনেক সময় দুর্বল লাগত ,মাথা ঘুরতো,জ্বর আসতো।কিন্তু ওতো
পাত্তা দিতো না।গোধূলির বাবা মারা গেছেন আগেই।
ওর মা চিরন্তন এর কথা জানেন।চিরন্তন কয়েকবার ওদের বাড়িও গেছে।এরপর cnci
রাজারহাট এ কেমো শুরু হলো।
হাসি খুশি প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েটা আস্তে আস্তে নিভে যেতে লাগলো।মাথার
এত সুন্দর চুল সব পড়ে গেলো।কাকিমা অনেক সময় হাঁটু যন্ত্রণার জন্যে যেতে পারতেন
না।চিরন্তন ঠিক গোধূলি কে নিয়ে যেতো।বসে থাকতো।বা ভর্তি করে দিয়ে থেকে যেতো
হসপিটালে।তিন সপ্তাহ পর পর একটা cycle। ছটা সাইকেল হল।এই করে পাঁচ মাস কাটলো।কিছুদিন বিশ্রাম।
আবার ইউনিভার্সিটি তে ক্লাস করতে গেলো।তখন আগস্ট মাস।আবার শরীর খারাপ
হলো।আবার টেস্ট।PET SCAN রিপোর্ট আবার রিলাপ্স।
চিরন্তন এর আসার কথা ছিল ষষ্ঠী সপ্তমী আসতে পারেনি।দু বছর হয়ে গেল
অঞ্জলী দেওয়া হলো না।চিরন্তন এর সাথেও দিতে পারলো না।এখন রাত ৮.৩০ টা
প্রায়।চিরন্তন এসেছে।
পাঞ্জাবী পরে।চিরন্তন ওর সামনে কখনও কাঁদেনা।কিন্তু ও জানে বুঝতে পারে ওর আড়ালে চিরন্তন কাঁদে।চিরন্তন নির্ঘন্ট জেনে এসেছে সন্ধি পুজোর অঞ্জলীর। ইউটিউব খুলে দুজনে মন্ত্র পড়ল মা ওকে শাড়ী পরিয়ে দিয়েছে। হুইল চেয়ারে বসে হাত জোড় করে পাশে হাঁটু মুড়ে বসে চিরন্তন।
-বলল চল ঘুরে আসি
- এই শরীরে? কি যে বলিস।
- চল না
- ঠিক আছে।
ফাল্গুনী সংঘের পুজোতে গেল।ছোট্ট পুজো।কিন্তু গত দু বছরে প্রথম পুজো।মায়ের মুখ টা খুব করুণ।চিরন্তন হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এসেছে।ওর মনে হল এটাই শ্রেষ্ঠ পুজো এটাই সেরা প্রতিমা।যতই ম্যাডক্স,ট্রিধারা নবীন পল্লি নলিন সরকার স্ট্রিট থাকুক। এটাই সেরা প্রতিমা। চিরন্তন আবার ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেল। চুল আঁচড়ে দিয়ে গেল।খাইয়ে দিয়ে গেল।ছেলেটার মধ্যে খুব মায়া আছে।একরাশ কোকড়া চুল মায়া ভরা মুখ।নবমীর সকালে পেটে ব্যথা।প্রচণ্ড বমি।আবার ভর্তি হতে হল CNCI তে।চিরন্তন চলে এসেছে খবর পেয়ে।দুজনেই জানে গোধূলি বেশিদিন নেই।গোধূলি ও জানে।চিরন্তন এক মুঠো শিউলি ফুল কাগজে জড়িয়ে দিয়ে গেছে।সারা রাত জেগে বসে আছে।রাতের দিকে আইসিইউ তে পাঠানো হল।দশমীর সকালে ভেন্টিলেশন। দুপুরের দিকে সব শেষ।কাছে যাওয়ার সাহস হচ্ছিল না।প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে। কাঁদছেও।ওদের দুজনেরই প্রিয় ছবি ছিল সুজিত সরকারের অক্টোবর।গোধূলির হাতে ধরা কয়েকটা শিউলি ফুল তখনও।
গোধূলির আবৃত্তি শুনতে পাচ্ছে,
"এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?"
No comments:
Post a Comment