1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

ঠাকুর পূজা

ছবি : ইন্টারনেট

ঠাকুর পূজা

মাখনলাল প্রধান

ছাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি টব সাজিয়ে মাঝখানে মায়ের পূজার ঠাকুরগুলো বসিয়ে দিয়েছে দিপু । মা প্রায়দিন ফোন করে জানতে চায় - আজ ঠাকুর দিয়েছিস তো মনে করে ?

খুব জ্বালাতন করে ঠাকুর নিয়ে । ছেলেটা ঠিক মতো খাচ্ছে কিনা , কেমন আছে , কী করছে - এসব কথার আগেই জানা চাই ঠাকুর দিয়েছে কিনা । ভাগ‍্যিস বলে না ঠাকুর পুজোটা দিয়েছিস কিনা ।

দিপু অম্লান বদনে বলে দিল - আমি চব্বিশ ঘন্টা তোমার ঠাকুরের সেবা করে যাচ্ছি মা ।

- বাসি জিনিস ফেলে , প্রতিদিন টাটকা ফুল  এনে দিচ্ছিস তো  ?

-আরে বাবা , সব ঠিক  চলছে । একেবারে রেলগাড়ির মতো , টানা লম্বা - সে চলার শেষ নেই । তুমি এসে দেখবে , আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কল‍্যাণে তোমার দেবতার টু শব্দ করার সময় নেই । খেয়ে শেষ করতে পারছে না , দেখে মুখ ফেরাতে পারছে না , এমনকি বিশ্রাম নিয়েও শেষ করতে পারছে না ।

মা বুঝতে না পেরে বলে- কী বলিস , বুঝি না কিছু । তোরা আজকাল কী যে করছিস !

-খুব সহজ ব‍্যাপার মা ! বৌদ্ধদর্শন আর আধুনিক পরিবেশ বান্ধবকে প্রযুক্তির ছাতার তলায় একসাথে জুড়ে একটা অভিনব  প্রজেক্ট ফেঁদেছি । সে শুধু তোমার কল‍্যাণে সম্ভব হয়েছে মা !

- কী যে বলিস মুন্ডু-মাথা , ঠাকুর পুজোর মধ্যে তোর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঢোকে কোথ্থেকে রে ? মাথাটা একদম গেছে !

হাসতে হাসতে দিপু বলে - ও সব তুমি বুঝবে না মা । কত শ্রম দিবস বাঁচবে জান  ? যে হারে উদ্ভিদ নির্যাতন চালানো হত ধর্মের নামে , সরি পূজার নামে , পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হত , সেটা রোধ করা যাবে । তবে ওই একটাই ভয় ---

- ভয় ? কীসের কথা বলছিস ?

- কীসের আবার , বহু মানুষের কাজ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে ।

এবার মা নিতান্ত বিরক্ত হয়ে বলল - নাহ্ , বড্ড চিন্তায় ফেললি আমাকে । কী করছিস একবার নিজের চোখে না দেখলে শান্তি পাব না । দুদিন তীর্থ করতে এসে সুখ আমার কপালে জুটবে না ‌। তোর মতো নাস্তিককে বিশ্বাস করে স্থির থাকা যায় না ।

- আহা হা , তুমি এখুনি চলে এসো না যেন  -

মা আরও ঘাবড়ে গিয়ে বলল - কেন ? কী করেছিস রে !

- আমি রিসার্চ পেপারটা রেডি করে নিই । নেচার পত্রিকায় পাঠাতে হবে । তুমি এসে আবার যদি ভাঙচুর কর , সেজন্য বলছি ।

এবার মা বলল - ও , তার মানে যা ভেবেছি তাই । ইশাকে নিয়ে এসে বাড়ির সমস্ত কাজ করাচ্ছিস তো । বিয়ের আগে তাকে আনলি কেন বল তো  ?

দিপু হাসতে হাসতে বলল - মা , তোমার মাথাটা একেবারে গেছে  । বলেই আবার হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল ।

 

মা আর দেরি করল না । দিপু ভীষণ খামখেয়ালি করা ছেলেমানুষ যেমন তেমনি বুদ্ধিমান । ছোটো থেকে এই রকম উদ্ভট চিন্তা ওর মাথায় খেলে বেড়ায় । সেবার কম খরচে রান্নার পদ্ধতি নিয়ে কমকান্ড করেছে । ভাতের হাঁড়িতে সব সব্জি আলাদা আলাদা কৌটায় ভরে সেদ্ধ করে , পরে মশলা দিয়ে রসিয়ে দেখিয়ে ছিল সময় বাঁচে , খরচও বাঁচে , খাবারের পুষ্টিও নষ্ট হয় না । সারা পাড়া ভেঙে দেখতে এল , সেকী হৈ হৈ ব‍্যাপার ! এক একজনের মাথায় এরকম অদ্ভুত চিন্তা যে হয় তা অস্বীকার করার নয় ।

 

বাড়িতে ফিরে হাত-পা না ধুয়ে মা চলল ঠাকুর ঘর দেখতে । ওমা , ঘর তো ফাঁকা ! ফেলে দিল নাকি সব ঠাকুর ? বলল , চব্বিশ ঘন্টা সেবা করছে ।  সর্বনাশ করেছে রে ! যা উদ্ভট চিন্তা নিয়ে সব সময় থাকে । রাগের মাথায় চিৎকার করে ডাক দিল - দিপু  , ও দিপু -- !

ছাদের থেকে সাড়া দিল - মা তুমি এসে গেছ  । আমি ছাদে ।

- ছাদে কী করছিস ? নেমে আয় , তোর মাথা ছাতু করব আয় !

- ছাদেই তো আমি তোমার ঠাকুরকে বিশ্বরূপ দেখাচ্ছি ।  ঠাকুর বলছিল , ঘরে থেকে থেকে মনটা বুড়ো হয়ে গেছে । চোখে ভাল দেখতে -

মা ধমকাল - তুই থামবি !

তরতরিয়ে উঠে গেল মা ছাদে । ওমা , কী সুন্দর করে ঠাকুরের চারদিকে ফুলের টব বসিয়ে দিয়েছে ! মাঝখানে ঠাকুর একেবারে মধ‍্যমণি হয়ে বসে আছেন । আহা হা !  সত্যি খুব সুন্দর হয়েছে রে !  ঠাকুরের সামনে আপেলের টব , আঙুরের টব । চারদিকে নয়নতারা , জবা , তরাট , গন্ধরাজ , গাঁদা , বেলফুলের টব - গাছগুলো ফুলে লুটিয়ে পড়ছে যেন ঠাকুরের পায়ে । ফুলের মিষ্টি গন্ধে মায়ের মন বিহ্বল । মা তাঁর ঠাকুরের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে ।  সত্যি এরকম করে তো তিনি কোনোদিন ভাবেনি ।

 

দিপু বলল - তোমাকে রোজ বাজারে যেতে হবে না । সব সময় ফুল রইল ঠাকুরকে ঘিরে । শুধু শুকনো ঝরে পড়া ফুলগুলো সরিয়ে দিলেই হল ।

মা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখছে নাস্তিকের মাথায় এরকম বুদ্ধি কাজ করে ।  না না , একে বিগড়ে দেওয়া চলবে না । মা যেন কড়া হুকুম দেবার জন্য বলল - ইশা কোথায় ?

- ইশা এখানে কোথায় ?

- আমি কিন্তু বেশি সময় দিতে পারব না  দিপু ।

দিপু অবাক হয়ে মার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দিপু হঠাৎ মার গম্ভীর গলা শুনতে পেল - থিসিস পেপার তাড়াতাড়ি রেডি করে  পাঠিয়ে দে । আর একটা কথা , ইশাকে সরিয়ে ওই আর্টিফিশিয়াল নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিবি নাকি ?

দিপু মার কথা ঠিক বুঝতে না পেরে বলল - ইশা কী দোষ করল  ? তোমার যা বলার আছে ওকে বলে দাও ‌।

-ঠিক আছে , আগে থিসিসটা শেষ কর । তারপর দেখছি ।

...(সমাপ্ত)...




No comments:

Post a Comment