![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
ঠাকুর পূজা
মাখনলাল প্রধান
ছাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি
টব সাজিয়ে মাঝখানে মায়ের পূজার ঠাকুরগুলো বসিয়ে দিয়েছে দিপু । মা প্রায়দিন ফোন করে
জানতে চায় - আজ ঠাকুর দিয়েছিস তো মনে করে ?
খুব জ্বালাতন করে
ঠাকুর নিয়ে । ছেলেটা ঠিক মতো খাচ্ছে কিনা , কেমন আছে , কী করছে - এসব কথার আগেই জানা চাই ঠাকুর দিয়েছে
কিনা । ভাগ্যিস বলে না ঠাকুর পুজোটা দিয়েছিস কিনা ।
দিপু অম্লান বদনে
বলে দিল - আমি চব্বিশ ঘন্টা তোমার ঠাকুরের সেবা করে যাচ্ছি মা ।
- বাসি জিনিস ফেলে ,
প্রতিদিন টাটকা ফুল এনে দিচ্ছিস তো ?
-আরে বাবা ,
সব ঠিক চলছে । একেবারে রেলগাড়ির মতো , টানা লম্বা - সে চলার শেষ নেই । তুমি এসে দেখবে
, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের
কল্যাণে তোমার দেবতার টু শব্দ করার সময় নেই । খেয়ে শেষ করতে পারছে না , দেখে মুখ ফেরাতে পারছে না , এমনকি বিশ্রাম নিয়েও শেষ করতে পারছে না ।
মা বুঝতে না পেরে
বলে- কী বলিস , বুঝি না কিছু । তোরা
আজকাল কী যে করছিস !
-খুব সহজ ব্যাপার
মা ! বৌদ্ধদর্শন আর আধুনিক পরিবেশ বান্ধবকে প্রযুক্তির ছাতার তলায় একসাথে জুড়ে একটা
অভিনব প্রজেক্ট ফেঁদেছি । সে শুধু তোমার কল্যাণে
সম্ভব হয়েছে মা !
- কী যে বলিস মুন্ডু-মাথা
, ঠাকুর পুজোর মধ্যে তোর আর্টিফিশিয়াল
ইন্টেলিজেন্স ঢোকে কোথ্থেকে রে ? মাথাটা একদম গেছে
!
হাসতে হাসতে দিপু
বলে - ও সব তুমি বুঝবে না মা । কত শ্রম দিবস বাঁচবে জান ? যে হারে উদ্ভিদ নির্যাতন চালানো হত ধর্মের নামে , সরি পূজার নামে , পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হত , সেটা রোধ করা যাবে । তবে ওই একটাই ভয় ---
- ভয় ? কীসের কথা বলছিস ?
- কীসের আবার ,
বহু মানুষের কাজ হারানোর সম্ভাবনা
রয়েছে ।
এবার মা নিতান্ত বিরক্ত
হয়ে বলল - নাহ্ , বড্ড চিন্তায় ফেললি
আমাকে । কী করছিস একবার নিজের চোখে না দেখলে শান্তি পাব না । দুদিন তীর্থ করতে এসে
সুখ আমার কপালে জুটবে না । তোর মতো নাস্তিককে বিশ্বাস করে স্থির থাকা যায় না ।
- আহা হা , তুমি এখুনি চলে এসো না যেন -
মা আরও ঘাবড়ে গিয়ে
বলল - কেন ? কী করেছিস রে !
- আমি রিসার্চ পেপারটা
রেডি করে নিই । নেচার পত্রিকায় পাঠাতে হবে । তুমি এসে আবার যদি ভাঙচুর কর ,
সেজন্য বলছি ।
এবার মা বলল - ও ,
তার মানে যা ভেবেছি তাই ।
ইশাকে নিয়ে এসে বাড়ির সমস্ত কাজ করাচ্ছিস তো । বিয়ের আগে তাকে আনলি কেন বল তো ?
দিপু হাসতে হাসতে
বলল - মা , তোমার মাথাটা একেবারে
গেছে । বলেই আবার হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল ।
মা আর দেরি করল না
। দিপু ভীষণ খামখেয়ালি করা ছেলেমানুষ যেমন তেমনি বুদ্ধিমান । ছোটো থেকে এই রকম উদ্ভট
চিন্তা ওর মাথায় খেলে বেড়ায় । সেবার কম খরচে রান্নার পদ্ধতি নিয়ে কমকান্ড করেছে । ভাতের
হাঁড়িতে সব সব্জি আলাদা আলাদা কৌটায় ভরে সেদ্ধ করে , পরে মশলা দিয়ে রসিয়ে দেখিয়ে ছিল সময় বাঁচে ,
খরচও বাঁচে , খাবারের পুষ্টিও নষ্ট হয় না । সারা পাড়া ভেঙে দেখতে
এল , সেকী হৈ হৈ ব্যাপার ! এক
একজনের মাথায় এরকম অদ্ভুত চিন্তা যে হয় তা অস্বীকার করার নয় ।
বাড়িতে ফিরে হাত-পা
না ধুয়ে মা চলল ঠাকুর ঘর দেখতে । ওমা , ঘর তো ফাঁকা ! ফেলে দিল নাকি সব ঠাকুর ? বলল , চব্বিশ ঘন্টা সেবা করছে । সর্বনাশ করেছে
রে ! যা উদ্ভট চিন্তা নিয়ে সব সময় থাকে । রাগের মাথায় চিৎকার করে ডাক দিল - দিপু , ও দিপু -- !
ছাদের থেকে সাড়া দিল
- মা তুমি এসে গেছ । আমি ছাদে ।
- ছাদে কী করছিস ?
নেমে আয় , তোর মাথা ছাতু করব আয় !
- ছাদেই তো আমি তোমার
ঠাকুরকে বিশ্বরূপ দেখাচ্ছি । ঠাকুর বলছিল ,
ঘরে থেকে থেকে মনটা বুড়ো হয়ে
গেছে । চোখে ভাল দেখতে -
মা ধমকাল - তুই থামবি
!
তরতরিয়ে উঠে গেল মা
ছাদে । ওমা , কী সুন্দর করে ঠাকুরের
চারদিকে ফুলের টব বসিয়ে দিয়েছে ! মাঝখানে ঠাকুর একেবারে মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন । আহা
হা ! সত্যি খুব সুন্দর হয়েছে রে ! ঠাকুরের সামনে আপেলের টব , আঙুরের টব । চারদিকে নয়নতারা , জবা , তরাট , গন্ধরাজ ,
গাঁদা , বেলফুলের টব - গাছগুলো ফুলে লুটিয়ে পড়ছে যেন ঠাকুরের
পায়ে । ফুলের মিষ্টি গন্ধে মায়ের মন বিহ্বল । মা তাঁর ঠাকুরের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে
। সত্যি এরকম করে তো তিনি কোনোদিন ভাবেনি ।
দিপু বলল - তোমাকে
রোজ বাজারে যেতে হবে না । সব সময় ফুল রইল ঠাকুরকে ঘিরে । শুধু শুকনো ঝরে পড়া ফুলগুলো
সরিয়ে দিলেই হল ।
মা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে
দেখছে নাস্তিকের মাথায় এরকম বুদ্ধি কাজ করে ।
না না , একে বিগড়ে দেওয়া চলবে
না । মা যেন কড়া হুকুম দেবার জন্য বলল - ইশা কোথায় ?
- ইশা এখানে কোথায় ?
- আমি কিন্তু বেশি সময়
দিতে পারব না দিপু ।
দিপু অবাক হয়ে মার
মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দিপু হঠাৎ মার গম্ভীর গলা শুনতে পেল - থিসিস পেপার তাড়াতাড়ি
রেডি করে পাঠিয়ে দে । আর একটা কথা ,
ইশাকে সরিয়ে ওই আর্টিফিশিয়াল
নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিবি নাকি ?
দিপু মার কথা ঠিক
বুঝতে না পেরে বলল - ইশা কী দোষ করল ?
তোমার যা বলার আছে ওকে বলে
দাও ।
-ঠিক আছে ,
আগে থিসিসটা শেষ কর । তারপর
দেখছি ।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment