![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
ও গঙ্গানদী; -আমার মিতা
সৌমিক ঘোষ
ও গঙ্গানদী,
তুমি যে আমার মিতা ।
বিকেলের মন খারাপে তোমার কাছে আসি । কখনও রংবাহারী রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে, কখনও ঘাসে ভরা পাড়ে বসে তোমায় শুধু দেখি । গঙ্গা,- আমার একান্তের নিঃসঙ্গতার সাথী, কুলু কুলু শব্দের মোড়কে আড়াল করে রাখে কষ্ট । একাকীত্বের গারদে বন্দী আমি তোমার আলিঙ্গনে মুক্তি যে চাই । জীবনপথে ক্লান্ত নদী যেমন শান্তি অন্বেষণে মোহনায় যায় ।
তোমার চারপাশে গোধূলির লালচে কমলা ওড়নাটা ধীরে ধীরে সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে যায় । তুমি ছায়াচ্ছন্ন মুখে ঠিক এঁকে রেখেছো এক চিলতে সুখের স্থিরচিত্র । তুমি অস্থির, উত্তাল দেহবল্লরীতে নিজেকে সাজিয়ে খুঁজে চলো বাঞ্ছিত মোক্ষ সাগরের ঠিকানা । তোমার জলরাশির অহংকার আমার অস্ফুট প্রেমকে ঢেউ-এর আঁচলে উড়িয়ে দিয়েছে । আবার স্রোতের সোহাগী হাসিতে আমায় মাতাল করে তোলে । উছল ধারার মাঝে তোমার নিদ্রিত চোখ আমি দেখতে চাই না । তোমার উজল চোখে আজ আমি আর ভালোবাসার রঙ দেখতে পাই না । সীমারেখার গণ্ডিতে সীমাহারা তোমার জলের শরীরে, আনন্দের কলতান আজ যেন ম্রিয়মান ।
ও গঙ্গানদী;-আমার বিষন্ন মিতা ।
দুঃখ, কষ্ট, হতাশার ঘোলাটে আবেগ তোমার গতির হর্ষধ্বনিকে নির্বাক করতে চায় । তবু অবিচ্ছিন্ন অবিরল ধারায় অদৃশ্য নিঃশব্দ স্রোতে তুমি বয়ে চলো । সতেজ গ্রাম, সচেতন শহর, সজাগ শহরতলী নিবিড়ভাবে দুষে যায় তোমাকে । তোমার দেহে রয়েছে যে বিষের চোরাবালি । নতুন ভোরের চিরন্তন সূর্যোদয় তোমার দিগন্তে আধুনিকতার ধোঁয়ায় শুধুই ঝাপসা হলেও তুমি প্রশান্তিতে বয়ে চলো অপূর্ণতা পূরণের আশায় অপার্থিব সূর্যাস্তের খোঁজে ।
আমি এখনও খুঁজে চলেছি চকচকে সেই জিয়ন মুক্তো; যার ছোঁয়ায় তুমি আবার স্বচ্ছ মায়াবিনী হবে । ঘোলাটে জলে, সভ্যতার জঞ্জালে, বিজ্ঞানের কূটকচালিতে তোমার চিরযৌবনের ঝাঁপিটাই আমি পাইনি । মন খারাপের আমি,- শুধুই আনমনে তোমার দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ গুনে চলি । সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তে কত যে ছবির ফ্রেমে তোমার বিষাদের অভিসার সাগর সঙ্গমে অজ্ঞাতবাসে থাকে । ঝড়ে উত্তাল তোমার জলরাশির গভীরতায় আমি খুঁজে পাই দৈনন্দিন রোজনামচায় বেঁচে থাকার শক্তি । জীবনের দোদুল হাওয়ায় তোমায় নিয়ে কত লোকগাথা আমার স্মৃতির নকশিকাঁথায় রয়েছে আঁকা ।
জন্মান্তর যদি থাকে আমার প্রেমের অবগাহনে ব্যাকুল হতে তুমি চিরকাল থেকো;-
ও গঙ্গানদী; -আমার মিতা ।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment