![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
ফিরে আসুক
বহুত্ব ও সম্প্রীতির ঐক্য
এক চরম সংকটকালের
মধ্যে দিয়ে চলছি আমরা। চারিদিকে শুধুই ঘোর তমসা। প্রতিমুহূর্তে বিলীন হচ্ছে আলোর বিকিরণ।
অশান্তি অস্থিরতা ঘাত প্রতিঘাত জীর্ণতা জড়তা
দগ্ধতা যাতনা হতাশা একরাশ অসহায়তায় নিমজ্জিত মানব সমাজ। কূলকিনারা হারিয়ে সবাই যেন
ছুটছে বিক্ষিপ্তভাবে চারিদিকে। সর্বত্রই সমস্যার দুর্ভেদ্য প্রাচীর। পাশাপাশি বেড়ে
গিয়েছে দারিদ্রতা অভাব অনটন। কোভিভ কালের পর থেকেই সামাজিক বৈষম্য চরমভাবে প্রকট হয়েছে।
এখনো ফিরে আসেনি পুরোদস্তুর পূর্বের স্থিতাবস্থা। তবুও নিরবচ্ছিন্ন লড়াই জারি আছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। এভাবেই চলছে বেঁচে থাকার দিনযাপন ও
প্রাত্যহিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতা। অঘটনের ঘনঘটায় প্রতিনিয়ত বিলুপ্তপ্রায়
সৌজন্য সহমর্মিতা অনুভূতি সংবেদনশীলতা। মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন মননকে ক্ষতবিক্ষত করে
আমরা নিজেদের চেতনা বিবেক বোধ একেবারে বিসর্জন দিয়ে কোন অভিমুখে হেঁটে যাচ্ছি?
জীবনধারণের সহজাত চাহিদাগুলো
পূরণ না করে আমরা অবিরাম একে অপরের সাথে বিদ্বেষ বিভাজনের দাবানলে পুড়ে ছারখার হচ্ছি?
সবক্ষেত্রেই আমাদের নির্বুদ্ধিতা
হঠকারিতা চূড়ান্ত দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা ঠেলে দিচ্ছে অসীম শূন্যতার মাঝে । দেখতে দেখতে
স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব কালের আর একটা আমরা পেরিয়ে এলাম। চারিদিকে উড়তে থাকল তেরঙ্গা
জাতীয় পতাকা যা সাক্ষ্য দেয় স্বাধীন ভারতের গৌরব সম্মান ও মর্যাদার নিশান। নেতা মন্ত্রীদের
বড় গাল ভরা কথা আশ্বাস বাণী আত্মনির্ভর সমৃদ্ধ ভারতবর্ষ। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে
বিনাযুদ্ধে নাহি দেবো সুচাগ্র মেদিনীর রণ হুংকার। দেশপ্রেমের টগবগানিতে ভারতীয়দের
আবারো পাশ ফেল র পরীক্ষা নেওয়া। প্রবাদে আছে শাসকের রং পাল্টায় কিন্তু প্রবৃত্তি
চিন্তন কার্যপ্রণালী একই থাকে । বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসকের ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি আপামর
ভারতীয়দের আজন্ম লালিত বহুত্ব ভ্রাতৃত্ব সংহতি ঐক্য সম্প্রীতির চিরায়ত চেতনাকে বুলডোজার
দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ে বিভাজনের নৃশংসতায় সমাজজুড়ে অবিরাম
অস্থিরতা অসহিষ্ণুতা অমানবিকতার জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। ভেবে শিউরে উঠি এ ভারত নিজেকে
কোন দিকে চালিত করছে। যেখানে শাসকের বিরুদ্ধে তিলে তিলে গড়ে ওঠা বেকারত্ব দারিদ্রতা
কর্মসংস্থানহীনতা আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমূল্য বেঁচে থাকার ন্যূনতম পরিষেবা অধিকারগুলো
কর্পূরের মত বিলিয়মান তখন মানুষের পুঞ্জিভিত ক্ষোভ রাগ সর্বোপরি দাবি-দাওয়া গুলোকে
ভ্যানিশ করতে একমাত্র সাম্প্রদায়িকতায় ভোকাল টনিক। আবারো সেই একই কথা আমরা জেনে বুঝে
সজ্ঞানে নিজেরা একে অপরের বিরুদ্ধে ক্রমশ লড়ে যাচ্ছি সৃষ্টি করছি একরাশ ঘৃণা বিদ্বেষ
শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব। আমরা যারা এতকাল সুখে দুখে বিবিধ প্রতিবন্ধকতায় হাতে হাত রেখে
কাধে কাঁধ মিলিয়ে বিশ্বাসের পূর্ণতায় কাটিয়েছি কত ভালোলাগার মুহূর্ত দিন যাপন আজ
যেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাড়বাড়ন্তে সব
বিলুপ্তির পথে। সমস্ত বৈশিষ্ট্য গুণাবলী সরিয়ে রেখে এখন আমাদের ধর্মীয় পরিচয়ের
সংকীর্ণতায় নিজেদের আবদ্ধ করতে হচ্ছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের সম্মিলিত মহানুভবতা
উদারতা সহিষ্ণুতা সর্বোপরি মানবতাবোধ। সাম্য আদর্শ নীতি নৈতিকতা বিবেক চেতনা সব যেন
আজ ধর্ম রাজনীতির কাছে চরমভাবে পর্যুদস্ত। দেশপ্রেমের বুলি আউড়িয়ে দেশভাগের দগদগে
স্মৃতিকে আবারো উস্কে দিয়ে সম্প্রীতির উর্বর জমিকে বন্ধ্যা ও অনুর্বর করে শুধুই ছড়িয়ে
দেওয়া হচ্ছে এক দেশ এক চিন্তা এক ভাষা এক জাতি এক সংস্কৃতি যার পরতে পরতে লেগে আছে
শাসকের অভীষ্ট পূরণের নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। সংবিধান গণতন্ত্রকে দিনকে দিন
অপ্রাসঙ্গিক অকার্যকরী করে তুলতে চলতে আছে শাসকের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির রণকৌশল। পরিশেষে
একটি কথা মনুষ্যত্বের চেতনায় শান দিয়ে বিভাজনের রাজনীতির গতিপথ অবরুদ্ধ করে মানবতার আলোকে হয়ে উঠি প্রকৃত মানুষ। জাতি ধর্মের
উর্ধে উঠে পরিচয় হোক ভারতীয়। ফিরে আসুক বৈচিত্রের ঐক্য বহুত্বের পীঠস্থান সম্প্রীতির
চিরস্থায়িত্ব। কবিগুরুর ভাষায়-" নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/ বিবিধের মাঝে
দেখো মিলন মহান"।
No comments:
Post a Comment