![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
রোবোটিকতা
সন্দীপ যাযাবর দত্ত
--- সরি, বেশ দেরি হয়ে গেল। খারাপ আবহাওয়া।
প্লেনটা এতটা ডিলে হবে বুঝতে পারিনি।
--- একাই এলি? বৌমা আর বাচ্চারা…
--- ওদের টার্ম এক্সাম
চলছে, এই শর্ট নোটিশে কিচ্ছু করা গেল না। এদিকে কি সব রেডি? শুধু শুধু বডি ফেলে রেখে লাভ নেই!
অনিমেষ ভেতরে
ঢুকলো। পেছন পেছন প্রতিবেশী রমেন কাকুও। এসি রুমের মধ্যে বরফের চাইয়ের উপর শোয়ানো মায়ের মৃতদেহ। অনি সেদিকে এক নজর তাকিয়ে গেল অন্যদিকটায়। সেখানে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রবি। তালেগোলে তার এ আই মোডটা অফ করতে ভুলে গেছে অনি। সেটা করতে যেতেই রমেন কাকা আপত্তি করেন,
--- ও যেমন আছে থাক,
তোমার মায়েরও তাই ইচ্ছে ছিল। তুমি বরং অন্ত্যেষ্টির জন্য প্রস্তুত হও।
অনি ব্যাগটা
রেখে বাইরে চলে যায়। রবি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
--- কাল রাত্তিরে ওষুধ
দিতে যেতেই ধমক দিলেন। “তুই আর মানুষ হলি না। শুধু দেখতেই
যা মানুষ মানুষ! এখানটায় বস। রামায়ণ পড়ছি শোন!” সকালে চানের জল রেডি করে ডাকতে গিয়ে
বুঝলাম ...! এবার আমার কি হবে রমেন কাকা? মা চলে গেলেন। এবার আমাকেও নিয়ে চলে যাবে ফার্মে। ফরম্যাট করে রিপ্রোগ্যামিং করে দেবে আমাকে। মায়ের রবি থেকে আবার রোবো হয়ে যাবো। আর কিছুই মনে থাকবে
না, কাউকে চিনতেও পারব না।
রমেনবাবুও জানেন বৌদি অসুস্থ শরীর নিয়েও যে এতদিন টিকে ছিলেন সে শুধু রবির সেবা শুশ্রূষায়। অনিমেষই অনেক খরচ করে ইনস্টল করিয়েছিল। এখন ওর কাজ আর প্রয়োজন দুইই ফুরিয়ে গেছে। ওকেও কি সান্ত্বনা দেবেন? অথচ যাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মনে মনে প্রস্তুত ছিলেন তাকে দেখে ...। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে…
বাইরে শবদাহের
প্রস্তুতি চূড়ান্ত। শুধু অনিমেষ এলেই..
সে চারটে জরুরি কল সেরে নেয়। একটা বাড়িতে, একটা সিঙ্গাপুরের অফিসে,একটা ফ্লাইট বুকিংয়ের
জন্য ট্রাভেল এজেন্টকে আর শেষ কলটা রোবোটিক ফার্মে।
আওয়াজ ওঠে,
বলো হরি, হরি বোল...
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment