![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
অনুপলব্ধি
অশোক কুমার ঠাকুর
সর্বানন্দ চক্রবর্তী
ঠাকুরের বিশেষ পরিচিতির বিশেষ কোন কারণ নাই, তাহাকে তাহার পরিচিত মহল-ই সময় বিশেষ চিনিতে পারেনা
ইহাতে তাহার বিশেষ আক্ষেপ নাই। এইত সেই দিন তাহার বিদ্যালয় বেলার এক সহপাঠীকে দীর্ঘ
বছর বাদে বাজারে দেখিতে পাইয়া নাম ধরিয়া ডাকিলেন, বন্ধুটি ঘাড় ফিরাইয়া ক্ষানিকক্ষণ তাহার দিকে তাকাইয়া থাকিয়া হঠাৎই হন হন করিয়া চলিয়া গেল।
হতবাক সর্বানন্দ ভাবিতে
লাগিলেন, বন্ধুটি হয়ত চিনিয়াও
না চিনিবার ভান করিয়াছে অথবা
না চিনিয়াও চিনিবার
চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইয়া চলিয়া গিয়াছে।
অথচ এমনটা হইবার কথা নয়, বন্ধুটি এই মুহূর্তে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের একজন বিশেষ কেউকেটা হইলেও ছাত্রাবস্থায় সর্বানন্দ বন্ধুটিকে পোস্টার আঁকিয়া দিয়াছে, লিফলেটের নক্সা করিয়া দিয়াছে এমনকি ছড়া কাটিয়া চোখা চোখা শ্লোগান লিখিয়া দিয়াছে।
একটা সময় সংস্কৃতি
জগতের প্রায় সকলেই সর্বনন্দকে চিনিত। বিশেষ করিয়া যাহারা পত্রিকা প্রকাশ করিত। তখন
এই মফস্বল শহরে কম্পিউটার আসে নাই, অফসেট ছাপাখানা বসে
নাই।
ছাপাখানায় কম্পোজিটর
একটা একটা করিয়া হরফ বসাইয়া পত্রিকার পাতা প্রস্তুত করিত।
সবচেয়ে কঠিন কাজ হইত
পত্রিকার প্রচ্ছদ প্রস্তুত করা, এখন ত প্রিন্ট আউট
বাহির করিলেই প্রচ্ছদ হইয়া যায়, সে ডিজিটাল ছবিই হউক
আর হাতে আঁকা ছবিই হউক।
তখনকার দিনে মফস্বল
শহরে বসিয়া পত্রিকার প্রচ্ছদ তৈয়ারি করা অত সহজ ব্যাপার ছিল না,
'লিনো'র উপর ছবি আঁকিয়া লিনোকাটার দিয়া খোদাই করিয়া অথবা
জুতার রাবার সোলের উপর খোদাই করিয়া প্রচ্ছদ প্রস্তুত করিতে হইত অবশ্য কলিকাতায় বিশেষ
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেটালের প্রচ্ছদ হইত, সর্বানন্দ শুনিয়াছিল, দেখে নাই।
যাইহোক সেই লিনোকাট বা খোদাই করা জুতার সোল, আঠা দিয়া কাঠের পাটার উপর আটকাইতে হইত। পাটার প্রস্থ লিনো বা জুতার সোল সমেত হরফের দৈর্ঘ্যের সমান হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। সর্বানন্দ এই কাজটি শিখিয়াছিলেন বি এড পড়িবার সময় অধ্যাপক অজয় হাজরার নিকট। অধ্যাপক হাজরা শিখিয়াছিলেন বিশ্বভারতীতে কলা বিভাগের ছাত্রাবস্থায় নন্দলাল-কন্যা গৌরী দেবীর তত্ত্বাবধানে।
সেই সময় সর্বানন্দকে চিনিবার আরেকটি মুখ্য কারণ হইল সে ছন্দ মিলাইয়া তাৎক্ষণিকভাব অপূর্ব কবিতা রচনা করিতে পারিত। তাহার মাত্রা জ্ঞান অনুশীলিত, অচর্চিত নয়।
'লিনো' র দিন শেষ হইয়াছে, দুই দশক হইল, ছন্দ কবিতাও আকর্ষণ হারাইয়াছে যুগ বদলের পরিক্রমায়।
কিছুদিন পূর্বে, সর্বানন্দের পরিচিত পার্শ্ববর্তী জেলার এক সম্পাদক, কবি তাহাকে ফোন করিয়া জানাইল, "একটি বিশেষ কবিতা সংখ্যা প্রকাশিত হবে, আপনাকে আসতে হবে।"
সর্বানন্দ আমন্ত্রণ পাইয়া সবিশেষ পুলকিত হইয়া তাহার প্রিয় শাদা পায়জামা পাঞ্জাবি কাচিয়া ইস্তিরি করিয়া প্রস্তুত হইয়া রহিলেন।
যাইবার দিন হোয়াটসঅ্যাপ
এ আমন্ত্রণ পত্র ও অনুষ্ঠান লিপির বিস্তারিত বিবরণ দেখিয়া সর্বানন্দ স্তম্ভিত!
অনুষ্ঠানে গুণীজন
সংবর্ধনা, বক্তব্য, কবিতা পাঠ অনেক কিছুই আছে।
কাহারা পুরস্কার পাইবে,
কাহারা মঞ্চে উঠিয়া বক্তব্য
রাখিবে, কাহারা কবিতা পাঠ করিবে
---- সকলের নাম ছাপার অক্ষরে জ্বল জ্বল করিতেছে।
কেবল সর্বানন্দ, সর্বানন্দ চক্রবর্তী ঠাকুর নামটা কোথাও খুঁজিয়া পাইল না।
সর্বানন্দ শ্বেত শুভ্র
পায়জামা পাঞ্জাবি পরিয়া আয়নার সামনে দাঁড়াইলেন, তাহার প্রতিচ্ছবি, প্রতিবিম্বের দিকে তিনি অপলক চাহিয়া রহিলেন,
অনেকক্ষণ ধরিয়া নিজেকে ঘুরিয়া
ফিরিয়া দেখিলেন কিন্তু কিছুতেই নিজেকে চিনিতে পারিলেন না।
No comments:
Post a Comment