আচমকা ভয়ংকর বিস্ফোরণ। উত্তাল হয়ে উঠল গোটা এলাকা। এলাকা মানে একটি পরিপূর্ণ
জনবসতি। চারদিকে ধুলো, কালো ধোঁয়া আর আগুনের হলকা। ভুরভুর করে বেরুচ্ছে অনবরত।
সেইসঙ্গে পশুপাখি আর মানুষেরা উদ্ভ্রান্ত। ভয়ংকর চিৎকার।
চেঁচামেচি। কান্না। বাঁচার জন্য চূড়ান্ত লড়াই। নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য
বেপরোয়া ছোটাছুটি যেদিকে দুচোখ যায়!
মুহূর্তে মানুষের খন্ড খন্ড শরীর বিভিন্ন পোকায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। কিলবিল
করে এদিক সেদিক। তবুও শেষবারের মতো যদি নিজেকে ফিরে পাওয়া যায়। বিছিন্ন
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কোটি কোটি কোষ থরথর করে কাঁপছে। দাউ দাউ আগুনে জ্বলছে। পুড়ছে।
পুড়তে পুড়তে সেই ধোঁয়া স্লেট পাথরের মতো থমকে আছে আকাশে। চারপাশের বাতাসে প্রবল
বারুদ গন্ধ!
তারপর অপার নিস্তব্ধতা চরাচর জুড়ে। সার নেই। সাড়া নেই। কেবলই মৃত্যু। ভয়াবহ মৃত্যুর ছবি।ঠিক তখনই সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে একটি আহত দরজা। মাটির অনেক গভীর থেকে হাঁফাতে হাঁফাতে উঠে এল। তারপর প্রাণপণে শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে রক্তমাখা পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে দৌড়তে শুরু করল। পাল্লাজোড়া দুহাতের মতো ছড়িয়ে দিল দুপাশে। যেন অলিম্পিকে দৌড়চ্ছে।অনেক অনেক দূর দৌড়ে গেল। মরচে পড়া সবুজ রঙে তখনও বিস্ফোরণের তীব্র গন্ধ। জীবিত বলতে সে ছাড়া আর বোধহয় কেউ নেই।
তারপর অপার নিস্তব্ধতা চরাচর জুড়ে। সার নেই। সাড়া নেই। কেবলই মৃত্যু। ভয়াবহ মৃত্যুর ছবি।ঠিক তখনই সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে একটি আহত দরজা। মাটির অনেক গভীর থেকে হাঁফাতে হাঁফাতে উঠে এল। তারপর প্রাণপণে শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে রক্তমাখা পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে দৌড়তে শুরু করল। পাল্লাজোড়া দুহাতের মতো ছড়িয়ে দিল দুপাশে। যেন অলিম্পিকে দৌড়চ্ছে।অনেক অনেক দূর দৌড়ে গেল। মরচে পড়া সবুজ রঙে তখনও বিস্ফোরণের তীব্র গন্ধ। জীবিত বলতে সে ছাড়া আর বোধহয় কেউ নেই।
অনেকটা পথ ছুটতে ছুটতে
সেই দরজা একটি প্রকান্ড গাছের কান্ডে হেলান দিয়ে বুকে দুহাত চেপে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে
লাগল। গাছটিও তার মতো প্রাচীন। সেই গাছটি দেখল, দরজার চোখেমুখে এখনও
আতঙ্ক যায়নি। চোখের সাদা অংশটি অন্ধকার সর্পিল গুহা থেকে বেরিয়ে এসে ঝুলছে। প্রবল
ঠান্ডায় তার শরীরে বিপুল ঘামের স্রোত। শরীরের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ফাটলে বয়সের গভীর
অন্ধকার। সেই অন্ধকারে থমকে আছে অনেক ঘাম। ঘামের স্রোত। রক্তের স্রোত। শরীরের
নির্যাস।
প্রবীণ গাছটি এইসব কিছু দেখছিল। অনেক দুর্বিনীত ইতিহাসের সাক্ষী সে। সারা বিশ্ব জুড়ে এমন অনেক
প্রতাপ দাঁত-নখ বের করে হামলে পড়ছে জনবহুল এলাকায়। উদ্ভ্রান্ত দখলের লড়াই দেখতে
দেখতে ক্লান্ত। বিধ্বস্ত। এখন তার কোনও কিছুতেই একটুও বিস্ময় জাগে না। বরং ভীষণ কান্না
পায়। এই জনবসতির কোলাহলের রক্তাক্ত অবসান চোখের সামনেই দেখল। দেখল তার মতোই একটি আহত
দরজা হাঁফাতে হাঁফাতে মাটির অনেক গভীর থেকে দৌড়ে এসে তার কাছেই আশ্রয় নিয়েছে।
সব যুদ্ধের লক্ষ্য একই। বিরামহীন দখলের লড়াই।
গাছটি দরজার ঘাড়ের কাছে অনেকটা ঝুঁকে পড়ে জিগ্যেস করল-এরপর কী ভাবছ?
-ভাবছি তো অনেক কিছু।
দরজার চোখেমুখে এখনও প্রবল আতঙ্ক। একসময় এই বুকে কত মানুষকে কাছে টেনে নিয়েছি।
তারা স্বপ্ন দেখেছে। সংসার করেছে। বলতে
বলতে দরজার গলা ভারী হয়ে ওঠে।
-তারপর! বলো... বলে যাও। থামলে কেন? আমার শুনতে ভালো লাগে। এইসব কোনও দিন ইতিহাসে লেখা থাকবে
না...!
-তারপর...। আর বলতে পারে না দরজা। আতঙ্ক আর বিস্ময়ে গলা ধরে আসে। ভীষণ কান্না পায়। ঝাপসা
চোখে দেখে বেশ কয়েকটি জানলা আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। গোটা শরীরে নয়। হাত ভাঙা। পা
ভাঙা। মাথা ভাঙা। পাঁজর ভাঙা।
ভেসে চলেছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে।
ঠিক তখনই একটা আরশোলা সেই
দরজার ফাটল থেকে বেরিয়ে এসে শুঁড় নাচিয়ে বলল-এই দেখো, আমি এখনও বেঁচে আছি অক্ষত
শরীরে।
দরজা ভীষণ খুশি হয়। তারপর আরশোলাকে একরাশ আবেগ নিয়ে বলে-তাহলে বলত, কোনও
মানুষের আঙুল দেখতে পাচ্ছ কিনা...!
-পাচ্ছি।
-নড়ছে?
-হ্যাঁ ।
দরজার ফাটল থেকে বেড়িয়ে এলো এক রাশ নিশ্চিন্ত নিশ্বাস ।
-হ্যাঁ ।
দরজার ফাটল থেকে বেড়িয়ে এলো এক রাশ নিশ্চিন্ত নিশ্বাস ।
লেখক - গৌতম দে
goutam123dey@gmail.com
No comments:
Post a Comment