1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, September 28, 2019

স্বর্গযান

সোহাগি,এই সোহাগি, কোথায় গেলি রে হারামজাদি।
সোহাগি বুঝতে পারে,ওর মরদ জেগেছে। চা দরকার।
 না হলে খোয়ারি কাটবে না।
-আসছি,আসছি।বেশি চেচিওনি।দাড়াও।
 সোহাগি বাড়ির উঠোনে তোলা উনুনে আগুন 
ধরাচ্ছিল। সোহাগি আর অর্জুন থাকে ওদের মহল্লায় ।
কেউ বলে ধাঙ্গড় পট্টি , কেউ বলে মেথর পট্টি । 
পঁচিশ ত্রিশ ঘর । প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ এক চিলতে
 টালির ঘর । একটু ঘেরা উঠোন ।কোনের দিকে চানের ঘর ,পায়খানা । এই মহাল্লার প্রায় সবাই স্থানীয়মিউনিসিপালিটিতে কোন নাকোন কাজ করে ।কেউ হেলা ,কেউ চামার । 
এরা সবাই  বিহারের দেহাতে থাকতো । নিচু জাত , দলিত । 
কোন এক সময় বাংলায় চলে আসে।তারপর,প্রধান 
জীবিকা হয়ে দাঁড়ায়,লোকের বাড়ির ময়লা পরিস্কার,
রাস্তার নোংরা পরিস্কার,কোন  পশু মরে গেলে তার 
সৎকার।অর্থাৎ মেথর আর ধাঙ্গড়ের কাজ।আগে যখন 
খাটা পায়খানা ছিল,তখন মাথায় করে মানুষের বর্জ পদার্থও এদের বইতে হতো।
এখন যাক ,খাটা পায়খানা উঠে গেছে,মেথর দেরও ঐ জঘন্য কাজটা আর করতে হয়না।
অর্জুন মিউনিসিপালিটির মড়ার গাড়ি চালায়।কাঁচের গাড়ি।এ সি।কায়দার নামও আছে,’স্বর্গ যান’।
আগে অবশ্য অর্জুন অ্যাম্বুলেন্স চালাতো।সেই ডিউটিটা অনেক হেভি ছিলো।
শালা,যখন তখন ডাকতো।রুগীর ব্যাপার।বেশীর ভাগই তো,এই যায় তো সেই যায়।তারপর ,এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ানো।
শালা,ঝক্কিরএক শেষ।তার চেয়ে এই মড়া টানা ডিউটিই ভাল।সোজা বাড়ি থেকে শ্মশানঘাট।হোম টু ডোম।
-সোহাগি.....অর্জুন আবার গালাগালি দিতে যায়,দেখে সোহাগি আঁচলে জড়িয়ে চায়ের গ্লাশ নিয়ে ঢুকছে।ঠক করে ওর সামনে নামিয়ে রাখে।
-এত চেঁচাও কেন?উনুনে আগুন ধরতে টাইম লাগেনি?
-শালি,তোর মুখে আগুন। 
  অর্জুনের রাগ এখনো যায়নি।
-ওরম কথা বোলোনি।গত দুই মাস  হয়  নি।
-মানে?
  অর্জুন জিজ্ঞেস করে।
-'পেটে মনে হয় শত্তুর এসেছে ।’অর্জুন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।
-'কি হলো ,ওমুন করে তাকিয়ে আছ ক্যান? ছেলে আসছে গো,তোমার ছেলে’।
বলে সোহাগি পেটে হাত দেয়।
এতক্ষণে অর্জুন বুঝতে পারে । এক ঝটকায় সোহাগিকে কাছে টেনে নেয় । 
সোহাগির পেটে হাত বুলিয়ে দেয় । বলে - সত্যি ? 
-তবে কি মিথ্যে ? ছাড়ো , অনেক কাজ আছে ।’ 
সোহাগি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে , রান্না ঘরে ঢুকে যায় । 
 এবার খুব গরম পরেছে । তিন চারবার চান করেও আশ মেটেনা । সোহাগিদের উঠোনের পেছন দিকেই পুকুর ।
 সোহাগির তো সবসময় সেখানেই গা ডুবিয়ে বসে থাকতেইচ্ছে করে ।
 কিন্তু পারে কই । তারপর তো পেটে এখন একটা শত্তুর। সাবধানে থাকতে  হবে।ঠান্ডা লেগে গেলে ক্ষেতি হবে।
 গত দুদিন এলাকায় কোন মানুষ মরেনি। 
গরমের ভয়ে বোধহয় যমদূতরাও আসছে না । দুদিন অর্জুনকে বেড়োতে হয়নি ।
তাই আজ মুনিসিপালিটির ভেহিকেল ম্যানেজারকে বলে ‘ স্বর্গ যান ‘ কে বাড়িতে নিয়ে এসেছে । 
রাত্তিরে নাকি গাড়ির ভেতর এ সি চালিয়ে শোবে । 
সোহাগিকেও টানা টানি করছিলো , ওর সাথে শোয়ার জন্য । 
সোহাগি এককথায় না করে দিয়েছে । মাগো , ঘেন্না পিত্তি নেই নাকি । 
 অনেক রাত্রে অর্জুন যখন শুতে গেল , সোহাগি তখনো জেগে । 
তার আগে অর্জুন প্রচুর টেনেছে । টলতে টলতে বেড়োতে দেখল । ঘুমনোর আগে সোহাগির এইটুকু শুধুমনে ছিল । 
  সকালে বাইরে ভীষন গোলমালের আওয়াজে,সোহাগির ঘুম ভাঙে।তারপর কাঁচ ভাঙার আওয়াজে,আর শুয়ে থাকতে পারে না।
ঘুম চোখেই ,কোনরকমে শাড়িটা জড়িয়েবাইরে বেরিয়ে আসে।
 বাইরে বেড়িয়ে দেখে, দক্ষযজ্ঞ হচ্ছে।
স্বর্গযানের দরজা ভেঙে নিথর অর্জুনকে বের করা হচ্ছে।সবাই বলাবলি করছে,
গাড়িতে কার্বন জমে দম বন্ধ হয়ে অর্জুন মরে গেছে।মানুষটা ঠান্ডায় ঘুমোতে গেছিল,এখন ঠান্ডা লাশ হয়ে বেরোচ্ছে।
মহল্লার সব মেয়েছেলেরা ততক্ষনে সোহাগির পাশে এসে দাড়িয়েছে।
এতবড় শোক সামাল দিতে ।এর মধ্যে কে একজন আবার চেঁচিয়ে বলল,’
ভাতারখাকি,সোয়ামিকেজড়িয়ে শুয়ে থাকতে পারলিনি?তাইলে মানুষটা মরতনি।’
জ্ঞান হারানোর আগে ,সোহাগির মনে হল ,
পেটে যেটা বাড়ছে,সেটার জন্য ওকে বেঁচে থাকতেই হবে।
লেখক - তরুণ চক্রবর্তী

5 comments:

  1. সাঙ্ঘাতিক কথা। শুধুই গল্প হলেই ভালো।

    ReplyDelete
  2. বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। স্বর্গের ঠিকানায় পৌঁছে দেবার দায়িত্ব যাকে অর্পণ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের কালো ছায়া অপ্রত্যাশিতভাবে তাকেই গ্রাস করে পৌঁছে দিল স্বর্গের ঠিকানায়। গল্পটার নামকরণ এইজন্যে সার্থক। তবে গল্পটাতে আর একটু সাসপেন্স, আর একটু পাঠকের চিন্তার খোরাক থাকলে ভালো হতো।

    ReplyDelete
  3. বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। স্বর্গের ঠিকানায় পৌঁছে দেবার দায়িত্ব যাকে অর্পণ করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের কালো ছায়া অপ্রত্যাশিতভাবে তাকেই গ্রাস করে পৌঁছে দিল স্বর্গের ঠিকানায়। গল্পটার নামকরণ এইজন্যে সার্থক। তবে গল্পটাতে আর একটু সাসপেন্স, আর একটু পাঠকের চিন্তার খোরাক থাকলে ভালো হতো।
    সমীর কুমার মজুমদার

    ReplyDelete