...খালিদা খানুম
প্রথম আলো ফোটার
সময়টা খুব ভালো লাগে রামদেও সিং এর। এই সময় শহরের ঘুম ভাঙে না, আলমোড়া দিয়ে পাশ ফিরে শোয়। আর এই সময় রামদেও
সিং খালি গায়ে, লেংট পরে
আহিরিটোলা ঘাটে নামে। গঙ্গার ঘোলা জল কুসুম রং এর আলোতে খুব পবিত্র মনে হয়।
কোমর জলে নেমে
চোখ বন্ধ করে সূর্য প্রনামের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ । মুঙ্গেরের এক অখ্যাত
গ্রামের মাটি ছুঁয়ে আহিরীটোলার ঘাটে আসতে পানির কত সময় লাগে সে জানে না, সে জানে গঙ্গা মাইয়া জনমভুমি ছুঁয়ে
এসেছে।কোমরজলে ডুবে থাকতে বড় আমার লাগে তার।গঙ্গা মাইয়া কে নিজের মা এর মতই লাগে।
ধীরে ধীরে জেগে
উঠে শহরের ঘিঞ্জি গলি, চা এর ভাঁড় আর
পুরি সবজির ঠোঙাতে ডাস্টবিন উপচে পড়ে। গাড়ির হর্ন, মুটে অয়ালাদের গালাগালি শতাব্দী প্রাচীন
ইটগুলোতে ধাক্কা খেতে খেতে হারিয়ে যায় কোন কানাগলিতে। রামদেও সিং বিশমনি মোট
অবলীলায় কাঁধে ফেলে গল্প করে - হাম ইহাঁ বাইশ সাল আছি মালিক।
রামদেও সত্যি
বাইশ সাল এই শহরে আছে। কমলীকে ফেলে আসতে তাকে অনেক চোখের জল ফেলতে হয়েছিলো,
কিন্তু এই শহর কমলীর মুখে
হাসি ফুটিয়েছে। এখন কিছু জমি কিনেছে গাঁয়ে, বিকাশ বেটা বড় হয়েছে,সেই দেখভাল করে ফসল। মাঝে মাঝে ভাবে- গাঁও চলে
যাবে। কিন্তু এই শহরের বাতাসে মায়া, বড় মায়া। বাইশ সাল ধরে বড় বাজারের বিশ্বস্ত মুটে রামদেও, এক ডাকে সব মহাজন চেনে তাকে। একশ জনের শক্তি
তার দু বাহুতে।
- হাম ইহাঁ বাইশ
সাল সে হ্যা। রামদেও বলে। পাশে রেশমি। রেশমির ঘরে সে আসছে দু মাস থেকে। গলির নতুন
মেয়ে। মুখে এখনো গ্রাম্য লাবন্য।
- বহত দিন।
ব্লাউজের হুক ঠিক করতে করতে বলে রেশমি।
- হাঁ, তা ওনেক দিন । হামি এসেছিলাম তখন হামার গোঁফ
উঠেছে । পেটে ভুখ।
- বৌ নাই ?
- হাঁ , কমলী, গাঁও মে।
রামদেও লোকটাকে
খারাপ লাগে না রেশমির।কোন জোর জবরদোস্তি নেই, গালি গালাজ নেই, টাকা পয়সার জোচ্চুরি নেই। সে ভাবতো লোকটির কেউ
নেই, তাই আসে এ গলিতে।
রেশমি বলে -
তোমার বৌ আছে , তবু তুমি আসো ?
তোমাকে তো ভালো মনে হতো।
রামদেও হাসে,
বলে - ভুখ লাগতা হ্যায়,
হামে ভি, তুমে ভি। লাগতা নেহি ক্যায়া ?
bnmkhanum@gmail.com
No comments:
Post a Comment