...তানভীর তূর্য
ইদানীং প্রচণ্ড সিগারেট খাওয়ার নেশা হয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবি একদিন
সিগারেট না
খেলে কি
হবে?তেমন কিছুই অবশ্য হবে না।
আমার প্রতিদিনের
খরচ থেকে কিছু টাকা বেঁচে যাবে আর
ছোট ছোট
চা পানের
দোকানের কয়েকটা
সিগারেট বেচাবিক্রি
কম হবে। আর
সারাদিনের দীর্ঘশ্বাসগুলো
হালকা ধোঁয়া
হয়ে উড়ে
না যেয়ে
বুকের ভেতরেই
জমা হবে।
চিন্তা করছি
এখন থেকে
এত সিগারেট
আর খাবো
না। শুধু
রাতে ফিরে
আসার সময়
একটা খাবো।
সারাদিনের জমানো ভারী শ্বাস
সিগারেটের ধোঁয়ার
সাথে একবারে
বের করে
দিব। ওগুলো
ফানুস হয়ে
উড়ে যাবে।
লাল ফানুস, নীল
ফানুস, রং বেরং এর নানা ফানুস।
আগে আমাদের গ্রামে
মেলা হলেই
ফানুস কিনে এনে
উড়াতাম। কী সুন্দর লাগতো
আকাশটা তখন! মনে
হতো, আকাশেও টিমটিমে
বাতির একটা
মেলা বসেছে।
কিছুক্ষন পরেই
ওরা তারার
মতো ছোট
ছোট হয়ে
যেত। আমি
আর আপা একদৃষ্টে
তাকিয়ে তাকিয়ে
দেখতাম আর ভাবতাম ওদের ঠিকানা কোথায় হতে পারে।প্রতিবার মেলায়
কামাল চাচা
নাগরদোলা ভাড়া
করে আনতেন।
আমি আর
আপা সুযোগ পেলেই
নাগরদোলায় উঠে
বসে থাকতাম।
আমি এখনও চোখ বন্ধ করলে
সেই নাগরদোলার
দোলনার পাশ
ঘেঁষে আসা
শোঁ শোঁ
বাতাসের শব্দ
শুনতে পাই। আমার বড়
ভালো লাগতো। মেলায় যেতাম
নাগরদোলা আর বাতাসার লোভে।
এক টাকায়
চারটা বাতাসা।
আপার সাথে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
বাতাসা খেতাম আর সার্কাস
দেখতাম।তারপর মেলা
শেষে গুটি
গুটি পায়ে
আমরা বাড়ি
ফিরে আসতাম।
মন্টুদের বাড়ির
সামনের মোড়টাতে
একটা চায়ের
দোকান ছিল। ওখানে কিছু
ছেলে সারাদিন
বসে থাকতো।
মেয়েদের দেখলেই শিস
বাজাতো। আরও
কি সব
বলতো বুঝতাম না।
ওই দোকানের
সামনে এলেই
আপার মুখ
যেন কেমন
হয়ে যেত। একবার একরাতে
মেলা থেকে বাড়ি ফিরছি, এক ছেলে
বলা নাই
কওয়া নাই উঠে এসে
আপার ওড়না
ধরে একটা
টান দিলো।
আমার মনে
আছে, আমি হাতের
কাছে আর
কিছু না
পেয়ে একটা
ইট তুলে
নিয়ে মারতে
গিয়েছিলাম। ওরা
অনেক হাসছিল। আপা আমাকে ধরে
শক্ত করে
একটা টান
দিয়ে নিয়ে
হনহন করে
হেঁটে চলে
আসলো। একটা
কথাও বলেনি।
বাড়ির সামনে
এসে শুধু
বলেছিল, “কাউকে বলিস
না। তাহলে
আমার আর
মেলা দেখা
হবে না
কোনোদিন।”বাড়ি ফিরে
সে রাতে
আপা অনেক
কেঁদেছিলো। ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে চাপা
স্বরে। বাবা মা যাতে
টের না
পায়। আপা
সারারাত ঘুমায়নি।
ওপাশ ফিরে
শুয়ে থেকে শুধু কেঁদেই যাচ্ছিল।এরপর অবশ্য
এমনিতেও আপার
সাথে আর
মেলা দেখা
হয়নি। হুট
করে একদিন
বিয়ে হয়ে
গেলো ওর।
এতো তাড়াতাড়ি
ও শ্বশুরবাড়ি
চলে যাবে, কখনও চিন্তা করিনি।
আসলে তখনো
বুঝিইনি, যে আপা
আমাকে ছেড়ে
অনেকদূরে চলে
যাচ্ছে।যাওয়ার সময়
আমাকে জড়িয়ে
ধরে খুব
কাঁদলো।বলল, “মেলার সময়
ঠিক ঠাক
চলে আসবো
দেখিস। তারপর
একসাথে মেলায়
যাবো। ঠিক
আছে?”
আমি চোখ
মুছতে মুছতে
বললাম, “আচ্ছা।”আপা কথা রাখেনি। পরের
বছর আসতে
পারলো না সে।
চিঠি দিয়ে
জানিয়ে দিলো কী যেন সমস্যা। আমারও একা
একা মেলায়
যেতে ইচ্ছা করলো না, যাওয়াও
হলো না।তারপর অনেক
বছর কেটে
গেছে। আপার
জন্য প্রতিরাতেই
আমি মনে মনে
ফানুস উড়াই।
এই ফানুস
কখনও নিভে না। তবে ওরা
আপা পর্যন্ত
পৌছায় না। আপাও
দেখতে পারে
না এই
যা।
এই ইট কাঠ পাথরের শহরে আসা অনেক দিন হয়ে গেল। মায়ের এক দুঃসম্পর্কের বোনের বাসায় থাকার একটুখানি ঠাই হয়েছে। যখন খুব ছোট ছিলাম তখন খালাম্মা আমাদের বাসায় প্রায় যেতেন আর আমাকে কত আদর করতেন! এখন অবশ্য সেসব আদরের নমুনা খুব একটা দেখা যায় না।প্রতি রাতে
এই রাস্তাটা
ধরে আমি
আমার নতুন ঠিকানায়
ফিরি। বাড়িতে
কতদিন যাওয়া হয়
না। এখানকার প্রশন্ত
রাস্তা ধরে
রাতের বেলা
আমার হাঁটতে
ভালো লাগে।
সকাল বেলা
যখন যাই তখন অন্য
সব রাস্তার
সাথে এই
রাস্তার কোনো তফাৎ খুঁজে
পাই না।
তবে ফেরার
সময় হাঁটার
মাঝে আমি
একটা ছন্দ
ফিরে পাই।
রাস্তাটাকে তখন
অনেক আপন
মনে হয়।
খুব সম্ভবত
রাস্তার নিঃসঙ্গতা
নিজেকে ভাবতে
শেখায়। মাঝে
মাঝে অবাক
হয়ে ভাবি এই তো
বেঁচে আছি।
তবে ফিরে
যেতে হলে
আমাকে হাঁটতে
হবে আরও
অনেক পথ।
আরেকটু সামনে
এগিয়ে ডানে
মোড় নিলেই
পাকা রাস্তা
শেষ। তারপর
ধু ধু
পথ। পাশে
মাথা তুলে
দাঁড়িয়ে
থাকে কিছু
ইট পাথরের
দেয়াল,
সদ্য ঢালাই
হয়েছে এমন
ন্যাড়া বিল্ডিং এর অবয়ব আর
দেয়ালের ফাঁক
দিয়ে উঁকি দেয় অর্ধেক চাঁদ।
রাস্তা জুড়ে
ইটের সুরকি
বিছানো। কাজ
চলছে, উন্নয়নের কাজ।
অচেনা এই
নগরের মধ্যে
আর কয়দিন
পরেই উঁকি দিবে
আরেক নগর।
আর কয়দিন
পরে এইখান
থেকেও চলবে
গাড়ি ঘোড়া, ন্যাড়া
হয়ে দাঁড়ানো
বিল্ডিংগুলোকে অচিরেই
অট্টালিকা হিসেবে
নতুনভাবে বদল
করা হয়ে যাবে।শুধু বদলে
যাবে না
এই রাস্তা
ধরে আমার
ফিরে আসা। আবারো রাতের
পর রাত চাকরি খুঁজে ক্লান্ত হয়ে ফেরা।মা অসুস্থ। বদলে যাবে না
বাবার চিঠির ভেতরের
অক্ষরগুলি, বদলে যাবে না বাবার টাকা
পাঠানোর লজ্জাভরা
আকুতি। একটুও
বদলাবে না
রাতে ফেরার পথে ফানুস হয়ে
উড়ে যাওয়া
দীর্ঘশ্বাসগুলি।
ওগুলোকে আমি
বহুকাল ধরেই
চিনি।
এভাবে হাঁটতে
হাঁটতে কখন
দেখি, পৌঁছে গেছি
বাসার গেটটার
সামনে। চেষ্টা
করি কোনো শব্দ না
করার। পরের
বাড়িতে আশ্রিত
থেকে শব্দ
করা যায়না।
তারপরেও প্রতিদিন গেট খুলতে
গেলেই ক্যাঁচ
ক্যাঁচ শব্দ
হয়। গেট
খুলে মাথা নিচে নামিয়ে আস্তে করে ঢুকে পড়ি।প্রতিরাতে যখন
ফিরি
তখন শুধু
বারান্দার বাতিটা
জ্বলে। মনে
হয় সারা
বাড়িটা ঘুমিয়ে
গেছে। খালুর
হাই প্রেশার
তাই উনি
তাড়াতাড়ি শুয়ে
পড়েন। খালাম্মা
টুকটাক হাতের কিছু কাজ সারেন। আর নীলু?নীলুর
কথা জানি
না। তবে
গেট খোলার
সময় মাঝে
মাঝে টের
পাই দোতলার
জানালার পর্দা
ফাঁক করে
কে যেন
দেখে নেয়
একবার। দোতলার দিকে
না তাকালেও
বুঝি সেই
দৃষ্টির তীব্রতা। কখনও তাকাই না।
সাহস হয়
না।
গেট থেকে
ঢুকেই হাতের
ডান দিকে
আমার রুম।
বারান্দা লাগোয়া।
আস্তে করে
দরজা টেনে
ভেতরে ঢুকি।
তারপর ধীরে
সুস্থে কাপড়
বদলে চেয়ারের
উপরের তোয়ালেটা
নিয়ে চলে
যাই কল
তলায়।
আমাদের বাড়িতেও
এমন একটা
কল তলা
আছে। জাম
গাছটার নিচে।
জাম গাছটা
নাকি নেই।
এবছর ঝড়ে
পড়ে গেছে।
আমাদের খুব
প্রিয় ছিলো।
অনেক রাতে
বাবা বাইরে
থেকে এলে জামগাছটার
নিচে দাঁড়িয়ে আমি
আর আপা কল চেপে দিতাম।আপাটার অনেকদিন ধরে
কোনো খোঁজখবর নেই।
সেই কতদিন
আগে চিঠি
পেয়েছি তাতে কত জিজ্ঞাসা।
কেমন আছি? কী করি? মা কেমন আছে? বাবার দিকে
খেয়াল রাখি
কি না? এইসব। নিজের
কথা কিছুই
লিখেনি।আমারও তো
জিজ্ঞাসা করতে
ইচ্ছে হয়, “আপা তুই
কেমন আছিস? তোর ছোট্ট পরীটা কেমন আছে? কেন
তার কথা
লিখলি না? চিঠিতে সে
কথা লেখার কি জায়গা
ছিল না?”কিছু না
লিখলেও আমি
তো বুঝি
তোর চিঠিটা আর তোর চিঠির প্রতিটা শব্দ নোনা।
ওখানে টপ
টপ করে তোর কয়েক ফোঁটা
চোখের জল
পড়ে শুকিয়ে
গেছে। আমি
তোর নোনা অনুভূতি
খুব ভালো
করেই চিনি। তুই
কীভাবে আমার
কাছ থেকে
সে অনুভূতি
লুকাবি? কোনোদিন কি
পেরেছিলি?হাতমুখ ধুয়ে
ঘরে চলে
আসি। ছোট
টেবিলে বহু
আগেই ভাত
বেড়ে রাখে
খালাম্মা। প্লেট
দিয়ে ঢেকে
রাখা। পাশে
কমদামী একটা
কাঁচের জগ।
তাতে স্বচ্ছ
পানি। কাঁচের রং পানির মতো
নাকি পানির
রংই
আসলে কাঁচের
মতো? এসব নিয়ে কিছুক্ষণ
চিন্তা করি।
খেতে বসে
দেখি ভাত ঠাণ্ডা হয়ে
গেছে। অবশ্য
ঠাণ্ডা তো
হবেই কত দেরি করে
ফিরি আমি।
আমার জন্য
কেউ কি
বসে থাকবে
নাকি এত রাত অবধি? শুধু মা
বসে থাকতো।
আমার মনে
আছে, একবার খুব
গণ্ডগোলের সময়
রাত সাড়ে
তিনটায় ঢাকা
থেকে বাড়ি
যেয়ে হাজির
হয়েছিলাম। মা
জানতো না
আমি যাব। সে রাতে
কী যে খুশি
হয়েছিল মা! খাওয়ার সময়
পাশে বসে
ছিল। গরম
ভাতের কথা
মনে হলেই
আমার ওই
রাতের কথা
মনে পড়ে।
গরম গরম
ভাত আর
সাথে ডিমের
ভাজি। এখনও মুখে লেগে
আছে।এসব ভাবতে
ভাবতেই আমার
রাতের খাওয়া
শেষ হয়।
তারপর হাত
ধুয়ে উঠে
এসে বিছানায়
শুয়ে পড়ি।
অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করি। ঘুম
আর আসে
না। আগেও
আসতো না, তবে ইদানীং সেটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
ঘুম না
আসলেই আমি
আমার ট্রাঙ্কটা
থেকে লেখার
খাতাটা বের
করে নিয়ে
বসি।
খাতা ট্রাঙ্কে
তালা দিয়ে
রাখতে হয়।
কখন কে
দেখে ফেলে
কে জানে! নীলুর এই
খাতাটার উপর
অনেক আগ্রহ।
পড়াতে বসে
আমাকে সেদিন
বলেছে, “আপনার খাতাটা
একদিন পড়তে
দিবেন আমাকে?”
নীলুর জানার কথা
না। আমি
অবাক হয়ে
বললাম, “কোন খাতা?”
নীলু বলল, “যে খাতায়
আপনি রাতে
বসে বসে
লিখেন।”
আমি
প্রচণ্ড অবাক হয়ে বললাম, “তুই কেমন করে জানিস?”
ও রহস্যময় ভঙ্গিতে বলল, “আমি জানি। দিবেন?”
আমি স্পষ্ট
করে বললাম, “না।”
ও খিল খিল করে হেসে বলল, “কেন? আমাকে নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন তাই?”
আমি চমকালাম। তারপর বিব্রত হয়ে
বললাম, “তা কেন হবে?”
ও হাসতেই থাকে আর আমি বোকার মতো ওর
দিকে তাকিয়ে থাকি।
নীলু আমার বেশ ছোট। ওকে আমি তুই করেই বলি। ও মাঝে মাঝেই আমাকে এরকম বিব্রত করে। আমি জানি নীলু আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। হয়তো বা আমিও। কিন্তু আমি খুব বেশি পাত্তা দেই না। এই বয়সে মেয়েদের মাথা খারাপ অবস্থা বিরাজ করে। কখন কী যে বলে আর কখন কী যে করে তার ঠিক ঠিকানা নেই। আর ভালোবাসতে গেলে অনেক সামর্থ্যেরও প্রয়োজন হয় যেটা এখন আপাতত আমার নেই।
একদিন রাতে কেবল খেতে বসেছি। হঠাৎ ও
চুপি চুপি এসে আমাকে বলল, “শাহেদ ভাই, চলেন আমরা পালিয়ে যায়।”
আমি হতভম্ব
হয়ে ওর
দিকে তাকিয়ে
থাকি। বলে
কি এই
মেয়ে!
সে অনেকক্ষণ একদৃষ্টে আমার দিকে
তাকিয়ে থাকে। আমি ওর আকুতিপূর্ণ সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টির দিকে দৃষ্টি
রাখতে পারি না। চোখ নামিয়ে নিই।
তারপর নরম স্বরে বলে, “শাহেদ ভাই, আপনি এত ভীতু কেন? আমি রাস্তায় নামতে পারলে আপনি পারবেন না? আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না?”
আমার চোয়াল
শক্ত হয়ে
যায়। মুখে একটা কঠিন ভাব এনে বলি, “এসব কথার মানে
কী? আমাকে
এসব কথা
খবরদার আর বলবি না নীলু। তোকে আর পড়াবো না। কালকেই
টিউশনি ছেড়ে দিব।”
নীলু খাবারের টেবিল গোছাতে গোছাতে
বলে, “আপনি এই
টিউশনি ছাড়তে
পারবেন না।
ছাড়লে আগেই
ছাড়তেন। আমাদের এখানেই
লজিং থাকেন, চাইলেই
কি আর
সব কিছু
পারেন?”
নীলুর গলার শ্লেষ্মা আমার বুকে
এসে বিঁধে।
আমার চিৎকার
করে বলতে
ইচ্ছা হয়, বেকার ছেলেরা কখনও ভালোবাসতে পারে না নীলু। তাদের অনেক যন্ত্রণা। বলা হয় না কিছুই।
আমি পারলে সত্যিই এই টিউশনিটা
ছেড়ে দিতাম। তাহলে রোজ রোজ নীলুর মুখোমুখি হওয়া লাগতো না। ওর জন্য বুকের ভেতরটাও
চিনচিন করতো না। কিন্তু ছেড়ে
দেওয়া সম্ভব না।
টিউশনি বাবদ
মাসে যে
টাকা পাই তা দিয়ে কোনোরকম চলে। তাছাড়া
এই দুর্মূল্যের
বাজারে মাথা
গুঁজে থাকতেও
অনেক কষ্ট।
তাই এ বাড়িতে পড়ে
থাকা। তাতে
কিছুটা খরচ
বাঁচে। টাকাগুলো
আমার বাড়িতেও পাঠাতে
হয়।
মা অসুস্থ
হয়ে বিছানায়
পড়ে আছে।
বাবার বয়স
হয়ে গেছে।
তাদের এক নজর দেখতে বড় স্বাদ হয়। কিন্তু দিনের পর দিন একটা বেকার ছেলে হয়ে তাদের সামনে যেয়ে দাঁড়াতে পারি না।
এই বিশাল
পৃথিবীতে আমি
কি খুব
বেশি কিছু
চেয়েছিলাম? চাওয়ার ছিল একটা ভালো চাকরি, আপার একটু ভালো থাকা, বাবার আনন্দের সহিত দিনযাপন, মায়ের সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। আমার সমস্ত
স্মৃতিতে থেমে
আছে মায়ের
হাসিখুশি মাখা
সেই পুরানো মুখটা।
ঘুমের মধ্যেও মাঝে
মাঝেই ভেসে
আসে সে
মুখ। আমার
তখন ঘুম
ভেঙ্গে যায়।
চেয়ে দেখি সমস্ত
ঘরটা অন্ধকার।
আশাপাশে মা
নেই। কেউ নেই। তারপর
বালিশটা বুকে
দিয়ে শুয়ে
থাকি চুপচাপ।
আমার আর
ঘুম আসে
না।
আমি নিজের
জন্য তো
মুখ ফুটে
কিছুই চাইনি
কখনও। শুধু
লিখে গেছি
পৃষ্ঠার পর
পৃষ্ঠা। খাতাটা
ভরে গেছে
প্রিয় মানুষগুলোর
কথায়। আমি
শুধু লিখি
কারণ এই কথাগুলো বলার বা শোনার কেউ নেই আমার।
খাতার প্রায়
অনেক অংশ জুড়ে
নীলু আছে। কেউ
জানে না কিন্তু নীলু জেনে ফেলেছে। নীলুর কথা মনে হলেই একটা তীব্র হাহাকারের সুর বুকের মধ্যে বেজে ওঠে।
আমি চাই না খাতাটা আর কেউ দেখে ফেলুক। খাতাটাকে
তাই সযত্নে আগলে
রাখতে হয়।
কারও হাতে পড়লে সমস্যা।
মাঝে মাঝে ভাবি যদি আগলে রাখতে না পারি তারচেয়ে বরং
খাতাটাকে পুড়িয়ে
ফেলি। চাওয়া
পাওয়ার হিসাবগুলো আরও সংক্ষিপ্ত
হোক।
যখন প্রচণ্ড একাকিত্ব অনুভব করি তখন মনে মনে আকাশে ইচ্ছে ফানুস উড়াই। সত্যি না হোক,
কল্পনায় নিজের ইচ্ছে মতো ফানুষগুলো উড়াই বলে নাম দিয়েছি ইচ্ছে ফানুষ। সেসব ফানুসে প্রিয় মানুষগুলোর সুখী আর আনন্দময় মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। ফানুসগুলো বহুদূরে চলে যায়। আমি ধরার জন্য হাত বাড়াই কিন্তু বিনিময়ে ফিরে আসে কৃষ্ণপক্ষের রাতের গভীর নৈঃশব্দময় পদাবলীতে পরিপূর্ণ
আশ্চর্য এক জীবন।
turzocse@gmail.com
No comments:
Post a Comment