1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, January 1, 2020

নগেন দাদুর পেট


.                                 ...দিব্যজ্যোতি দত্ত

                  গেন দাদুর পেটে কি যেনো ঢুকেছেরে পটলা। দাদু বোধ হয় আর বাঁচবে না।
-তুই কিভাবে জানলি?
-বারে, দ্যাখ না পেটটা কেমন উপরে উঠছে আর নামছে। পেটের মধ্যে কিছু না ঢুকলে পেট কখনো এভাবে নড়ে?
-তা অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস গুবলু। এখন কি করা যায় বলতো?

পরের কাহিনীতে যাওয়ার আগে এই দুজনের ব্যাপারে কিছু বলে নেওয়া যাক। পটলা আর গুবলু নগেন দাদুর দুই নাতি-নাতনি। ওরা কেউই অবশ্য নগেন দাদুর কাছে থাকেনা। এবারে গরমের ছুটিতে বাবা-মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। এর আগেরবার যখন এসেছিল তখন ওরা দুজনেই খুব ছোট ছিল। তখনকার কথা ওদের মনেও নেই। এবার নগেন দাদুকে খুব কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে ওরা। গত দুদিনে ওদের জ্বালায় নগেন দাদুর অবস্থা খুব খারাপ। কখনো দাদুর চশমার গ্লাস ভেঙে পরীক্ষা করছে কখনো বা দাদুর ডায়েরীর পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নৌকা বানাচ্ছে। মোট কথা, যার উপরে চোখ পরছে তার আর রক্ষা নেই। এসবের বাইরে সারাদিন দুজনের চিৎকার চেঁচামেচি তো আছেই। একটু আগে নগেন দাদু মাত্র দুপুরের খাবার সেরে ঘুমাতে গেছেন। ঘরে বসে থাকতে থাকতে দাদুর ভুঁড়িটার সাইজও একটু বেড়েছে। এবার সেই ভুঁড়ির উপরেই চোখ পড়লো পটলা আর গুবলুর। যাই হোক, আবার গল্পে ফিরে আসি।
-শোন পটলা, ডাক্তাররা কেমন অপারেশন করে ফোঁড়া বের করে দেখেছিস?
-ধুর পাগল, এটা তোর ফোঁড়া মনে হচ্ছে কোন আক্কেলে? আমার মনে হচ্ছে দাদু আমাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফুটবলটা খেয়ে নিয়েছে।

পটলার কথা শেষ হতেই বারান্দায় ফুটবলটা আছে কিনা দেখতে ছুটলো গুবলু। পটলাও পিছন পিছন হাজির। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা কিছুটা হতাশই হলো। ফুটবলটা জায়গা মতই আছে।
-কি বুঝলি?
-ফুটবল পাম্পারের হাওয়াটুকু সব খেয়ে নিলো না তো?
-যা তো, দৌড় দিয়ে পাম্পারটা নিয়ে আয়।

পটলা দৌড়ে পাম্পারটা নিয়ে এলো। কিন্তু পাম্প করতেই গুবলু আরো চিন্তায় পড়ে গেলো। পাম্পার তো এখনো কাজ করছে ঠিক ঠাক।
-পটলা, শোন দাদুর পেটে কি আছে আমাদের দেখতে হবে।
-তো কিভাবে দেখবি?
-মা একবার রাগ করে তোর বেলুনে সুঁই ফুটিয়ে দিয়েছিল। তারপর কি হয়েছিল মনে আছে?

বেলুনের কথা মনে হতেই খুব কান্না পেল পটলার। অনেক সাধ করে কিনেছিল সে।
-হ্যা, মনে আছে। বেলুনটা কেমন করে উড়ে যাচ্ছিল। তারপর একদম চুপসে গেলো।
-ঠিক। দাদুর পেটেও আমাদের সুঁই দিয়ে একটা ফুটো করতে হবে। দেখতে হবে দাদুও ওভাবে উড়ে যায় কিনা।
-যদি উড়ে যায়?
-তাহলে তো ক্লিয়ার হয়ে গেলো দাদু আমাদের কিছুই খায়নি।
-আর না উড়লে?

পটলার প্রশ্নে গুবলুকেও বেশ চিন্তিত মনে হলো।
-না উড়লে বড় অপারেশনেই যেতে হবে আমাদেরকে। নে নে, রেডি হয়ে নে।

যেই বলা সেই কাজ। ব্যাগের থেকে বাবার দুটো শার্ট গায়ে চাপিয়ে দুজনে দাদুর কাছে হাজির। মুখে মাস্ক। ভাবখানা এমন যেন ডাক্তার এসেছেন অপারেশন করতে। মায়ের সেলাইয়ের বক্স থেকে সুঁইও নিয়ে আসা হয়েছে। পটলা সুঁই নিয়ে রেডি। দুজনের হাতেই আবার গ্লাভস। গুবলু হাত বাড়াতেই পটলা সুঁইটা ওর হাতে দিয়ে দেয়। কিন্তু যেই না গুবলু নগেন দাদুর পেটে সুঁই ফুঁটাতে যাচ্ছে অমনি কে যেন তার হাত ধরে বসলো।
-গুবলু-পটলা? কি হচ্ছে এসব?
-দাদু আমাদের কি যেন খেয়ে নিয়েছে মা।
পটলা কাঁদো কাঁদো হয়ে উত্তর দিলো।
-কিভাবে বুঝলি?
-বারে, নইলে কারো পেট এতো বড় হয়? আর কেমন নড়ছে দেখো?

গুবলুর এমন কথা শুনে এবার হো হো করে হেসে উঠলেন নগেন কাকু।
-বাবা, আপনি ঘুমাননি?
-ঘুমানো কি আর উপায় আছে বৌমা। তোমার এই দস্যু ছেলে-মেয়ে দুটোর উপরে নজর রাখতে রাখতে ঘুম কখন যে পালিয়ে গেছে টেরই পাইনি। একটু ঘুম ঘুম আসছিল বটে। কিন্তু ওদের মুখে কি সব অপারেশনের কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই আর ঘুমাইনি। হা হা হা।
-তা আপনি যা-ই বলুন বাবা, বড্ড বাড়াবাড়ি করছে ওরা। এখানে আর বেশীদিন থাকা যাবেনা দেখছি।
-না বৌমা। ওদের আর কি দোষ। এমন পেট ওরা তো আগে কখনো দেখেনি। তাই কখনো ভাবছে ওদের ফুটবল খেয়ে নিয়েছি আবার কখনো ভাবছে ওদের পাম্পারের সবটুকু হাওয়া খেয়ে নিয়েছি। হা হা হা।

হাসির সময় নগেন দাদুর ভুঁড়িটাও জোরে দুলতে থাকে। তা দেখে হেসে ফেলে গুবলু আর পটলা। মা ও আর চেপে রাখতে পারলেন না হাসি।

dibya_1991@yahoo.com
ঢাকা, বাংলাদেশ


No comments:

Post a Comment