... রাজর্ষি বর্ধন
আসলে জুয়া খেলাটা আমাদের বংশগত। আমার বাবা কলকাতার নামকরা জুয়াড়ি ছিলেন। রেসের মাঠে তিনি নিয়মিত গেছেন, এবং জীবনে দু’বার মাত্র হেরেছেন! বড়-বড় রেসুড়েরা তাঁর কাছে আসত পরামর্শের জন্য! আর একটা নেশা তাঁর ছিল- মেয়েমানুষের নেশা ! নানা- তাই বলে তাকে চরিত্রহীন লম্পট বলে দাগানো উচিত নয়, আসলে প্রোউড় বয়সেও বাবা বেশ সুপুরুষ ছিলেন, এবং তাঁর লিবিডো ছিল অনেক হাই- একি সঙ্গে দুজন মহিলাকে সন্তুষ্ট করবার ক্ষমতা ছিল! কিন্তু নারীলোলুপ মোটেই ছিলেন না, উল্টে মহিলাদের কাছ থেকেই আমন্ত্রণ পেতেন! বিশেষ করে ক্লাবে বা পার্টিতে গেলে বন্ধুপত্নী এবং হাই সোসাইটির মহিলারা তাঁকে ঘিরে ধরত, ফিল্মস্টারের মতো অ্যাপিল ছিল!
কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ এক ধরণের অস্বস্তিতে ভুগছি। আসলে এ আমার নিজের সঙ্গেই লড়াই ! ভাবছেন- হঠাৎ বিবেকের দংশন অনুভব করলাম কিনা! না মশাই, এ মোটা চামড়ায় বিবেকের ভোঁতা হুল একেবারে ঢুকবে না! আসলে একটা স্বভাববিরুদ্ধ কাজের জন্য অনুশোচনা মিশ্রিত ভয়ের ছায়ায় পড়েছি! কারণ আমি একটা খুন করেছি- হুম মানুষ খুন! আগে বলেছিলাম বটে যে খুন আমি করিনি, সেটা সম্পূর্ণ সত্যি না ! আসলে খুনটা আমি একেবারেই করতে চাইনি, ঘটনার পরিণতি হিসেবে ঘটে গেছে !
এরপর আর কথা চলে না, অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হলাম! বন্ধুর বিপদে যদি কিছুটা কাজে আসি! শঙ্করের সেই “কোরিয়ান ডিশ” এর ফটোও দেখলাম, একেবারে জাপানি ডলপুতুল নয় ! চোখে কামুক দৃষ্টি, সাথে চাবুক ফিগার- আমার জন্য আইডিয়াল! ওকে দেখে আমার মনে হয়েছিল, অল আই নিড আ ক্রুয়েল সেক্স ! আমরা ম্যারিওট থেকে সোলেসে পৌঁছে দেখলাম, কোরিয়ান ইভা ততক্ষণে পৌঁছে গেছে ! ফটোর থেকেও ওকে বেশি আকর্ষণীও লাগছিল! গায়ের মাখন রঙ যেন ছলকে পড়ছিল! গলায় ছিল পিঙ্ক স্কার্ফ, পরনের স্কারট হাঁটু অব্দিও পৌঁছায়নি! হাইহিল পড়ে সবাচ্ছন্দে হেঁটে চলায় আরও সেক্সি লাগছিল ! যেভাবে শঙ্করকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো তাতে বুঝতে বাকি রইল না যে এ জিনিষ শঙ্করের এঁটো- গাঁ ঘিনঘিন করে উঠল! কিন্তু এখন কিছু করার নেই, আমার ক্ষিদে বেড়ে গেছে! শঙ্কর আমার পিঠ চাপড়ে বলল, “এনজয় দ্য নাইট!” তারপর বাঁ পকেটটা ঝাঁকিয়ে বলেছিল, “সাবধানে !”
বেশ কয়েকদিন ধরেই মনের মধ্যে তীব্র অস্বস্তি অনুভব করে বেড়াচ্ছি। তীব্র এক বিস্বাদ,
যার কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে
পাচ্ছি না ! বারংবার মনে হচ্ছে, যা করেছি
এবং যা হচ্ছে,
তার কোনটাই সঠিক নয়। আমাকে ঘিরে
যা সব চলছে তার পরিণতি মোটেই সুখকর হবে না ! মনের মধ্যে একটা চাঁপা আশঙ্কা মাকড়শার মতো
হাত-পা নেড়ে জানান দিচ্ছে – আমার কারনে
আমার পরিবার, পরিজন , কেউই সুখে থাকবে না
! আসলে মানুষটা আমি খুব সুবিধার
নই ! আমি একজন- যাকে বলে, সমাজের কীট, কিংবা ওই ঘুনপোকা ! পাশাপাশি এও মনে হয়, আমার মতো আরও
এরকম কীটরা, যারা বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছি, আমরা যদি
একত্র মিলে কাজ করি তাহলে এই সমাজকে ফোঁপরা করে দিতে বেশি সময় লাগবে না! হ্যাঁ, এমনটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি- কারণ খুন এবং ডাকাতি ছাড়া কোন খারাপ কাজ করতে যে বাকি রাখিনি , এমন বিশ্বাস আমার আছে ! আর কয়েকটা দুষ্কর্মে তো আমি অতিপারদর্শী
হয়ে উঠেছি- যেমন মেয়েবাজি আর টাকা তছ্রুপ , হ্যাঁ , বিন্দুমাত্র আত্তক্তি না করেই বলছি !
“সমাজের কিট” হতে গেলে যে এসব করতে জানাটা অন্যন্ত জরুরী !
কি? এরই মধ্যে আমায় ঘেন্না করতে শুরু করে দিয়েছেন
! আরে বসুন ! এ তো সবে গৌরচন্দ্রিকা পর্ব গেলো,
আস্তে আস্তে খোলস ছাড়ালে আরও বহু জিনিষ উঠে আসবে ! হ্যাঁ, যে বলছিলাম- এসব পাপ-টাপ কাজ যেগুলো করি, তা সব অতি দর্পের সঙ্গেই করি
! তার জন্য আমার মনের মধ্যে কোন ভয় বা অনুশোচনা কাজ করে না !
আইনের ভয়- তাও নেই ! এসব
তুচ্ছ জিনিষের প্রতি সময় নষ্ট করার লোক আমি নই। আমি জানি আমি একটা
নিরাপদ বলয়ের মধ্যে আছি ! আমার বিরুদ্ধে কথা বলে , এমন লোক আর এমন স্পর্ধা কার আছে ? টাকা দিয়ে সবার মুখ
বন্ধ করে দেবো না!
তাহলে আন্দাজ পাচ্ছেন, আমি একজন প্রভাবশালী মানুষ ! এবার নিজের পরিচয়টা দেওয়া যাক, আমার নাম শান্তিপ্রিয়
চৌধুরী ( কি গেরো দেখুন, একেবারে কানা ছেলে-পদ্মলোচন কেস! আসলে বাবা-মার করা
ভুল আর শোধরানো যায়নি কিনা !), পুরো নাম পিটার শান্তিপ্রিয় চৌধুরী
, এবছর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল থেকে আমায় “বিজনেসম্যান অব দ্য ইয়ার” এ ভূষিত করা হয়। আমরা চারপুরুষ
ধরে ব্যবসায়ী। কি ব্যবসা তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল, ছড়ানো-ছেটানও আছে- বড়বাজারে তিনটে গোডাউন আমার আন্ডারে, এছাড়াও বর্ধমানের
দুটো কোল্ড স্টোরেজ, দক্ষিন কলকাতার একটা সিনেমা হল ও পেট্রোল পাম্প, পার্ক
স্ট্রিট ও নিউ মার্কেটে একটি করে বার-কাম-রেস্তোরা, আগরপাড়ায় একটি সিক জুট মিল কিনেছি গতবছর,
যেটাকে রেনোভেট করার ইচ্ছে আছে, এছাড়া রায়চক আর
তাজপুরে রয়েছে একটি করে রিসর্ট, এসবের মালিক আমি। এই আমার
ব্যবসার পরিধি ! এসব ব্যবসা আমি আর আমার ছোটভাই মার্ক শ্যামসুন্দর চৌধুরী মিলে সামলাই। তবে এসবই
হল প্রদীপের আলোর অংশটা, তলায় বেশ অন্ধকার আছে ! বুঝতে পারলেন না? সাইড বিজনেস এর কথা বলছি, যেগুলো একটাও ‘সাদা’ নয়,
বরং নিকষ কালো বলা চলে- যেমন ড্রাগ সাপ্লাই,
প্রস্টিটিউট বা এসকড়ট সার্ভিস এবং বেআইনি মদের ব্যবসা, যেওগুলোর খবর বিশ্বস্ত কয়েকজন ছাড়া জানে না! তাছাড়া নিয়মিত
ক্যাসিনোয় যাই, যাই জুয়ার আর সাট্টার থেকে, মূলত নেশার
ঝোঁকে, তবে সেখান থেকেও ইনকাম হয়! রেস খেলা এখনও
হলে সেখানেও নিয়মিত যেতাম!
আসলে জুয়া খেলাটা আমাদের বংশগত। আমার বাবা কলকাতার নামকরা জুয়াড়ি ছিলেন। রেসের মাঠে তিনি নিয়মিত গেছেন, এবং জীবনে দু’বার মাত্র হেরেছেন! বড়-বড় রেসুড়েরা তাঁর কাছে আসত পরামর্শের জন্য! আর একটা নেশা তাঁর ছিল- মেয়েমানুষের নেশা ! নানা- তাই বলে তাকে চরিত্রহীন লম্পট বলে দাগানো উচিত নয়, আসলে প্রোউড় বয়সেও বাবা বেশ সুপুরুষ ছিলেন, এবং তাঁর লিবিডো ছিল অনেক হাই- একি সঙ্গে দুজন মহিলাকে সন্তুষ্ট করবার ক্ষমতা ছিল! কিন্তু নারীলোলুপ মোটেই ছিলেন না, উল্টে মহিলাদের কাছ থেকেই আমন্ত্রণ পেতেন! বিশেষ করে ক্লাবে বা পার্টিতে গেলে বন্ধুপত্নী এবং হাই সোসাইটির মহিলারা তাঁকে ঘিরে ধরত, ফিল্মস্টারের মতো অ্যাপিল ছিল!
বাবার দুটো গুন আমার মধ্যে ভীষণ ভাবে বর্তেছে, সেটা হল সুন্দর চেহারা আর হাই লিবিডো ! যেটা আসেনি তা
হল, বাবা উল্টো তরফের আমন্ত্রণ পেয়ে মাঠে নামতেন, আমি সেসবের তোয়াক্কাই করি না! যদি মনে হয় অ্যাকশনে নামা
উচিত তাহলে বিন্দুমাত্র দেরী করি না! এই কারণেই কলেজে ঢুকতে না
ঢুকতে প্রচুর গারলফ্রেন্ড হয়, যাদের কাউকেই আমি বাড়িতে আনতে পারিনি!
যার মুল কারণ আমার বাবা- কারণ দেখেছি আমার বান্ধবীরাও
বাবার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তেন, যা আমার যথেষ্ট ঈর্ষার কারণ হতো! বরাবরই বাবার
প্রতি আমার ঈর্ষামিশ্রিত গর্ববোধ ছিল!
দেখুন দেখি ! কেমন নিজের বাপের স্মৃতিচারণায় মজে গেছি
! আসলে নিজের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানান দিচ্ছিলাম আরকি !
আমার এর লাম্পট্যের বিজ কোথা থেকে বপন হল সে সম্বন্ধে আন্দাজ দেওয়া!
তবে যাই বলি না কেন, আজ অব্দি যতগুলো মহিলার সঙ্গে
শুয়েছি, তারা কেউই অসন্তুষ্ট হয়নি ! এসব
জিনিষ চালিয়ে গেছি অতি গোপনীয়তা এবং নিপুণতার
সাথে ! আমার পরিবার, আত্মীয়পরিজন কেউই আমার
এ জিনিষ সম্বন্ধে জানে না ! তাই তো এমন চরিত্রহীন, লম্পট হওয়া সত্ত্বেও আমার স্ত্রীর কাছে “ভরসামান স্বামী”
এবং সমাজের কাছে “আদর্শ মানুষ” ইমেজটা ধরে রেখেছি !
কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ এক ধরণের অস্বস্তিতে ভুগছি। আসলে এ আমার নিজের সঙ্গেই লড়াই ! ভাবছেন- হঠাৎ বিবেকের দংশন অনুভব করলাম কিনা! না মশাই, এ মোটা চামড়ায় বিবেকের ভোঁতা হুল একেবারে ঢুকবে না! আসলে একটা স্বভাববিরুদ্ধ কাজের জন্য অনুশোচনা মিশ্রিত ভয়ের ছায়ায় পড়েছি! কারণ আমি একটা খুন করেছি- হুম মানুষ খুন! আগে বলেছিলাম বটে যে খুন আমি করিনি, সেটা সম্পূর্ণ সত্যি না ! আসলে খুনটা আমি একেবারেই করতে চাইনি, ঘটনার পরিণতি হিসেবে ঘটে গেছে !
ব্যপারটা হয়েছিল এরকম- সেদিন একটা বিজনেস পার্টিতে গেছিলা,
জে ডবলু ম্যারিওটে। শহরের সব হেভিওয়েট ব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক মাথারা সেখানে
আমন্ত্রিত ছিল। অনেক রাত অব্দি খানা-পিনা চলেছিল। ডিনারেরও অঢেল বন্দোবস্ত ছিল-
মোগলাই, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, কোরিয়ান সবরকমই ! আমি কোরিয়ান ডিশে মন দিয়েছিলাম,যা দেখে আমার পরম মিত্র শিল্পপতি
শঙ্কর শ্রীবাস্তব ( যে কিনা আমার অনেক অপকর্মের সঙ্গী) বলেছিল, “ তোর কোরিয়ান ডিশ
যখন এতো ভালো লেগেছে, তখন কোরিয়ান মেয়েও ট্রাই করে দেখবি নাকি আজ রাতে? আমার হাতে
ভালো স্যাম্পেল আছে!”শুনে আমার উল্টি এসেছিল প্রথমে ! ব্যাটা বলে কি? সেদিন রাতে
অনেক মদ্যপান করেছিলাম, পাশাপাশি খাবারেরও কোন মাপজোক ছিল না, তাঁর ওপর শঙ্করের
এরকম কথা!
“সে কি রে ? তোর না সাতশ হর্স পাওয়ারের ক্ষমতা, তো আজ বুড়ো
ঘোড়ার মতো হাঁপিয়ে উঠছিস?” শঙ্কর টিপ্পনি দিয়ে কথাগুলো বলছিল, তাতে আমিও বার খেয়ে
উঠেছিলাম! অম্বলে বুক জ্বালা করছিল, তবু একটা অদম্য ইচ্ছে তাড়া করে
বেড়াচ্ছিল- একবার চেখে দেখিই না শঙ্করের কোরিয়ান “স্যাম্পেল”! একটা রাতেরই তো
ব্যপার!
আমি রাজী শুনে সে পিঠ চাপড়ে বলেছিল, “ওকে, দেন আই অ্যাম
কলিং ইভা- দ্য কোরিয়ান গার্ল! বাট মাই ফ্রেন্ড, তোকে আমার একটা উপকার করতে হবে,”
বলে আমার কানের কাছে এসে বলেছিল, “ কাজটা একটু রিস্কি, তোকে আমার একটা জিনিষ রাখতে হবে!” বলে একটা কালো
প্লাস্টিকে মোড়া জিনিষ আমার প্যান্টের পকেটে চালান করে দিয়ে বলল, “ এতে একটা
নেকলেস আছে, চোরাই মাল! যার-তার নেকলেস নয়, নবাব আলিবর্দির বেগম সারফ-উন-নিসার
গলার হার! খোদ হাজারদুয়ারির মিউজিইয়াম থেকে চুরি করা! একরকম বাধ্য হয়েই চুরিটা করাতে
হয়েছে, তুই তো জানিস আমার ব্যবসার কি
ভরাডুবি অবস্থা, দেনার দায় শেষে দেউলিয়া না হতে হয়! এ অবস্থায় রিকভার যদি করতে হয়,
তাহলে বিশাল দাও মারতে হতো, সেটাই মেরেছি! এ হার বিদেশে বেচে যা টাকা পাবো তা অনেক, যেটা হলে আর কোন চিন্তা থাকবে না! পুলিশ আমার পেছনে ঘুরছে। আমার নাকি
মোটিভ আছে, তাই আমিও সন্দেহের তালিকায়! কাল আমার বাড়িতে
সার্চ হবে, তাই বলছিলাম- একটা দিনের জন্যও
যদি হারটা তোর কাছে রাখিস, তাহলে বেঁচে যাই! কারণ হাজার হোক, পুলিশ তোর মতো ওপর-ভদ্রমানুষকে সন্দেহ করবে না! হার বিক্রির থারটি পারসেন্ট
কমিশন তুই পাবি, এই কথা দিলাম!” এসব শুনে
আমার কমে আসা অম্বল্টা আবার চাগাড় দিলো- ব্যাটা করেছে কি!
শঙ্কর ছোটোখাটো চুরি জোচ্চুরি করে বলে জানতাম, কিন্তু এ তো একেবারে রাণীর হার চুরি! যার সঙ্গে আমাকেও
জড়াচ্ছে!
শঙ্কর আমার কাঁধে হাত রেখে ব্লেছিল,”ঘাবড়াবার কিছু নেই, আমার সব ব্যবস্থা করা! আজ রাতটা তুই
চিংড়িহাটার পাশে “দ্য সোলেস” হোটেলে কাটাবি! এই ম্যারিওটেও তোর নামে রুম বুক থাকবে, লোকে জানবে তুই
এখানে রাত কাটাছহিস, উল্টোদিকে সোলেসে রাতের মজা নিবি!
প্লিজ, আর হেজিটেট করিস না, এর সবকিছুর খরচা আমার !”
এরপর আর কথা চলে না, অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হলাম! বন্ধুর বিপদে যদি কিছুটা কাজে আসি! শঙ্করের সেই “কোরিয়ান ডিশ” এর ফটোও দেখলাম, একেবারে জাপানি ডলপুতুল নয় ! চোখে কামুক দৃষ্টি, সাথে চাবুক ফিগার- আমার জন্য আইডিয়াল! ওকে দেখে আমার মনে হয়েছিল, অল আই নিড আ ক্রুয়েল সেক্স ! আমরা ম্যারিওট থেকে সোলেসে পৌঁছে দেখলাম, কোরিয়ান ইভা ততক্ষণে পৌঁছে গেছে ! ফটোর থেকেও ওকে বেশি আকর্ষণীও লাগছিল! গায়ের মাখন রঙ যেন ছলকে পড়ছিল! গলায় ছিল পিঙ্ক স্কার্ফ, পরনের স্কারট হাঁটু অব্দিও পৌঁছায়নি! হাইহিল পড়ে সবাচ্ছন্দে হেঁটে চলায় আরও সেক্সি লাগছিল ! যেভাবে শঙ্করকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেলো তাতে বুঝতে বাকি রইল না যে এ জিনিষ শঙ্করের এঁটো- গাঁ ঘিনঘিন করে উঠল! কিন্তু এখন কিছু করার নেই, আমার ক্ষিদে বেড়ে গেছে! শঙ্কর আমার পিঠ চাপড়ে বলল, “এনজয় দ্য নাইট!” তারপর বাঁ পকেটটা ঝাঁকিয়ে বলেছিল, “সাবধানে !”
শঙ্কর বিদায় নেওয়ার পর আমরা হোটেল রুমের দিকে যাচ্ছিলাম, হাত ধরাধরি করে! ইভার ল্যাভেন্ডার পারফিউমের মোহময়ী গন্ধ
আমায় পাগল করছিল- ভেতরের পশুটাকে জাগিয়ে তুলছিল! ইচ্ছে করছিল, অমন নরম তুলতুলেপুতুল্টাকে ভাজ করে পকেটস্থ
করে ফেলি ! হোটেল রুমে পৌঁছে বুঝলাম, পশু
শুধু আমার মধ্যেই জাগেনি, কারণ হোটেলের দরজা খোলার সাথে সাথে
ইভা আমার ঠোঁট কামড়ে ধরেছিল, নিজের মখমলের মতো ডান পাটা তুলে
দিয়েছিল আমার কোমরের কাছে, আর আমার বাঁ হাতটা নিয়ে যেভাবে নিজের
কোমরের ওপর চেপে ধরেছিল তাতে বুঝলাম-
মাগীর ক্ষিদেও কম নয় ! পেটের ভেতরটা কেমন গুলিয়ে
উঠেছিল! তারপর যখন ইভা আমার বাঁ পকেটটা ধরে বলেছিল, “হোয়াট’স দিস?”তখন বুক কেঁপে উঠেছিল
! কোনরকমে সামলে মুখে হাসি এনে বাঁ চোখ টিপে বলেছিলাম, “হ্যান্ডকাফ!” তখন ইভা
লোল হেসে বলেছিল, “ডারটি বয়,” বলে নিজের
ব্যাগটা দেখিলে বলেছিল,” আই নিড টু চেঞ্জ!” বুঝলাম, পোশাক ছেড়ে এবার অন্তর্বাস পড়বে! ওকে রুমের ভেতর ঘরটা দেখিয়ে দিলাম, ও চলে হাওয়ার পর আমিও
জামাকাপড় খুলতে লাগলাম! বুকের ভেতরটা যেন পুড়ে যাচ্ছিল!
প্যান্ট ছাড়তে ছাড়তে সেই কালো প্যাকেটে মোড়া হারটা খুলে দেখলাম-
চোখ ধাধিয়ে গেলো! পুরোটাই সোনার, মাঝে-মাঝে চুনি-পান্না বসানো,
আর মধ্যিখানে হীরে! এ জিনিষ শঙ্কর বেচবে বিদেশে!
এর মেটিরিয়াল ভ্যালুই যে বিশাল, অ্যান্টিক ভ্যাল্য
বাদই দিলাম! উত্তেজনায় পেটের ভেতর থেকে বমি ঠেলে উঠতে লাগল-
ছুটে গেলাম বাথ্রুমে, হারটা খোলা অবস্থায় বিছানায়
পড়ে রইল !
টানা পাঁচ মিনিট বমি করার পর অস্বস্তিটা কমল! পার্টিতে যা খেয়েছিলাম, সবই বেরিয়ে গেলো ! বমির পর সব পরিষ্কার করে সাওয়ারের তলায় দারিয়েছিলাম দশ মিনিট, শরীরের
জ্বালা ধরা ভাবটা একটু যেন কমল! এর মধ্যে দুবার বাথ্রুমের দরজায় টোকা পেয়েছি, তাঁর মানে
ইভা রেডি ! তারপর ভেজা আন্ডারওয়ার পড়েই ্বাথরুম থেকে বেরিয়েছিলাম
!
বেড়িয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার শরীর কেঁপে উঠেছিল! দেখলাম ইভা সেই হারটা নিজের গলায় পড়ে বলছে, “ইটস সো ওয়ান্ডারফুল!
ফর হুম ইজ ইট? শ্যাল আই ওয়ের ইট!”
শুনে আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো! অম্বলের কারনে শরীর দুর্বল হওয়ায় বোধশক্তি কাজ করছিল না ! হারটা ওর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সজোরে ওর গালে একটা চড় কষিয়ে দিয়েছিলাম !
চড়টা খাবার পর ইভা রনচন্ডি মূর্তি
ধারন করে যা বলেছিল তাতে আমার পায়ের তলায় মাটি কেঁপে যাওয়ার জোগাড়! ও বলেছিল- ও জানে এই হারটা মুর্শিদাবাদের মিউজিয়াম থেকে
চুরি করা, কারন এর মধ্যেই বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে এই হারের ফুটেজ
দেখাচ্ছে ! এবং সে পুলিশকে সব জানিয়ে দেবে যদি এই হার বিক্রির
টাকার অর্ধেক টাকা না দেওয়া হয়! শুনে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে ওর গলা
টিপে ধরলাম সাঁড়াশির মতো ! ইভা জালে পড়া মাছের মতো দাপাদাপি করলেও ছাড়াতে
পারছিল না! প্রায় দশমিনিট দাপাদাপির পর ওর শরীরটা নিস্তেজ হয়ে
লুটিয়ে পড়ল! বুঝলাম, ও ডলপুতুলের মতোই নিস্প্রাণ
হয়ে গেছে! এদিকে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে
আসছিল- উত্তেজনার বশে একটা খুন করে ফেললাম ! হোটেল রুমটা
ভাল কে দেখে কোন সিসি ক্যামেরা না পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম। হোটেলের
খাটটায় বক্স সিস্টেম ছিল, সেই বক্সে ইভার শরীরটাকে পুরে দিলাম!
ওর ব্যাগ, জামাকাপড় সব বাথরুমে পুড়িয়ে ফেললাম!
তারপর সেই হোটেল থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে গেলাম ম্যারিওটে- যেখানে আমার নামে রুম বুক করা ছিল!
সারারাত সেখানে কাটিয়ে পরেরদিন বিকেলে শঙ্করের বাড়িতে গেলাম। জানতাম
সকালেই ওর বাড়ি সার্চ করেছিল পুলিশ! আমাকে দেখে ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল। আমি ওকে
হারটা দিয়ে গতরাতের ঘটনা বিস্তারিত বললাম। শুনে ওর
মুখের হাসি উবে গেলো! ও আমার কলার ধরে ঝাঁকিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ
করতে করতে বলল- আমি এতোটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতে পারলাম কি
করে! সে পরেরদিন ভোরের ফ্লাইটে ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছে, আমি যেন ওর সাথে কোনরকমের যোগাযোগ না করি!
সেটা আমি করলাম না। আমার শেয়ারের
কথাটাও তুলতে পারলাম না! ওর ক্ষুদ্ধ হবার যথেষ্ট কারণ আছে- ভুল তো আমি করেইছি! খুনটা করে যে ডেডবডিটা হোটেল রুমেই
ফেলে এসছি, আজ বাদে কাল তা প্রকাশ পাবেই!
সেটা পেলো দু’দিন পরে- বাইপাসের ধারে হোটেলরুমের
বক্স-খাটে তরুণীর পচাগলা মৃতদেহ আবিষ্কার! খুবই চাঞ্চল্যকর ঘটনা! সমস্ত নিউজ
চ্যানেলে এ খবর দেখানো হচ্ছিল! ইভার পরিচয়ও সামনে আসে! সে দু’রাত আগে “বাব্লু দাস” ( হ্যাঁ,
এই নামেই রুম বুক করা হয়েছিল) নামের এক ব্যাক্তির
সঙ্গে এসেছিল। হোটেলে সিসি ক্যামেরা না থাকায় অনেক জিনিষই অন্ধকারে থাকে! বুঝলাম, শঙ্কর সেদিন বুদ্ধি করেই ম্যারিওটে আমার নামে
রুম বুক করেছিল- এখন নিজের এয়ালিবাই প্রমান করতে সমস্যা হবে না!
তবে বেশিদিন নিশ্চিন্তে থাকা গেলো না- তিনদিন পর খবর পেলাম, শঙ্কর হার সমেত ধরা পড়েছে ব্যাঙ্গালর
এয়ারপোর্টে! সে দুবাইতে যাচ্ছিল, সমস্ত
সাবধানতা অবলম্বন করলেও কড়া সিকিউরিটি চেকিং থেকে রেহাই পায়নি! পাশাপাশি এ খবরও আসে- খুনের দিন বাব্লু দাশ বাদে সেও ছিল ইভার সাথে,
এবং ইভাকে সেই হায়ার করেছিল! তাই ইভা হত্যা মামলাতেও
শঙ্কর একজন অভিযুক্ত !
শঙ্করের জন্য কষ্ট হলেও নিজেকে ভারমুক্ত লাগছিল! জানতাম, শঙ্কর আমার ব্যপারে মুখ খুললেও কিছু প্রমান করতে
পারবে না! তাই সেই দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম।
তবে সেই নিসচিন্তি বেশিদিন স্থায়ী হল না! নানান দুশ্চিন্তা মাথার মধ্যে পঙ্গপালের মতো ধেয়ে আসছিল! মনে হচ্ছিল, পুলিশ যদি শঙ্করের কথা বিশ্বাস করে নিয়ে
আমায় ধরতে আসে! বা সেই সোলেস হোটেল রুমে এমন কিছু ক্লু খুঁজে
পেলো যা আমার বিরুদ্ধে জোরাল প্রমান হবে!
সেই থেকেই আমার অস্বস্তির শুরু- যা কিনা বিষবাষ্পেরমতো আমার স্নায়ুতে ছড়িয়ে পড়ছিল! সেই
হত্যাকাণ্ডের আজ তিনমাস অতিক্রান্ত, ইভা-হত্যা মামলার কোন নিস্পত্তি হয়নি! শঙ্কর
অভিযুক্ত থাকলেও জোরাল প্রমানের অভাবে বেঁচে যায়, তবে হার চুরির দায় ছ’বছরের জেল
হয়! অবাক হয়েছিলাম যখন ইভার আমি হত্যাকারি জানা সত্ত্বেও শঙ্কর মুখ খোলেিন! আমি
সবদিক দিয়েই বিপদমুক্ত ছিলাম! তবু কেন জানি ভুতের ছায়ার মতো সেই অস্বস্তি আমায়
ঘিরে ধরছিল! এমন প্রবল অস্বস্তি থাকা সত্ত্বেও আমার পরিবারের কাছে নিশ্চিন্ত এবং স্বতঃস্ফূর্ত
মানুষের অভিনয় করে যেতে হচ্ছিল, যা আমার কাছে পীড়াদায়ক হয়ে উঠছিল! এসবের থেকে ছুটি
চাইছিলাম, দূরে কোথাও ঘুরে আস্তে মন চাইছিল অল্প ক’দিনের জন্য, একা......
....তাজপুরের আমার
হোটেলটাতে এসেছি গতরাতে। বাকি রিস্রটগুলোর তুলনায় আমারটা অনেকটা যায়গা জুড়ে, এবং সমুদ্রের
অনেক কাছে! এই সময়টা অফ-সিজন, রিসর্ট প্রায় ফাঁকা! সারাটাদিন রুমে বসে সমুদ্রের
গর্জন আর ফেনারাশী দেখে কাটালাম, মনটা অনেকটা হাল্কা হল। রাতে আবার রক্তচোষা
বাদুরের মতো উড়ে এলো অস্বস্তি, সারাদিনে তৈরি করা নিশ্চিন্ত মনটাকে শুষে নিতে লাগল! বারবার মনে হতে লাগল, একা কি এই
রিসর্টে এসে ভুল করলাম?
রাতে ভালো ঘুম হল না, সকালে উঠেছি দেরিতে। উঠেই মনটা ঝরঝরে হয়ে গেলো! বুঝলাম- যা সমস্যা তা ওই রাতে!
একা ঘরে থাকলেই সেই দুরভাবনা জাঁকিয়ে ধরবে! তাই একটা এঙ্গেজমেন্ট চাই- পারলে একটা
পার্টনার! এমনও হতে পারে, সেক্সুয়াল ডিপ্রেশন থেকে এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা আসছে!
তাই ম্যানেজারকে বলে আজকে রাতের জন্য লোকাল কলগার্লের ব্যবস্থা করিয়েছি! এবার
কোরিয়ান-চাইনিজ নয়, পিওর ইন্ডিয়ান! দেশী জিনিষের ঝাঝ বেশী !
এখন সেই মুহূর্ত, যেখানে আমি আমার রুমের বিছানায় শয়নরত অবস্থায় অপেক্ষা করছি- আমার রাতের সঙ্গীর! রাত
দশটায় কলটাইম দিয়েছি, এখন ন’টা পঞ্চাশ বাজে। বাঙালি মেয়ে, নাম সুইটি। কেমন দেখতে
তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি, রাত কাটানো নিয়ে কথা! স্বাস্থ্যবতী যুবতী হলে বাড়তি পাওনা!
ঘড়িতে নটা পঞ্চান্ন, আমার উত্তেজনা বেড়ে চলছিল- ঠিক দশটায়
আসবে তো? এদের তো প্রতি ঘণ্টায় দাম ঠিক করা থাকে! তবে দু’মিনিট যেতে না যেতেই
করিডোরে হাই-হিলের শব্দ পেলাম, স্বস্তির শ্বাস পড়ল! যাক- একেবারে কাঁটায় কাঁটায়!
একটা মিষ্টি ল্যাভেন্ডার পারফিউমের গন্ধে ঘ্রের ভেতরটা ভরে গেলো। খুব চেনা চেনা লাগছে গন্ধটা- আগে
কোথায় পেয়েছি? মনে করতে পারছিলাম না......
আচমকা বাইরে বাজ পড়ার শব্দে চমকে উঠলাম! তক্ষুনি ঘর অন্ধকার
করে কারেন্টটা চলে গেলো! এ গন্ধ যে আমার খুবই চেনা! এ গন্ধ যার, তাঁকে
তিন মাস আগে খুন করে বক্স-খাটে ভরে এসছিলাম!
বাইরে বৃষ্টির আওয়াজ এতোই জোড়াল হয়েছে যে চিৎকার করলেও কেউ
শুনতে পাবে না, শুধু আমার রাতের সঙ্গী, শঙ্করের “কোরিয়ান ডিশ”-এর হাইহিলের খটখট
শব্দ দ্রুত আমার রুমের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
rajarshib25@gmail.com
No comments:
Post a Comment