একটা চিঠি পেলাম
বইএর তাক গোছাতে গিয়ে। চিঠি ই বটে তবে চিঠি না বলে একে প্রেমপত্র বলাই ভাল । হাতের লেখা ও আমার । এই খানিকটা আগে আমি
চিঠিটা আবিষ্কার করেছি । অল্প কিছুদিনআগে ও এইসব নিয়ে অনেক কিছু আমি ভাবতাম। কিন্তু এখন আর এসব নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবি না কারণ একটা রাজনৈতিক দলের আঞ্চলিক
কমিটির নাম্বার ওয়ান নেতা হিসাবে আমি গর্বিত । প্রচুর লোকজন এখন
আমার চারপাশে ঘোরাঘুরি করে । হটাৎ করে একটা সুযোগ এসে গেলো । লোকাল নেতার অকাল
মৃত্যু আমাকে সেই সুযোগ এনে দিল। না হলে পার্টির নিয়মের
আওতায় আমার উত্থান হতে আর ও অনেক সময় লাগত ।যাইহোক ভাগ্যের চাকাটা ঘুরে গেলো আর আমি হয়ে গেলাম একেবারে প্রথম সারির
নেতা ।
যে আমি
একদিন পার্টির লোকদের সাথে সাথে ঘুরেছি, মিথ্যে তোষামেদের গান গেয়েছি সেই আমি আজ
মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির খেলায় মত্ত হয়ে আছি। আর প্রাপ্তির আশায়
মানুষ গুলো আমার সামনে কেমন নুব্জে পড়ে । তার ফায়দা নিতে আমি
কোনোভাবেই কার্পণ্য করি না ।
আজ যে চিঠি টা পেলাম সেটা লেখা,
যখন
আমি CESC তে বেগার
খাটি। একদিন অফিস আওয়ারে কোনো একটা দরকারে মেয়েটা এসেছিল।আমি কাউন্টারের ফাঁকা দিয়ে ওর হেঁটে আসা দেখছিলাম । আর দেখতে দেখতে এতটা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে কখন ও একেবারে কাউন্টারের
সামনে চলে এসেছে খেয়ালই করিনি, ওকে দেখে যে কি ভাবছিলাম তা আজ কেন সারা জীবন ধরে
সাধনা করলেও বলতে পারব না। তবে
ও অফিস থেকে বেরনোর পরই ওর পিছু পিছু আমি ও বেরিয়ে আসি। দেখতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে
পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কিছু বলবেন ?
থতমত খেয়ে বলেছিলাম আপনার না- না-নামটা যদি বলেন-- আমার নাম মোহিনী সেনগুপ্ত।কোথায় থাকেন ? মুচকি হেসে বলেছিল,
কাছেই
এই তিন আমতলাতে ,হসপিটাল মোড়ে। এরপর আমি আর কিছু
বলতে পারিনি । সামনে থেকে সরে গিয়ে একটু দুর থেকে ওকে লক্ষ্য করছিলাম।একটু পরে বাস এলে ও চলে গেলো আর আমি হারিয়ে গেলাম ঐ তন্নী শ্রীময়ীর আগুনঝরানো
রূপের মহিমাতে । যৌবনের একেবারে শুরুতেই
ভাললাগা থেকে ভালবাসার উন্নীত স্তরে এগোতে থাকলাম। মনে হলো এমন নারী আমি প্রথম
দেখছি -- সুমুখশ্রী,ফর্সা, সদ্য কিশোরী, অনুচ্চ বুক,লাবন্যমাখা শরীর,প্রশ্ন খোঁজা চঞ্চল
দুটি চোখ।সারাদিন সেই মুখই চোখের সামনে ভাসছিল ।
ঠিক করলাম পরের দিনই তিন আমতলা তে গিয়ে খোঁজ নেবো আর একবার যদি দেখা পাই নিশ্চয় মনের কথা
সব বলে আসবো । যদি মুখে না বলতে পারি তাই একটা চিঠি ও লিখেছিলাম সেই চিঠিই
এই চিঠি। চিঠিতে লেখা ছিল --তোমার জন্য বাঁচতে পারি অনন্তকাল,
অপেক্ষা
করতে পারি অনাদিকাল, তোমার আমার মিলনের জন্য যে কোনো পূর্ণিমাই
হতে পারে রাস তুল্য। আমার সব ভালবাসা তোমায় দিয়ে সর্বস্বান্ত হতে চাই।
নিরবিচ্ছন্ন এক উপলব্ধি ছুঁয়ে আছে সারাক্ষণ, সে তুমি ছাড়া আর
কেউ নয় ।
পরের দিনই বেরিয়ে পড়লাম এক বন্ধুর স্কুটারে চেপে
মোহিনী সেনগুপ্তের খোঁজে। মোহিনী তোমাকে আমার চাই , তোমাকে ছাড়া আমার
বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। খুঁজে খুঁজে চলে গেলাম ওদের বাড়ির গলির মুখে । আগে থেকে খবর নিয়েছিলাম ঐ সময় টিউশনি থেকে বাড়ি ফেরে। সব কিছু একদম ঠিকঠাকই
ছিল জানেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ডেকেছিলাম এসেওছিলো,
বলেছিলাম
একান্ত আপন করে পেতে চাই তোমাকে,
তোমার
জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করতেও রাজি । সব কথা শোনার পর
খুব শান্ত ভাবে বলেছিল, শুধু আপনি কেনো আর কোনো পুরুষের কথাতেই আমি রাজি হতে পারব না, কারণ আগামী মাসেই
আমার বিয়ে , সব পাকাপাকি হয়ে গেছে । খবর নিয়ে জেনে ছিলাম
ছেলেটা সরকারি চাকরি করে । শুধুমাত্র সরকারি
চাকরির জন্য ছেলেটা মোহিনীকে পাবে এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিলো । মোহিনী এমন একটা মেয়ে যাকে দেখলেই
যেকোনো ছেলের বুকে হিমবাহের মত বরফ গলা জলের স্রোত বয়ে যাবে আবার রুমহিটারের মতো উষ্ণতা অনুভূত
হবে । শরীরের
মাপ ও যথাযথ, যেখানে যেমন হওয়া উচিৎ , যেন দাবানলের ছোবল। ও পাশে থাকলে গরীব থেকে বড়লোক , শিক্ষিত
থেকে অশিক্ষিত যে কোনো ছেলেই
ঘটাতে পারে রাশি রাশি বিপ্লব। যে কোনো পুরুষ তার গন্তব্য কে পরাহত করে ছুটে আসতে পারে ওর হৃদয়
বৃত্তে ।
যৌবনে ভালবাসার দরজা খোলার
আগেই হয়ে গেলো বলো হরি হরিবোল । তারপর আর কখনো আমি
আর মোহিনীর খবর রাখিনি রাখার সময়ও পায় নি । পার্টির কাজের দায়িত্ব
আর সাংসারিক কর্তব্য পালনের মধ্যেই মনের চোরাবালিতে ঢেকে গিয়েছিল মোহিনী । কিন্তু গতকাল একটা খবর পাওয়ার পর থেকেই মনটা কেমন যেন উচাটন করছে । কাকতালীয় কিনা জানিনা আজই
আবার এই চিঠি আমার হাতে এসে পড়েছে । খবর যেটা পেলাম মোহিনী
সেনগুপ্ত আমার বিরোধী পক্ষের হয়ে ভোটে দাড়াচ্ছে ।
ওর বিবাহিত জীবন নাকি সুখের হয় নি, বছর দুয়েকের মধ্যেই
ডিভোর্স হয়ে যায় । তারপরে আবার পড়াশুনা শুরু করে ওকালতি পাশ করে এখন
রাজনীতিতে পা রাখার চেষ্টা করছে । মাথার ওপর অনেক মান্যি গন্যি লোকের হাত ও আছে । ভগবানের কি খেলা দেখুন যার কর
কমলিকায় ছিল আমার সর্বস্ব আজ সেই আমার প্রতিদ্বন্দী। কিছু করার নেই । মানুষের জীবনবৃত্ত
কোথায় কি লিখে রাখে আমরা কেও জানতেও পারি না
। রাজনীতি তে আসারপর বুঝেছি আমি না চাইলেও আমার মধ্যে
নানা রকমের দুষ্টু বুদ্ধির খেলা চলতে থাকে , কোনো সৌন্দর্যর প্রয়োগ
সেখানে থাকে না । কিন্তু এক্ষেত্রে আমাকে একটু ভাবতে হচ্ছে । চিঠিটা হাতে আসার পর মনের মধ্যে পুরনো প্রেমটাও
কেমন যেন চাড়া দিয়ে উঠেছে । কিভাবে যে সবদিক
সামলাব সেটা নিয়ে সূক্ষ্ম ভাবে
বিচার করতে হচ্ছে । কারণ যদি একবারও
মোহিনী আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমার পক্ষে ওকে
হারানোর জন্য যত কৌশলই প্রয়োগের চেষ্টা করি না কেনো সব ধুয়ে মুছে ভেসে যাবে।
কিন্তু পার্টির জন্যে ,আমার ভবিষ্যত উত্তরণের
জন্যে ওকে হারাতেই হবে আর তার জন্যে যা যা করার আমাকে করতেই হবে ।আবার ও একবার মুখোমুখি আমি ও সে শুধু
পরিবেশ পরিস্থিতির বদল । আমার হৃদয়ের ভালবাসা আজ প্রতিদন্দ্বী হয়ে উপস্তিত আমার সম্মুখে
।
mghoshsrp94@gmail.com
কলকাতা
কলকাতা
No comments:
Post a Comment