আকমল মজিদ
বেগুসরাইয়ের যুবক। সবে সে কলকাতার একটি
আই•টি• কোম্পানীতে অ্যানিমেশন ডিজাইনার
হিসাবে কাজ পেয়েছে ডিসেম্বরে। তখন ডিসেম্বর মাসেই রোজা হতো, ঈদুলফেতরের নামাজ
হতো।আজমল রোজা করে ও নামাজও পড়ে। কলকাতায়
যোগদান করার পর কয়েকজন সহকর্মীর চেষ্টায়
পার্ক সার্কাসে গলির মধ্যে একটা গুমটি ঘরে
ঠাঁই পেয়েছে। অফিস থেকে ফিরতে রাত
হয়।ফিরেই সে মুখহাত ধুয়ে নামাজ প'ড়ে শুয়ে পড়ে আবার
ভোরে শেহরি খায়, অফিসেই এফতার করে। বাইরে খায়।
সে ঈদের দিনে ছুটি পাবে। একদিনের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া যাবেনা। কলকাতাতেই ঈদ করবে। সে শুনেছে ,এখানের রেড রোডে
সবচেয়ে বড়ো ঈদের জামাত হয়।তাই সে রেড রোডেই ঈদের নামাজ পড়বে, কারণ হাদিস মতে, যতো বড়ো জামাতে
ঈদের নামাজ পড়া যায় তেতো বেশী সওয়াব। সে মনস্থ ক'রে রেখেছে,নামাজ প'ড়ে এসে আমিনিয়াতে ক্ষীর সেমাই দিয়ে মিষ্টি মুখ
করবে।একটা পোস্টকার্ডে ছোট ক'রে সব লিখে খবর পাঠিয়েছে বাড়িতে। বাপ-মা ভাইবোন
ও তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী অপেক্ষায় থাকবে।
ঈদের দিনে সে
ভোরেই গোসল ক'রে পরিষ্কার পায়জামা পাঞ্জাবী ও টুপি পরেবাস ধ'রে রেড রোডে পৌঁছলো, তখন সকাল আটটা। রেড রোড খুব সুন্দরভাবে
রঙীন ফেস্টুন
কাগজ-ফুল চিকমিকি দিয়ে সাজানো হয়েছে, বড়ো বড়ো মাইক চারিদিকে লাগানো। লোকজন অনেকেই
এসে গেছে।খুশী খুশী ভাব।সবার উদ্দেশ্যে সালাম জানিয়ে আকমল মোটামুটি ইমাম সাহেবকে দেখা যায় এরকম জায়গায় ব'সেপড়লো। ইমাম সাহেবের মাথায় সাদা পাগড়ি , সুন্দর কাঁচাপাকা
দাড়ি, সাদা জোব্বার উপর
কালো চাপকান আর পায়জামা পরা।বেশ সুপুরুষ। তিনি ভাষণ দিচ্ছেন। ন'টার সময় জামাত
শুরু হলো।পনেরো মিনিটের মধ্যেই নামাজ খুদবা ও মোনাজাত শেষ হলো।---তারপর সবাই
সবাইকে ঈদ মুবারক ও কোলাকুলি করতে ব্যস্ত
হ'য়ে পড়লো।পাশাপাশি
দু'একজন তাকে ঈদ
মুবারক দিয়ে কোলাকুলি করলো বটে , তাতে সে তেমন প্রাণের আকর্ষণ পেলো না । সে
একধারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।তার মনটা তখন
হুহু ক'রে কেঁদে উঠলো
বাড়ির জন্য, যেখানে তার বাপমা স্ত্রী আত্মীয়স্বজন আজ নামাজ পড়ছে সে ছাড়া। খুশীর দিনে বড়ো
বিষণ্ণ হ'য়ে উঠলো
মন, সেই গ্রামের কথা মনে ক’রে ।- - - আর আমিনিয়ায় খেতে কোনো ইচ্ছা হলো না ।জনতার
স্রোতের সাথে সে উদ্দেশ্যহীনভাবে এলোমেলো
হাঁটতে লাগলো।যেন এভাবেই সে পার্ক সার্কাস যাবে।অথবা বেগুসরাইয়ের গাঁয়ে সে অশরীরী ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে !
mdbadaruddoza@gmail.com
মুর্শিদাবাদ
No comments:
Post a Comment