...শ্রীজা দত্ত
আকাশে দু'টো ঘুড়ি একটানা
উড়েই চলেছে। একটা লাল রঙের অন্যটি নীল রঙের। দীপ্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছে
ঘুড়ি দু'টোর খেলা। মনে
মনে দীপ্ত ভাবছে ইশ্ আমি যদি ঘুড়ি হোতাম, কেবলই উড়ে বেড়াতাম।
বেশ কিছুদিন হলো
দীপ্তর প্রিয় বন্ধু সপ্তক একটা কার এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে। তারপর থেকেই দীপ্ত
মনমরা হয়ে থাকে। সপ্তকের মৃত্যুটা দীপ্তকে গভীর ভাবে আঘাত করেছে। তেরো বছরের
দীপ্ত কিছুতেই সপ্তক কে ভুলতে পারেনা।
রোজ বিকেলে ছাদে
যায় দীপ্ত, ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে কি জানি কি ভেবেই চলে। দু'মাস আগে ক্লাবের মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর
প্রতিযোগিতা হয়েছিলো। সেখানে দীপ্ত আর সপ্তকের দলটা প্রথম হয়েছিলো। চারিদিকে
ছড়িয়ে পড়েছিলো ওদের উত্তেজনা। পাড়ার সবাই ওদের বন্ধুত্বটা জানতো। একজন অপরজন
কে ছাড়া থাকতে পারতো না।
দীপ্ত আস্তে আস্তে
ডিপ্রেশনে চলে যেতে থাকে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না, পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না। কাছের মানুষের
হারিয়ে যাওয়া টা কতোটা বেদনাদায়ক তা দীপ্ত বুঝতে পারে।
হঠাৎই দীপ্তর ঘুম
ভাঙে। ঘড়িতে তখন ভোর ৫ টা। আজ দীপ্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে হসপিটাল থেকে বাড়ি
ফিরবে। সপ্তকের মৃত্যুর ৫ বছর আজ। দীপ্তর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
ইতিমধ্যে দীপ্ত
বাড়ি ফিরলো। দেখলো আজ আবার সেই দিনের মতোই দু'টো ঘুড়ি আকাশে উড়ছে। একটা লাল রঙের অন্যটি
নীল রঙের। ইচ্ছেমতো ওরা ওদের বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাইছে কিন্তু কেউ কাউকে ধরতে
পারছে না।
কাছের বন্ধুরা
আমাদের মনেই থাকে। শুধুমাত্র একবার বাঁধন খুলে দিতে হয়, যাতে ওরা ওদের মতো করে উড়তে পারে।
আজ সপ্তকের
মৃত্যুর ৫ বছর হলো। এতোদিনে দীপ্ত বুঝতে পেরেছে কাছের মানুষ কাছেই আছে, দীপ্ত একা নয়।
কিছু বন্ধুত্ব এতোটাই গভীর হয় যে অন্য কোন সম্পর্কের চাইতে তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে
থাকে।
sreejaduttasree747@gmail.com
No comments:
Post a Comment