...সুপ্রিয় চক্রবর্তী
পনেরো
বছর হয়ে গেছে পাশ করেছে সবাই, কিন্ত সবাই এখনো সেই সব দিন, মুহূর্ত ভুলতে পারেনি।
সকলে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তো, স্নাতক স্তরে। এখন সবাই নিজ নিজ যায়গায় প্রতিষ্ঠিত|
পাঁচ
বন্ধু, প্রীতম, শ্রী, দেবাশিস, দীপ্ত এবং সুশান্ত একসাথে রিউনিওন করার পরিকল্পনা
করলো। সাথে যাবে সুশান্তর স্ত্রী শ্রুতি।পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থির হল পাহাড়ি কোন
গ্রামে যাওয়া হবে। সুশান্ত গত মাসে একটি বাংলো কিনেছে একটি পাহাড়ি গ্রামে।
গ্রামটির নাম মিরিক, দার্জিলিং থেকে মাত্র দুই ঘণ্টা লাগে ওর বাংলোতে পৌঁছতে| তবে এরা সবাই যাবে গাড়িতে, সরাসরি নিউ
জলপাইগুড়ি থেকে, সময় তাও কম
লাগবে, মাত্র আড়াই ঘণ্টা।
(প্রীতম
এবং শ্রী স্বামী-স্ত্রী। কলেজের পরে তারা
বিয়ে করে। শ্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি
সাহিত্যের প্রোফেসর। প্রীতম ব্যবসা করে, নিজের সফটওয়ার কোম্পানি
খুলেছে।)
(দেবাশিস
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে বেশ উঁচু পোষ্ট এ কাজ করে। সদ্য নিজের বাড়ি কিনেছে
রাজারহাটে।)
(দীপ্ত
একমাত্র সরকারী চাকরি করে। সাথে তার নিজের ব্যবসা করে। একবছর আগে নিজের পাবলিশিং হাউস খুলেছে। দেবাশিস ও দীপ্ত অবিবাহিত।)
_______________
বাংলো
বাড়ির সামনের সাজানো বাগান। সুশান্তর কথাতে, ওর বাংলোর কেয়ারটেকার সুব্বা কিছু
চেয়ার আর দুটো টেবিল বাগানে পেতে দিয়েছে। সবাই মিলে একসাথে সন্ধ্যেবেলা আড্ডা
মারছে।
প্রীতমঃ
জায়গাটা বেশ ভালো, নির্জন, চারিদিকে জঙ্গল আর পাহাড়। কিন্তু কোনো Infrastructure নেই। ভাবছি এখানে একটা হোটেল খুললে
কেমন হয়? থ্রী-স্টার হোটেল, সাথে সুইমিংপুল, প্লে-গ্রাউন্ড, ফ্রী-ইন্টারনেট..
দীপ্তঃ থাম থাম, অনেক
হয়েছে। এই শুরু, যেখানে যাবি কোনো না কোনো ব্যবসা করার কথা বলবি। আরে দুদিন
ছুটি কাটাতে এসেছিস, খাওয়া-দাওয়া কর, প্রেম কর, এই পরিবেশটাকে উপভোগ কর।
শ্রীঃ দীপ্ত একদম ঠিক বলেছে। সব যায়গায়
গিয়ে শুধু ব্যবসা, আর টাকার চিন্তা। কলেজে পড়াকালীন এরকম ছিল না জানিস দীপ্ত। মনে
আছে তোদের, আমাদের মধ্যে, ও আর অরিজিৎ কীরকম সারাদিন বিপ্লবের কথা বলতো? একদিন
বিপ্লব আসবে, সমাজতন্ত্র পরিকাঠামো তৈরি হবে, যে সমাজে গরীব মানুষ বলে কিছু থাকবে
না। সাম্যবাদ, গনতন্ত্র...
দেবাশিসঃ
ওসব দিয়ে কি হবে? কোন সমাজের কথা বলছিস শ্রী? তুই তো নিজেই নিজেকে বিক্রি করে
দিয়েছিস কর্পোরেট কোম্পানীর কাছে। সকাল বিকেল হাজিরা দিস, গুছ গুছ টাকা আর কাঁচের
দেওয়ালে নিজেকে বন্দী করে রেখেছিস।
শ্রীঃ
জানি। আমাদের মধ্যে কেউ কি কথা রাখতে পেরেছে? আমি এখন এক গভীর নিদ্রায় স্বপ্ন
দেখতে চাই। একাকী, নির্জনতায়, নদীর মতো কাঁদতে চাই, আমি অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে চাই, ঘুমোতে চাই প্রাচীন অজৈব
রাত্রির মতো।
প্রীতমঃ Elegia by Pablo Neruda, দেবাশিস এখন আমার কাছে টাকাই সব। কেন জানিস? কারন টাকা দিয়ে
সব কেনা যায়। টাকা ছাড়া স্বপ্ন
দেখা যায় না, টাকা ছাড়া মানুষ চেনা যায় না, আর টাকা না থাকলে
সমাজ তোকে অস্বীকার করবে, ছুরে ফেলে দেবে কোন অন্ধকার আস্তাকুরে।
দেবাশিসঃ
কথাটা ভুল বলিসনি। কিন্তু আমরা নিজ ধর্ম বিসর্জন দিয়েছি। টাকার পেছনে দৌড়াতে
দৌড়াতে নিজেদের অস্তিত্ব কে বিসর্জন দিয়েছি। অরিজিৎ কিন্ত সেটা করতে পারেনি।
তাই ওকে সমাজ ছুঁড়ে
ফেলে দিয়েছে গভীর অন্ধকারে।
দীপ্তঃ তোরা কেউ অরিজিৎ এর কোনো খবর জানিস?
দেবাশিসঃ
শেষ তিনমাস আগে পেপারে পরলাম ওকে নাকি বিহার পুলিশ এরেস্ট করেছে। ওর বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা চলছে। ছাড়া পাওয়া
মুশকিল।
শ্রীঃ
জানিস গতমাসে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কোন ছাত্র ছাত্রীর সাথে
কথা বলা যাবে না, দশ মিনিট লেট হলে তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে। প্রোফেসররা নাকি
ছাত্রদের উস্কানিমুলক কথা বলেছে। কতৃপক্ষের নানাবিধ নিয়মে সবাই জর্জরিত| তবুও কেউ মুখ খুলবে না, সবার টাকার
দরকার। মাঝে মাঝে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। বাইরের আকাশটা কালো কাঁচে ঢাকা থাকে
সারাদিন, আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়...
দীপ্তঃ
তুই চাকরিটা ছেড়ে দে শ্রী। প্রীতম তো
এখন ভালো টাকা রোজগার করছে। তুই বরং ফিকশন লেখা শুরু কর। তোর এক সময় স্বপ্ন ছিলো
বড় লেখক হওয়ার। লেখা শুরু কর আবার।
প্রীতমঃ
এখন কেউ ফিকশন পরে না। তোকে নতুন কিছু লিখতে হবে, যেটা বাজারে আলু পটলের মতো
বিক্রি হবে।
দেবাশিসঃ
কয়েকদিন আগে একটা বই পড়া শুরু করলাম। দু পাতা পড়ার পর বন্ধ
করে দিলাম। শুধু গালাগালি, প্রেম, অবৈধ সম্পর্ক আর নতুন নতুন শব্দ। কোনো অভিধানে সেই শব্দ তোরা খুঁজে পাবিনা।
দীপ্তঃ
যেমন? বই প্রকাশ করার আগে সব প্রকাশক এডিট করে।
দেবাশিসঃ
তোরা কেউ Lolz, Tyt, Brb মানে জানিস?
প্রীতমঃ Tyt, Brb
মানে
জানি। take your time and be right back
শ্রীঃ laughed out
loud. Lolz is an acronym and its one of the most common slang
terms in electronic communications.
(সবাই মিলে হেসে ওঠে। সুশান্ত এবং শ্রুতি প্রবেশ করে। ওরা বাইরে গিয়েছিলো বাজারের কাজে। এখানে বেশি কিছু পাওয়া মুশকিল। নীচের বাজারে বিকেলে কিছু সবজি বসে, সাথে একটা মাংসের দোকান।)
(সবাই মিলে হেসে ওঠে। সুশান্ত এবং শ্রুতি প্রবেশ করে। ওরা বাইরে গিয়েছিলো বাজারের কাজে। এখানে বেশি কিছু পাওয়া মুশকিল। নীচের বাজারে বিকেলে কিছু সবজি বসে, সাথে একটা মাংসের দোকান।)
সুশান্তঃ (হাতে বাজারের ব্যাগ, হন্তদন্ত হয়ে
ঢুকে) সুব্বা, আরে এই সুব্বা... বাজারের ব্যাগ টা নিয়ে যাও। কি অদ্ভুত যায়গা
মাইরি, কিছু পাওয়া যায়না। ধুর এর থেকে শহরে একটা ফ্ল্যাট
কিনলে কাজে দিতো।
শ্রুতিঃ
আমি বার বার বারন করেছিলাম যে এখানে বাড়ি কিনো না। কে শোনে আমার কথা। কতবার বললাম, রাজারহাটে বাবা নতুন ফ্ল্যাট দেখেছে| সব আছে, সাথে টুয়েন্টি ফোর
আওয়ারস সিকুরিটি। বাবুর পাহাড়ে প্রেম জন্মেছে। পাহাড়েই মরতে চায়। নাও মরো এবার...
সুশান্তঃ
আরে ছাড়ো তো তোমার বাবার কথা। পাহাড়ের প্রেম তোমার বাবা কি
বুঝবে?
শ্রীঃ
আরে কি অদ্ভুত তোরা আবার ঝামেলা শুরু করলি?
প্রীতমঃ
অনেক হয়েছে। শান্ত হয়ে বস এবার। শহরের মানুষদের high altitude এ একটু অসুবিধে হয়।
দেবাশিসঃ
কি হোলো, সুব্বা আবার কোথায় গেলো?
দীপ্তঃ
আরে জানিস না? পাহাড়ের মানুষরা সন্ধ্যের পর লোকাল রাম খেয়ে পরে থাকে।
দেবাশিসঃ
লোকাল রাম আবার কি?
প্রীতমঃ
just like বাংলা অ্যান্ড চুল্লু। দীপ্ত একবার
দেখতো সুব্বা কোথায় গেলো? রাত্রের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, না হলে আমাদের কেও
রাত্রে লোকাল রাম খেতে হবে।
দীপ্তঃ ঠিক আছে, দাঁড়া আমি দেখছি।
সুশান্তঃ দীপ্ত একটু ব্যাগটা নিয়ে যা। আর ওকে খুঁজে পেলে বল, মাংসটা রান্না করার আগে
কিছুটা কষিয়ে এখানে দিয়ে যেতে। এদের কাবাব বানাতে বললে, মুরগিগুলো কাঁদবে। বলবে, হায়রে যখন
কাটলি, তখন একটু ভালো করে রান্না করতে পারলি না...।
(দীপ্ত ব্যাগ নিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়)
শ্রীঃ জায়গাটা কিন্ত বেশ ভালো বেছেছিস। এখানে এলে শহরে
ফিরতে ইছা করে না। মনে হয় সারাদিন পাহাড়ের কোলে বসে মেঘের আলপনা দেখি। আর রাত্রে
পাহাড় গুলো কেমন নিস্তব্ধতার চাদরে মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে|যেন হিমবাহেরও ঠাণ্ডা লাগে।
প্রীতমঃ যদি তুমি প্রকৃতিকে ভালোবাসো তাহলে তুমি সব জায়গায় প্রকৃতিকে খুঁজে পাবে, কারন
প্রকৃতি সব যায়গায় আছে। শুধু তাদের রঙ, গন্ধ, স্বাদ আর রূপ আলাদা।
দেবাশিসঃ
বাবা, কবি হলি কবে? এবার তুইও বই ছাপা। এখনকার বাজারে ছাইপাঁশ
লিখলে ভালো চলে, শুধু দরকার প্রপার মার্কেটিং।
সুশান্তঃ
তোরা কাকে নিয়ে আলোচনা করছিলি?
দেবাশিসঃ
সেরকম কিছু না। প্রীতম আরিজিতের কথা বলছিলো। তুই কোনো খবর জানিস?
সুশান্তঃ
না, বিশেষ কিছু জানি না। তবে কয়েক মাস আগে পেপারে পরেছিলাম।
শ্রীঃ
থাক, ওসব কথা আর বলিস না। শ্রুতি এসব কিছুই জানে না। অন্য প্রসঙ্গে কথা বল।
শ্রুতিঃ
কি ব্যাপার? কে অরিজিৎ?
দেবাশিসঃ
অরিজিৎ আমাদের বন্ধু। কমরেড অরিজিৎ। ছেলেটা খুব ভালো ছিল। আমরা একসাথে পার্টী
করতাম। স্বপ্ন দেখতাম, বরং বলা যায় অরিজিৎ স্বপ্ন দেখাতো অন্যদের...
প্রীতমঃ
আমরা এখনো স্বপ্ন দেখাই, কিন্তু সেগুলো লাভের স্বপ্ন। বলতে পারিস আমারা এখন স্বপ্ন কেনাবেচা করি।
সুশান্তঃ
দুর শালা, আমি এখনো স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কোন বাজারে সেগুলো কিনতে পাওয়া যায়
জানিনা।
দেবাশিসঃ
সবই জানিস। কেনো এইতো পাহাড়ের কোলে অচেনা বাজারে কি সুন্দর একটা বাড়ি কিনলি। আর
শালা বলে কিনা স্বপ্ন বিক্রির বাজার জানে না...
সুশান্তঃ
আরে এটা তো সখ, স্বপ্ন কোথায়? অদ্ভুত কথা বলিস
তুই। দেখছিস এখন বাড়িটা কিনে নিজে ফেঁসে গেছি। বাজার নেই,
খাওয়ার নেই, মোবাইল কানেকশন চলে যায়, আর একটা ভৃত্য পেলাম সেটাও শালা হাইব্রিড
মাল...
শ্রীঃ
বাজে কথা রাখতো। শহরে থেকে থেকে তোরা ক্যাপিটালিস্ট
হয়ে গেছিস। মেটিরিলিস্টিক চিন্তা ভাবনা ছাড়া থাকতে
পারিস না।
প্রীতমঃ
কিন্ত এত ভালো বাংলা-বলা নেপালি ভৃত্য পাওয়া কিন্তু ভাগ্যের
ব্যাপার।
দেবাশিসঃ
ঠিক বলেছিস। সুব্বা কিন্ত দারুন বাংলা বলে।
শ্রুতিঃ
আরে সুব্বা তো হাফ বাঙালি। ওর মা বাঙালি।
দেবাশিসঃ
কি বলছিস রে?
সুশান্তঃ
আরে সেই জন্যই তো বললাম যে সুব্বা একটা হাইব্রিড মাল। বাবা নেপালি, বাঙালি মেয়ের
প্রেমে পড়ে বিয়ে করে...
(দীপ্তর
প্রবেশ)
দীপ্তঃ
আরে শোন সুব্বা বললো রাতের ডিনার রেডি। আর মাংস কষা নিয়ে আসছে। পনেরো মিনিট
অপেক্ষা করতে বললো...
শ্রুতিঃ
আরে কি রান্না করলো এর মধ্যে? যাই আমি
গিয়ে দেখি একবার। হাফ বাঙালি হলেও বিশ্বাস নেই। হয়তো মাংস সিদ্ধ করে বললো মোমো
রেডি...
(সবাই
হেসে উঠলো, আর দেবাশিস ওর খালি গ্লাসটায় হুইস্কি ঢালতে শুরু করলো)
সুশান্তঃ
দাঁড়া দাঁড়া তোদের জন্য একটা সারপ্রাইস আছে।
পাহাড়ের কোলে তোদের শান্তিনিকেতনের ছাতিম ফুলের গন্ধ শোঁকাবো|
শ্রীঃ
কি বাজে বকছিস? এখানে ছাতিম গাছ থাকতেই পারে না। ছাতিম গরমের গাছ। নিছে রৌদ্র শুষে
নিয়ে, আগন্তুকদের আশ্রয় দেয়।
দেবাশিসঃ
তোর চড়ে গেছে। যা বৌয়ের সাথে গিয়ে রান্নায় হাত
লাগা...
সুশান্তঃ
দাঁড়া দাঁড়া ফোন করছি। তোরা গল্প কর, আমি
আসছি একটু পর। (সুশান্ত ফোন করতে করতে বেরিয়ে যায়।)
দীপ্তঃ
ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে কিন্ত। উফ তোরা এই শীতে কি মরতে মিরিক আসার প্ল্যান
করলি বলতো? এখন রাজস্থান যাওয়ার
সময়, তা না করে ডিসেম্বরে মিরিক...
দেবাশিসঃ
শহরের পরিবেশে নিজেকে পুরো মেরে ফেলেছিস। মনে আছে তোদের, সেই শীতকালে সন্ধ্যেবেলা পি. এল. টি তে মিটিং? উফ সেই সব কি দিন গেছে।
চরম শীতেও শমীকদার কালজয়ী ভাষণ।
প্রীতমঃ
আমাদের লড়াই সরকারের সাথে না, আমাদের লড়াই পুঁজিবাদের সঙ্গে। সমাজের সব কিছু খারাব
না, কিন্ত আমাদের শ্রেণীদ্বন্দ্বের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের পরনে গরম জামা, আর আমাদের পরিবারের
সদস্যদের পেটের জ্বালায় রাতের ঘুম। এই সমাজ আমাদের পরিবার, আর সবাই আমাদের
পরিবারের সদস্য।
শ্রীঃ
শহরের গরম কি এক রকম? তার অনেক রকম আছে। মিটিং-মিছিলের গরম, শীত ভাঙ্গা শহরের কোলে
বেড়ে ওঠা অট্টালিকার গরম, টাকার গরম...
দীপ্তঃ
আমি কিছু ভুলিনি। কিন্ত আমাকে সব ভুলে থাকতে হয়। দাসত্ব প্রথার অবলুপ্তির কথা বলতে
বলতে কখন যে নিজেকে দাস বানিয়ে ফেললাম, বুঝতে পারলাম না।
দেবাশিসঃ
আমরা সবাই দাস। কেউ টাকার দাস, আবার কেউ ক্ষমতার দাস। আসলে কি জানিস, আমাদের দাস
বানিয়েছে আমাদের খিদে।
শ্রীঃ
সহনশীলতার কথা আমরা সবাই বলি, কিন্ত নিজেদের সহনশীল করার জন্য আমাদের কি কি করতে
হয় তা আমরা কোনোদিন ভেবে দেখি?
প্রীতমঃ
ভাগ্যিস আমাদের ভাবার শক্তি গুলোকে মেরে ফেলেছি। আমাদের ইন্দ্রিয় আছে স্বাদ
গ্রহনের জন্য। কিন্তু তার বিচার করার দায়িত্ব আমাদের নেই।
শ্রীঃ
বঞ্চিতদের বঞ্ছনা আমরা গ্রহন করতে পারি না। কিন্ত ক্ষমতার অলিন্দে থাকা লোকজনদের
সাথে খঞ্জনী বাজাতে আমরা ভালই পারি...
(সুশান্তর এবং রঙ্গিতের প্রবেশ। রঙ্গিতের বয়স উনিশ,
বিশ্বভারতীতে আর্ট নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করছে।)
সুশান্তঃ দেখ কাকে এনেছি।
মিরিকে এক টুকরো শান্তিনিকেতন। ওর নাম রঙ্গিত, পাশের Glenburn tea estate এর ম্যানেজারের ছেলে।
দেবাশিসঃ বেশ ভালো, বসো
বসো। আরে সুব্বাকে বল মাংসটা দিয়ে যেতে, সাথে একটু কফি দিতে বল ওর জন্য।
রঙ্গিতঃ আরে ওসব কিছুর
দরকার নেই। আমি বাড়ি থেকে জলখাওয়ার খেয়ে বেরিয়েছি...
শ্রীঃ আরে বস তো। এই ঠাণ্ডায় দুবার কেন, এক ঘণ্টা পর পর কফি খাওয়া উচিত।
প্রীতমঃ ব্যস, দিদিমনির
আদেশ অমান্য করা চলবে না। (হাসি)
সুশান্তঃ
দাঁড়া, আমি দেখছি, মাংসটা নিয়ে আসি।
(শ্রুতির প্রবেশ, হাতে ট্রে, মাংস
আর জলের বোতল রাখা)
শ্রুতিঃ
কোথাও যেতে হবে না। আমি এসে গেছি। এই নাও মাংস
রেডি।আরে রঙ্গিত! কখন এলি?
রঙ্গিতঃ
এখুনি এলাম...মানে সুশান্তদা বার বার বলেছিলো একবার সন্ধ্যেবেলা আসার জন্য...
সুশান্তঃ
আরে ওর জন্য একটু কফি বানাতে হবে।
শ্রুতিঃ
ঠিক আছে, আমি সুব্বাকে বলছি...
রঙ্গিতঃ
আরে শ্রুতিদি লাগবে না, আমার এতেই হবে...
প্রীতমঃ
কি নিয়ে পড়ছিস
এখন? তুই বলতে পারি তো?
রঙ্গিতঃ
একদম, কোন অসুবিধা নেই। তোমরা আমার থেকে অনেক বড়।
দেবাশিসঃ বাঃ এইতো, সহজেই
আমাদের দলে মিশে গেলো।
রঙ্গিতঃ আমি ফাইন আর্ট
নিয়ে পড়ছি।
সুশান্তঃ আরে বাকি কথাটা
বল, জানিস প্রীতম ও দারুন গান গায়। অসাধারণ গানের গলা ছেলেটার।
রঙ্গিতঃ (লজ্জা পেয়ে ) না
না, সেরকম কিছু না। ওই শান্তিনিকেতনে থাকি তাই একজন প্রসিদ্ধ বাউলের কাছে গান শিখেছি...
শ্রীঃ বাঃ বেশ ভালো,
ক্যানভাসে রঙ ছড়ানোর জন্য নিয়মের বাইরে গিয়ে সুরের মূর্ছনা খুব দরকার...
সুশান্তঃ তোদের বলেছিলাম
না, যে মিরিকের পাহাড়ে বাউলের আড্ডা দেখাবো। এবার দেখ,
আমি রঙ্গিতের কথাই বলছিলাম। ও যে এখানে এসছে আমি জানতাম না, বিকেলে
বাজারে গিয়ে দেখা। ওর বাবা আমাকে এই বাড়িটা কেনার সময় খুব হেল্প করেছে। সেই থেকেই
ওর সাথে আলাপ। আগেও আমি আর শ্রুতি ওর গান শুনেছি। তাই আর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।
আজকে রাত্রে ও আমাদের এখানে ডিনার করবে। আমি ওর বাবাকে বলে দিয়েছি, ওকে রাত্রে আমি আর প্রীতম বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবো।
শ্রীঃ
আমরাও অনেকবার শান্তিনিকেতন গিয়েছি| খোয়াইয়ের ধারে এখনো সেই হাটটা বসে?
রঙ্গিতঃ
না, এখন ছোট করে একটা বাজার বসে, তবে সেটাকে হাট বলা চলে না।
দেবাশিসঃ তুই তরুন মামা কে
চিনিস?
রঙ্গিতঃ কে তরুন মামা?
দেবাশিসঃ তরুন ক্ষ্যাপা।
রঙ্গিতঃ হ্যা, চিনিতো,
এখনো কি গানের গলা, মনে হয় আকাশের মেঘ যেন মাথার উপর ঘুরছে...
দেবাশিসঃ তরুন মামা আগে
একটি ব্যাঙ্কে চাকরি করতো। হঠাৎ করে
একদিন সব ছেড়ে দিয়ে বাউল হয়ে গেলো। আমাদের সাথে এক সময় বেশ
ভালো পরিচয় ছিল। অনেক দিন যাওয়া হয় না, আর ওনার ফোন নম্বরটাও নেই আমার কাছে।
প্রীতমঃ এবার একটু গান
শুরু হোক।
দীপ্তঃ অনেক রাত্রি হয়ে
গেলো। এখানে এত রাতে গান-বাজনা করলে আবার কেউ আপত্তি জানাবে না তো?
প্রীতমঃ আরে দুর, চারপাশে,
শেয়াল-কুকুর ছাড়া আর কেউ নেই। আর ওরা আপত্তি
করবে না, ওদের তো একটু আনন্দ করতে মন চায়, না কি?
দেবাশিসঃ এবার শুরু কর
রঙ্গিত, দেখি তোর গান শুনে পাহাড়ের পাখিদের সমাবেশ হয় কিনা?
শ্রুতিঃ রঙ্গিত, আজকে একটা
রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু কর।
রঙ্গিত গান শুরু করে।
আছ অন্তরে চিরদিন, তবু কেন কাঁদি?
তবু কেন হেরি না তোমার জ্যোতি,
কেন দিশাহারা অন্ধকারে?।
অকূলের কূল তুমি আমার,
তবু কেন ভেসে যাই মরণের পারাবারে?
আনন্দঘন বিভু, তুমি যার স্বামী
সে কেন ফিরে পথে দ্বারে দ্বারে?।
তবু কেন হেরি না তোমার জ্যোতি,
কেন দিশাহারা অন্ধকারে?।
অকূলের কূল তুমি আমার,
তবু কেন ভেসে যাই মরণের পারাবারে?
আনন্দঘন বিভু, তুমি যার স্বামী
সে কেন ফিরে পথে দ্বারে দ্বারে?।
শ্রীঃ Five years have past;
five summers, with the length
Of five long winters!
and again I hear
These waters, rolling
from their mountain-springs
(বাইরে একজনের দৌড়ানোর শব্দ শোনা যায়|দৌড়াতে দৌড়াতে অরিজিৎ প্রবেশ করে। অরিজিৎ
কে প্রথমে কেউ চিনতে পারেনা। অনেক দিনের না-কাটা দাড়িতে অরিজিতের মুখ চেনা দুষ্কর। গায়ে একটা শাল জড়ানো, কাঁধে ঝোলা
ব্যাগ। পায়ে নোংরা চামড়ার চটি আর মাথার একটা যায়গায় অল্প রক্ত জমাট বেধে আছে)
(আরিজিতের অস্বাভাবিক প্রবেশে সবাই চমকে ওঠে এবং শ্রী হঠাৎ করে চিৎকার করে ওঠে)
দেবাশিসঃ কে? কে আপনি? এরকম
পারমিশন না নিয়ে ঢুকলেন কি করে?
দীপ্তঃ সুব্বা, সুব্বা, তাড়াতাড়ি এসো...
প্রীতমঃ কে আপনি? বেরিয়ে যান, বলছি বেরোন, নাহলে পুলিশ ডাকবো,
সুশান্তঃ দারা প্রীতম, আমি
পুলিসে কল করছি...(বলে ফোনটা পকেট থেকে বার করতে জায়)
অরিজিৎঃ (কোমরে গোঁজা
পিস্তল বের করে সুশান্তর দিকে তাক করে।) একচুল নড়লে এখানেই লাশ ফেলে
দেবো। শালা ফুর্তি করতে এসেছেন? গান-বাজনা করছেন?
প্রীতমঃ তাতে আপনার কি? কে
আপনি?
অরিজিৎঃ (পিস্তল প্রীতমের
দিকে ঘোরায়) আমি কে সেটা আপনাদের জেনে লাভ নেই। আমি কিছুক্ষণ এখানে থাকবো। পুলিশ
আমার পেছনে, আপনারা আমাকে শেল্টার
দেবেন...
শ্রীঃ কি আশ্চর্য? তার মানে আপনি আসামী?
অরিজিৎঃ না, আমি বিপ্লবী।
দেবাশিসঃ (অবাক
হয়ে) স্বাধীন দেশে বিপ্লবী? সন্ধ্যেবেলা কি নেশাটা বেশি করে ফেলেছেন?
দীপ্তঃ আমরা আপনাকে কোন শেল্টার দিতে পারব না। আপনি এখুনি এখান থেকে
বেরিয়ে যান|
রঙ্গিতঃ বেরোন, বেরোন
বলছি...(বলতে বলতে আরিজিতের দিকে এগিয়ে যায়)
অরিজিৎঃ (রঙ্গিতের মাথায়
পিস্তল দিয়ে আঘাত করে) সোজা কথা কানে যায় না ছোকরা? চুপচাপ বস এখানে, এক পা এগোলে মেরে
ফেলবো...(রঙ্গিত মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে
মাটিতে লুটিয়ে পরে)
প্রীতমঃ
এটা কি করলেন আপনি? দীপ্ত, দেবাশিস,
সুশান্ত কিছু একটা কর। রঙ্গিতকে এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে...
(দীপ্ত এবং দেবাসিশ
রঙ্গিতের দিকে এগোতে জায়, কিন্ত অরিজিৎ চিৎকার করে তাদের পিছনে সরতে বলে)
অরিজিৎঃ এক পা এগোবেন না,
ওর বাপের ফল ওকে ভুগতে হয়েছে। বিষফল সেবন করা যায় না, বিষবৃক্ষ
বেড়ে ওঠার আগে তাকে ছেঁটে ফেলা উচিৎ।
শ্রীঃ আপনি চুপ করুন। You are a criminal, you should be
hanged till death, I will call the police immediately…
অরিজিৎঃ
চুপ করুন। আপনারা কি জানেন ওর ব্যাপারে? টি-এস্টেটের ম্যানেজারের একমাত্র ছেলে। ওর
বাবার জ্বালায় শত শত শ্রমিক দিনের পর পর মারা গেছে, একটা শ্রমিক মরলে তাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় না, ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই, পেটে দুবেলা দুমুঠো ভাত পড়ে না, শিশুরা জন্মাবার পরে দুধের
বদলে ভাতের ফ্যান খায়, সময় বিশেষে সেটাও ওদের বাবা-মা দিতে পারে না, কারন ভাত
ফোটানোর গন্ধ সেইসব গ্রামে এক বিরল দৃশ্য ...।
প্রীতমঃ
আপনি নিজেকে বিপ্লবী বলে দাবী করেন, আর একজন সাধারন নাগরিকের মাথায় আঘাত করতে আপনার
হাত কাঁপে
না!
দীপ্তঃ
স্বাধীন দেশে বিপ্লব কিসের জন্য?
দেবাশিসঃ ঠিক বলেছিস,
আমারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো, যাদেরকে আপনারা শত্রু বলে মনে করছেন, তারাও তো আমাদের পরিবারের সদস্য...
অরিজিৎঃ পরিবারের কোন
সদস্য যদি শ্রেণীশত্রুতে পরিনত হয়, তাহলে তাদেরকে আর ভালবাসা যায়না, তাদেরকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়াটা আমাদের
কর্তব্য...
প্রীতমঃ আপনি উচিৎ শিক্ষা
দেওয়ার কে?
শ্রীঃ ভালবাসা দিয়ে কোনো
মানুষকে পরিবর্তন করা যায়, তার
জন্য বন্দুকের নলের প্রয়োজন হয় না।
অরিজিৎঃ সত্যি? পনেরো বছর
আগে আপনাকে ভালবাসা দিয়ে কেউ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলো?
শ্রীঃ কে আপনি?
অরিজিৎঃ দেবাশিস আপনি খুব
ভালো করে জানেন যে, ভালবাসার অস্তিত্ব আমাদের সমাজে নেই, নাহলে পনেরো বছর আগে
আপনাকে suicide
attempt করতে
হতো না।
দেবাশিসঃ আপনি কে? আমাদের
সম্পর্কে এতকিছু আপনি জানেন কি করে?
দীপ্তঃ আপনি কি কোন
পলিটিকাল এজেন্ট?
অরিজিৎঃ না দীপ্ত, আমি আপনার মতো সিস্টেমের দাস নই।
প্রীতমঃ অনেক হয়েছে, আপনি
কে, কি উদ্দেশ্য আপনার?
অরিজিৎঃ (অট্টহাসি) তুই
অনেক বড় হয়ে গেছিস প্রীতম। বরং আমার মনে হয় আরো ছোট হয়ে গেছিস। কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় ট্রাম আটকে শ্লোগান লাগানো প্রীতম,
পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য তুখোড় রনকৌশল বানানো কমরেড প্রীতম...
প্রীতমঃ কে তুই?
অরিজিৎঃ এখন আমাকে চিনতে এতো অসুবিধে হছে প্রীতম? চশমার
পাওয়ার বেড়েছে তোর? না কি আমার মুখের আদল এতটাই পরিবর্তন হয়েছে যে আমাকে তোরা
চিনতে পারছিস না... নাকি তোরা চেনার চেষ্টা করছিস না...
সুশান্তঃ (অরিজিতের
দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে)অরিজিৎ?
শ্রীঃ অসম্ভব, উনি অরিজিৎ কিছুতেই হতে পারেন
না...অরিজিৎ কে আমি চিনতে পারবো না, এটা হতেই পারে না...
অরিজিৎঃ পনেরো বছর আগেও তো
তুই আমাকে চিনতে অস্বীকার করেছিলি...আমার ভালবাসা কে প্রত্যাখ্যান করেছিলি শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে...
শ্রুতিঃ উনি তোমাদের
বন্ধু?
দীপ্তঃ কমরেড অরিজিৎ...
প্রীতমঃ (অরিজিতের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে) অরিজিৎ,
তুই এতো নিচে নেমে গেছিস? তোর এতো অধঃপতন যে, তুই আমাদের উপর বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে
আছিস?
অরিজিৎঃ একই কথা তো আমিও বলতে পারি প্রীতম, যে তোরা এত নিচে নেমে গেছিস যে
সমাজের অন্ধকার দিকগুলোকে অবলীলায় অস্বীকার করছিস...
দেবাশিসঃ তুই তো এরকম ছিলিসনা, তুই খুব bright student ছিলি, তোর একটা bright career আছে...
শ্রীঃ অরিজিৎ তুই মূলস্রোতে ফিরে আয়...অনেক হয়েছে, এসব অলীক
কল্পনা বন্ধ কর...
অরিজিৎঃ তোরা মূলস্রোতে ফিরে আয়...আমি পথ ভুল করিনি, তোরা
করেছিস...কোন মূলস্রোতের কথা বলছিস শ্রী? আমিতো আমার মূল ছাড়িনি,
আমি আমার শিকড়ের কাছেই আছি...
প্রীতমঃ তুই যা করছিস ভুল
করছিস...
অরিজিৎঃ কোন ভুলের কথা
বলছিস?
দেবাশিসঃ তুই নিজেকে
অপরাধী বানিয়েছিস, নিজেকে শেষ করে দিয়েছিস...
অরিজিৎঃ অপরাধী আমি? না
তোরা?
দীপ্তঃ আমাদের আপরাধ কি? স্বাভাবিক
জীবনযাপন করাটা অপরাধ?
আরিজিৎঃ কোনটা স্বাভাবিক?
তোদের কাছে যেটা স্বাভাবিক, আমার কাছে সেটা ভীরুতা| ভৃত্যর মতো জীবনযাপন করাটা তোদের কাছে স্বাভাবিক?
প্রীতমঃ অরিজিৎ তুই বাজে
কথা বলছিস। তুই জানতিস না? যে আমাদের সবাইকে একদিন সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে হবে? কলেজে পুতুল খেলাটাকে তুই জীবনের পথ চলার আদর্শ করে ফেলেছিস।
অরিজিৎঃ কোনটা পুতুল খেলা
ছিলো প্রীতম? বইয়ের পাশে, ম্যাক্সিম গোরকির
মা শুয়ে থাকতো, বুকের কাছে চে-র সবুজ নোটবুক, একসাথে দিরোজিও
হলে The
Motorcycle Diaries দেখা...
দীপ্তঃ যৌবনের রক্তে অনেক
বিষ থাকে, পরে সেই বিষ ধুয়ে ফেলতে হয় অরিজিৎ...
অরিজিৎঃ বিষ তোদের রক্তে
ছিলো না, বিষ ছিলো তোদের মনে...
দেবাশিসঃ এবার পিস্তলটা
ফেলে দে অরিজিৎ, আমরা তোর বন্ধু্...আমাদের উপর পিস্তল তাক করা
তোর শোভা পায় না...
(অরিজিৎ পিস্তল টা কোমরে গুঁজে
নেয়।)
অরিজিৎঃ তোরা এখানে কি
করছিস?
প্রীতমঃ ঘুরতে এসেছি।
সুশান্ত এই বাড়িটা কিনেছে।
অরিজিৎঃ বাঃ বেশ ভালো।
অনেক উন্নতি করেছিস সুশান্ত। গ্রামের ছেলে আজ লাখপতি হয়েছে।
সুশান্তঃ সেটাও আমার দোষ।
অরিজিৎঃ না, দোষ কিসের।
তবে নিজের চোখটা বন্ধ করে রেখেছিস, তাই
নীচের গ্রাম গুলোকে দেখতে পারছিস না।
শ্রীঃ অরিজিৎ তোর কপালে
রক্ত জমাট বেধে আছে,
অরিজিৎঃ রক্তের রঙ টা
কীরকম দেখছিস? লাল না কালছে লাল।
দেবাশিসঃ বিজ্ঞানের ছাত্র
হয়ে তোর এটা জানার কথা, যে রক্ত জমাট বাঁধলে সেটা কালচে লাল হয়ে যায়...
অরিজিৎঃ ঠিক বলেছিস, লাল
রঙ অনেক সময় একা পড়ে থাকলে
কালো হয়ে জায়। (অরিজিৎ টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়, ওয়াইনের
গ্লাসটা হাতে নেয়)...শ্রী, একটা সময় তো অশোকদার লাল চা খেতিস, এখন তোর হাতে
ওয়াইনের গ্লাস? (কটাক্ষ)
শ্রীঃ সময় মানুষ কে
পরিবর্তন করে, মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন হয়...
অরিজিৎঃ তবে রঙটা তো
পরিবর্তন হয়নি। ভালবাসার রঙ লাল, রক্তের রঙ লাল, বিপ্লবের রঙ লাল আর দাসত্বের রঙও
লাল...
শ্রীঃ তোর মাথায় গণ্ডগোল
দেখা দিয়েছে। তুই পাগলের প্রলাপ বকছিস...
অরিজিৎঃ পনেরো বছর আগেও কি
আমি পাগলের প্রলাপ বকতাম? Time was not passing; it was turning in a circle
শ্রীঃ
there is always something left to love...
অরিজিৎঃ
(অবাক হয়ে) তুই কি আমাকে এখনো ঘেন্না
করিস?
শ্রীঃ
জানি না কেন ভাব তুমি,
সৈনিক,
যে তোমাকে ঘৃণা করি আমি,
যদি
একই পথের যাত্রী হই আমরা, আমি...তুমি...
অরিজিৎঃ
তুমি জন্ম দিচ্ছিলে চুম্বনের এবং হত্যা করেছিলে পিঁপড়েদের,
তুমি
বিলাপ করছিলে ভালো থাকার,
পেঁয়াজ
আর প্রজাপতি নিয়ে,
জ্বলন্ত
বর্ণমালা নিয়ে...
(শ্রী মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে পড়ে)
প্রীতমঃ
অরিজিৎ, তুই বাড়াবাড়ি
করছিস। অনেক হয়েছে, তুই আত্বসমর্পণ
কর সরকারের কাছে।
দীপ্তঃ
আমি কথা দিছি তোকে, তোর কোন অসুবিধে হবে না। আমি আমার সব চ্যানেল লাগাবো তোকে
বাঁচানোর জন্য।
দেবাশিসঃ তুই আমার সাথে
চল। আমি পুলিশ যা বলার বলবো।
অরিজিৎঃ (অট্টহাসি)হায়রে, এই অবুঝ শহর, যারা
নৈরাশ্যের গান গাইতো, তারা এখন এক লম্বা সবুজ সরীসৃপ। তোরা নিজেরা
কি করে বাঁচবি সেটাই জানিস না, আমাকে বাঁচাবি কি করে?
দীপ্তঃ তুই কি বলতে
চাইছিস? তুই কি আমাদের মেরে ফেলার ফন্দী করছিস?
অরিজিৎঃ আমরা মানুষদের বাঁচার পথ দেখাই দীপ্ত, মেরে ফেলার পথ না।
প্রীতমঃ তুই কি মনে করিস,
মানুষ হত্যা করে বিপ্লব করা যায়?
অরিজিৎঃ না, মানুষদের
বাঁচানোর পথ দেখিয়ে বিপ্লব করা যায় না।
প্রীতমঃ স্বাধীন দেশে,
পরাধীনতার জীবনযাপন করে নিজেকে কষ্ট দেওয়াটাকে মূর্খতা বলে। সেটাকে বিপ্লব বলে না।
অরিজিৎঃ কষ্ট আমাকে স্পর্শ
করে না, তোদের জ্বালা, কষ্ট, আনন্দ আছে, আমার জীবনে এসবের কোন মুল্য নেই।
দেবাশিসঃ এই জীবন বাছার
জন্য তুই নিজেই দায়ী।
অরিজিৎঃ তোদের জীবনে কি
আছে তোরা বলতে পারিস?
দীপ্তঃ টাকা আছে, ক্ষমতা
আছে,
অরিজিৎঃ ভালবাসা আছে?
অনুভূতি আছে?
প্রীতমঃ আছে, সব আছে
আমাদের। কিন্ত তুই আজ নিঃস্ব।
অরিজিৎঃ (অট্টহাসি) ঠিক
বলেছিস, আমি নিঃস্ব। শহরের পাখিগুলো ছাড়া আমার কোন বন্ধু নেই, আকাশটা ছাড়া
আমার কোন ছাদ নেই। কিন্ত আমি যে গভীর প্রশ্বাস নিতে পারি, সেটা তোরা
পারিস? তোদের দম বন্ধ হয়ে আসে না?
প্রীতমঃ না, আসে না।
আমাদের প্রশ্বাসের দাম আছে। তোর কোন দাম নেই এই
সমাজে।
অরিজিৎঃ কিসের সমাজ? সমাজ,
রাষ্ট্র এগুল সব শোষণের যন্ত্র।
প্রীতমঃ একটা মানুষকে
দেখাতে পারবি যে এই যন্ত্রের অংশিদার না?
অরিজিৎঃ তাহলে মানছিস, যে
তোরা সবাই যন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত?
প্রীতমঃ
তোদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কমরেডদের দ্বারা পরিচালিত ছাত্রসমাজ, আর ওদের কাঁচা মাথা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আমাদের
অজানা না। তোরা রেড স্কোয়াড তৈরি
করতে চাইছিস, আমরা সেটা কিছুতেই হতে দেবো না।
অরিজিৎঃ
আবার দুটো শ্রেণী বিভাজন, আমারা আর তোরা। আমাদের মধ্যে শ্রেণীদ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবী...প্রীতম তোদের মনে পরে না সেই
কলেজের দিনগুলি, পনেরো বছর আগের সেই ১৪ই আগস্টের রাত, যেদিন পি. এল. টি তে কমরেড শমীক আমাদের বলেছিলো, “আমারা ভোটের
রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা, আমাদের দ্বন্দ্ব বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে। আমাদের দাবী
মেঘের আড়ালে সূর্যকে লুকিয়ে রাখা না, সূর্যের আলোয় সবাইকে আলোকিত করা”। আর তুই সেদিন তুমুল তর্ক করেছিলি, চিৎকার করে বলে উঠেছিলি...
(মঞ্চের সব আলো নিভে আসে। মঞ্চের
সামনে শুধু
দুটো আলো অরিজিৎ আর প্রীতমের উপর
পরে। পনেরো বছর আগের পি, এল, টি রুমের আদল ভেসে ওঠে মঞ্চের সামনে)
প্রীতমঃ
কমরেড, সূর্যের আলোয় আমাদের কাজ করা শোভা পায়না। আমাদের কাজ রাতের অন্ধকারে। আপনি কোন
আলোর কথা বলছেন? চোখ মেলে দেখুন, রাস্তায় আজ হ্যাজাকের আলোর বদলে শত শত পাওয়ারের জোরালো
আলোয় মানুষের মুখ পুড়ে যাছে, সেই ছাই আমাদের প্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে অতিক্রান্ত
করছে। সাধারন মানুষ আমাদের পাগল বলে, বাবা ধমক দেয় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার, মা আঁচলের আড়ালে কেঁদে যায়...আমরা আমাদের বাড়ির কাছের
মানুষদের ভরসা দিতে পারিনা, সেখানে কি ভাবে আমরা সমাজ পরিবর্তন করবো? জবাব দিন কমরেড, জবাব দিন (প্রীতমের চোখ লাল হয়ে
ওঠে, হাত কাঁপতে
থাকে রাগে, গলার শিরা বেরিয়ে আসে)
আরিজৎঃ
চুপ কর প্রীতম, তুই চুপ কর। কি করছিস এসব?
প্রীতমঃ
না অরিজিৎ, আমাকে আজ বলতেই হবে। আমরা সবার অসংখ্য প্রশ্নের সন্মুখিন হই, আর আমাদের
যারা স্বপ্ন দেখায়... তাদের প্রশ্ন করা
আমাদের অধিকার...ওনাকে আজ জবাব দিতেই হবে......জবাব দিন কমরেড শমীক...জবাব দিন...
শমীক : শান্ত হোন কমরেড, শান্ত হোন।
আমাদের লড়াই এই ক্ষুদ্র পরিবাবের সাথে নয়। আমাদের লড়াই বৃহত্তর পরিবারের স্বার্থে।
বিপ্লবের সংজ্ঞা জানেন?
প্রীতমঃ
কি কমরেড?
শমীক:
আমরা হলাম চাষি, আর বিপ্লব হল
ধানের শিস। চাষ করে, অক্লান্ত পরিস্রম করে, মাটি কুপিয়ে, লাঙ্গল টেনে আমাদের শস্য ফলাতে হবে। যখন পুরো মাঠ
সোনালি শিসে
ভরে উঠবে, তখন সেই ধান কেটে, ঘরে ঘরে পৌঁছে
দিতে হবে।
প্রীতমঃ
তাহলে আমাদের শিক্ষা, কলেজের ডিগ্রি নিয়ে কি লাভ? মাঠে গিয়ে চাষ করলেই তো হয়!
শমীক:
শিক্ষা বলতে আপনি কি বোঝেন? আপানার
মনে হয়, যে এইসব ডিগ্রি আপনার গুনের বিচার করতে সক্ষম? আমাদের দেশে শিক্ষা চাষ হয়,
খোলা বাজারে বিক্রি হয়..শিক্ষা হলো আপনার পরিচয়। রেশনের দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে যে শিক্ষা পাওয়া যায়, সেটা আপনাদের কোন বইতে পাওয়া যায় না। ফালানস্টোরি, হোম কলোনি অথবা
ছোট আইকেরিয়া স্থাপন
করার লক্ষ্য আমাদের নয়, আমাদের কাজ
পুরো পৃথিবী জুড়ে…
(বাইরে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ শোনা যায়| হুড়মুড়িয়ে কিছু পুলিশ এসে কমরেড শমীক এবং অরিজিৎকে এরেস্ট করে। প্রীতম
পালিয়ে যায়
সভা ছেড়ে, সে ধরা পরে না) মঞ্চের সব আলো আবার
জ্বলে ওঠে, আবার মিরিকের বাগানবাড়ি ফুটে ওঠে মঞ্চে| রঙ্গিতের পাশে বসে সুশান্ত, আর
শ্রুতি ওর মাথার রক্ত মুছে দিছে.
অরিজিৎঃ
তুই সেদিন কেন পালালি প্রীতম? তুই চলে যাওয়ার পর আমাদের পুলিশ এরেস্ট করলো। তিন
মাস জেল, কমরেড শমীকের সশ্রম
কারাদণ্ড...সে কি ভয়ানক যন্ত্রণা...
প্রীতমঃ
আমি যে স্বাভাবিক জীবন চেয়েছিলাম। আমার জেল হলে আমার বাবা-মা সমাজে মুখ দেখাতে
পারতো না...
অরিজিৎঃ
আমার বাবা-মা, ভাই-বোন সব ছিলো প্রীতম, কিন্ত আমার মধ্যে যে আগুন ছিলো, সেটা আমি
ভুলে যায়নি।
দেবাশিসঃ তুই কি বলতে
চাইছিস? আমরা সারাজীবন তোর মতো এরকম ভিখারি হয়ে থাকতাম।
দীপ্তঃ আমাদের জীবনে অনেক
স্বপ্ন ছিল, সেগুলো পুরন করার জন্য আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই হতো। তাছাড়া আমরা তো কোন বন্ডে সাইন করিনি, যে আমাদের সারাজীবন আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকতে হবে?
অরিজিৎঃ ঠিক বলেছিস,
আমাদের মানসিক কোন বন্ড ছিলো না। আর আমি সত্যি ভিখারি| কিন্ত তোদের কি আছে বলতে পারিস? তোরা ভিখারি না?
দেবাশিসঃ আমরা ভিখারি? (কটাক্ষ) আমার ব্যাঙ্কে যা
ব্যাল্যান্স আছে, সেটা দিয়ে তোর চোদ্দপুরুষ বসে খেতে পারে। টাকা, গাড়ি, বাড়ি...কি
নেই আমাদের?
অরিজিৎঃ বাড়িতে কোনো আয়না
আছে?
দেবাশিসঃ (হেসে) অবশ্যই,
একদিন আয় আমার বাড়িতে, তোকে দেখিয়ে দেবো কি কি আছে। গত সপ্তাহে একটা নতুন জাকুজি
বসালাম, শীতকালে খুব কষ্ট হয় চান করতে, তার ওপর আমার আবার সাইনাস ধরা পড়েছে...
অরিজিৎঃ দিনে কতবার নিজের
মুখ দেখিস আয়নাটায়?
দেবাশিসঃ কি অদ্ভুত
প্রশ্ন? নিজের বাড়ি, নিজের আয়না, আমি যতবার খুসি ইয়ুস করতে পারি...
অরিজিৎঃ পনেরো বছর আগের দেবাশিসকে
খুঁজে পাস? যাকে আমরা দেবু বলে চিনতাম। যেই ছেলেটার একমাত্র সখ ছিলো...
দীপ্তঃ চুপ কর অরিজিৎ।
অনেক হয়েছে...
অরিজিৎঃ তুই চুপ কর। শালা ভেড়ুয়া, আস্তিনের সাপ...
শ্রীঃ কি বলছিস এসব?
অরিজিৎঃ ঠিক বলেছি। এই
শালা দীপ্তই, সেইদিন পুলিশে খবর দিয়েছিলো। (সবাই দীপ্তর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে)
শ্রীঃ দীপ্ত তুই? কেন এরকম
করলি তুই?
প্রীতমঃ দীপ্ত, তোকে আমরা
সবাই বিশ্বাস করেছিলাম। জানতাম তুই আমাদের সংগঠনকে সহ্য করতে পারতিস না। সেই জন্য
তুই এরকমভাবে প্রতিশোধ নিবি?
দীপ্তঃ (মাথা নিচু করে,
মুখে দুই হাত চাপা দিয়ে বসে পড়ে।)
আমি ভয় পেয়েছিলাম। ওরা আমাকে বলেছিলো, যে তোদের ঠিকানা না বললে ওরা আমাকে গ্রেফতার
করবে। আমাকে ক্ষমা কর অরিজিৎ, আমাকে ক্ষমা কর...
শ্রীঃ অরিজিৎ অনেক হয়েছে।
আর না, এবার তুই ফিরে আয়। স্বাভাবিক জীবনযাপন কর। আমাদের মতো হয়ে ওঠ, আমরা তোকে সাহায্য করবো, বিশ্বাস কর...
দেবাশিসঃ শ্রী ঠিক বলেছে
অরিজিৎ, যা হয়েছে ভুলে যা, আবার নতুন করে জীবন শুরু কর, আমরা তোর পাশে আছি...
অরিজিৎঃ কি করে ফিরব বলতো?
আমি এখন সমাজের চোখে আসামী...আমাকে পুলিশ ধরার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে...
প্রীতমঃ আমি দেখছি কি করা যায়| তোর
কোনো চিন্তা নেই, তোর বন্ধুরা এখনো বেঁচে আছে অরিজিৎ...।
অরিজিৎঃ প্রীতম সেটা আর
সম্ভব না, মৃত্যু আমার ভবিতব্য, সংগ্রাম আমার রাস্তা, স্বাধীন দেশকে বুর্জোয়াদের
কবল থেকে আমাকে বাঁচাতেই
হবে...আমার যে অনেক কাজ এখনো বাকি...(অরিজিৎ কাশতে কাশতে বসে পরে, ওর মুখ দিয়ে
রক্ত ঝরে পড়তে থাকে, প্রীতম দৌড়ে গিয়ে নিজের শালটা অরিজিতের
গায়ে পরিয়ে দেয়)
(পুলিশ ঢুকে আসে মিরিকের
বাগান বাড়িতে, অরিজিৎকে দেখে পিস্তল
তাক করে।)
পুলিশঃ you are under arrest Mr. Arijit.
Don’t move, আমি
আপনাকে request করছি আত্মসমর্পণ করতে, নাহলে আমি গুলি চালাতে বাধ্য হবো।
প্রীতমঃ
অফিসার, এরকম করবেন না। ও আত্মসমর্পণ করবে, একটু অপেক্ষা করুন প্লিস...
অরিজিৎঃ
(শালের আড়াল থেকে নিজের পিস্তলটা বের করে
প্রীতম এর মাথায় ধরে) অফিসার আমাকে ধরা এতো সহজ নয়। বন্দুকটা ফেলে দিন, নাহলে আমি
ওকে গুলি করবো, আমি মরলে, এরা সবাই মরবে...
শ্রীঃ
এটা তুই কি করছিস অরিজিৎ?
দেবাশিসঃ অরিজিৎ পিস্তলটা
ফেলে দে। নিজের বন্ধুকে তুই গুলি করবি?
দীপ্তঃ অরিজিৎ এসব ছাড়, আত্মসমর্পণ কর। আমরা আছি তোর সাথে...
অরিজিৎঃ (চিৎকার করে)চুপ
কর তোরা, আমার তোদেরকে দরকার নেই, কিন্ত সাধারন মানুষদের আমাকে দরকার, আমার কাজ
এখনো শেষ হয়নি...আমাকে যেতেই হবে...
(অরিজিৎ আস্তে আস্তে
প্রীতমকে নিয়ে বাইরে যায়, শেষে প্রীতমকে
ধাক্কা দিয়ে, নিজে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করে)
অফিসারঃ ফলো হিম, এরেস্ট
হিম ওর শুট হিম...
দেবাশিসঃ অফিসার, প্লিস
ওয়েট, আমাদের কথাটা শুনুন...
অফিসারঃ অন ডিউটি পুলিশের কাজে বাধা দিলে আমি আপনাদের
এরেস্ট করতে বাধ্য হবো। (অফিসার দৌড়ে মঞ্চ থেকে বেরিয়ে জায়, আরিজিতের পিছু করে)
পাহাড়ের ঢালু জায়গা দিয়ে
অফিসার অরিজিৎ কে তাড়া করতে
থাকে। সন্ধ্যেবেলা হালকা আলোয় অরিজিৎকে আর অফিসারকে দুটো
ছায়া মূর্তির মতো দেখায়। হঠাৎ করে তিনটে
পর পর গুলির আওয়াজ শোনা যায়। রাতের অন্ধকারে,
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তার জন্য, অফিসারের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, পায়ের বদলে, তিনটে
গুলি অরিজিৎকে বিদ্ধ করে কোমরে আর পিঠে| লুটিয়ে পড়ে
কমরেড অরিজিৎ, বিপ্লবের নাস্তি হয়না, শুধু শরীরটা ভেসে যায় গভীর খাদে|
পাহাড়ের উপর থেকে এই দৃশ্য
দেখে শ্রী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, সকলে
ছুটে যায় বাগানের ধারে নিথর শরীরটা অন্ধকারে এক ঝলক দেখার জন্য। মঞ্চের উপর থেকে গভীর আর্তনাদ ভেসে আসে প্রীতমের গলা থেকে।
শেষ কথাঃ অরিজিৎ মরেনি।
অরিজিৎ বেঁচে আছে সবার মধ্যে। যখনি আপনারা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন, স্বপ্ন
দেখবেন, ধানের শিস পৌঁছে দেবেন ঘরে ঘরে, তখনি এক একটা নতুন অরিজিৎ জন্ম
নেবে এই পৃথিবীর বুকে।
sreesup@gmail.com
কলকাতা
No comments:
Post a Comment