1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 21, 2020

ছাপাখানার পৃথিবী

 

ছবি : ইন্টারনেট

                                                      দেবানন্দ মুখোপাধ্যায়

      বাস থেকে নেমে বাড়ির দিকে হন হন করে হাঁটা শুরু করলো সানন্দ।আজ অনেকগুলো ভালো ভালো বই সংগ্রহ করতে পেরেছে ও,রোদে ঘোরা সার্থক হয়েছে।বিশেষ করে একটা বই। উফ্ ভাবা যায়? সংগ্রহশালার বোধহয় বড় চমক!

সানন্দ পেশায় ডাক্তার এবং সেই সূত্রে উত্তরবাংলার বাসিন্দা,যদিও বাড়ি তার দমদমে।সাবালক হওয়ার পর থেকেই  কলেজ স্ট্রীট মাসে একবার  না গেলে তার ভাত হজম হোতোনা।আর যখন কলকাতা মেডিকেলে পড়তো তখন তো বলতে গেলে রোজই একবার যেতো,মনে হত ওখানের পুরোনো বইয়ের দোকানগুলোও মেডিকেল কলেজের একটা আলাদা শাখা, একবার করে রাউন্ড দেওয়াটা বাধ্যতামূলক।

এবার স্বাস্থ্যভবনে বদলির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার জন্য একসপ্তাহের ছুটি নিয়ে এসেছে। গতকাল  স্বাস্থ্যভবনে বদলির ব্যাপারে খবরাখবর নিতে গেছিলো।ওখান থেকে ইতিবাচক খবর পাওয়ার পর থেকেই মনটাতে বেশ খুশি খুশি ভাব।কাজেই বইএর নেশা বেশ ভালোই জাঁকিয়ে বসেছে কাল রাত থেকে।গল্পের আর পড়ার বই এই দুটো জগতের বাইরের জগত তার কাছে সম্পূর্ণ আজও অচেনা।এই নিয়ে তাকে কম কথা শুনতে হয়নি,এখনও বৌএর কথা মাঝে মাঝে শুনতে হয়,অবশ্য আগের থেকে অনেকটাই তার ধার আর ভার কমেছে।কারণ রুমা বুঝেই গেছে তার এ রোগ সারবার নয়।কোথায় প্র্যাক্টিশ করবে,দুটো বাড়তি পয়সা কামাবে, তা নয় বই আর বই।যার পাল্লায় পড়ে সানন্দর পোস্টগ্র্যাজুয়েসন পর্যন্ত করা হয়নি। অথচ কি ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলো ও।সে যাক্ আজকে সানন্দর বিরাট আনন্দের দিন।

আজ কলেজস্ট্রীটে ভবানী বাবুর পুরোনো বইএর দোকান ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎই চোখে পড়ে বইটার দিকে,বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক ।দেখেই মনে হচ্ছিল বহু দিন আগের।পাতাগুলো ধরতে গেলে মনে হচ্ছে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে,কিন্তু হচ্ছেনা।সন্তর্পনে বইএর মলাট( যদিও বিবর্ণ হয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছেনা) উল্টে দেখে একদম প্রথম এডিশন, কাত্যায়ণী বুকস্টল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত, ১৯৩৯ সালের বই,মানে আটাত্তর বছর আগের বই।তখন সানন্দর জন্মই হয়নি।

ভবানীদা বলে" জহুরীর ঠিক জহরে নজর পড়েছে ডাক্তারবাবু,ওটার কিন্তু দাম বেশীই পড়বে।পাওয়া যায় বলে শুনিনি। আজ একজন একঝাঁক বই দিয়ে গেলো।বাড়ীতে জায়গা নেই,দাদুর বইএর শখ ছিলো, বাবারও ছিলো,রোজই বই নাড়াঘাটা করতেন। তা সেই বাবার সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে,ইত্যাদি ইত্যাদি।যেরকম হয় আর কি! "

"তা কত দাম রেখেছো?"

"কি দাম রাখবো,আপনি কি আমার আজকের খদ্দের,সেই গোঁফ ওঠেনি তখন থেকে আনাগোনা।যা ভালো বোঝেন দেবেন"

সানন্দ তখন উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে।সামান্য দরদাম করে ভবানীদাকে পয়সা মিটিয়ে বাস ধরলো।

বাড়িতে ঢুকেই রুমাকে হাঁক দেয়,যদিও জানে রুমা এর গুরুত্ব বুঝবে না,উল্টে এত টাকা একটা বইএর পিছনে খরচ করে এসেছে শুনলে রাগারাগিই করবে,তবু কাউকে এই উত্তেজনার ভাগীদার তো করতেই হবে-- সে ক্ষেত্রে রুমার থেকে আপন কে আছে?

" রুমা,দেখে যাও কি বই পেয়েছি।এখন আর পাওয়া তো দুরের কথা নামই কেউ শোনেনি।"

হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে রুমা " কি আবার গন্ধমাদন নিয়ে এলে?"

"দেখাচ্ছি,দেখাচ্ছি,আগে এককাপ চা দাওতো।"

"এই অবেলায়?"

"আনো, আনো।তারপর দেখাচ্ছি বইটা"

চা খেয়ে ব্যাগ থেকে বইগুলো বের করে সানন্দ।তারমধ্য থেকে আরণ্যক বেছে নিয়ে রুমাকে দেখায়।

" দেখো রুমা, বিভূতি বাবুর আরণ্যক বই এর প্রথম এডিশান,কাত্যায়ণীবুক স্টল পাবলিশার্স থেকে ১৯৩৯ বের হয়েছিলো।প্রবাসী বলে একটা ম্যাগাজিনে ১৯৩৮ থেকে ১৯৩৯ সালে ধারাবাহিক বের হওয়ার পর প্রথম বই হিসেবে বের করে এই পাবলিশার্স। সেই বই এটা।উঃ কি যে আনন্দ হচ্ছে।" এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামে সানন্দ।

" তা কত গচ্চা দিলে?" রুমা বইএর পাতা উল্টাতে উল্টাতে জিজ্ঞেস করে।

"তা শুনে তোমার কি লাভ?"

"না, তা লাভ নেই।তবে কিনা যা লেগেছে তার থেকে পাঁচশো কম ধরতে পারো।" একটা অদ্ভুত হাসি হেসে রুমা বলে।

"তার মানে?"

একটা পাঁচশো টাকার নোট তুলে ধরে সানন্দকে দেখায় রুমা।"এটা এই বইএর মধ্যে ছিলো।যেমন পাগল ক্রেতা,তেমন বিক্রেতা।"

নোটটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে সানন্দ।" এটা তো অচল হয়ে গেছে। ২০১০ সালের নোট।২০১৬ র নভেম্বর থেকেই তো এরা বাতিল।"

"যা বাবা, যাও বা ভাবলাম কিছু পেলাম,তাও গেলো? কি ভাবছো?"

সানন্দ একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলো।

" কিছু বলছো না যে।কিছু ভাবছো? কপালে নেই কি করবে বলো? "রুমা আবার বলে।

" না রুমা,কিছু সে রকম না।কিছু পাবো বলে তো এসব করিনা।ভাবছি এই পৃথিবীতে রোজ কত কি ছাপা হচ্ছে, দেখো এই নোট আর বই দুটোই তো ছাপা কাগজ।।একটা ছাড়া দুনিয়া অচল হলেও তাকে বাতিল করার ক্ষমতাও মানুষের থাকে। আর একটা? একবার ছাপা হয়ে গেলে মানুষের সাধ্য নেই তাকে বাতিল করার….. "

iamdebananda@gmail.com
 বাঁকুড়া


4 comments:

  1. ভাল গল্প। বইকে টাকা দিয়ে মাপা যায় না। অনেক শুভেচ্ছা লেখককে।

    ReplyDelete