![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
তরুণ প্রামাণিক
শ্রাবণের ঘন ঘোর অন্ধকার গুড়ো গুড়ো হয়ে মিশে রয়েছে দূর গাছের ঐ পাতায় পাতায়; ফুলের গর্ভকেশর ছাড়িয়ে সদ্য যৌবনা কিশোরীর অবিন্যস্ত খোঁপাতে। কালো ধোঁয়ার মত পাতলা মেঘ দ্রুত ভেসে চলেছে। অনন্ত শূন্য লোক ছেড়ে এই ভু লোকে স্তরে স্তরে নেমে এসেছে যেন। অন্ধকার সে শূন্য পথে ডানা আস্ফালন করে আগে আগে উড়ে চলেছে বাদুড়ের দল। আর পিছে বৃষ্টির ধূসর গন্ধ মেখে, ভেজা এই মিনিবাস।
বাসের পেটের ভিতর উজ্বল নীলচে আলো; অতিমারীর আবহে স্তব্ধ সবাই। লবণাক্ত সমুদ্রের তলে মুক্তা আঁকরে বসে থাকা ঝিনুকের মত অসীম জ্ঞানের গর্বে পা নাচতে নাচতে প্রলাপবাক্যালাপে ব্যস্ত অফিস ফেরত একদল।তাদের নিশানায় প্রায় অনেকেই। কেন শিক্ষককুল বাড়িতে বসে বসেই বিনা পারিশ্রমিকে মোটা বেতন পাবেন ! এই আকালে তাঁদের ভূমিকাটা ঠিক কি ? উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে তারা।
রাত্রি বাড়ছে। ক্লান্ত শরীরটা টেনে নিয়ে বাস চলেছে। ঘন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে রাস্তার দুধার। বাস চলেছে।
হঠাৎ পথে কিসের একটা বাঁধা পেয়ে সজোরে ব্রেক কষে থমকে দাঁড়ালো বাসটা। উঠে এলেন সুদর্শন,সৌম্যকান্তির এক স্থিতধী। তাঁকে দেখে বাসের পিছন দিকে উঠলো মৃদু গুঞ্জন। কেউ পুলিশ, কেউ নার্স, কেউ বা প্রশাসনিক কার্যকর্তা। উঠে দাঁড়িয়ে নিজের জায়গায় বসতে অনুরোধ করলেন বৃদ্ধকে। স্মিত মুখে হেসে বৃদ্ধ বললেন, ' কি প্রয়োজন ! তোমরাই তো এখন সামনের সারিতে। তোমাদের লড়াই দেখছে আজ গোটা দেশ। বসার হকদার তো তোমরাই।'
গভীর কৃতজ্ঞতা চিত্তে মুখে কেউ কিচ্ছুটি বললে না। বাসের পিছন থেকে কেউ একজন মুখ বাড়িয়ে আমতা আমতা করে শুধু বললে, ' সবটুকু সম্ভব হয়েছে তো শুধু আপনাদের জন্যই মাষ্টারমশাই ! '
বাস জুড়ে পিনপতন নিরবতা।
তাঁর ঠোঁটের কোণে ঝুলে রইলো প্রগাঢ় প্রচ্ছন্নতা মেশানো একটুকরো হাসির রেখা। সে হাসি সুখের ও নয়, দুঃখের ও নয়, সে হাসিতে লেগে আছে এক দিব্য জ্যোতির চোরা স্রোত।
বাস চলেছে।
অন্ধকার হাতরে হাতরে তীব্র একটা আর্তনাদ করে, চলেছে বাস।
No comments:
Post a Comment