1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Tuesday, January 26, 2021

ফাঁদ

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

ফাঁদ
রণজিৎ সরকার

         দেখে মনে হল ধ্বস্ত, বিধ্বস্ত একেবারে পাঁচফুট এগারো ইঞ্চির সুদর্শন লোকটার কাঁধ ঝুলে গেছে চোখে উদাসভরা হতাশ দৃষ্টি ধোপদুরস্ত সাজ পোশাক অবিন্যস্ত মাথায় পরিপাটি ঝাঁকড়া চুল এলোমেলো এমনটা যে হতে পারে তার দূর কল্পনাতেও ছিল না

লকাপের গরাদ ধরে একটু ঝুঁকে পড়া লোকটিকে বার কয়েক দেখে অরণ্যার খুব খারাপ লাগছিল  যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা একটা সুদর্শন তরুণের একি পরিণতি! কেমন মানসিকতা! কী বলবেন মনোবিদরা? জানে না অরন্যা এই লোকটি ইনফ্যাক্ট পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে বহরমপুর শহরের রাস্তা- ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, বাজারে-মলে এক শঙ্কার বাতাবরণ সৃষ্টিকারী লোকটাকে দেখে সৌম্য শান্ত এক দারুণ সৌন্দর্যময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে মনে হয় বিপথে চালিত মানুষটার ওপর মোটেও রাগ  হচ্ছে না অরণ্যার যদিও তার সহানুভূতিশীল হওয়ার কোন মানে হয় না তবুও সে তো মেয়ে কোথাও যেন তার একটু খারাপ লাগছেই এই নটোরিয়াস মোবাইল চোরকে ধরায় তার অনবদ্য ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে ওপর তলার পুলিশ মহলে কনস্টেবল থেকে এস আই প্রমোশানে তার নাম রেকমেণ্ড করবেন থানার বড়বাবু আনন্দ হওয়ার কথা, তবু তার মনে আনন্দ হচ্ছেনা অদ্ভুত অস্বস্তি তাকে ছেয়ে ফেলছে

স্কুল কলেজে পড়ার সময় থেকে নাটক দেখা ছিল তার নেশা স্হানীয় রবীন্দ্রসদনে নতুন নাটক মঞ্চস্হ হলেই সে খবর পেয়ে যেত, এবং প্রথম সুযোগেই দেখত এমনি করেই একদিন নাটকে অভিনয় করার নেশা পেয়ে বসল সুযোগো জোটে অভিনয় করার ঋত্বিক নাট্টগোষ্ঠীর হাত ধরে তার সফল মঞ্চাভিনয়ের শুরু অভিনয় করার এই সহজাত গুণের কথা বহরমপুর থানার সকলেই প্রায় জানে প্রতিবছর কালিপুজোয় বহরমপুর থানার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাত্রাপালা হত কলকাতা থেকে আগত যাত্রাদল ছাড়াও থানার উৎসাহী সদস্যদের নিয়ে হত নাটক তাতে যথারীতি অরণ্যাও অংশগ্রহণ করেছে তার অভিনয়ের প্রশংসায় থানার সাধারন এমপ্লয়ী থেকে পদস্হ পুলিশ অফিসারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সকলের প্রিয়পাত্রও হয়ে উঠেছে

 বহরমপুর থানার সি রাজেনবাবু ওনার প্রথমেই অরণ্যার নামটা মনে এল, বেল বাজালেন উনি, টিং টিং

------স্যার স্যালুট করে অ্যাটেনশানের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে রইল আর্দালি

রাজেনবাবু মুখ তুলে চাইলেন, বললেন, মিস অরণ্যাকে ডেকে দাও

-----ইয়েস স্যার

অরণ্যা এসে দাঁড়ায় দরজায় স্যার আসব?

-----এস

রাজেনবাবুর চোখ সামনের কম্পিউটারের স্ক্রীণে তখন কোন দিকেই ভ্রূক্ষেপ নেই তার গভীর চিন্তামগ্ন মাউসের সাহায্যে স্ক্রল করে করে কী সব যেন দেখছেন অরণ্যার উপস্হিতি যেন তার মনজগতেই নেই

-----স্যার অরণ্যা আর একবার ইতস্তত করে মৃদু স্বরে ডাকল

মনিটর থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন, অরণ্যা?

-----হ্যাঁ স্যার

------বোসো

অরণ্যা অবাক হল ইনি তো কাউকে বসতে বলেন না অধস্তন হলে তো কথাই নেই বিস্ময় নিয়ে অরণ্যা তবু দাঁড়িয়ে রইল আরো কিছুক্ষণ সময় কেটে যাবার পর রাজেনবাবু কম্পিউটার ছেড়ে যেন জেগে উঠলেন, ওঃ, ইয়েস অরণ্যা?

----হ্যাঁ স্যার, বলুন

----সরি সরি, তুমি জাননা কী যে হচ্ছে আমার! শোন, তোমাকে ছোট্ট একটা অভিনয় করে দিতে হবে

-----অ্যাঁ!

-----পারবে না? নিশ্চয়ই পারবে তো তোমার কাছে জলভাত

-----একটু খুলে বলুন স্যার

----- আরে তুমি দাঁড়িয়ে কেনবোস

অরণ্যা চেয়ার টেনে রাজেনবাবুর মুখোমুখি বসল

----দেখ, লোকটি নটরিয়াস মোবাইল চোর তাকে কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না দারুণ বুদ্ধিমান অতীত কোন রেকর্ডও নেই ফলে ঘোল ঘেঁটে দিয়েছে একেবারে এমত অবস্হায় সামান্য একটা ক্লুকে আঁকড়ে ধরে সাফল্যে পৌঁছনো যায় কি না, তার একটা মরিয়া চেষ্টা করতে চাইছি চুরি যাওয়া মোবাইলগুলির নম্বর ঘেটে সন্দেহজনক একটা মোবাইল চিহ্নিত করেছি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যদিও খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মত ব্যাপার, তবুও ঢিল ছুঁড়ে দেখি কী হয় অরণ্যা

-----স্যার?

------.তোমাকে এই নম্বরে একটা ফোন করতে হবে একটু অভিনয় চাই, বুঝলে কোন স্ক্রিপ্ট নেই তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার সাথে কথা বলতে হবে জানিনা আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে কি, না যদিও এই পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত তাও জানি না ঠিক আছে, পারবে তো?

----বলুন স্যার, অ্যাকচুয়ালি কী করতে হবে

-----ফাঁদ, মানে একটা ফাঁদ পাততে হবে প্রেমের ফাঁদ সন্দেহভাজন লোকটিকে ফাঁদে ফেলে অ্যারেস্ট করতে হবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এমনই ধুরন্দর এই লোকটি যে, একে কবজা করা সহজ নয় যেহেতু এর কোন অপরাধযুক্ত পূর্ব রেকর্ড নেই, নেই চেহারার ওপর সম্যক ধারনা তাই  যথেষ্ট বেগ দিচ্ছে তুমি তৈরি তো?

---হ্যাঁ স্যার

---কিছু ভেবেছ, কীভাবে শুরু করবে?

---চিন্তা করবেন না স্যার নম্বরটা দিন

---শোন, তেমন বুঝলে খেলাবে খেলিয়ে ওকে তুলতে হবে ক্কে, অল দ্য বেস্ট

অরণ্যা ডায়াল করল নম্বরটি স্টেজে অভিনয় আর এখানে প্রস্তুতিবিহীন অভিনয়ে একটু যে অস্বস্তি করছে না, তা নয় বুকের ভেতর যেন কোন হাওয়া নেই, ফাঁকা ওপারে তখন রিং হচ্ছে

----হ্যালো

----হ্যালো সুদীপ?

----হ্যাঁ সুদীপ বলছি বলুন কী বলবেন?

অরণ্যা একটু থতিয়ে গেল চকিতে সে রাজেনবাবুর দিকে তাকিয়ে নিল, স্বাভাবিক গলায় বলল, মানে? তুমি কি আমায় চিনতে পারছ না, নাকি চিনতে চাইছ না ডারলিং?

 

ফোনের ওপারে সুদীপ নিশ্চুপ কী বলবে ভেবে পেলো না মোলায়েম উচ্চারণে ডারলিং কথাটা একেবারে হৃদয়ে গেঁথে গেল অতিরিক্ত স্মার্ট হয়ে বলল, শুনুন ম্যাম, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে

----ভুল? তুমি সুদীপ নও? যাঃ, এমন ঠাট্টা করোনা প্লিজ

আমার এতটাই ভুল হবে তোমার গলা চিনতে? আশ্চর্য!

-----আমি সুদীপ বটে, তবে আপনার চেনা সুদীপ নই

অরণ্যা মনে মনে বলল, সে আর বলতে? এমন আন্দাজে ছুঁড়ে দেয়া নামটা যে মিলে যাবে তা কাকতালীয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই তবু অরণ্যা অনুযোগে বলল, হবে হয়তো গলায় বিষণ্ণ হতাশা মিশিয়ে ফের বলল, তবু তোমার সাথে কথা বলে ভাল লাগল কিছু মনে করো না, তুমি করে বললাম বলে

----না না, ঠিক আছে আমি তো কাউকে আপনি করে বলতেই পারি না

-----তুমিই তো ভাল জান, সুদীপ নাম শুনলেই কেমন হয়ে যাই আমি জানি সুদীপ আমাকে এড়িয়ে যেতে চায় ঠিক আছে যাক যে যেতে চায় তাকে ধরে রাখার কোন মানেই হয় না তবু ভাল, তোমাকে ক্ষণিকের বন্ধু হিসেবে পেলাম তোমার অনেকখানি সময় নষ্ট করে দিলাম, সরি গো ডোন্টমাইণ্ড

----নো নো, বন্ধুত্বে কোন সরি নেই নেই কোন ইফস অ্যাণ্ড বাটস মনে থাকবে?

---থাকবে রাখিবা-ইই

--- এই, অ্যাই না না প্লিজ ছাড়বে না

লাইন কেটে দেয় অরণ্যা রাজেনবাবু বুড়ো আঙুল তুলে বললেন, ওয়েলডান বাছাধন ফাঁদে পা দেবেই

বলতে না বলতেই অরণ্যার মোবাইলে রিং হতে থাকে রাজেনবাবু বললেন, কয়েকবার রিং হতে দাও

---- কে স্যার

বার কয়েক রিং ছেড়ে দিয়ে শেষে কল রিসিভ করল, হ্যাঁ বলো কী হল আবার! মন ভাল নেই, আজ আমায় ছেড়ে দাও প্লিজ

অরণ্যার প্রাথমিক জড়তা কেটে গেছে এখন পুরমাত্রায় সাবলীল আত্মবিশ্বাসী লাগছে নিজেকে প্রান্তের আর্তি ঝরে পড়ে

----না না, প্লিজ অমন বলোনা

----ঠিক আছে বল, যা বলতে চাও তাড়াতাড়ি বলবে যেকোন সময়ে বাবা বা মা চলে আসতে পারে

-----আসলে জান, আমি বড় একা

কথা শেষ করতে না দিয়ে অরণ্যা বলে ওঠে, এই রাখছি বাবা বোধ হয় এদিকেই আসছে

অরণ্যা লাইন কেটে দিল দ্রুততায় রাজেনবাবুর চোখে সপ্রশংস দৃষ্টি

       নারীর ষোলকলার এই এক কলায় সুদীপ একেবারে পুরমাত্রায় ঘায়েল আর ঘায়েল প্রেমিক বাঘের চেয়েও ভয়ঙ্কর

এর পর কয়েকমিনিটের ব্যবধানে অরণ্যার মোবাইল বেজে গেল নির্দেশমত অরণ্যা মোবাইল বেজে যেতে দিল ততক্ষণে এই নীরবতায় -প্রান্ত অধৈর্য অসহিষ্ণু আবার রিং হতেই ধরল অরণ্যা হাসকি গলায়  বলল, কী হচ্ছে, উঁ….রাখ সময় করে আমি ফোন করব রাতের দিকে ফাঁক পেলে একটু তো বোঝ প্লিজ….

অরণ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে স্বরক্ষেপণে যৌনতার আবেগ মিশিয়ে দিল ওপ্রান্ত উল্লসিত আবেগে বলল, গ্রেট

রাজেনবাবুও উত্তেজনায় বা অতিরিক্ত উৎসাহিত হয়েই হোক অরণ্যার টেবিলে রাখা প্রসারিত হাত মুঠোয় ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, ওয়েল প্লেড ক্যারি অন অরণ্যা রাজেনবাবুর হাত ছাড়িয়ে নিল সংকোচে পুরুষের সুযোগ খোঁজা স্পর্শ প্রায় সকল মেয়ের মুখস্ত হয়ে যায় সেই কম বয়স থেকে এই নিভৃত কক্ষে রাজেনবাবুরা একটু নির্দোষ স্পর্শের মধ্য দিয়ে নিজের যৌনযন্ত্রনার অবদমন করে নিতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক শালীনতার মোড়কে এটুকু মেনে নিতেই হয় কর্মরত মহিলাদের অরণ্যা মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় এই ভেবে যে, সে তবু যথেষ্ঠ সমীহ আদায় করতে পারে তার এই শিল্পী সত্তার জন্য

রাত সাড়ে দশটা সুদীপের ফোন এল চটুল গলায় চাপা স্বরে অরণ্যা বলল,হ্যাঁ সুদীপ বল

---কিছু মনে করো না তর সইল না বুঝলে তুমি এখন ফ্রি তো?

---মেয়েদের আবার ফ্রি! আমাদের ইচ্ছে অনিচ্ছের দাম কেউ দেয়? একটা গোপন শ্বাস ত্যাগ করে ফের বলল, ছাড় ওসব

---প্লিজ সোনা, অমন করে বলে আমায় হার্ট করো না

---বল, কী বলবে?

---তোমার সাথে একবার দেখা করা যায়?

ওর আকুলতা মনকে নাড়া দেয় ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে যায় ওর মিশানের কথা কিন্তু সে ক্ষণিকের জন্যই দ্রুত নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে মৃদু গলায় বলল, সে তো হতেই পারে

---ওহ, ইয়েসস

ওর উচ্ছ্বসের বন্যা সামাল দেয়া তখন রীতিমত সমস্যা হয়ে ওঠে একরাশ চুম্বনের ঝড় কানের মধ্য দিয়ে সারা হৃদয়ের ওপর সুনামির মত আছড়ে পড়ছে বেসামাল অবস্হা অরণ্যার এই এক দোষ পুরুষ মানুষের একটু নরম হয়েছ কি নাজেহাল করে দেবে

-হয়ছে হয়েছে, থামবে

ধমকে ওঠে অরণ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে বলল, এখুনি সব শেষ করে দেবে নাকি!

খুশিতে ডগমগ সুদীপ ফড় ফড় করে বলল, সরি সরি

---বাব্বা,না দেখেই এই! দেখলে ঘেন্না করবে না তো আমি তো সুন্দরী নই গো

-----কে বলেছে তুমি সুন্দরী নও! যার গলায় এত সুন্দর  ভয়েস সে কুরূপা হতেই পারে না

------তাই!

------হ্যা গো তাই একটা কথা বলি?

-------বল, নো নিড টু সিক পারমিশান

--- রাগ করবে না?

---অহেতুক রাগ করব কেন! বল

----তোমার একটা ছবি দেবে?

------ছবি?

দ্রুত নিজেকে গুছিয়ে নেয় অরণ্যা চমৎকৃত হয় নিজের  তাৎক্ষণিক জবাবে, ছবি দিয়ে কী হবে দেখা তো হচ্ছেই

----তা অবশ্য হচ্ছে ঠিক আছে চাই না কাল আসবে?

-----হু, আসব কোথায়?

-----ঠিক পাঁচটায় এস সিলভারস্ক্রীনের কাউন্টারে অপেক্ষা করব ভাল একটা ছবি চলছে গুপ্তধনের সন্ধানে দুজনে উপভোগ করব ছবি আর একে অপরের সান্নিধ্য

----বেশ তো দেখো হলের ভেতর কিন্তু নো দস্যিপনা তুমি যা একখানা মানুষ, আমি বুঝে গেছি

----না গো, আমি মোটেও তা নয় যা তুমি ভাবছ আলাপ হলেই বুঝবে

---সে তো নয় হল, তোমাকে চিনব কী করে?

---এটা কোন প্রবলেম হল ডারলিং!

---- রে বাবা বল তো, কথা না বাড়িয়ে

----শোন, ধূসর রঙের ট্রাউজার সাথে নীল ফুলস্লিভ শার্ট গুঁজে পরব পায়ে স্নিকার চোখে সানগ্লাস মেরুন কালার কী ঠিক আছে?

---কী অদ্ভুত দেখ, কী মিল আমাদের নীল রঙ যে আমার প্রিয় তুমি জানলে কী করে?

---সবই তার ইচ্ছে সোনা নইলে যে সুদীপকে চাইলে, সে এলো না এলো কিনা এই অধম

----অমন করে বলো না দীপু

----কী বললে আমাকে, দীপু!

---তুমি খুশি?

---খুব তাহলে কাল ঠিক পাঁচটায় মনে থাকবে তো

----থাকবে আর শোন, আমার জন্য গোলাপ এনো আনবে তো?

-----অবশ্যই ভেবো না দেখ, এত কথা হল অথচ তোমার নামটাই জানা হলো না কী নাম তোমার?

-----প্রিয়া, প্রিয়া বলেই ডেকো

গলার স্বরে কোন দ্বিধা বা জড়তার ছাপ নেই একটুও মানসিক প্রস্তুতি ছিলই অরণ্যা জানত প্রদীপ কোন না কোন সময়ে নাম জিজ্ঞেস করবেই তাই নামটা প্রিয়া বলবে ভেবে রাখাই ছিল

----, রিয়েলি! সিমপ্লি অ্যামেজিং

----কেন, অ্যামেজিং কেন? হতে পারে না?

---আরে না না, প্রিয়া বলে ডাকতে বড় ইজি বোধ হবে, তাই আর কী

জলতরঙ্গের মত অরণ্যা হেসে উঠল, বলল, রাখছি গুডনাইট

সুদীপ কবজি উলটিয়ে ঘড়ি দেখে নিল প্রিয়া কি আসবে না?ওর বাবা ভীষণ রাগী এমনটাই বলেছিল বাবার চোখ এড়িয়ে কি বেরতে পারেনি শঙ্কায় মনটা দুলে উঠল বাবাগুলো কেন যে এমন করে, বুঝে পায় না সুদীপ বড় হলে প্রতিটি মানুষের কম বেশি স্পেস দরকার সেটা না পেলে একজন মানুষ বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারে এটা কি ওনারা বোঝেন না! বিরক্তিতে সুদীপ কাঁধ নাচাল সিনেমা হলের আঁধারিতে প্রিয়াকে পেতে পুরো রোয়ের টিকিটি কিনে নিয়েছে শুধু ওরা দুজন ওই একটা রোতেই থাকবে শিহরিত সুদীপ প্রিয়া শুনলে হয় তো হাসবে বা বকুনি দেবে এমন ধরনের ছেলেমানুষী করার জন্য সুদীপ জানে কী ভাবে মেয়েদের মন পেতে হয় আপন মনে হাসল সুদীপ আর একবার ঘড়ি দেখে নিল আর বেশিক্ষণ নয় এই এল বলে হাতে ধরা মোবাইলটা ঘামছে একটা ফোন করতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, কত দূর অদম্য ইচ্ছে টাকে দমিত করে সেএমনিতেই কাল রাতে অনেকটা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলেছে সে আজ তাই নিজেকে ছোট্ট ধমক দিয়ে নিবৃত্ত করল কিন্তু আসছে না কেন? এতটা কেয়ারলেস তো কাল মনে হয়নি এমন তো নয় যে ওর আগ্রহ ছিল না, বা সে জোর করেছে বলে ঢেঁকি গিলেছে, তবে! নির্নিমেষে অনতি দূরের গেটের দিকে তাকিয়ে রইল কোন একাকী মেয়েকে দেখলেই ওর মনে হচ্ছে ওই বুঝি এল কিন্তু পরক্ষণেই ভুল ভাঙছে বেশ অস্বস্তি করছে এবার পাঁচটা তো বেজে গেছে ইস যদি রাতে জেনে নিত কী পরে আসবে কী ভাবে চিনবে ওকে এখন? নাঃ সুদীপ তুমি বড্ড বোকা আবেগে এতটা ডুবে গেলে কী করে এমন তো নয় এর আগে তোমার জীবনে প্রেম আসেনি না হয় দাগা খেয়েছ তাই বলে এমন হামলে পড়লে কেন! আসলে প্রিয়ারো সেই একি কাহানি আর তার জন্যই বোধ হয় এই বৈকল্য নিজের ভেতর এতটাই বুঁদ ছিল যে একজন তার কাছে দাঁড়িয়ে গেছে খেয়ালই করল না

রাজেনবাবুর জিপটা সিলভার স্ক্রীনের গেটের বাইরে একটু এগিয়ে  দাঁড় করালো ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে এলেন রাজেনবাবু আর শঙ্কর রাজেনবাবু শঙ্করকে বললেন, তুমি এক কাজ কর শঙ্কর

-----বলুন স্যার

-------তুমি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে যাও বি এলার্ট তীক্ষ্ণ নজর রাখ, যেমন বলেছি লোকটা অতিমাত্রায় ধুরন্দর কিছু আঁচ করলে কিন্তু বানচাল হয়ে যাবে সব গো

-----ঠিক আছে স্যার বাছাধনের আজ নিস্তার নেই

-----পজিশানে থাক সিনেমা হলে ভীড় আছে পাবলিককে জানতে দেয়া যাবেনা কিছু, অথচ কাজটা করতে হবে নাও গো

মোবাইল বেজে উঠল

---বিকাশ?

----স্যার

---অল আর ওকে?

-----স্যার

-----অ্যাকশান


বিকাশ হন্তদন্ত হয়ে সুদীপের কাছে দাঁড়িয়ে গেল দৌড়ে আসার জন্য যেন সে হাঁপাচ্ছে, ভাবটা ফুটিয়ে তুলে বলল, আপনি সুদীপবাবু?

থতমত খেয়ে সুদীপ বাস্তবে ফিরল ধাতস্ত হয়ে বলল, হ্যাঁ, কেন? কী হয়েছে কিছু বলবেন? কে আপনি?

বিকাশ দম ফেলে বলল, আপনি প্রিয়ার বন্ধু তো?

----হ্যাঁ

---কী হয়েছে ওর?

---- আসতে পারবে না, ওর একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে একটা মটর সাইকেল ওকে ধাক্কা মেরেছে স্টেশানরোডে বিবেকানন্দ স্ট্যাচুর ওখানে কয়েকজন পথচারী ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে চাইলে বলল, না না সুদীপ ওর জন্য নাকি ওয়েট করছে এখানে হাতে পায়ে কোমরে লেগেছে খুব বাঁ হাতটা বোধ হয় ভেঙেছে আপনি আসুন দাদা আমার গাড়ি আছে গেটের বাইরে

পড়িমরি করে সুদীপ ছুটল ওর মনে তখন থেকে তাই কু গাইছিল গাড়িতে উঠে বসল সুদীপ ওর দু পাশে বসল বিকাশ আর শঙ্কর সামনে ড্রাইভারের পাশে রাজেনবাবু বিকাশ ড্রাইভারকে তাড়া লাগাল, কুয়িক, গাড়ি ছেড়ে দিন প্লিজ

 

অরণ্যা আর একবার চোখ তুলে চাইল সারা রাত জেরার ধকলে বেচারি কাহিল ধুরন্ধর সুদীপ জেরায় কোন সহযোগিতা করেনি, বরং বিপথে চালিত করার চেষ্টা করেছে বার বার বলেছে, আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে আমি নর্দোষ এমন কি কয়েকবার অনুযোগও করেছে প্রিয়া এসে তাকে দেখতে না পেয়ে কী ভাববে বলুন তো! রং ইনফরমেশানের ফলে যে ঘটনা ঘটালেন আপনারা তা ক্ষমার অযোগ্য দুটি মানুষের মনের কাছে এটা কত বেদনা দায়ক তা আপনাদের ধারনা আছে?

কোন কিছুতেই সুদীপকে ভাঙা গেলনা পুলিশের খাতিরদারিতেও না শেষে রাজেনবাবুর  মাস্টার স্ট্রোক যাকে বলে ভেলকি

-----ঠিক আছে ভাই, আপনি যখন কিছু বলবেন না তখন প্রিয়াকে আনার ব্যবস্হা করি

সুদীপের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পরক্ষণেই আর্তনাদ করে ওঠে সে

-----প্লিজ স্যার ওকে ডাকবেন না

-----ডাকব না, কে, নাও টেল মি আমিও চাইনা ভালবাসার মানুষের কাছে আপনি বেইজ্জতি হন

সেই রাতে সুদীপের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সবকটাকে অ্যারেস্ট করে বহরমপুরের পুলিশ আবেগ কখন কীভাবে যে মানুষকে পরিচালিত করে কেউ জানে না একটি মানুষকে দানব থেকে মানব, মানব থেকে দানব করে দিত পারে আবেগ সুদীপের মত একজন শিক্ষিত স্মার্ট মোবাইল চোরও যে এমন হৃদয়ের টানে এত সহজেই বশ্যতা স্বীকার করে নেবে ভাবতেই পারেনি অরণ্যা ভালবাসার নাটকে যে খেলাটা সে খেলল তাতে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে প্রতারক ভালবাসা শব্দটার কাছে দ্বিচারিতা করে অরণ্যা ভেতরে ভেতরে লজ্জিত হতে থাকল

ranajitkumarsarkar@yahoo.com
মুর্শিদাবাদ




No comments:

Post a Comment