1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

পরিযায়ী

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

পরিযায়ী  
ডাঃ রিনি পণ্ডা

স্যার, স্যার চিনতে পারছেন?

ভালো করে তো মুখটা দেখতেই পাচ্ছি না।

চিনব কী করে? নামটা যেন কী?

আপনি এই মোদীজির ঘোষিত  লকডাউনের নাইট কার্ফুর  মধ্যে সন্ধ্যেবেলা একা,

কেন বেরিয়েছেন?

না আমি আজ বহুদিন পর একটু বেরোলাম সান্ধ্যকালীন ভ্রমণে একটু পায়চারি করতে।

তা তোমার নামটা বললে না?

এখনও চিনলেন না স্যার!

আমি নাজবুল, নাজবুল শেখ। আপনার ছাত্র৷

এখনও মনে পড়ল না তো? তবে বলি---

তখন আপনি বিভাগীয় প্রধান , 

আমি বি.এস.সি ফাইনাল ইয়ারে, খুব কড়া নোটিশ দিলেন --- নির্দিষ্ট উপস্থিতি না থাকলে

ইণ্টারনালে নম্বর কাটা যাবে ৷

আমি ক্লাস শুরুর দু মাস পরে সেদিনই

প্রথম ক্লাসে এসেছি৷ রোল কল করতে গিয়ে

ধরে ফেললেন , বকলেন আমাকে সাধ্যমতো, 

বললেন, কেন এই ঔদ্ধত্য ? নোটিশ করার পরও?

আমি বললাম কাজ থাকে অনেক স্যার ৷ বললেন--- পড়াশুনা ছাড়া আর কী কাজ থাকতে পারে,

এই বয়সে ! আমি সেদিন  

খুব উদ্ধত আচরণ করেছিলাম, বলেছিলাম

"আপনাদের মতো ধনীরা কী করে বুঝবেন,

মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা ছেলে মেয়েরা 

কীভাবে পড়াশুনা চালাচ্ছে ? 

আপনি আরো রেগে গিয়ে বললেন---

তা তোমার রাজকার্যটা কী, শুনি ?

কাজ অন্য সময় করবে , ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নয় ৷

বললাম আমি এখানে ছিলাম না ৷ 

কাজের জন্য কিছুদিন কেরলে ছিলাম ৷ 

আপনি বারবার জানতে চাইলেন 

আমার কাজটা ঠিক কি? 

হঠাৎ করে জসীম বলে দিয়েছিল---

স্যার ও রাজমিস্ত্রির কাজ করে ৷

শুনে আপনি চুপ হয়ে গেলেন,

চারিদিকে তখন অসহ্য রকমের নিঃস্তব্ধতা ৷

কিছুক্ষণ দু হাতে চোখ ঢেকে থাকলেন আপনি৷ তারপর 

চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন ---

কত কষ্ট করে এতদূর  এগিয়েছ,

বি.এস.সিটা শেষ ক'রো, 

যতদিন না ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছে যেয়ো না৷ 

বাড়িতে মা বাবা ভাই বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে

আমাকে আবার যেতে হয়েছিল স্যার, 

আপনার কথাটা শুনতে পারলে আজ আমার

এ অবস্থা হত না ৷ 

কেন কী হয়েছে তোমার ?

আমিও ফিরছিলাম স্যার  শ্রান্ত ক্লান্ত---

নতুন পরিচয় ছাত্র  থেকে 'পরিযায়ী শ্রমিক' ,

বেইমানি করল গভীর ঘুম, প্রচণ্ড ক্লান্তিতে রেল লাইনই তখন শয্যা ,  চোখ বুঝতেই দেখতে পেলুম কোনো এক অজানা আতঙ্কে  মায়ের মুখের সেই অনাবিল  হাসিটা যেন কখন তার পরিযায়ী  ছেলের চিন্তায় মলিন হয়ে উঠেছে,

আমার পাঠানো টাকায়  বাড়ীর কাচা দেওয়ালটা পাকা হয়েছে, কর্কট রোগী বাবার কেমোথেরাপির সুযোগ হয়েছে,  বোনের মুখে পড়তে পারায় হাসি ফুটেছে,উঠোনে দৌড়ে বেড়ানো নগ্ন পাছার ভাইয়ের নতুন প্যান্টটাকে হাতে তুলে নিয়ে অদ্ভুত এক পরিতৃপ্তির হাসিতে... আমি পিছিয়ে পড়িনি, দেশের একশ্রেণীর মানুষের অধিকারের অধিকাংশ সম্পদের অসম বণ্টনের লড়াইয়ে। তারপরেই শুনি সেই ময়না মাঝীর পরপারের গান " কই গেলি তুই ....."

গাড়ি ছুটল তার নিজের পথেই, 

ঝমাঝম ঝমাঝম...

চিৎকার করার আগেই সবাই দেখলাম ---

অন্য এক দুনিয়ায় আমরা নিশ্চিন্তে নিরাপদে---

কিন্তু আপনার সেই পরম  স্নেহকে উপেক্ষা করে, বিজ্ঞানের কারিগর হবার স্বপ্নকে গলাটিপে মেরে ফেলে নতুন কোনো এক তকমাপ্রাপ্তির অঙ্গুলিহেলনে আমার ওই

বি.এস.সি পাশটা আর করা হল না , 

তাই আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি স্যার।

আপনার এই নতুন তকমাপ্রাপ্ত পরিযায়ী  শ্রমিক ছাত্রটিকে ,

পারলে ক্ষমা করে দেবেন৷

নাজবুল , নাজবুল তাহলে তুমি এখানে কী করে?

কোথায় তুমি নাজবুল? নাজবুল নাজবুল ---

আচমকা ঘুম ভেঙে দেখি বউ সামনে দাঁড়িয়ে,

তুমি কাকে ডাকছিলে নাজবুল  বলে? 

তুমি এত ঘামছ কেন? কি হয়েছে তোমার......

drrinipanda@gmail.com
কলকাতা

No comments:

Post a Comment