1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

একটা অন্ধকার রাস্তার মাঝখানে

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

একটা অন্ধকার রাস্তার মাঝখানে
শঙ্খদীপ বোস

শীতের রাত। ঘড়ির কাঁটা তখন প্রায় এগারোটা ছুঁয়েছে। শুনশান হাইওয়ের ওপর দিয়ে একদলা অন্ধকার আর কুয়াশাকে ভাঙতে ভাঙতে গাড়ি ছোটাচ্ছি। পাশে বসে এতক্ষণ উশখুশ করছিল শ্রীমা। এবার মুখ খুলল

    "সত্যি অলোক, তোমার জন্য দেরি হয়েই গেল। একে তো এই ঠান্ডার সময় চারপাশ কেমন থমথমে হয়ে আছে, তার ওপর জায়গাটা ভালো নয়—সে তো জানোই তুমি।"

    শ্রীমা ঠিকই বলেছে। এ-জায়গাটার তেমন সুনাম নেই। অথচ কুসুমপুর আর কলকাতার মাঝখানে এই হাইওয়েটাই একমাত্র কানেক্টর

    কুসুমপুরে যেতে হয়েছিল আমার বন্ধু সুকান্তর বোনের বিয়েতে। ঠিক ছিল, রাত বেশি বাড়ার আগেই ফেরার পথ ধরব। কিন্তু গোলমাল হয়ে গেল আমার জন্যই। বিয়েবাড়ির হই-হট্টগোল আর দাবার আসরের মধ্যে পড়ে ভুলেই বসলাম সে-কথা। শ্রীমা দু-একবার বললেও তখন অতটা গা করিনি

    হাইওয়েটা তেমন সুবিধের নয়, একথা সত্যি। জায়গাটা সমাজবিরোধী কান্ডকারখানার জন্যই কুখ্যাত। খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। তাই অন্ধকার নামার সময় থেকেই এ-রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা কমতে শুরু করে। আর যাদের আনাগোনা বাড়ে, তারা মানুষ নয়—মানুষরূপী অমানুষের দল

    কেন জানিনা, মনটা ছটফট করছিল ভীষণ। খবরের কাগজে দেখতে পাওয়া নৃশংস সব ঘটনার বর্ণনাগুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করে উঠছিল একটার পর একটা

    শ্রীমাকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বললাম। তারপর স্টিয়ারিংটা শক্ত হাতে ধরে স্পিড চড়িয়ে দিলাম

    মিনিট তিনেক পরেই মেয়েটাকে চোখে পড়ল। রাস্তার মাঝখান বরাবর হেঁটে যাচ্ছে। গাড়ির হেডলাইটের আলো অন্ধকার ভেদ করে সোজা গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে ওর পিঠে। হর্ন বাজাতেও সরলো না মেয়েটা, দাঁড়িয়ে পড়ল আচমকা। তাই আমাকেও আচমকাই ব্রেক কষতে হল। আরেকটু হলেই…

    শ্রীমা বলে উঠল, "পাগল নাকি!"

    আমারও সেটাই মনে হল। এই অসময়ে এরকম একটা জায়গায় স্বাভাবিকভাবে কোনো মেয়ের থাকার কথা তো নয়। তাও আবার একা

    মেয়েটা ফিরে দাঁড়াল। তারপর এগিয়ে আসল। গাড়ির আলো পড়েছে ওর মুখে। তাতেই একঝলক দেখে নিয়েছি মুখটা। চোখধাঁধানো রূপ। শ্রীমাও হাঁ হয়ে দেখছে মেয়েটাকে

    এসে গাড়ির জানলায় ঝুঁকে পড়ল মেয়েটা। "আমাকে একটু লিফট্ দিতে পারেন? বেশিক্ষণের জন্য নয়, সামনেই নেমে যাব।"

    মোলায়েম সুরের আবদারটা শুনে শ্রীমার দিকে চাইলাম। ও আপত্তি করল না। মেয়েটা পিছনের সিটে উঠে বসল। আবার গাড়িতে স্টার্ট দিলাম

    তারপর কয়েকটা মুহূর্ত নিঃশব্দে কেটে গেল। এরমধ্যে রেয়ারভিউ মিররে বারকয়েক লক্ষ করেছি মেয়েটাকে। একমনে রাস্তার দু-পাশের অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছে। ওর কী শীতও করছে না। ডিসেম্বরের ঠান্ডাতে ওর পরনের হালকা গোলাপি রঙের ফিনফিনে শাড়িটা যথেষ্ট মনে হচ্ছিল না

    শ্রীমাও এখন চুপচাপ। গাড়ির ভেতরের এই নিস্তব্ধতা আমার ভালো লাগছিল না। একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। এরকম সময়ে মেয়েটাই প্রথম কথা বলল

    "আপনাদের সাজগোজ দেখে মনে হচ্ছে কোনো অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাই কী?"

    সংক্ষেপে বললাম, "হুম। ঠিকই ধরেছেন।"

    মেয়েটা বলল, "এপথ দিয়ে এত রাতে ফিরছেন, জায়গাটা কিন্তু ভালো নয়।"

    ওর কথা শুনে অবাক হলাম। এখানে অসামাজিক কাজকর্মের কথা ওর তাহলে অজানা নয় নিশ্চয়ই। তা সত্ত্বেও একা বেরিয়েছে? মেয়েটাকে সে-কথাই জিজ্ঞেস করতে যাব, তার আগে শ্রীমাই প্রশ্নটা করল

    "জায়গাটা ভাল নয় যখন জানেন, তাহলে আপনিই বা এই সময়ে কোথায় যাচ্ছেন?"

    মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল মেয়েটার মুখে। হেসে বলল, "আমি এই অঞ্চলেই থাকি। এ-জায়গা ছেড়ে আর যাব কোথায়?"

    "তাহলেও এসময়ে বাড়ির বাইরে একা না বেরোনোটাই ভালো নয় কী?"

    "বাড়ি?" মেয়েটা কেমন উদাস চোখে বাইরে তাকাল, "বাড়িতেই তো সারাটা দিন কাটে আমার। আর রাতের কথা বলছেন? এখনও না বেরোলে চলবে কীভাবে? অন্ধকারেই তো কত কাজ আমার।"

    মেয়েটার শেষের কথাগুলো অনেকটা স্বগতোক্তির মতো শোনাল। অদ্ভুত মেয়ে তো! কী কাজ থাকে এখন ওর

    পরক্ষণেই একটা সম্ভাবনার কথা মনে ধাক্কা দিল। তবে কী কলগার্ল? শ্রীমা একবার আড়চোখে চাইল আমার দিকে। ওর মনেও বোধহয় একই সন্দেহ উঁকি দিয়েছে। ও সামনের মিররে চোখ রেখে কটমট করে চেয়ে রইল একটুক্ষণ মেয়েটার মুখের দিকে। তারপর ঠান্ডা গলায় বলল, "কাজটা কী, সেটা জানতে পারি?"

    মেয়েটা চুপ। যেন শুনতেই পায়নি। বুঝলাম, বলার ইচ্ছে নেই। আমার সন্দেহ দৃঢ় হল

    মেয়েটা কলগার্ল হলেও ওর সাজপোশাক বা মেক-আপে কোনো উগ্রতা চোখে পড়ছে না। দেখলে আর-পাঁচজন সাধারণ মেয়ে বলেই মনে হয়। তবে আজকাল এরকমটা প্রায়সই দেখা যায়। আসলে এ নিছকই ছদ্মবেশ—ভদ্রসমাজের ভিড়ে মিশে থাকার ছদ্মবেশ

    "আপনার ভয় করে নাএরকম সময়ে একা বেরোতে?" শ্রীমা আবার প্রশ্ন করেছে

    "আগে পেতাম। কিন্তু একটা ঘটনার পর থেকে ভয়টা চলে গেছে।"

    "কীরকম?"

    এরপর মেয়েটা শুরু করল ওর কাহিনি। শুনতে শুনতে যতবার ওর দিকে তাকিয়েছি, কেমন এক মায়াবী দেখাচ্ছিল ওকে। 

    "মাস খানেক আগের কথা। সেদিন কলকাতা গিয়েছিলাম দু-খানা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। বাড়িতে আমার অসুস্থ মাকে রেখেই যেতে হয়েছিল। এছাড়া উপায় ছিল না। সন্ধ্যের মধ্যেই ফিরে আসব ভেবেছিলাম। কিন্তু হল না। ফেরার জন্য যখন ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম, তখনই রাত ন'টা পেরিয়ে গেছে

    "অন্ধকার নেমে গেলে এই রাস্তায় কোনো গাড়িই আর আসতে চায় না। ড্রাইভারকে তাই বেশি টাকার কথা বলে-কয়ে রাজি করাতে হয়েছিল

    "বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছিল। কতক্ষণে ঘরে ফিরব সেটাই ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ্যে। বিপদের আশঙ্কা করিনি তখনও। কিন্তু বিপদ ছিল, রাস্তার মাঝখানে ঘাপটি মেরে বসেছিল আমার জন্য

    "দু-খানা মোটরবাইক যখন ট্যাক্সিটার সামনে রাস্তা আটকে দাঁড়াল তখনই বিপদ টের পেলাম। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত্ করে উঠেছিল সঙ্গে সঙ্গে। গন্ডগোল বুঝে ড্রাইভার ট্যাক্সির মুখ উল্টোদিকে ফেরাতে যাচ্ছিল, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে তখন। দু'জন লোক ড্রাইভারের কলার খামচে ধরে টেনে নামিয়েছে রাস্তায়

    "শুরু হল ধ্বস্তাধস্তি। ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। পাথরের মতো স্থির হয়ে বসে রইলাম ট্যাক্সিতে। হঠাৎই ধ্বস্তাধস্তি বন্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভার লোকটা একটা অস্ফুট শব্দ করে মুখ থুবড়ে পড়ল রাস্তায়। বাইরে থেকে একজনের ভারি গলা শুনলাম, 'নে দ্যাখ্, পকেটে কি কি আছে চেক কর। মালকড়ি সব বের করে নে যা আছে। ঘড়িটা আমার কাছে রাখছি।'

    "ওরকম অবস্থায় কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ খেয়াল হল ট্যাক্সির জানলায় তিন-চারটে মুখ উঁকি দিচ্ছে। ওরা ক্ষুধার্ত হায়েনার মত দৃষ্টি দিয়ে আমাকে জরিপ করছে। একজনের চোখে চোখ পড়তেই সে-লোকটা জিভ বের করে নিজের শুকনো ঠোঁটটা চেটে নিল একবার। আমার বমিতে গা গুলিয়ে উঠল

    "ট্যাক্সির দরজা খুলে আমাকে নামতে ইশারা করল লোকগুলো। কাঁপতে কাঁপতে নেমে দাঁড়ালাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারের নিথর দেহটা তখন আমার সামনেই পড়ে। বেঁচে আছে কী মরে গেছে জানিনা

    " লোকগুলো আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে হাসাহাসি করছিল। মাঝেমধ্যে দু-একটা নোংরা মন্তব্যও ছুঁড়ে দিচ্ছিল। ওরা ওদের নিজস্ব ঢঙে অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করে আমার শরীরের তারিফ করছিল। কোনো মেয়েই সেরকম তারিফ শুনতে অভ্যস্ত নয়। হঠাৎই একজন পেছন থেকে আমার শাড়িটা টেনে ধরল। আমি কঁকিয়ে উঠলাম। দু-হাত জোড় করে কাকুতি-মিনতি করতে লাগলাম ওদের কাছে। তাই দেখে ওরা আরও জোরে হেসে উঠল। ওদের তুমুল হাসির শব্দে চাপা পড়ে গেল আমার কান্না

    "বেশ বুঝতে পারলাম, এভাবে এদের হাত থেকে রেহাই মিলবে না। আমাকেই একটা কিছু করতে হবে। তখনই রাস্তার পাশের জঙ্গলটার দিকে চোখ পড়ল

    " যে লোকটা শাড়ি টেনে ধরেছিল তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলাম। আমার পাল্টা আক্রমণে লোকগুলো ভড়কে গিয়ে থতমত খেয়ে গেল। আর সেই সুযোগটাই নিলাম। প্রাণপণে দৌড় দিলাম জঙ্গলের ভেতর

    "ছুটতে ছুটতে জঙ্গলের ভেতর অনেকখানি ঢুকে পড়লাম। একটা পুরনো ভাঙাচোরা মন্দিরের সামনে এসে আমার শরীর হাল ছেড়ে দিল। পেছনে শুকনো পাতা মাড়িয়ে লোকগুলোর ছুটে আসার শব্দ কানে আসছিল। ছোটা তখন আর অসম্ভব। বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটাচ্ছে যেন কেউ। আর কোনো উপায় না দেখে ঢুকে পড়লাম মন্দিরে। একটা ভেঙে পড়া থামের আড়ালে দম বন্ধ করে বসলাম

    "আমি যে মন্দিরে লুকিয়েছি সেটা বুঝতে পারল লোকগুলো। ভেতরে ঢুকে খোঁজাখুঁজি শুরু করল ওরা। আমি আড়াল থেকে ওদেরকে লক্ষ করে চললাম। সবশুদ্ধ ওরা পাঁচজন, আর আমি একা একটা মেয়ে। ভাবতেই গুমরে কান্না পাচ্ছিল, দমে যাচ্ছিল মনটা

    "হঠাৎ কাছেই পাথরের নড়াচড়ার শব্দে সজাগ হয়ে উঠলাম। লোকগুলো আলাদা হয়ে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে শিকারী কুকুরের মতো। তাদেরই একজন আমার খুব কাছে এসে পড়েছিল। যদিও অন্ধকারে তখনও দেখতে পায়নি আমাকে। আমার দিকে পেছন ফিরে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল লোকটা। পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ভাঙা ইঁট তুলে নিলাম সাবধানে। তারপর গায়ের সমস্ত জোর একত্র করে ইঁটটা লোকটার মাথায় বসিয়ে দিলাম। একটা চিতকার করে উঠেই লোকটা ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল

    "সঙ্গীর চিতকার শুনে বাকিরা ছুটে এল সেখানে। ততক্ষণে অন্য আরেকটা পাথরের আড়ালে লুকিয়েছি আমি। কয়েক মুহূর্ত নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে রইলাম। তারপরেই একটা শক্ত হাতের স্পর্শ পেলাম। আমার নাগাল পেয়ে গেছে ওরা। টানতে টানতে আমাকে বের করে আনল একটা লোক। আমাকে আবার হাতের মুঠোয় পেয়ে লোকগুলো হিংস্র হয়ে উঠল।"

    এই পর্যন্ত বলে থেমে গেল মেয়েটা। ততক্ষণে আমাকেও গাড়ি থামাতে হয়েছে। স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি, আমার গাড়ির থেকে বিশহাতের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রয়েছে কতকগুলো ছায়ামূর্তি

    স্টিয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে নিলাম। গলার কাছটা কেমন শুকনো ঠেকল। আমার বাঁ-হাতের কব্জিটা শক্ত করে খামচে ধরেছে শ্রীমা। ওর মুখে আতঙ্কের ছাপ

    বিপদ তাহলে এড়ানো গেল না শেষ পর্যন্ত

    সামনের লোকগুলো কাছে এগিয়ে আসছে ক্রমশ। হাতে বেশি সময় নেই। বিদ্যুত বেগে একটা কথাই তখন মাথায় এল। লোকগুলোর ওপর দিয়েই ফুলস্পিডে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া যাক। তারপর যা হবে দেখে যাবে পরে

    এই ভেবে নিয়ে আমার হাত রাখলাম স্টিয়ারিংয়ে। গাড়িটা স্টার্ট করতে যাব আর ঠিক সেই সময় খেয়াল করলাম, পেছনের সিটে মেয়েটা নেই!

    আমার জানলার পাশে এসে কথা বলল মেয়েটা, "আমায় এই অবধিই আসতে হতো। পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।"

    "কিন্তু… এখানে… এই অবস্থায় আপনি—!" আমার গলা কেঁপে গেল

    "আমার অসুবিধে হবে না," শান্তস্বরে বলল মেয়েটা, "তখন ওই যে বললাম—এখন আর ভয়টা নেই। আপনারা আসুন।"

    "আর ওই কাহিনিটা?" নিজের অজান্তেই আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ল

    "আবার কখনও দেখা হলে, সেদিন বাকিটা শুনে নেবেন।" বলেই সামনের দিকে এগিয়ে গেল মেয়েটা। লোকগুলোর দিকে। আমি আর শ্রীমা হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম

    যে আশ্চর্য ব্যাপারটা তখনই নজরে পড়ল, সেটা বিশ্বাস করতে তখন বেশ কষ্ট হয়েছিল। মেয়েটার পা দুটো মাটিতে ঠিক পড়ছে না। একটা ছেঁড়া পালকের মতো ভাসতে ভাসতে যেন লোকগুলোর দিকে চলেছে ও

    সামনের ছ'জন লোকই যে নেশায় বুঁদ হয়ে আছে সেটা ওদের এলোমেলো পা ফেলার ঢঙই বলে দিচ্ছিল। মেয়েটাকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখে ওরা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমার মতো ওরাও কী মেয়েটার ওইরকম হাঁটার ধরনটা লক্ষ করেছে? মনে হয় করেনি, সেটা লক্ষ করার মতো অবস্থায় ওরা নেই

    মেয়েটা রাস্তা ছেড়ে এবার জঙ্গলের দিকে গেল। আমার গাড়িটাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ওই ছ'জন লোকও এগোলো সেদিকে

    শ্রীমা আর আমি দু'জনেই এতক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসেছিলাম। ওরা সকলে চোখের আড়াল হয়ে যেতেই আমার সম্বিত ফিরল। আর দেরি না করে প্রবলবেগে গাড়ি ছুটিয়ে দিলাম। শ্রীমা তখনও বাকরুদ্ধ হয়ে বসে

    এর ঠিক দু-দিন পরের কাগজে খবরটা দেখতে পেলাম। কুসুমপুর আর কলকাতার মাঝের হাইওয়ের ধারের জঙ্গল থেকে ছ-ছ'টা লাশ উদ্ধার হয়েছে। পোস্টমর্টেমে  উল্লেখ রয়েছে ছ'জনেরই মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু এরকমটা কীভাবে সম্ভব হল সেটাই আশ্চর্য। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে

    ব্যাপারটা বুঝতে আমার এক ফোঁটাও অসুবিধে হল না। সেদিন রাতে আমি ভুল কিছু দেখিনি। মেয়েটার পা মাটিতে সত্যিই পড়ছিল না। আসলে অশরীরীরা এমন অনেক কিছু পারে যা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। সেই মেয়েটাও পেরেছে

    কে বলেছে কুসুমপুরের হাইওয়ের রাস্তাটা বিপজ্জনক? ওই মেয়েটা ওখানে যতদিন থাকবে, ততদিন সবাই নিরাপদ। যেমন আমি আর শ্রীমা ছিলাম

    ওর কাহিনির বাকি অংশটা সেদিন শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভাবি, ভালোই হয়েছে শেষটুকু শুনতে হয়নি, সহ্য করতে পারতাম না

sankhadeepbose691997@gmail.com 

কলকাতা

No comments:

Post a Comment