1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, March 31, 2021

কাছের মানুষ

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

কাছের মানুষ

রঞ্জন চক্রবর্ত্তী

আমার চাকরিটা চলে গেছে, সকালে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার পর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল রতনতারপর সশব্দে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখে তৃপ্তির আওয়াজ করল, আঃ কমলাকে খবরটা দেওয়ার পর সে অনেকটাই হাল্কা বোধ করল

গত দুদিন ধরেই কমলা জানতে চাইছিল রতন কবে কোলকাতায় ফিরবেছুটিটা যেন বড় বেশী লম্বা ঠেকছিল তার কাছে তা রতন এসেওছে অনেকদিন হল বাড়ি ঢুকেই জানিয়েছিল এবার বেশ কটা দিন থেকে যাবে শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিল কমলাসংসারের হাজারটা ঝক্কিঝামেলা বলতে গেলে তাকে একাই ঠেলতে হয় কাজের জন্য সারাটা বছরই প্রায় বাইরে থাকে রতন, মাঝে মাঝে বাড়ি আসেযে কোম্পানীতে সে চাকরী করে সেখানে নাকি ছুটির ব্যাপারে খুব কড়াকড়িসেই মানুষটা ষখন তিনটে সপ্তাহ বাড়িতে কাটিয়েও ফেরার নাম করছিল না তখনই একটা সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল তার মনে বারকয়েক সে তুলেওছিল প্রসঙ্গটা, উত্তরে রতন যা বলেছিল সেটা তার মোটেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি

 রতন নিজেও যে সেটা বোঝেনি তা নয় কাল রাত থেকেই ভাবছিল এভাবে আর বেশীদিন খবরটা চেপে রাখা যাবে নাযা সত্যি তা একদিন প্রকাশ পাবেই, লুকিয়ে রাখার চেষ্টা বৃথা তার চেয়ে বরং কমলাকে কথাটা বলে দেওয়াই ভালো এবং সাত-পাঁচ ভেবে সকাল সকালই বলে ফেলল কথাটা

সে কি গো, বলছ কি!” অবাক হয়ে বলল কমলাসে যেন কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। আকাশ ভেঙে পড়ল তার মাথায়,তাহলে সংসারটা চলবে কি করে? আমাদের দুবেলা দুমুঠোই বা জুটবে কি করে?”

আমি তো আর চিরকাল ঘরে বেকার বসে থাকব না। কিছু একটা কাজ ঠিক জুটে যাবেই,” রতনের কথা শুনে মনেই হল না যে বর্তমানে সে কর্মচ্যুত

রতনের গলায় যতই আশ্বাসের সুর থাকুক না কেন কমলা কিন্তু একটুও আশ্বস্ত হল না বাজারের অবস্থা তার খুব ভালো করেই জানা আছে সংসারের খরচ দিনকে দিন বাড়ছে বই কমছে না এদিকে ভরসা বলতে শুধু স্বামীর রোজগারটুকু এই পরিস্থিতিতে চাকরি না থাকলে চলবে কি করে! জমানো টাকাপয়সা যেটুকু আছে দেখতে দেখতে নিঃশেষ হয়ে যাবে

একবুক আশঙ্কা নিয়ে জিজ্ঞাসা করল কমলা, এখন কি করবে ভাবছ?”

দেখা যাক আমার ওপর ভরসা রাখো, আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠল রতনের কথায়কোম্পানী তো আর জগতে একটা নেইকাজ জানা লোকের চাহিদা সবসময় আছে

-----------------------

কয়েকটা দিন বাড়িতে শুয়ে-বসে কাটাল রতন জমানো টাকাগুলোযখন ধীরে ধীরে শেষ হয়ে এল তখন তার টনক নড়লএবার সে নড়েচড়ে বসে কাজের সন্ধান করতে শুরু করল রতনের একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল তার মত একজন কাজ জানা লোকের চাকরির অভাব হবে না কিন্তু কাজের বাজারে নেমে এই ধারণাটাই প্রথম ধাক্কা খেল বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও বিশেষ সুবিধা হল না

ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিল কমলা আজকের বাজারে চাকরি-বাকরি না থাকলে সংসারের যে কি হাল হয় তা সে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলমনে পড়ল রতনের সঙ্গে যখন বিয়ের কথাবার্তা চলছিল তখন চাকরি দেখেই বাবা রাজি হয়েছিল নাহলে রতনের ঘরবাড়ির তখন যা হাল ছিল সেটা মেয়ের বাবা-মাকে নিরুৎসাহ করার পক্ষে যথেষ্ট

বিয়ের পর শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছিল কমলা টাকা জমিয়ে জরাজীর্ণ বাড়িটা সারাচ্ছিল আস্তে আস্তেযা যেটুকু হয়েছে এই পরিস্থিতিতে তার থেকে বেশী কিছু করা আর সম্ভব নয় এখন দুবেলা অন্নসংস্থান করাই সবথেকে বড় চ্যালেজ্ঞ এরই নাম জীবনসংগ্রাম

বেশ কয়েকটা দিন কাজের খোঁজে উদয়াস্ত ঘোরাঘুরি করে শূণ্য হাতে ফেরার পর একদিন রাতে বাড়ি ফিরে রতন স্ত্রীকে বলল,চাকরি জুটবে কিনা বুঝতে পারছি নাবসে না থেকে ভাবছি ব্যবসা করব

চিন্তিত মুখে জানতে চাইল কমলা, কিসের ব্যবসা করবে ঠিক করলে?”

পরিকল্পনাটা খুলে বলল রতন, ঠিক করেছি পাড়ার মোড়ে একটা ছোটখাট মুদীর দোকান দেবো মনে হয় খারাপ চলবে না

ব্যবসা করতে গেলে টাকা লাগে সে টাকা পাবে কোথা থেকে?”

এসব ব্যবসা করার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোন পাওয়া যায় আমার একজন পরিচিত লোক আছে যে লোন পাইয়ে দেবে বলেছে মাসে মাসে কিস্তিতে ব্যাঙ্কের টাকা শোধ করে দেবো

-----------------------------

মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রাণপাত করলেও ব্যবসাটা কিছুতেই জমাতে পারল না রতনঅনেক চেনা লোককে ধারবাকীতে জিনিস দিতে হল, কিন্তু টাকা আদায় করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে গেল এদিকে ব্যাঙ্কের কিস্তি পরপর কয়েকটা মাস বাকী পরে গেল একদিন ব্যাঙ্ক থেকে নোটিস ধরিয়ে দিয়ে গেল মাসিক ইনস্টলমেন্টের টাকা অনাদায়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবে কতৃপক্ষ

সেদিন দুপুরে ভাত খেতে এসে রতন বলল, ব্যাঙ্কের দেনা শোধ না করে উপায় নেইব্যবসা চালাতে গিয়ে বাজারে কিছু ধারও হয়ে গেছে তোমার গয়নাগুলো যদি দিতে তাহলে.....

কমলা চুপ করে শুনে গেল শুধু, নিজে কোন জবাব দিল নাবিয়ে উপলক্ষে বাবার দেওয়া এই গয়না কটা হাজার অভাবের মধ্যেও সে আগলে রেখেছে এই গয়নাগুলো তার শেষ সম্বল এগুলো হাতছাড়া করার কথা সে ভাবতেও পারে না

সেদিন রাতে খেতে বসে কমলা বলল, বিকেলে মা ফোন করেছিল বাবার শরীরটা ভাল নেই কাল সকালে বাবাকে দেখতে যাব

ঠিক আছে, যেও, সম্মতি জানাল রতনআমি এখন যেতে পারছি না, অনেকগুলো জায়গায় ছোটাছুটি করতে হবে

টাকার জোগাড় হল?”

না কয়েকজনকে বলেছি, কেউ দিতে রাজী হচ্ছে না, রুটি চিবোতে চিবোতে বলল রতন আরো দুএকজনকে বলে দেখব

রাতে দুজনে পাশাপাশি শুল, কিন্তু পরস্পরের মধ্যে বিশেষ কথাবার্তা হল না বিছানায় শোয়া মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল রতন আর কমলা সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারল না, যত রাজ্যের দুর্ভাবনা তার মাথায় ভিড় করে এল পাশে শুয়ে থাকা স্বামীর দিকে চাইল কমলা, কেমন অঘোরে ঘুমোচ্ছে রতন! এই লোকটার হাতেই বাবা একদিন তাকে তুলে দিয়েছিলেন! ভাবতেই নিজের অদৃষ্টের ওপর রাগ হল তার

পরের দিন একটু সকাল সকাল বেরোল কমলা জামা-কাপড়ের সঙ্গে গয়নাগুলোও নিয়ে যেতে ভুলল না যাবার আগে রতনকে বলে গেল, যদি দেখি বাবার শরীরটা বেশী খারাপ তাহলে কয়েক দিন থেকে আসব

বাপের বাড়ি গিয়ে প্রথমে বাবা-মাকে কিছু বলল না কমলা, নিজের মধ্যে কেমন গুম হয়ে রইল মেয়ের ভাবগতিক দেখে বোধহয় কিছু একটা আন্দাজ করেছিল হরিপদ মেয়েকে সে খুব ভালো করেই চেনে কমলা চাপা স্বভাবের মেয়ে, তাকে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করে কোন ফল হবে না তার চেয়ে অপেক্ষা করা ভালো যখন সময় হবে মেয়ে নিজেই বলবে অতএব হরিপদ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করল

 সন্ধ্যায় বাবা-মা যখন টি.ভি. দেখছিল তখন পাশে এসে বসল কমলাবুকের মধ্যে জমে থাকা কথাগুলো বলতে না পারলে যেন দম আটকে আসছে আস্তে আস্তে বলল, ওর চাকরী আর নেই বাবা, এখন বেকার

শুনেই চমকে উঠল হরিপদ, সে কি রে আগে বলিস নি তো!”

ও ভেবেছিল অন্য কোথাও চাকরী জোগাড় করবে, কিন্তু পারেনি তারপর ঠিক করেছিল ব্যবসা করবে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে মুদীর দোকান দিয়েছিল, ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেনি এখন ব্যাঙ্ক টাকা শোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে, বলতে বলতে গলা বুজে এল কমলার

তোদের সংসার চলছে কি করে তাহলে?” জানতে চাইল হরিপদ

যেভাবে চলছে তাকে কি চলা বলে বাবা? শাক-ভাত খেয়ে কোনমতে টিঁকে আছি কতদিন যে মাছ-মাংসের মুখ দেখিনি!” বলতে বলতে প্রায় কেঁদে ফেলল কমলা

 বুঝতে পারল হরিপদ সে নিজেও সামান্য বেতনের চাকরি করত সারা জীবন চাকরি করে যেটুকু পয়সাকড়ি জমিয়েছিল সবটাই একমাত্র মেয়ের বিয়েয় খরচ করেছিল মেয়ের এহেন দুর্ভাগ্যের কথা শুনে তার বুকের ভেতরটা উথাল-পাথাল করে উঠল

এতক্ষণ নীরবে শুনছিল নারায়ণী এবার মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, সংসারে নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় রে মা এত ভেঙে পড়লে কি চলে? আর কিছু না থাকলেও তোর গয়নাগুলো তো আছে

তোমার জামাই সেদিকেও হাত দিতে চেয়েছিল মা বলেছিল ওগুলো বেচে ব্যাঙ্কের দেনা শোধ করবে আমি একথা শোনার পর আর দেরী না করে তোমাদের কাছে চলে এসেছি

মেয়েকে কোলে টেনে নিয়ে বলল নারায়ণী, ধৈর্য্য ধর মা, সব ঠিক হয়ে যাবে চিরদিন কারুর সমান যায় না

------------------------------

কেটে গেল কয়েকটা দিন রতনের দিক থেকে কোনরকম সাড়াশব্দ নেই কমলা ভাবে, একটা ফোন করেও তো তার খবর নিতে পারে রতন! অভিমানের পাহাড় জমে তার বুকে, তারসঙ্গে জমা হয় দুর্ভাবনাও একা-একা কি যে করছে লোকটা!

দিনের পর দিন কেবল রতনের কথাই ভেবে চলে কমলা, অন্য কোন চিন্তা তার মাথায় আর স্থান পায় না সারা দিন, সারা রাত তার জাগরণে, শয়নে, স্বপনে শুধুই রতন ধীরে ধীরে কমলা বুঝল রতনই তার নিয়তি কেটে গেল গোটা এক়়টা মাস, কমলা সিদ্ধান্ত নিল রতনকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব নয় সেদিন বিকেলে কমলা বাবাকে বলল, এখানে অনেকদিন রইলাম কাল বাড়ি যাব বাবা

নারায়ণী দায়সারাভাবে বলল, আর কয়েকটা দিন থেকে গেলে পারতিস মুখে কথাটা বললেও সেটা তার মনের কথা নয় বরং মেয়ে আর জামাইয়ের সম্পর্কটা আবার জোড়া লাগুক এটাই তার মনোগত বাসনা নেহাত বলতে হয় বলেই কথাটা বলা

কমলা বেশ জোরের সঙ্গে বলল, না, আর নয় মা ওখানে মানুষটা একা একা আছে আমি পুজোর আগে আবার আসব নাহয়

হরিপদও মনে মনে তাই চাইছিল, যদিও এতদিন মুখে কিছু বলেনি মেয়ে আবার জামাইয়ের কাছে ফিরে যেতে চাইছে শুনে তার মনে হল এরকমটাই তো হওয়ার ছিল সংসারিক জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সম্পর্কের নানা ওঠাপড়া থাকবেই তাই বলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা তো মিথ্যে হয়ে যাবেনা হরিপদ ঠিক করল কাল নিজেই মেয়েকে পৌঁছে দিয়ে আসবে

-----------------------

রতন এখন টোটো চালায় যারা গাড়িতে ওঠে তাদের সঙ্গেই সারাদিন চলে তার আলাপচারিতা প্রথম আষাঢ়ের মেঘলা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই খানিকটা আগেই একশলা বৃষ্টি ধুয়ে দিয়ে গেছে স্টেশন চত্ত্বরটা রাস্তায় ভেজা ভাব, এখানে-ওখানে জল জমে আছেযে বটগাছটার তলায় রতনরা টোটো নিয়ে যাত্রীর প্রতীক্ষায় দাঁড়ায় সেটার পাতা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল ঝরছে তাই একটু এগিয়ে স্টেশন সংলগ্ন ফলের দোকানগুলোর সামনে সবাইকে টোটো নিয়ে দাঁড়াতে হল এখন অস্তগামী সূর্যের মলিন আলো গায়ে মেখে একটুও লেট না করে পাঁচটা পঞ্চাশের ডাউন লোকালটা এল সচরাচর ভিড়ে ঠাসা থাকে ট্রেনটা

যাত্রীরা এবার তাড়াহুড়ো করে বেরোতে থাকবে টোটোর জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় একে একে যাত্রীরা এসে বসে, একটা গাড়ি ভরলে পরেরটার পালা এইভাবে পর-পর টোটোগুলো ছাড়েহঠাৎ যাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে একটা বড়সড় ব্যাগ হাতে কমলাকে বেরিয়ে আসতে দেখল রতন, পাশে আর একটা ব্যগ কাঁধে তার শ্বশুর হরিপদ দেখমাত্র একটা অপ্রত্যাশিত খুশীর জোয়ারে ভেসে গেল সে টোটোর লাইন থেকে বেরিয়ে এসে সোজা তাদের সামনে দাঁড় করাল গাড়িটা

রতনকে টোটো চালাতে দেখে অবাক হয়ে গেল কমলা, তার যেন বাক্যস্ফূর্তি হচ্ছিল না ব্যাগদুটো গাড়িতে তুলে বলল, উঠে বস, গাড়ি ছাড়তে হবে রাস্তার মাঝে বেশীক্ষণ দাঁড়ান যাবে নাইতিমধ্যেই পিছনে কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে গেছিল কমলা আর হরিপদ উঠে বসতেই টোটো ছেড়ে দিল রতন যেতে-যেতে বৌয়ের হতভম্ব ভাবটা বেশ উপভোগ করছিল রতনতার সঙ্গে এটাও বুঝতে পারছিল বাড়ি গিয়ে তাকে একগাদা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে

সত্যিই অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে ছিল কমলার মনে বাড়িতেপা রাখামাত্রই প্রশ্ন করল, টোটো কবে কিনলে? আমাকে বলনি কেন?”

কিনিনি তো, হাতের ব্যগদুটো ঘরের মেঝেয় নামিয়ে রেখে উত্তর দিল রতনকোথায় পাব অত টাকাগাড়িটা অন্য লোকের আমি ভাড়ায় চালাই

দোকানটা কি আছে এখনও?”

না অনেক চেষ্টা করেও চালাতে পারলাম না বাধ্য হয়ে ও পাট চুকিয়ে দিয়ে টোটো চালানো ধরেছি রোজগার মন্দ হয়না মালিককে প্রতিদিন তার ভাগটা দিয়েও যা হাতে থাকে তাতে একরকম চলে যায়

আকাশচুম্বি অভিমান জমা হয়ে ছিল কমলার মনে অনেক দিন পর রতনকে সামনে পেয়ে তার প্রশ্নের সঙ্গে মিশে থাকা অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে উঠল, এতদিন কোন খোঁজখবর নাওনি কেন? একটা ফোন পযন্ত করতে পারনি?”

ভেবেছিলাম তুমি ফিরে আসার পর সবটা বুঝিয়ে বলব বাপের বাড়ি গিয়ে যে এতদিন টানা থাকবে সেটা তো তখন জানতাম না ঠিক করেছিলাম সামনের রোববার গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব

হরিপদ অনুমান করতে পারছিল জামাইয়ের সঙ্গে মেয়ের অনেক বোঝাপড়া বাকি আছে,সেইসময় তার উপস্থিত না থাকাই শ্রেয় সুতরাং মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলল, আটটা কুড়ির ট্রেনটা ধরে আমায় ফিরতে হবে আমি চলে যাবার পর তোরা দুজনে ঠান্ডা মাথায় এইসব আলোচনা করিস বরং এখন দেখ দেখি একটু চা খাওয়াতে পারিস কিনা

শ্বশুরের তাড়া দেখে রতন বলল, আজ রাতটা থেকে গিয়ে কাল সকালের গাড়িতে ফিরলে হত না?”

বেশ জোর দিয়েই বলল হরিপদ, কমলার মা একা আছেন, তাই আমায় ফিরতেই হবে পরে সময়-সুযোগ করে দুজনে একসঙ্গে এসে তোমাদের কাছে থেকে যাব

-----------------------

শ্বশুরকে ট্রেনে তুলে দিয়ে ফিরে আসার সময় স্টেশন মোড়ের বাজার থেকে কেনাকাটা করে আনল রতনঘরে জিনিসপত্র কিছুই প্রায় ছিল না বলতে গেলে কমলা বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার পর বাজার-হাটও করা হয়নি সেভাবে বেশীরভাগ দিন সে বাইরে খেয়েই চালিয়ে দিয়েছিল

রাতে বেশ চেটেপুটে খেল রতন কমলার রান্নার হাত ভালসামান্য ডাল-ভাত-তরকারী যেন অমৃতের মত লাগল খাওয়ার সময় তার চোখেমুখে ফুটে ওঠা তৃপ্তির ছাপ নজরে পড়ল কমলার সত্যিই তার হাতে খেতে বড় ভালোবাসে মানুষটা

পেট ভরে খাওয়ার পর বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিতেই ঘুমে বুজে আসছিলরতনের চোখ এইসময় ঘরে ঢুকে বিছানায় তার পাশে বসল কমলা আবেগমিশ্রিত কন্ঠে বলল, অন্যের টোটো না চালিয়ে নিজে একটা গাড়ি কিনে নাও না টাকার চিন্তা করতে হবে না আমার গয়নাগুলো তো আছে

রতনের মনে হচ্ছিল কত দূর থেকে যেন ভেসে আসছে কমলার কন্ঠস্বর! স্ত্রীর কথা শুনতে শুনতে নিদ্রার গভীরে তলিয়ে গেল রতন

ranjan25574226@gmail.com

কলকাতা 



No comments:

Post a Comment