1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

আমরা করব জয়

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

আমরা করব জয়

মেঘনা মাইতি 

• আমার এক ভাই বর্ধমান মেডিকেল কলেজের ডাক্তার।আজ সাত মাস হল সে বাড়িমুখো হয়নি।তখন সদ্য সদ্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগমন ঘটেছে এই দেশে। আমাদের রাজ্যও বাদ পড়েনি।তখনও অব্দি চোখ পাকিয়ে এইভাবে তেড়ে আসেনি সে। মানুষজনও বেশ খোশমেজাজে ছিল। মার্চের মাঝামাঝি খবর এলো ভাইটির মা অসুস্থ। চারদিন হল কিছুতেই জ্বর কমছে না। সঙ্গে অত্যধিক মাত্রায় দুর্বল। যা যা করণীয় ফোনের মাধ্যমেই জানিয়ে দিল ভাই। হাসপাতালে দায়িত্ব অনেকটাই বেশি। হুট করে চলে আসা  তার পক্ষে সম্ভব নয়।টেস্ট করা হলো। পসিটিভ। পরিস্থিতি ক্রমশঃ জটিল হতে শুরু করল ।বাড়িতে রাখা গেল না। অগত্যা হাসপাতালে ছুটতে হল। এতেই শেষ নয়, ভাইটির পরিবারের বাকি তিন সদস্যই আক্রান্ত। তার মধ্যে একজন নব্বইঊর্ধা বয়স্কা বর্তমান। খবর পেয়ে হাফ ডিউটি করে তড়িঘড়ি চলে আসে ভাই। অবস্থার একটু উন্নতি হওয়ায় পুনরায় বর্ধমান ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইমার্জেন্সিতে covid রুগীর চাপ অনেকটাই বেশি। সুতরাং সব ডাক্তারের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।বাবাকে আশ্বাস দিল, " ছুটি ক্যানসেল হয়ে গেছে।চিন্তা করো না। ফোন করবো। "

• আমার এক বোন একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে কর্মরত। পেশায় নার্স।আজ বোনের ঋতুস্রাবের দ্বিতীয় দিন। ছোটবেলা থেকেই এই কটাদিন বোনের খুব কষ্ট হয়। রক্তের প্রবাহ অনেকটাই বেশি থাকে। সঙ্গে যোগ দেয় অসহনীয় পেট ব্যাথ্যা।অন্যসময় হলে, ছুটি নেওয়া যেত। অথবা হাফ cl কাটাতো। কিন্তু আজ তার ডিউটি পড়েছে covid ওয়ার্ডে। পিপিই কিট পড়ে একগাল হাসি নিয়ে বোনটি সপেঁ   দিয়েছে নিজেকে। সস্নেহে এক বৃদ্ধার  মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে, " ঠাকুমা মন খারাপ করবেন না। আমরা আছি তো সবাই। ঠিক সুস্থ হয়ে যাবেন। "

• আমার এক চেনা দিদি আছে। পুলিশে কর্মরতা।ছোটবেলা থেকেই খুব লড়াই করে আজ সে এই জায়গায়।লড়াইটা যে শুধু সমাজের সাথে ছিল তা নয়, নিজের সাথে কম লড়তে হয়নি।খুব আরামে কাটেনি শৈশববেলা।অল্প দিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিল সংসারে অভাব রয়েছে। সুতরাং যে কোনো মূল্যেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মা বাবার সঙ্গ সবসময় পেয়ে এসেছে। আজ বছর দুই হল দিদির বিয়ে হয়েছে। বিদায়বেলায় খুব কাঁদছিল সে। আজ এক মাস হল মা- বাবার মুখদর্শন করেনি সে। অনেকটা ভয়ে। মা বাবার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।

• আমার এক পাড়াতুতো দাদা আছে। সর্বক্ষণ পাড়ার ক্লাবঘরটাতেই পড়ে থাকত। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতো, "ওই একটা NGO সাথে যুক্ত আছি। "কম বেশি সবাই পেছনে হাসাহাসি করতো। " দামড়া ছেলে, মা বাবার অন্ন ধ্বংস করছে শুধু।"এরকম আর কত কত বিশেষণ জুড়ে দিতো তার পেছনে। আজ এই অতিমারির দিনে করোনা আক্রান্ত রুগীরা, বিশেষত যারা একা থাকে তাঁদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দাদার ওই ngo লোকেরাই নিয়েছে। পাড়ার যেসব কাকু- কাকিমা, মাসি- মেসোমশাই হাসাহাসি করতো প্রয়োজনে আজ তারাই দাদার কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজ নিচ্ছে। কি বিচিত্র এই মানুষ!!

• আমার খুব কাছের মানুষ ইনি। আমার স্বামী। ব্যাঙ্কে আছেন। লকডাউনে বাড়ির মধ্যে আটকে থাকা কি,  বেচারা জানলোই না। ১০-২ টো এই হল কাজের সময়। তবে দুটোয় শেষ বলেই  দুপুর তিনটে নাগাদ বাড়ি ফিরে যাবে সেই সৌভাগ্য ওনার নেই। জিজ্ঞেস করলে বলতো, ট্রানসাকশান বন্ধ। কিন্তু ভেতরে অনেক কাজ থাকে।অগত্যা কথা বাড়ানোর উপায় নেই। কত কত ব্যাঙ্ককর্মী আক্রান্ত। কিন্তু ব্যাঙ্ক বন্ধ করার উপায় নেই। সেটা কাম্যও নয়।

• সর্বশেষে বলি, আমার কয়েকটা বন্ধু আছে। বয়েসে অনেকটাই ছোট। স্কুল- কলেজ সব বন্ধ। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ নেই। ছয় ইঞ্চি স্মার্ট ফোনটাই এখন তাদের জগৎ। কিন্তু এই দুর্দিনে ফোনটাকে তারা কাজেই লাগাচ্ছে। যতটা তাদের সামর্থ্য। সুন্দর সুন্দর ছবি, নিত্য নতুন রান্নার ছবি আপলোড করা আপাতত একদম বন্ধ। পরিবর্তে কোন হাসপাতালে কটা বেড, কোন কোন এলাকায় কারা কিভাবে covid আক্রান্ত রুগীদের পরিষেবা দিচ্ছে, কে অক্সিজেন সাপ্লাই দিচ্ছে এসবই তাদের পেজে ভেসে বেড়াচ্ছে দিন- রাত।

উপরিউক্ত আলোচ্য চরিত্রগুলি কম বেশি আমাদের সকলেরই চেনা। ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও এনারা সকলেই কারোর না কারোর নিজের ভাই- বোন- দাদা- দিদি- স্বামী-স্ত্রী- বন্ধু- বান্ধবী।এনারা এবং আরও অগুনতি মানুষ নিজেদের মতো যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। এর মাঝেও কানে ভেসে আসে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য। প্রকৃতির সাথে আমরা কখনোই পেরে উঠবো না। কিন্তু আসুন না সবাই মিলে একসাথে এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করি।সমালোচনা না করে, একে ওপরের খুঁতগুলোকে টেনে বার না করে, প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকলে কাঁটা বিছানো দুর্গম পথটাও সহজে হাঁটা যায়।একটা গানের লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে বারংবার। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বড্ড প্রাসঙ্গিক।

" হাতে হাত ধরি মিলি একসাথে

    আমরা আনিব নতুন ভোর..."

meghna.maity09@gmail.com


1 comment: