1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

বসন্তের বিষ

 

ছবি  : ইন্টারনেট

বসন্তের বিষ

স্বর্নব দত্ত

     কথায় আছে ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ করে রাখলেও তুমি বসন্তকে আটকাতে পারবে না, শ্রেয়াও পারে নি,বার বার ফিরে থাকতে চাইলেও মনের চিলেকোঠায় বার বার উঁকি দিয়েছে বসন্ত,কিন্তু বসন্ত চিরকালীন নয় সেটা শ্রেয়া জানত না,ছোটো জীবনে তার পক্ষে সেটা জানা সম্ভব নয়,সম্ভব নয় ছোটো ছোটো গল্পগুচ্ছ মিলিয়ে মিশিয়ে একটা উপন্যাস তৈরি করা। রুপম দাদা যেন এসেছিল তার জীবনে বসন্ত হয়ে,গল্পটা তাহলে গোড়া থেকে বলি শ্রেয়ার সাথে রুপমদার প্রথম আলাপ কেমন একটা ছন্দহীন গুরু গম্ভীর আর সেই গুরু গম্ভীরের মাঝে লুকিয়ে ছিল শ্রেয়ার বসন্ত,তখন সবে মাত্র মাধ্যমিক দিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে কিন্তু শুরু থেকে রসায়ন বিষয়টা যেন কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না তার,বড্ড এলোমেলো বিষয় রসায়নটা,নামে রস থাকলেও কাব্যে রস নেই বললেই মনে হয়েছিল তার,তখন দিদির বন্ধু রুপমদাকে বাবা ঠিক করে তার রসায়নের টিউশনের জন্য,আস্তে আস্তে কাব্যে রস ফিরে পায় শ্রেয়া,কিছুদিনের মধ্যেই রসায়নের থেকেও যেন ভালো লাগতে লাগলো মানুষটাকে, সপ্তাহে দুই দিন করে রুপমদা পড়াতে আসতো,যেন পুরো সপ্তাহ বেচেঁ থাকা শুধু দুই দিনের জন্য,আর কোনো কারনে না এলে খুব রাগ হত,ফোন করে পাগল করে দিত রুপমদাকে, কিন্তু ওই যে বসন্ত চিরকালীন নয়,দিদির সাথে রুপমদার বিয়ের ঠিক হয়েছে এক সপ্তাহ হলো,সেই থেকে শুরু হল বসন্ত হারানোর গল্প , শুরু হলো বিষাদের সুর।আজ রুপমদা সকাল থেকেই এসেছে,দিদির জীবন রঙিন হওয়ার পালা, কিন্তু তার জীবনের রঙ যেন ফিকে হয়ে গেছে কিন্তু সেটার খবর কেউ রাখে নি,নতুন করে রঙ খেলার ইচ্ছে তার আর নেই,সে আজই চলে যাবে অনেক দূরে সুদূর আমেরিকা,ছোটো কাকার বাড়ী,বি বি এ পড়তে,আর ফিরে আসবে না সে ,থাকবে না দিদির বিয়েতেও,মনে মনে একটা মুচকি হাসি সে,ছোটো থেকে বড্ড একজেদী মেয়ে,দিদির কোনো জিনিস ভালো লাগলে কেড়ে নিত সে কিন্তু ভালবাসা কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা কি তার আছে? সবার আজ মন খারাপ,সবার মুখ গোমড়া করে আছে,শ্রেয়া বারান্দায় দাড়িয়ে দূর থেকে দেখছে বাগানে রুপমদা আর দিদি প্রেম, চোখের জল তখন মেঝে পর্যন্ত গড়িয়েছে,সবাই ভাবছে দূরে চলে যাওয়ার কান্না, কিন্তু কেউ জানে না এটা দূরে সরিয়ে রাখার কান্না।প্রথম প্রথম রুপনদা যখন তাকে পড়াতে আসতো মাঝে মাঝে রুপনদার পেনটা সরিয়ে রাখতো আর সেটা নিয়ে সাড়া রাত্রি জড়িয়ে ধরে সেই স্বপ্নের প্রেম যেন অন্য গভীরতা লাভ করতো। শ্রেয়ার মন আবার অতীতে আটকে যায় মনে পরে যায় সেইসময়ে কথা, যখন মায়ের অসুস্থতার কারণে রুপমদা কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিল,সরাসরি আটকাবার ক্ষমতা ছিল না ছোট্ট শ্রেয়ার, রুপমদা গ্রামের বাড়ী চলে গিয়েছিল চিরকালের মতো,তখনই হয়তো সব শেষ হয়ে যেত যদি না বাবা একসপ্তাহ পর খবর নিতে সবাইকে নিয়ে রুপমদার বাড়ী যাওয়া জন্য রাজি হত,সেটার পিছনে অবশ্য ছিল শ্রেয়ার অদম্য জেদ। রুপমদার বাড়ী বোলপুর,লাল মাটির শহর,ভালোবাসাকে শেষ একবারের মতো দেখার সুযোগ,কিন্তু কে জানত বসন্ত বিদায় নেয়ার সময় তখনও আসেনি,ফিরে আসার দিন সকালে রুপমদার মা হটাৎ মারা যান,আরো কিছু সেখানে দিন কাটিয়ে বাবার উপদেশে রুপমদা আবার কলকাতা ফিরে আসে,হয়তো আবার নতুন করে বসন্ত ফিরে পাওয়া।আবার সব আগের মত হয়ে গেল,তখন শ্রেয়ার ফাইনাল পরীক্ষা,রুপামদা তখন সপ্তাহে চারদিন পড়াতে আসতে শুরু করলো, শ্রেয়া বুঝতে পরে নি রুপমদা তার জন্য কম দিদির টানেই বেশি আসতো আবারও যেন বসন্ত ফিরে যেতে লাগলো তার থেকে,দিদিও যেন ফাঁকি দিয়েছিল তাকে,মনের সব কথা তাকে বললেও শুধু এই একটাই কথা গোপন করলো তার কাছে ,খুব কষ্ট পেয়েছিল শ্রেয়া কিন্তু তার কষ্ট শোনার মত বা বোঝার মত কেউ ছিলো না।যেদিন রাতে ছাদে দুজনে অন্ধকারে গল্প করতে গিয়ে ধরা পড়লো সেই দিন সে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল।সেইদিন মনে মনে ভেবেছিল সে যদি দিদির জায়গায় থাকতো তাহলে সেই দিনই নিরুদ্দেশ হতো রুপমদার হাত ধরে কিন্তু দিদির সে সাহস নেই ।মনে মনে হিংসা হয় দিদি উপর,একটা প্রশ্ন ওঠে নিজের মনে ,কি আছে দিদির মধ্যে যেটা তার মধ্যে নেই ?,সেও তো পারে দিদির মতো ভালোবাসতে।দিদি একবারও তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলো না,মাঝে একবার ভেবেছিল দিদিকে সব বলবে কিন্তু সাহস হয়ে ওঠে নি।কিছুদিন পর আবার মন ভেঙে গেল তার, এবার সত্যি বিদায় বেলা এসেছে বসন্তের,বাবা দিদির জেদের কাছে হার মেনে নিয়ে দিদি আর রুপমদার সম্পর্কটায় স্বীকৃতি দেয়,এখন আর কিছু দিন পর তাদের বিয়ে,শ্রেয়া মনকে বোঝায় যা সে হারিয়েছে তা সে কোনদিনও পায় নি,পাওয়ার আশা আর নেই,অন্য কেউ হলে সে ছিনিয়ে নিয়ে যেত কিন্তু রক্তের সম্পর্কের কাছে হার মানতে হয়েছে, বারান্দায় দাড়িয়ে এই সব কথা ভেবে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল সে,আর কিছুক্ষন তারপর বাবার সাথে রওনা দিতে হবে দমদম বিমানবন্দর,আজ দিদি সবার জন্য নিজের হাতে খাবার বানিয়েছে,কিছুক্ষন পর সবাই খাওয়া দাওয়া করে তাকে বিদায় জানবে,শ্রেয়াও রান্না করেছে রুপমদার জন্য তবে সবার অজান্তে,কিন্তু সেটার জন্য তাকে কেউ ধন্যবাদ জানবে না ,আজ সব ধন্যবাদ সে তার দিদি জন্য ছেড়ে দিয়েছে,খাবার শেষে আবার সবার অজান্তে রুপমদার জন্য লেমন সোডা বানাতে গিয়ে একটু বেশি কষ্ট পায় শ্রেয়া,নিজের ভালোবাসা কে মেরে ফেলতে কার ভালো লাগে,লেমন সোডায় বিষটা বেশ ভালই মিশেছে,

রুপমদার কাছ থেকে রসায়নটা সে ভালই শিখেছে বলতে হবে,তবে রুপমদার মাকে বলিস চাপা দিয়ে মারার সময় একটুকুও খারাপ লাগে নি, হাতও কাঁপে নি আর ভয়ও করে নি,তবে আজও ভয় করে না তার,সব তো দিদি বানিয়েছে সবাই দিদিকেই সন্দেহ করবে,কেউ তাকে সন্দেহও করবে না কারণ সে তো ছোটো মেয়ে আর তার ভালবাসার খবর কেউ জানেই না, কিন্তু সে তো ভুল করছে না,রুপমদা যদি তার না হয় তাহলে দিদির কেন হবে?,তবে ভালোবাসাকে নিজের চোখের সামনে মরতে দেখতে সে পারবে না,অনেক কষ্ট হবে তাতে।এবার সময় হয়ে এসেছে, দরজায় গাড়ি এসে পড়েছে বাড়ীর সবার মন খারাপ,এবার যেতে হবে চিরকালের মত,দিদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে আর হয়তো দেখা হবে না, লেমন সোডার গ্লাস হাতে দাড়িয়ে থাকা রুপমদাকে শেষ প্রনামটা সেরে নেয় শ্রেয়া, গাড়িতে বসে শ্রেয়া মনে মনে ভাবে রুপমদা মারা যাওয়ার পর দিদির জেল হবে,কারণ সবার নজরে দিদিই লেমন সোডা বানিয়েছে,ঠোঁটের কোণে হাসি লুকিয়ে রাখতে পারল না শ্রেয়া,মনে মনে ভাবলো রুপমদাকে ভালো দিদিও বেসেছিল, তবে সে একা দূরে গিয়ে সাজা ভোগ করবে কেন!

datta.swarnab123@gmail.com
পশ্চিম বর্ধমান

No comments:

Post a Comment