1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

প্রজাপতির মুক্তি

ছবি : ইন্টারনেট 
প্রজাপতির মুক্তি
রণিত ভৌমিক

----১----

সেদিন দুপুরে ইচ্ছা না থাকলেও মায়ের তাড়নায় ট্যাক্সি নিয়ে সোজা ছুটতে হল রবীন্দ্র সরোবর। হ্যাঁ! আজ মায়ের ছোটমাসির দেখা পাত্রী অর্থাৎ মৌসুমীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটতে চলেছে। বিয়ের ইচ্ছা যে আমার খুব একটা রয়েছে, তেমনটা নয়। আসলে প্রথম প্রেমের ব্যর্থতাটা আমাকে আজও সম্পর্ক নামক বিষয়টা থেকে শত দূরে সরে থাকতে বাধ্য করেছে। বছর দুয়েক আগে দেবিকার ছেড়ে যাওয়াটা আমি এখনো ভুলতে পারিনি। তবে, জীবন তো এগিয়ে চলে আর তাই আমিও ট্যাক্সি নিয়ে এগিয়ে চলেছি জীবনের নতুন অভিজ্ঞতার আশায়। 

ট্যাক্সির জানালার অপর দিকে একমনে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ গাড়িটা মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ল। ড্রাইভার পিছন ফিরে বলল,

- দাদা, শাটেল তুললে আপনার অসুবিধা নেই তো?

আজকালকার দিনে ছাপসা বাঙালীর কাছে দু-পয়সা বাঁচানো মানে অনেক। সুতরাং শেয়ারে গেলে দু-পয়সা বাঁচবে ভেবে মাথা নেড়ে বললাম,

- না। না। অসুবিধা নেই।

এরপর এক্সসাইড মোড়ের দিকে ট্যাক্সিটা ঘুরতেই লক্ষ্য করলাম ড্রাইভার গাড়িটা দাঁড় করিয়ে ফের পিছন ফিরে আমাকে বলল,

- দাদা, যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলব?

- কি বলো।

- (একটু থেমে ড্রাইভারকে বলতে শুনলাম) দাদা, আপনি সামনে এসে বসলে খুব ভালো হয়। আসলে এখান থেকে যিনি উঠবেন, উনি মহিলা তাই বুঝতেই পারছেন...।

- আচ্ছা! কোনও অসুবিধা নেই। আমি সামনে এসে বসছি।

কথা শেষ করে যেই না পিছনের দরজা খুলে বেরতে যাব, ওমনি এক মাঝ বয়সী মেয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমাকে সামনের দরজা খুলতে দেখে তাকে বলতে শুনলাম,

- আপনি পিছনে বসতে পারেন, আমার কিন্তু কোনও প্রবলেম নেই।

- (উত্তরে আমি তাকে হেসে বললাম) না। ঠিক আছে। আমি সামনেই বসছি।

সিগনালটা সবুজ হতেই আমাদের ট্যাক্সিটা আবারও এগতে লাগল এবং আমি জানালার কাচটা তুলে দিয়ে ড্রাইভারকে এসিটা চালিয়ে দিতে বললাম। শহরটা অনেকটাই পাল্টেছে। দক্ষিণ ভারত থেকে প্রায় ৬-বছর পর কলকাতায় ফিরেছি। অতএব আরও বেশি করে যেন শহরটাকে চেনার চেষ্টা করছিলাম। তবে, মিথ্যে বলব না। মাঝে মাঝে লুকিং গ্লাস দিয়ে পিছনের দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল। পিছনের সিটে বসা মেয়েটিকে লক্ষ্য করলাম থেকে থেকেই সে ঘড়ি দেখছে। এদিকে, যতই এসি চলুক না কেন, পাশে বসা ড্রাইভারের গা থেকে বিকট গন্ধটা আমার নাকে আসছে কিন্তু কিছু যে করার নেই! শেয়ারের ট্যাক্সির এই এক ঝামেলা। যদিও বা আমি প্রথম যাত্রী ছিলাম আর তাই মেয়েটি মন থেকে না চাইলেও হয়ত কিছুটা সৌজন্য বোধ থেকেই আমাকে পিছনে বসবার জন্য বলেছিল কিন্তু ট্যাক্সির পিছুনে একা এক সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বসবার সাহস আমার আর হল কৈ? ফলে, ড্রাইভারের পাশেই স্থান হল আমার।


----২----


পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছে আবার একবার আড়চোখে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকালাম। তবে, এবার লক্ষ্য করলাম মেয়েটা হয়ত কোনও কারণে ভীষণ বিরক্ত। ভুরু কুঁচকে মোবাইলের টাচপ্যাডে বেশ জোরে জোরেই আঘাত করছে। হয়ত নিজের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেই ঝগড়া করছে হোয়াটস্যাপ চ্যাটে। মেয়েটির পরনের হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা বেশ সুন্দর দেখতে, তাকে খুব ভালো মানিয়েছে। তবে, তাকে লক্ষ্য করতে করতে নিজের দিকে যে তাকাইনি তেমনটা নয়। গতবছর পুজোয় মায়ের পাঠানো নীল পাঞ্জাবিটা পরেই সেদিন বেরিয়েছিলাম।

- উপফ! ভালো লাগে না।

হঠাৎ করে পিছন থেকে আসা মেয়েটির বিরক্তিময় উক্তিটি আবার আমায় লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতে বাধ্য করল। বিরক্তি সহকারে তাকে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে লক্ষ্য করলাম এবং তার চোখের উপর এসে পড়া চুলগুলো যেন ওই মুহূর্তে তার অস্থির মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। এইরূপ সুন্দরী মেয়ের মনেও কিনা বিরক্তি জাগে? সত্যি, বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন!

আমার এই ভাবনায় খানিক ছেদ পড়ল। কারণ পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। আমি ফোনটা বের করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে মায়ের গলা ভেসে এল,

- কী রে, পৌঁছেছিস?

- আরে, এত তাড়াতাড়ি কি পৌঁছানো যায়?

- চটছিস কেন? এত মাথা গরম করিস না। তোর ফোন নেই দেখে আমি কল করতে বাধ্য হলাম। তা শোন, ওদিকে মেয়ের বাবা বলল, সেও কিন্তু অনেকক্ষণ হয়েছে বেড়িয়ে পড়েছে, 

তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাস।

- আচ্ছা। তা নয় বুঝলাম কিন্তু তোমাকে যে বলেছিলাম শুধু নাম নয়, একখানা ছবিও আমাকে পাঠাতে, এবার আমি তাকে সামনে থেকে চিনবো কীভাবে?

- আচ্ছা, ছোটমাসিকে বলছি যেই ছবিটা আমাকে পাঠিয়েছিল, সেটাই তোর ফোনে পাঠিয়ে দিতে।  

- বাহ! আমি ওখানে পৌঁছা দাঁড়িয়ে থাকব, আর তুমি আর তোমার ছোটমাসি ছবি নিয়ে বসে থাকো। এই জন্য আমি রেগে যাই মা! তাড়া মেরে আমাকে কলকাতায় ফেরত আনলে আর এতদিনে একটা ছবি অবধি দেখালে না!

- রাগ করিস না, বাবু। আমি এখনই বলছি তোকে পাঠাতে।

কথাটা শেষ করার আগেই ফোনটা গেল কেটে। বুঝলাম, মা এখনো মোবাইলে অভ্যস্ত হতে পারেনি। একটা কলে থাকাকালীন আরেকটা কল করতে গিয়ে সে আমার কলটাই দিয়েছে কেটে।

এদিকে, আবার হঠাৎ ব্রেক কষে গাড়ি গেল থেমে। আমি ড্রাইভারের দিকে তাকাতেই সে বলে উঠল,

- বুঝতে পারলাম না দাদা। দাঁড়ান আবার স্টার্ট দিয়ে দেখছি।

কিন্তু ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার দু'তিনটে ব্যর্থ চেষ্টা করার পর ফের আমার দিকে তাকিয়ে করুণ গলায় তাকে বলতে শুনলাম,

- একটু সময় দিন দাদা, আমি দেখছি।


----৩----


ড্রাইভার নেমে যাওয়া মাত্রই আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। জানালার কাচটা নামিয়ে ঘেঁটে যাওয়া চুলটা ঠিক করে নিচ্ছিলাম কিন্তু পিছন থেকে অনেকক্ষণ কোনও সাড়াশব্দ না পাওয়ায়, ফের লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে পিছনের মেয়েটির দিকে চোখ গেল আর চোখ যেতেই গেলাম থমকে!

পিছনের চোখজোড়াও যে থমকে আছে আমারই দিকে। অপ্রস্তুতে পড়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হলাম। কিন্তু চোখ সরানোর আগেই পিছন থেকে প্রশ্ন এল,

- এক্সকিউজ মি!

- (অবাক চোখে পিছন ফিরে বললাম) হ্যাঁ! বলুন।

- আপনি বারবার লুকিং গ্লাস দিয়ে আমাকে দেখছেন, কিছু কি বলবেন?

মেয়েটির কথা শুনে আমি একেবারে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি বললাম,

- না। মানে আপনাকে ট্যাক্সিতে ওঠা থেকেই লক্ষ্য করছি বেশ বিরক্ত হয়ে আছেন। তার মধ্যে আবার ট্যাক্সিটা এখন গেল বিগড়ে। বাড়িতে ফিরতে লেট হবে ভেবে বিরক্ত হচ্ছেন, তাই তো?

- আরে, না। না। আপনি ভুল ভাবছেন। আমার বাড়ি ওদিকে নয়। এদিকে, যাচ্ছি পাপের শাস্তি ভোগ করতে।  

- মানে? আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না।

- আর কি! আমার মতো বয়সী মেয়েদের সঙ্গে বেশি ভাগ ক্ষেত্রে যা হয়, তাই। বাড়ি থেকে সম্মন্ধ প্রায় ঠিক করে ফেলেছে আর এখন তাই আমাকে ছেলেটার সঙ্গে দেখা করে ভাব করতে হবে। আচ্ছা! আপনিই বলুন, এইভাবে কি সম্ভব?

মেয়েটির কথা শুনে আমার তার নামটা জানার খুব ইচ্ছা হল সুতরাং নিজের মনের কৌতূহল থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,

- তা ম্যাডামের নামটা জানতে পারি কি?

- আমার নাম মৌসুমী। মৌসুমী মিত্র। আপনার?

মৌসুমী নামটা শোনা মাত্র মনের ভিতর থাকা আমিটার আর কোনও সংশয় রইল না যে সেদিন আমার গন্তব্যস্থানে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার প্রধান ব্যক্তিটিই যে ইনি। সুতরাং ওই মুহূর্তে নিজের পরিচয়টা গোপন রেখে তথা তার প্রশ্নটা উপেক্ষা করেই ফের জিজ্ঞেস করলাম,

- তা আপনার বুঝি বিয়ে করার ইচ্ছা নেই?

- (মৌসুমীর তৎক্ষণাৎ উত্তর) তা কেন থাকবে না। অবশ্যই আছে, ইনফেক্ট আই এম কমিট্টেড।

- ও বুঝেছি! আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে কিন্তু সেটা আপনার বাড়ির লোক জানে না, আপনি বলেননি।

আমার কথার মাঝেই ফের মৌসুমী বলে উঠল,

- বলব কী করে, ও যে এখনো এস্তাব্লিশ নয়। চাকরি খুঁজছে।

- সবই তো বুঝলাম কিন্তু ছেলেটার সঙ্গে এখন দেখা করে কি বলবেন, ভেবেছেন কিছু?

- না। কিছুই ভাবিনি আর ভাবতেও চাই না।

- (মুচকি হেসে বললাম) যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি কিন্তু আপনাকে একটা ভালো উপদেশ দিতে পারি।  

- (মৌসুমীকে লক্ষ্য করলাম একটু থেমে তারপর বলল) আচ্ছা! বেশ, নিজের মাথায় যখন কিছু আসছে না, তখন আপনিই বলুন শুনে দেখি।

- (আমি বললাম) ঝটফট নিজের মোবাইল ফোন থেকে আপনার বয়ফ্রেন্ডকে একটা কল করুন আর বলবেন আপনি যেখানে যাচ্ছেন ওখানে যেন সে তাড়াতাড়ি চলে আসে। আমার যতদূর মনে হয়, আজ আর আপনার পরিবারের দেখে দেওয়া ওই পাত্রটি সেখানে আসবে না। তাও যদি আসে, তাহলে আপনারা দুজনে মিলে তাকে সবটা খুলে বলবেন। আমার মন বলছে, সে নিশ্চয়ই চাইবে না এক ভালোবাসা ভেঙ্গে আরেক সম্পর্ক গর্তে।  

- (মন দিয়ে সবটা শোনা পর মৌসুমীকে বেশ খেপে গিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলতে শুনলাম) আপনি তো দেখছি আচ্ছা গবেট! আজকালকার দিনে এমন ছেলে হয় নাকি? আমি আর রাহুল সব বলি আর ওই ছেলে আমার বাবাকে গিয়ে সমস্তটা জানিয়ে আমার শ্রাদ্ধের সব বন্দবস্ত করুক আর কি!  

- সে কি? শ্রাদ্ধের কথা এখানে কোথা থেকে আসছে। দেখুন, ম্যাডাম। আমার মনে হল, এটাই একমাত্র পথ হতে পারে আপাতত যতদিন না আপনার রাহুল চাকরি পাচ্ছে। তবে, আপনি ঠিকই বলেছেন সব ছেলে হয়ত সমান নয়। আজ একজন আপনার সম্পর্কের কথা শুনে সরে গেলেও, আরকজন তো সেইরকম নাও হতে পারে। তাই এটা টেম্পোরারি সল্যুশন হলেও, পার্মানেন্ট কিন্তু নয়।

- হুম। বুঝলাম। তবে, এখনো কিন্তু আপনার নামটা বললেন না!

- (একগাল হাসি নিয়ে বললাম) আকাশ দত্ত।

ভেবেছিলাম আমার নামটা শুনে মৌসুমী হয়ত অন্য কিছু জিজ্ঞেস করবে কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল বাড়িতে পাত্রের নামটা জানারও বোধহয় ইচ্ছাপ্রকাশ করেনি। অনেকটা তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই জিজ্ঞেস করলাম,

- আচ্ছা! আপনি আজ যার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন মানে সেই ছেলেটিকে কখনো দেখেছেন বা তার নাম জানেন?

- না। কখনো দেখিনি আর নামটাও জানা নেই। সত্যি, বলতে আমার কোনও ইন্টারেস্ট নেই। এই যাহ্‌!

- কি হল?

- আরে গতকাল রাতে বাবা আমাকে ছেলেটার ছবি হোয়াটস্যাপে পাঠিয়ে রেখেছিল যাতে দেখলেই চিনতে পারি কিন্তু আমি যে রাগের মাথায় সেটা না দেখেই ডিলিট করে দিয়েছি। এবার কি হবে!

মৌসুমীর কথার মাঝেই আমার পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটা ফের একবার কেঁপে উঠল এবং বার করতেই দেখি মায়ের ছোটমাসির ছেলে অর্থাৎ আমার রঞ্জুমামা মৌসুমীর ছবি আর মোবাইল নম্বরটা আমাকে পাঠিয়েছে। ছবিটা খুলতেই পিছনে বসা মেয়েটির মুখটা আমার হাতের উপর রাখা মোবাইলে ফুটে উঠল। আবারও হেসে মৌসুমীকে বললাম,

- চিন্তার কিছু নেই ম্যাডাম। আপনি চিনতে না পারলেও, ওই ছেলেটি আপনাকে ঠিকই চিনে ফেলবে।  

- হা।হা।হা। আপনাকে যত দেখছি, ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। এতো কনফিডেন্সের সঙ্গে বলছেন যেন সেই ছেলেটি আপনিই। বাই দা ওয়ে, আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তখন শুনলাম 

কাকে যেন বলছিলেন কীসব ছবি পাঠাতে। যদিও বা সবটা আমি শুনিনি, তাও দু-তিনটে কথা কানে এসে পৌঁছে ছিল।  

- দাদা, হালকা প্রবলেম ছিল, সব ফিক্সড করে দিয়েছি।

আমাদের কথার মাঝেই দুর্গন্ধ নিয়ে ড্রাইভারের প্রবেশ এবং আমাদের আলোচনা ওখানেই থামিয়ে দিতে বাধ্য হলাম। ট্যাক্সি ছুটতে আরম্ভ করল আর আবারও লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে পিছনে বসা মৌসুমীকে দেখলাম আমার কথা মতই তার প্রেমিক রাহুলকে সে কল করে রবীন্দ্র সরোবরের সামনে চলে আসার জন্য বলে দিল।  

----৪----


আমাদের ট্যাক্সিটা যখন রবীন্দ্র সরোবরের সামনে এসে দাঁড়াল, তখন দূরে দেখি একটা সাদা টি-শার্ট পড়া ছেলে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের ট্যাক্সিটাকে লক্ষ্য করে হাত নাড়ছে। বুঝতে পারলাম সেই হাত নাড়াবার আসল উপলক্ষ হল আমার পিছনে বসে থাকা মৌসুমী। রাহুল কথা মতো এসে অপেক্ষা করছে ওর জন্য আর তাই পিছনের দরজা খুলে মৌসুমীকে ঝটফট বেরতে দেখলাম এবং একইসঙ্গে ড্রাইভারকে টাকা মিটিয়ে যাওয়ার আগে শুধু পিছন ফিরে আমাকে বলে যেতে শুনলাম,

- থাঙ্কস। মিঃ আকাশ।

আমাদের ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে থাকলেও, মৌসুমী বড্ড তাড়াতাড়ি ওখানকার চারিপাশে উপস্থিত মানুষগুলোর মাঝে হারিয়ে গেল। এদিকে, ড্রাইভারকে আবার আমার উদ্দেশ্যে বলতে শুনলাম,

- ও দাদা, আপনিও তো এখানেই নামবেন।

হ্যাঁ! এখানে আমারও নামার কথা ছিল কিন্তু ওই যে বলে ভাগ্যের লিখন! মুহূর্তের মধ্যেই আমার গন্তব্যস্থান গেল বদলে। অতএব ড্রাইভারের দিকে চেয়ে বললাম,

- না! একটা জরুরি কাজ পরে গেছে গো। তাই তুমি আমাকে রাসবিহারি ক্রোসিংয়ে নামিয়ে দিও, যদি তোমার কোনও অসুবিধা না থাকে।  

- না! না! দাদা, অসুবিধা কেন থাকবে। আমি তো ওদিকেই যাচ্ছি, আপনাকে আমি ওখানে নামিয়ে দেব।

ট্যাক্সি এগিয়ে চলল রাসবিহারির দিকে আর আমি হাতে থাকা মোবাইলটা থেকে মৌসুমীর নম্বরে আমার রঞ্জুমামার পাঠানো ছবিটার একটা স্ক্রিনশট নিয়ে ম্যাসেজে ওকে লিখে পাঠালাম,

"কনফিডেন্স নয় ম্যাডাম, এটাকে বলে কোইন্সিডেন্স। আপনার বাবাকে বলবেন, সঠিক সময় আপনি পৌঁছে গেলেও, ওই ছেলেটি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। এরপর বাকিটা আমি বুঝে নেব। তবে, একটা কথা মাথায় রাখবেন, তখনও বলেছি আবারও বলছি- এটা টেম্পোরারি সল্যুশন হলেও, পার্মানেন্ট কিন্তু নয়।  

ভালো থাকবেন, ভালোবাসায় থাকবেন। গুড বাই"।

bhowmikranit1@gmail.com
হাওড়া

3 comments:

  1. রনি মামা, এই ছোট গল্পটা পড়লাম ও খুব ভালো লাগলো। এরম ছোট গল্প লেখা খুব একটা সহজ কাজ নয় কিন্তু তুমি সেখানে চমৎকার লিখেছ। তবে পেছনের seat এর মেয়েটি যে মৌসুমি সেই twistটা unpredictable রাখলে হয়তো পাঠকদের আরেকটু ভালো লাগত কিন্তু শেষএর দুটি line এখনো কানে বাজছে।

    ReplyDelete
  2. Great work by Ronit��

    ReplyDelete
  3. খুব সুন্দর লাগল।

    ReplyDelete