1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, January 12, 2022

প্রাণের গান

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

প্রাণের গান

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

 

        লাবণ্যের অপারেশনটা করাতেই হলো। ফ্যালোপিয়ান টিউবে সিস্ট।যে কোন সময় বড়ো বিপদের সম্ভাবনা ছিল। গড়িমসি করে অনেকটাই সময় কেটে গিয়েছিল। গ্রীষ্মের ছুটিতে দীর্ঘ অবসর কাজে লাগবে এই ভেবে মে মাসের শেষে অপারেশনটা করানো হলো। টানা একমাস বিশ্রাম। দুপুর ও রাতের খাবার পাড়ার হোম ডেলিভারি থেকে ।তাই কিচেনে কার্ফু।

          কিচেন চিমনি পরিস্কারে রবিবার সকালে পার্থ হাজির। কোম্পানিকে এক বছরের দেখভালের পয়সা দেওয়া। পার্থ কাজ করার সময় দেখল চিমনির পাইপে পাখির বাসা। অনেকদিন  চিমনি ব্যবহার করা হয় নি।তার সুযোগে পায়রার নিশ্চিন্ত আশ্রয়। পার্থর পরামর্শ ,বাসা না ভাঙ্গলে ধোঁয়া বের হওয়ার অসুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে ঘর  ধোঁয়ায় ভরে যাবে। অতএব ব্যালকনি থেকে লাঠি দিয়ে ও বাসাটা ভাঙ্গল। মাটিতে পড়তেই দেখি বাসাটার ভেতর কয়েকটা বাচছা।মা পায়রা চিৎকার করছে। অসহায় ওড়াউড়ি তার।

        বুকের ভেতর ডানা ঝাপটানোর অভিঘাত।একছুটে নীচে নেমে গেলাম। তুলে নিলাম বাচ্চা শুদ্ধু বাসাটাকে। মায়ায় ছেয়ে গেল মনাকাশ।মা বলতেন :"কারো আশ্রয় কখনো কেড়ে নিবি না।সকলের ভরসার আশ্রয় হবার চেষ্টা করিস। জীবন সার্থক হবে তাতে"। চোখে জল চলে এলো। উঠে দাঁড়াতেই দেখলাম মেয়ে তিতলি পাশে দাঁড়িয়ে।পরম মমতায় ও বাচ্চাগুলোকে দেখছে।ওর সারা মুখে কষ্টের ছাপ। বুঝলাম , বাচ্চাগুলোর কষ্টে ও সমব্যথী। আত্মজার এই জীবন দর্শনে বড়ো ভালোলাগা বুকে তখন। ওকে হাত বাড়িয়ে বাসাটা দিলামএক মুখ হাসি নিয়ে ও চললো ওর নতুন বন্ধুদের নিয়ে।

          ওপরে এসে ব্যালকনির কোণায় একটা ঝুলন্ত বাসা বানালাম  থার্মোকল দিয়ে বাবা মেয়ে মিলে।তার মধ্যে ঐ বাসাটাকে রাখা হলো। মা পায়রা দূরে বসে গজরাচ্ছে তখন। কিছুক্ষণ পরে ওর পুরুষসঙ্গী উপস্থিত।গলায় তারও রাগের বকম্ বকম্। দেখলাম, বাচ্চাগুলো উঁচু থেকে পড়ে ভয় পেয়েছে খুব।গরম দুধ ড্রপারে করে ওদের মুখে দিতে লাগলো তিতলি।এক অদ্ভুত আনন্দ তিতলির সারা মুখ জুড়ে। তৃপ্ত চোখ বলে দিল অনেক কথা।মেয়ের সৌমনস্যতায় বুক টাটকা বাতাসে ভরে গেল। দূরে বসে পায়রা যুগলের গলায়ও আনন্দ ভৈরবী তখন।

        কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্ছাগুলো স্বাভাবিক হয়ে উঠল তিতলির শুশ্রুষায়। মায়ের আওয়াজে ওদের এদিক ওদিক চাউনি। বাচ্চাগুলোকে তাদের নতুন বাসায় রেখে আমরা ঘরের ভেতর এলাম। সারা বাড়ি পায়রার আওয়াজে মুখর হয়ে উঠলো। বুঝলাম ওরা ধন্যবাদ দিতে চাইছে আমাদের। বড়ো সুখ নিয়ে তিতলিকে আঁকড়ে ধরে বসে রইলাম সেই আওয়াজ সঙ্গী করে।

                                                                               **************


dmukherjee557@gmail.com

কাঁঠাল বাগান, উত্তরপাড়া

No comments:

Post a Comment